ধোঁয়ায় মোড়ানো পৃথিবী আমার। যেখানে নেই সত্য মিথ্যার তামায় মোড়ানো কোন খোলস। চারপাশে শুধু ধোঁয়া। ধোঁয়ার মাঝেই আমি তৈরি করেছি আমার স্বপ্নের আগামী। আমি লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বললাম, “আমাকে একটা আদর দিবা?”
ওই নাম না জানা বড় গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে এই কথাটা বলতে তখন আমার একটুও অস্বাভাবিক কিছু মনে হল না, মনে হল না আমি কোন পরিস্থিতিতে আছি, আমি কি করতে এসেছি।
বোধশক্তিটা কি একটু কমে গেলো আমার? নাকি আমার মন-মগজ সব আপ্রাণভাবে এটাই চাইছে? ওপাশ থেকে যথেষ্ট অসন্তুষ্ট প্রতিক্রিয়াই আশা করেছিলাম, কিন্তু শেষতক আমাকেই বহুগুণ আশ্চর্য করা উত্তর পেলাম, “দিলে তুমি খুশি হবা?”
নিমেষে আমার কাছে এতদিনকার ব্যাপারগুলো অর্থহীন মনে হল। সব জটিলতা, সব কষ্ট, যন্ত্রণাগুলা হাস্যকর মনে হতে লাগলো। আমি এক ঝটকায় যেন ফিরে গেলাম জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনগুলোতে। এলোমেলো, অগোছালো, পাগলাটে সেই মুহূর্তগুলোতে। নতুন নতুন ভার্সিটি লাইফকে ১০০% উদযাপন, আড্ডা, ঘোরাঘুরি ইত্যাদি হাজার রকম মজা করায় দারুণ ব্যস্ত।
এই ব্যস্ততার মধ্যেও এই বয়সের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজটা করতে ভুললাম না। প্রেম একটা করেই ফেললাম, এবং এরপর থেকে আমার জীবন আরও রঙিন হয়ে উঠল!
একগাদা বন্ধু, নতুন পাওয়া ছেলেবন্ধু, ভার্সিটির নানা কাজ নিয়ে লাফালাফি করে দিন কাটতে লাগলো আমার। যাই করতে যাই, সব গোলমাল হয়ে যায়, এরপর আবার নতুন উদ্যমে সেটা করতে শুরু করি। এক্সাম হলে গিয়ে পড়া ভুলে যাই, অ্যাসাই্নমেন্ট-এ দুনিয়ার ভুল করি, প্রেজেন্টেশন দিতে গেলে তোতলা হয়ে যাই……এইসব অনাচার করে মেজাজ খারাপ হয়, ফ্রেন্ডদের মধ্যে বসেও আপসেট হয়ে থাকি, ওর সাথেও ঝগড়া করি। কিন্তু আমার মেজাজ একটু পরেই ঠিক হয়ে যায়, কারণ আমার অতি ভাল মানুষ বয়ফ্রেন্ডটা, এই আদিব ছেলেটা অসাধারণভাবে এক চুটকিতে আমার খারাপ মেজাজ ভাল করে দেয়, আমি ঝগড়া করলে হাসিমুখে নিজে থেকেই আমার রাগ ভাঙায়।
যত ওকে জ্বালাই, ততই আমাকে আরও আপন করে নেয়। আমার গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে ও আদর করে দিলেই আমি গলে যেতাম। ভালোই চলছিলো সব। তবে ঝগড়া-রাগারাগি কেন যেন বেড়েই যাচ্ছিলো, আদিব-ও আর চুপ হয়ে শুনত না, দুজনেই সমানে তর্ক, কথা কাটাকাটি করা শুরু করলাম খুব-ই ছোট ছোট জিনিস নিয়ে।
- আজকে দেখা করতে পারবা?
-কেন? খুব দরকার?
-হুম…আমার উইন্ডোজের সিডি লাগবে।
-এটা তো অন্য কারো থেকেও নিতে পারো।
-তোমার থেকেই নিবো, আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করতেসে।
-এটা বললেই হয় যে দেখতে ইচ্ছা করতেসে।
-এটা কেন বলব? তুমি কি গাধা? বুঝো না?
-সরাসরি বললেই পার, এইসব ঘুরানো কথা বুঝি না। আমি আজকে আসতে পারব না, গেস্ট আসবে, আম্মু বাজারে যাইতে বলসে।
-তো আমি বাজারেই আসি।
-কি আজব! বাজারে তুমি কি করবা…কালকে তো দেখা হবেই।
-না,আমি আজকেই আসবো।
-পাগলামি করো কেন? মাঝে মাঝে ঠিক আছে, কিন্তু প্রতিদিন এসব ভাল লাগে না।
-ভালো তো লাগবেই না, আমাকে এখন পাগল মনে হয়, আরও কত কি মনে হবে!!
