আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গালিবাজ না বিশ্বাসঘাতক?

সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার

গালিবাজ না বিশ্বাসঘাতক? আপনাকে যদি দু'টো দলের মাঝে একটিকে বেছে নিতে বলা হয়, কোনটি নেবেন আপনি? যদিও নিজে গালাগাল জানিনা, পছন্দও করি না, তারপরও আমার কাছে বিশ্বাসঘাতকদের চেয়ে গালিবাজই অনেক বেশী গ্রহনযোগ্য। এদের তুলনায় গালিবাজরা অনেক বেশী স্বচ্ছ। এই স্বচ্ছতার কারণেই সুযোগ থাকবে গালির কারণ খুঁজে বের করার। গালির পেছনে কারণ থাকলে সে কারণ খুজে বের করারও অবকাশ থাকবে। সে কারণ যদি অযৌক্তিক হয়, অবকাশ থাকবে প্রতিবাদ করার।

প্রয়োজনে সে গালির বিপক্ষে নিজের যুক্তিকে দাঁড় করানোরও সুযোগ থাকবে। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকের কর্মের পেছনে কোন যুক্তি দাঁড় করিয়ে কাজ হয়না। অন্ধকারে যুক্তি দাড় করানো যায়? বিশ্বাসঘাতকদের বিনাশক কর্মের পেছনে স্বচ্ছতার লেশমাত্রও থাকে না। এদের চিন্তার পেছনে কোন নীতিবোধের কাঠামো নেই, আছে এদের চারিত্রিক দৈর্বল্যের নিষ্ঠুরতা। যে কোন যুক্তির ব্যবহারেও এদেরকে সংজ্ঞায়িত করা যায়না।

এদেরকে চেনা একেবারেই অসম্ভব। আমার কাছে এরা যো কোন পশুর চেয়েও অধম। এদেরকে চেনার ক্ষমতা আমার নেই। ব্লগে ঢালাওভাবে ধর্মভীরুদের "রাজাকার" গালি দেয়ার যে ঢালাও অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কথাটি একেবারেই ঠিক নয়।

অমি অনেককে জানি, যারা ধর্মভীরু, কিন্তু তাদেরকে রাজাকার বলার সাহস আজ অবধি কারো হয়নি। উদাহরণ হিবেবে নিচ্ছি "মাহবুব সুমনকে"। অনেক ধর্মীয় বক্তব্যের প্রতি তার সমর্থন দেখেছি। কিন্তু রাজাকার তথা জামাতে ইসলামীর বিরুদ্ধেও তার অবস্থান স্পষ্ট ও অবিচল। তার এই স্পষ্টতার কারনেই তাকে কেউ রাজাকার বলার দু:সাহস দেখাননি।

এরকম আরো কয়েকটি উদারণ দেখানো যেতে পারে। আরেকজনের নাম বলছি, জ্বিনের বাদশা। তিনিও ধার্মিক, পাশাপাশি রয়েছে দেশদ্রোহী রাজাকারদের বিরুদ্ধ তার স্পষ্ট অবস্থান। আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছি। এক ইরান, পাকিস্তান ও রাজাকার প্রভাবিত ব্লগার নিজেকে ক্রিকেট খেলায় পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে গালাগালির শিকার হয়েছে।

এটা ঘটেছে তার অস্পষ্ট, অন্ধকার চরিত্রের কারণেই। এই ব্লগার দেশের চাইতে পাকিস্তান ও ইরানের প্রতি আনুগত্যের দোষে দুষ্ট। রাজাকারদের পদলেহন করায় তার ক্ষমতা অপরিসীম। এটা যেসব ব্লগারের বাংলাদেশে স্বাধীনতার প্রতি যাদের সন্মান রয়েছে, তাদের সবারই জানা। তাই তাকে গালি খেতে হয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে ক্রিকেট হলে, আমার মন পাকিস্তানেরই পক্ষে চলে যায়। সেকথা একবার ব্লগে প্রকাশও করেছিলাম। আমাকে কোন গালি খেতে হয়নি, রাজাকার বলার দু:সাহসও কারো হয়নি। কারণ একটাই। আমার নিজের স্পষ্ট অবস্থানের কারণে আমাকে চেনেন সবাই।

অমি পিয়াল চিহ্নিত রাজাকারদের গালাগাল করেন। তার সাথে আরো অনেকেই এরকম করেন। আমি নিজে গালি না দিলেও যারা গালি দেন, তাদের যন্ত্রনা অনুভব করতে পারি। সাধারনত: বিশ্বাসঘাতকেরা আড়ালে আবডালে লুকিয়ে তাদের অভিযান চালায়। এই ঘাতকেরাই যখন সবার সামনে এসে এদের প্রভুদের গুনগান গায়, তখন অনেকেরই পক্ষে তা সহ্য করা সম্ভব হয়না।

এরা যখন একাত্তুরের স্বাধীনতা বিরোধী খুনিদের, এদেশের লাখো লাখো মা-বোনের ধর্ষকদের পয়গম্বর সাজাতে সাহস পায়, তখন আগুন জ্বলে ওঠে রক্তে। সেসময় এই বিশ্বাসঘাতকদের সামনাসামনি পেলে কি হতো জানিনা। কিন্তু যেহেতু সে সুযোগ নেই, তাই প্রতিবাদের ভাষাগুলো গালি হয়ে বেরিয়ে আসে। এ গালিকে আমি গালি হিসেবে দেখি না। এ গালি নিজের অসহায়তার প্রকাশ, এ গালি দেশ ও মাটির প্রতি নিজের ভালবাসার প্রকাশ।

অনেকেই হয়তো থমকে যাবেন, বিশেষ করে কিছু সুবিধাবাদী ব্লগার, যারা নিজেদেরকে স্বাধীনতার ধারক বাহক হিসেবে প্রকাশ করেও রাজাকারদের প্রতি সমর্থন দিতে দ্বিধা বোধ করেন না। তাদেরকে স্পষ্ট করে বলছি, আমার ভাল করেই জানা, কোন গালাগাল কাউকে আক্রমণ করার নোংরা উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, আর কোন গালাগাল রাজাকারী বর্বতার বিরুদ্ধে অসহায় প্রতিবাদ। আমাকে তাদের কেউ যেন তাদের ছদ্দ সুশীলতা শেখাতে না আসেন! বিশ্বাঘাতক চাই না। এদের পেছনে যে অন্ধকার, তার চেহারা একাত্তুরে দেখেছি। এদের চেহারার যে কুটিলতা, তাও টের পেয়েছি একাত্তুরের প্রতিটি মুহুর্তে।

এদের খড়গের রক্তস্রোতে লাল হয়ে এদেশের নদীনালা, এদের বিষনিশ্বাসে পুড়েছে এদেশের শহরবন্দর, এদের লোলুপ লালসার শিকার হয়েছে আমাদেরই মা বোন। বিশ্বাসঘাতক চাই না, ভদ্র চেহারায় এদের সুশীল সমর্থকদেরও চাইনা। এদের চেয়ে গালিবাজ আমার কাছে অনেক বেশী গ্রহনযোগ্য।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.