.........
পল্লী কবির নক্সী কাঁথার মাঠটি ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছি---- নেটে অনেক খুজে না পেয়ে নিজেই বই কিনে আপনাদের জন্য কম্পোজ করছি------
আজ ২য় কিস্তি দিলাম----
আপনাদের ভাল লাগলে পরের কিস্তি লিখবো-----
আপনাদের ভাল লাগলে পরের কিস্তি লিখবো-----
এক
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি মধ্যে নদী,
উইড়া যাওয়ার সাধ ছিল, পাঙ্খা দেয় নাই বিধি।
- রাখালী গান।
এই এক গাঁও, ওই এক গাঁও---- মধ্যে ধু ধু মাঠ,
ধান কাউনের লিখন লিখি করছে নিতুই পাঠ।
এ-গাঁও, যেন ফাঁকা ফাঁকা, হেথায় হেথায় গাছ;
গেঁয়ো চাষীর ঘরগুলি বেঁধে বনের কাজল কায়া,
ঘরগুলিরে জড়িয়ে ধরে বাড়ায় ঘরের মায়া।
এ-গাঁও, যেন ও-গাঁর, দিকে, ও-গাঁও এ-গাঁর পানে,
কতদিন যে কাটবে এমন, কেইবা তাহা জানে !
মাঝখানেতে জলীর বিলে জ্বলে কাজল-জল,
বক্ষে তাহার জল-কুমুদী মেলেছে শতদল।
এ-গাঁও ও-গাঁর দুধার হতে পথ দুখানি এসে,
জলীর বিলের জলে তারা পদ্ম ভাসায় হেসে !
কেইবা বলে - আদ্যিকালের এই গাঁর এক চাষী,
ওই গাঁর এক মেয়ের প্রেমে গলায় পরে ফাঁসী;
এ-পথ দিয়ে একলা মনে চলছিল ওই গাঁয়ে,
ও-গাঁর মেয়ে আসছিল সে নূপুর-পরা পয়ে!
এই খানেতে এসে পথ হারায়ে হায়,
জলীর বিলে ঘুমিয়ে আছে জল – কুমুদীর গায়।
কেনবা জানে হয়ত তাদেও মাল্য হতেই খসি,
কাপলা-লতা মেলছে পরাগ জলের উপর বসি।
এাঠের মাঝে জলীর বিলের জোলো রঙের টিপ,
জ্বলছে যেন এ-গাঁর ও-গাঁর বরিহেরি দীপ !
বুকে তাহার এ-গাঁ ও-গাঁ হরেক রঙের পাখি,
মিলায় সেথা নূতন জগৎ নানান সুরে ডাকি।
সন্ধ্যা হলে এ-গাঁর পাখি ও-গাঁও পানে ধায়,
ও-গাঁর পাখি এ-গাঁয় আসে বনের কাজল-ছায়।
এ-গাঁর লোকে নাইতে আসে, ও-গাঁর লোকও আসে
জলীর বিলের জলে তারা জলের খেলায় ভাসে।
এ-গাঁও ও-গাঁও মধ্যে ত দূও - - শুধুই জলের ডাক,
তবু যেন এ-গাঁয় ও-গাঁয় নাইক কোন ফাঁক।
ও-গাঁর বধূ ঘট ভরিতে যে ঢেউ জলে জাগে,
কখন কখন দোলা তাহার এ-গাঁয় এসে লাগে।
এ-গাঁ চাষী নিঘুম রাতে বাঁশের বাশীর সুরে,
ওননা গাঁয়ের মেয়ের সাথে গহন ব্যথায় ঝুরে !
এসাঁও হতে ভাটীর সুরে কাঁদে যখন গান,
ও-গাঁর মেয়ে বেড়ায় ফাঁকে বাড়ায় তখন কান।
এ-গাঁও ও-গাঁও মেশামেশি কেবল সুরে সুরে;
অনেক কাজে এরা ওরা অনেকখানি দূরে।
এ-গাঁর লোকে দল বাঁধিয়া ও-গাঁর লোকের সনে,
কাইজা ফ্যাসাদ করেছে যা জানেই জনে জনে।
এ-গাঁর লোকও করতে পরখ ও-গাঁর লোকের বল,
অনেক বারই লাল করেছে জলীর বিলের জল।
তবুও ভাল, এ-গাঁও ও-গাঁও, আর যে সবুজ মাঠ,
মাঝখানে তার ধুলায় দোলে দুখান দীঘল বাট ;
দুই পাশে তার ধান-কাউনের অথই রঙের মেলা,
এ-গাঁর হাওয়ায় দোলে দেখি ও-গাঁয় যাওয়ার ভেলা।
দুই
এক কালা দাতের কালি দ্যা কলম লেখি,
আর এক কালা চক্ষেও মণি, যা দ্যা দৈনা দেখি,
---- ও কালা, ঘরে রইতে দিলি না আমারে।
---- মুর্শিদা গান
এই গাঁযৈর এক চাষার ছেলে লম্বা মাথার চুল,
কালো মুখেই কালো ভ্রমর, কিসের রঙিন ফুল !
কাঁচা ধানের পাতার মত কচি-মুখের মায়া,
তার সাথে কে মাখিয়ে দেছে নবীন তৃণের ছায়া।
জালি লাউয়ের ডসার মত বাহু দুখার সরু,
গা খানি তার শাঙন মাসের যেমন তামাল তরু।
ঊাদল-ধোয়া মেঘে কেগো মাখিয়ে দেছে তেল,
বিজলী মেয়ে পিছলে পড়ে ছড়িয়ে আলোর খেল।
কচি ধানের তুলতে চারা হয়ত কোনো চাষী,
মুখে তাহার জড়িয়ে গেছে কতকটা তার হাসি।
কালো চোখের তারা দিয়েই সকল থরা দেখি,
কালো দাতের কালি দিয়েই কতোব কোরাণ লেখি।
জনম কালো, মরণ কালো, কলো ভুবনময়;
চাষীদেও ওই কালো ছেলে সব করছে জয়।
সোনায় যে-জন সোনা বানায়, কিসের গরব তার,
রঙ পেলে ভাই গড়তে পারি রামধণুকের হার।
কালোয় যে-জন আলো বানায়, ভুলায় সবার মন,
তারির পদ-রজের লাগি লুটায় বুন্দাবন।
সোনা নহে, পিতল নহে, নহে সোনার মুখ,
কালো-বরণ চাষীর ছেলে জুড়ায় যেন বুক।
যে কালো তার মাঠেরি ধান, যে কালো তার গাঁও !
সেই কালোতে সিনান করি উজল তাহার গাও।
আখড়াতে তার বাঁশের লাঠি অনেক মানে মানী,
খোলার দলে তার নিয়েই সবার টানাটানি।
জারীর গানে তাহার গলা উঠে সবার আগে,
শাল – সুনদঅ - বেত ” য়েন ও, সকল কাজেই লাগে।
বুড়োরা কয়, ছেলে নয় ও, পাগল ( ইস্পাত ) লোহা যেন,
রূপাই যমেন বাপের বেটা কেউ দেখেছে হেন ?
যদিও রূপা নয়কো রূপাই, রূপার চেয়ে দামী,
এক কালেতে ওরই নামে সব গাঁ হবে নামী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।