-দ্যাখো প্লিজ, এখন এইসব আজাইরা কথা বইলো না, থামো।
-ওকে, আমি রাখলাম ফোন…আর যদি দেখা করতে চাইসি……
-তাইলে তোমার নাম মিথিলা না…তাই তো? এই কথা অনেক শুনসি…এখন দয়া করে চুপ করো।
-চুপ-ই করব। টাটা, বাই বাই। এইবার আমি সিরিয়াস।
-বাই।
এইরকম conversation-এ আমি হতবাক। আমার ভদ্র ভালো বয়ফ্রেন্ডটা এমন কেন করছে? যে আমাকে সবসময় আগলে রেখেছে, আমার রাগ গলিয়ে পানি বানিয়েছে…এখন সেও রাগ করে? কিন্তু কেন? এইরকম ঝগড়া প্রতিদিন হতে হতে কি ওর মন বিষিয়ে গেলো? ও কি বিরক্ত আমার উপর? নাকি এই রিলেশনটার উপর? আমার ঘ্যানঘ্যান শুনতে শুনতে ও কি ক্লান্ত?এই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে খেতেই আরও কয়েক দফা এইরকম তর্কাতর্কি হল আমাদের, বারে বারে আমি বলি আর কথা বলব না…আর দেখা করতে চাইব না…সেই আমি-ই নিজের প্রতিজ্ঞা ভুলে কথা বলে ফেলি। কিন্তু আস্তে আস্তে দুজনের মধ্যেই বিরক্তি জমাট বাঁধতে শুরু করে, দূরত্ব বাড়তে থাকে। এইসব ঝামেলায় রেজাল্ট-ও খারাপ হতে থাকে, ফ্রেন্ডদের সামনেও হাসির পাত্র হতে হয় এইসব বেইসলেস টপিক নিয়ে ঝগড়া করায়। কিন্তু যন্ত্রণা আমাদের কমে না, রাত জেগে দুইজন-ই কষ্ট পাই, মানসিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে।
ও আমার গালে হাত দিয়ে আর আদর-ও করতো না। দুইজন-ই বুঝতে পারলাম আমরা একে অন্যের EXPECTATION পূরণ করতে পারছি না, UNDERSTANDING নামক জিনিসটা আমাদের মধ্যে একদম নেই। অতএব আমরা ফয়সালা করলাম……… আমাদের ব্রেক আপ করা উচিত!!!!
সেই মহান উদ্দেশ্য পালনেই আমরা দুইজন আজকে এই গাছতলায়। রেস্টুরেন্টে যাওয়া যেত, কিন্তু অযথা ব্রেক আপ করতে গিয়ে আরেক দফা পেট-পূজার কোনও মানে হয় না। এবং গাছতলায় এসে আনুষ্ঠানিক ব্রেক আপ করার পর ওর কাছে আমার এই লাজওয়াব আবদার!!! আর ওর উত্তর শোনার পর আমার মধ্যে ঝড় শুরু হল।
যার আমার খুশি নিয়ে এত ভাবনা, এই অবস্থাতেও যে আমার ইচ্ছাপূরণে এতখানি রাজি, কিসের এত দ্বন্দ্ব আমার তার সাথে? কিসের এত ভুল বোঝাবুঝি?? কেন এত দূরত্ব আমার তার সাথে? কি করে হল এই অসম্ভব ভালোবাসার মানুষটার সাথে এতখানি দূরত্ব? যার একটুখানি ছোঁয়া পেতে আমি আজও তীর্থের কাক হয়ে থাকি, তার থেকে দূরে সরে যাব, এটা আমি কি করে ভাবছি? জীবনের জটিলতা আমাদেরও জটিল বানিয়ে দিল? সামান্য ব্যাপারগুলোকে এত বড় বানিয়ে জীবনের এত বড় সম্পদ হারাবো কেন? বোকা নাকি আমরা?
দূর ছাই……UNDERSTANDING,EXPECTATION,COMPLICATION শব্দগুলো তো ভারী বিচ্ছিরি!! কে বানিয়েছে এইসব? সে প্রেমের দুশমন!! বেটার মুখে পচা মাছের ঝোল পড়ুক! যেই সম্পর্কে এতটা ভালবাসা আছে, এতটা মমতা আছে সেটা আমি এই বিচ্ছিরি শব্দগুলোর জন্য ভেঙে ফেলব? হোক না একটু ঝগড়া, একটু মান-অভিমান, একটু খুনসুটি, একটু রাগারাগি…কিন্তু এতখানি ভালোবাসা আর কোথায় পাবো? এমনি করে কে আমায় আগলে রাখবে? আমি ঝট করে ওর হাতটা ধরে ফেলি…”হুম, খুশি হবো। অনেক বেশি খুশি হবো, ব্রেক আপটা খুব জরুরি?” ও হেসে আমার গালটা ধরে…”না, একদম না…চল যাই, এখানে আর ভালো লাগতেসে না, চলো কথাও গিয়ে বসি। ”
আমরা হাঁটতে থাকি…হাত ধরে, যেতে হবে অনেকটা দূর। সারাটা জীবন তো একসাথেই কাটাতে হবে। ঝগড়া করে, আনন্দ করে, বিচ্ছিরি শব্দগুলো থেকে দূরে থেকে……… ভালবেসে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।