বিক্ষিপ্ত ভাবনা
মিডিয়ার সামাজিক প্রভাব নিয়ে বৃটিশ সরকারের একটি প্রজেক্টে ২০১০ সালে কয়েকজন কলিগের সাথে কাজ করতে গিয়ে এ বিষয়ে আমাকে জানতে হয়েছে। আমরা কাজ করেছিলাম বৃটিশ সমাজের উপর। আদতে আমি কোন মিডিয়া বিশেষগ্ঞ ছিলামনা বা নই। ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে প্রজেক্টি পরিচালিত হয়। এই প্রজেক্টে কাজ করতে গিয়ে আমি জানতে পারলাম মিডিয়া প্রধানত ২টি এপ্রোচ নিয়ে কাজ করেঃ ১) এজেন্ডা সেটিং ফাংসন - যা মূলত মিডিয়া আপনাকে বলে দিবে আপনি কি নিয়ে চিন্তা করবেন বা কি নিয়ে ভাববেন।
দৈনন্দিন কোন বিষয় আপনার চিন্তায় আসা উচিত। এরা নিউজকে প্রয়োজনে নিজের এজেন্ডার পক্ষে কিছুটা পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করে। নিউজ প্রদানে এরা সিলেকটিভ - মানে সব নিউজ এরা সমভাবে প্রচার করেনা। বাংলাদেশের মোটামুটি এই ধরনের মিডিয়াই বর্তমানে বেশী সোচ্ছার।
২) সমাজের চেতনাকে তুলে ধরা - এ ধারায় মানুষের চিন্তাকে প্রভাবিত না করে বরং তার চিন্তা বা চেতনাকেই সমাজে রিফ্লেক্ট করা হয়।
এ ক্ষেত্রে মিডিয়ার মূল বিষয় থাকে নিউজ। নিউজ প্রদানে সিলক্টিভিটি কাজ করেনা।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রথমআলো, কালেরকন্ঠ সহ সব কর্পোরেট মিডিয়াই এজেন্ডা সেটিং ফাংশন নিয়ে কাজ করে। এরা নিউজ থেকে ভিউজকে ফোকাস করে বেশী যাতে জনমত প্রভাবিত হয়। প্রথমআলো বা ৭১ টিভি একই ঘরানার এজেন্ডা নিয়ে বর্তমানে কাজ করছে।
সমস্যা হচ্চে - কিছুদিন আগেও মানুষ এ সব একপেশে সাংবাদিকতা নিয়ে ভাবত না। কিন্তু অতিরিক্ত কোন কিছুই যেমন ভাল না, তেমনি এজেন্ডা সেটিং এ অতিরিক্ত দলকানা হওয়ায় এখন এগুলোর প্রভাব নেগেটিভ হয়ে যাচ্ছে।
অধিকাংশ পত্রিকা, টেলিভিশন মিলে যে মানুষের মোগজ ধোলাইয়ের কাজে অনেকটাই ব্যার্থ তা গতকালের নির্বাচনের রেজাল্ট দেখলেই বুঝা যায়। মজার বিষয় হচ্ছে প্রথমআলো এখনও তার ওয়েব সাইটে পূর্ণাংগ রেজাল্ট দেয়নি। গতকাল যেখানে বাংলাদেশ সময় রাত তিনটার পর সোশাল মিডিয়া এবং ২/১ টি টিভি বা পত্রিকায় রেজোল্ট চলে আসে, সেখানে প্রথমআলো আজ দুপুর পর্যন্ত তা দেয়নি।
তারা আপডেট বন্ধ রাখে রাত নয়টার পর থেকে।
দলকানাদের নিউজ প্রদানের ক্ষেত্রে এই বৈকল্যতা মানুষ ঠিকই মনে রাখে - ফলে সময়ের ব্যবদানে গুরুত্বপূর্ন বিষয়ও আর গুরুত্ত পায়না। বাম ডমিনেটেড মিডিয়াগুলো এজেন্ডা ভিত্তিক সাংবাদিকতা করতে গিয়ে, সরকারের যে সাফল্য তা প্রচার করলেও মানুষ এখন এগুলোকে বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশে মিডিয়া জনমতের প্রতিফলন নয়, বা জনগণ যে মিডিয়ার কথা এখন শুনছেনা, গতকালের নির্বাচনের ফলই তার প্রমাণ।
বিরোধী মিডিয়া দমন করে বিরোধীদের প্রচার বন্ধ করা যায়, তাতে জনমত যে উল্টোদিকে ঘোরে তা নতুন করে আর বলতে হবেনা।
বাম নেতা ইনু বিভিন্ন অপকৌশলের মাধ্যমে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রন করতে পেরেছে - কিন্তু মানুষের চেতনা এতে সরকারের বিরুদ্ধই জাগ্রত হয়েছে। মিডিয়ায় সত্যকে মিথ্যার আবরণে উপস্হাপন করলেই মানুষ যে তা খাবে সেই দিন মনে হয় শেষ। আওয়ামীলীগকে ভাবতে হবে সরল পথে, বাঁকা পথে নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।