আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পল্লী থেকে

(অষ্টম পর্ব)

মায়ের মত আপন কেও নাই
মা জননী নাই রে যাহার
ত্রিভুবনে তাহার কেহ নাইরে।

তুমি যেদিন থাকবেনা
সেদিন আমার হবে কি
সুখে থাকি দু:খে থাকি
কাহার আসবে যাবে কি ?
তাইত বলি তোমার মত মরমী কেও নাই।
তোমার মতন আপন কেহ নাই।

সুমা দের আজকের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হছে। একটা ছেলে খুব দরদ দিয়ে মায়ের এই গান গাচ্ছে।

সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছে। শুনতে শুনতে সুমার চোখে জল গড়িয়ে পড়ল।

কালকে সুমাকে তাদের প্রিন্সিপাল ডেকে পাঠিয়েছে অফিস এ। স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে তার চোখে মুখে অনেক কৌতুহল। ভদ্রতার কারণে প্রশ্ন করতে গিয়ে চুপ হয়ে যাচ্ছেন বার বার।



সুমা পারসোনাল ইনফরমেশন এর ফর্ম টা দিয়ে বললেন এটা আবার ফিল আপ করতে।

জেসমিন(সুমার আসল নাম) এখানে কিছু ইনফরমেশন ফিল আপ করা হয়নি।

সুমা ফর্ম টা দেখছে আর তিনি প্রশ্ন করছেন ? তোমার বাবার নাম টা লিখ।

আমার বাবা নেই মিস মাথা নিচু করে সে জবাব দেয়।

ওহ হো দু:খিত।

তোমার যে অভিভাবক তার নাম লিখ।

আমার মা আছেন শুধু সুমা মৃদু স্বরে বলে।

একটা জায়গা দেখিয়ে দিয়ে বললেন নাম ঠিকানা ফোন নাম্বার লিখ।

নাম লিখে মায়ের ঠিকানার জায়গা টা খালি রাখল।

ম্যাডাম আমার ঠিকানা পুরা মনে নেই।

মাকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিয়ে লিখব। ফর্ম টা নিয়ে আসল হোস্টেল রুম এ। মাকে দুইবার ফোন করে পায়নি সে। তখন থেকে তার মন টা বিষন্ন।

শ্যামলী পোস্ট অফিস এসেছে সুমা র নামে টাকা মানি অর্ডার করতে।

পোস্ট অফিস এর ক্লার্কও টা শ্যামলী কে চিনে জানে। দেখলে বিরক্ত করে। দশ মিনিট এর কাজে লোক টা তার আধা ঘন্টা সময় নষ্ট করলো। বাস উঠতে পিছন থেকে কেও একজন বাজে ভাবে গায়ে হাত দিয়েছে। প্রথম এ সে খুব রেগে গিয়েছে।

ভেবেছে বাস কন্ডাক্টর এর কাছে গিয়ে বলবে। পরে মনে হল এরা তখন তাকে ই অপমান করে বসবে বেশি। যে কাজ কর তার এত ডাট কিসের ?এসব কথা তাকে অহরহ শোনা লাগে বাজে আচরণের প্রতিবাদ করতে গেলে।

আহ একটা মেয়ে কে কত কিছু সহ্য করতে হয় এই পৃথিবীতে।

ঘরে আসতে আসতে দেখে সুমা তাকে বেশ কয়েক বার ফোন করেছে।



ফোন ঘুরাতে সুমার কান্না জড়িত স্বর শোনা গেল।

কি মা কি হইছে মেয়ের কান্না র ভয়েস এ তার বুক ধড়ফড় করে উঠল।

কালকে বাজে সপ্ন দেখছি মা তোমারে নিয়ে। ফোনের মধ্যে মেয়ের কান্নার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।

আমার পাগলি মেয়ে আমি ভালো আছিতো ।

মাত্র পোস্ট অফিস থেকে আসলাম। তোর্ জন্য টাকা পাঠাইছি। দুইটা ড্রেস পাঠাইছি।

মা তুমি আসতে পারবা এখন আমার এখানে। বলে আবার হুহু করে কানতে থাকে।



এখন তো সন্ধা মারে দেখি। কি করা যায়।

ঘরে ঢুকতে ভাঙ্গা কাছে গভীর ভাবে পা কেটে যায় শ্যামলী র।

ওহ বলে মাটিতে বসে পড়ে। এখানে কাচ ভেঙ্গে ফেলে রাখল কে ? রক্ত দর দর করে বের হতে শুরু করলো অল্প কাটায়।

অসহায় হয়ে পায়ের যন্ত্রনায় কানতে শুরু করল।

আল্লাহ আমার মেয়েটারে দেখে রাখো। মনে কু ডাক দিয়ে উঠলো। কুসংস্কারাচ্ছন্ন মায়ের মন। ঘরে কিছু পাচ্ছেনা ব্যান্ডেজ করার জন্য।

এই পা নিয়ে যাবে ই বা কিভাবে ?

তেনারে খুব দরকার। সামাদ মিয়া। যদিও অভিমান বশত এই কয়দিন সে সামাদ এর সাথে কোনো যোগাযোগ রাখেনি। আজকে মনে হলো উনি আসলে খুব ভালো হত।

মুখ তুলতে দেখল সামনে সামাদ দাড়িয়ে।

এই প্রথম আল্লাহ কে কৃতজ্ঞতা জানালো অনেক মনে মনে। তুমি আমার মনের কথা সঙ্গে সঙ্গে শুনছ আল্লাহ।

ইশ কি করছ পা কেটে। এত অসাবধান মানুষ হয়। আর কোনো চিন্তা নাই উনি এসেছেন।

শ্যামলী র দেখাশোনা উনি করবেন। সুমা কে ও দেখতে যাবেন। খুব নির্ভরতা বোধ করলো মনের কোণে সামাদ কে দেখে।

(পরবর্তীতে)।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।