.........
লেখাটা আমার না-----
লেখাটা ইরতেজা ভাইয়ার----
লেখাটা পড়ে আমি কেদেছিলাম-----
যেমনি আমার মা আজো কাঁদে ৭১এর ছবি দেখে ----
লেখাটা এ কারনে আমি ইরতেজা ভাইয়ার কাছ থেক অনুমতি নিয়ে আমি পোষ্ট করলাম যাতে অনেকই পড়েন তাই----
এই লেখাটার পূর্ন প্রসংশা পাবার দাবীদার ইরতেজা ভাইয়া----
আপনি চাইলেই নিচের লিংকে গিয়ে মূল পোষ্টটা পড়ে আসতে পারেন-----
১৯৫২ ভাষা আন্দোলনে শহীদ বরকতের মা হাসিনা বিবি থাকতেন সেই সময় থাকতেন ভারতে । তার ছেলে বরকত ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হন। আমাদের দেশে স্থায়িভাবে বাসবাস না করেও প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারীতে শহীদ মাতা ছুটে আসতেন ঢাকাতে ছেলের আজিমপুর কবরস্থানে ছেলের কবরের সামনে শ্রদ্ধা জানাতে। শহীদ মাতা হাসিনা বিবিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন। ৬৮-৬৯ সালে তাকে জোর করে দেশে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি তার পাসপোর্ট আটক করে রাখা হয়।
এক মাকে তার ছেলের জন্য প্রাথনা করতে দেয়া হয়নি। ১৯৮২ সালে তিনি বরকত বরকত করতে করতেই ইন্তেকাল করেন।
মিরপুরে কবি মেহেরুনি্নসাকে তার বৃদ্ধা মায়ের সামনেই হত্যা করা হয়। পাকিন্তানিরা এক মায়ের সামনে তার স্নেহের দুই ছেলেকে আর তার তরুনী মেয়েকে শক্ত করে রশি দিয়ে বাধা হয়। এক বৃদ্ধা মায়ের আকুতি মিনতি, পায়ে ধরে বিলাপ কিছুতেই ওই পশুদের মন গলে নি।
সেই সব ভয়ন্কর পিশাচরা ভয়ন্করভাবে ধারালো ছুরি দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে এক মায়ের চোখের সামনে তার সন্তানদের তিল তিল করে ছুরিকাবিদ্ধ করে হত্যা করল। আর সেই অসহায় জননীর তীক্ষ্ন আর্তনাদে সেদিন বুঝি মীরপুরের ধুসর আকাশের বুক চিরে গিয়েছিল, কিন্তু এতটুকু কাঁপেনি সেই প্রতিবেশী অবাঙালি পশুদের বুক।
ভাষা শহীদ আরমা গুনকে যখন ধরার জন্য মিলিটারীরা তাদের বাসা ঘিরে ফেলে তখন উনি তার মায়ের কাছে গিয়ে আনুরোধ করেন "আমাকে হয়ত এখানেই গুলি করে মারবে। আমার বিশেষ অনুরোধ, তোমরা আমার লাশটা বারান্দায় ফেলে রেখো যাতে সকলে আমার মৃতদেহ দেখে মনে মনে সাহস পায় বিদ্রোহ করার জন্যে। "
মুক্তিযুদ্ধের এক দিনে সেক্টর কমান্ডার রফিক ভিতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন।
চারিদিকে গোলাগুলি, বোমা পড়ছিল। তখন তিনি দেখতে পেলেন কয়েকজন মহিলা দৌড়াচ্ছেন। একজন কিশরের দ্বিখন্ডিত দেহ পরে থাকতে দেখে উনি থামলেন। একজন মা খুব শান্ত ভাবে সেই মৃত ছেলের লাশের দিয়া একমনে চেয়ে আছেন। সেই দুঃখি মা চোখ মুছে তাকে দেখে জিগাসা করলেন "তোমরা কারা?তিনি উত্তর দিলেম "মা, আমরা আপনার ছেলে”।
ছেলের দ্বিখন্ডিত দেহের সামনে তখন তার মা আল্লার কাছে হাত তুলে মোনাজাত করল "আল্লাহ আমার প্রানপ্রিয় ছেলেটিকে নিয়ে গেচ্ছিস সে জন্য আমার কোন অভিযোগ নেই, আমার ছেলের প্রানের বিনিময়ে আমি এখন শুধু এই ছেলেটার জন্য দোয়া চাইছি যারা এই দেশের স্বাধিন তার জন্য যুদ্ধ করছে”। এই কথাটা তাদের সাহস মনোবল অনেক বৃদ্ধি করেছিল। পরে মুক্তিযোদ্ধা রফিক যখন গুলিবিদ্ধ হল তখন তিনি বলছিলেন আল্লার তুমি এক দুঃখি মায়ের মায়ের দোয়া কবুল কর।
শহীদ আজাদে ছিলেন ঢাকা শহরের সেই সময় সব থেকে ধনী ইউনুশ আহমেদের একমাত্র পুত্র। বিপুল অর্থবিত্তের ভিতর বড় হলেও আজাদ জীবনে তার মাকে নিয়ে অনেক কষ্ট করেছে।
শহীদ আজাদ ঢাকায় গেরিলা অপারেশনে অংশগ্রহন করেন। তাকে তার বাসা থেকে তার মায়ের সামনে মারতে মারতে থানায় নেয়া হয়। আজাদ,শহীদ জুয়েল ধরা পরার পর টর্চার সেলে মিলিটারীদের প্রচন্ড মারে তাকে সিলিং ফেনের সাথে উলটা করে সারা দিন ঝুলিয়ে রাখা হয়। সারা শরীরে বেল্ট দিয়ে পিটানো হয়। তার সারা গা রক্তাক্ত হয়ে যায় মুখ থেকে রক্ত পরছে কিন্তু তারা কিছুই ফাঁস করেনি।
আজাদের মনবল ভাঙ্গার জন্য মোহাম্মদ কামজ্জামান( জামাতের উর্ধতন নেতা) সাথে করে আজাদের মাকে সামনে নিয়ে আসে। রমনা থানায় তার মাকে বলা হয় আজাদকে তার সিদ্ধিরগঞ্জ আর রাজারবাগ অপারেশনের অংশ নেয়া বন্ধুদের নাম ঠিকানা বলতে আর অস্র কোথায় লুকিয়ে রেকেছে তা বলতে। কিন্তু তাদের সামনেই আজাদের মা পুত্রকে সাহস দিয়ে বলে "বাবা রে, যখন মারবে, তুমি শক্ত হয়ে থাকো। সহ্য কোরো। কারো নাম যেন বলে দিও না।
আজাদ সেই রাতে থানায় মাকে বলল, "মা, ভাত খেতে ইচ্ছা করে, দুই দিন ভাত খাই না। কালকে ভাত দিছিল , আমি ভাগ পাই নাই” আজাদের মা পরের দিন টিফিন ক্যারিয়ারে করে ভাত, মাংস, আলুভর্তা, বেগুনভাজি হাতে নিয়ে মা সারা রাত থানার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। কিন্তু তাকে জানান হয় আজাদ রমনা থানায় নেই । উনি সারা রাত এক থানা থেকে আরেক থানা, এমপি হোষ্টেল, কেন্টরম্যান্ট খুজেও কোথাও আজাদকে পাওয়া যায় নি। আজাদকে আর কখনও খুজে পাওয়া যায় নি।
স্বাধীনতার যে ১৪ বছর আজাদের মা সাফিয়া বেগম বেঁচে ছিলেন তিনি সারা দিন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতেন। ডাকপিয়ন আসলে দৌড়ে যান তার ছেলের কোনও চিঠি আছে নাকি দেখতে। একটু শব্দ হলে তার বুক কাঁপত। তখন শেষ বার সেলে আজাদকে দেখেছিলেন আজাদ মাটিতে শুয়ে ছিল। মাটিতে খালি একটা পাটি ছিল কোন বালিশ ছিল না।
আজাদের মা ওই দিনের পর থেকে কোন দিন বিছানায় ঘুমান নি। উনিও মাটিতে পাটি বিছিয়ে ঘুমাতেন। আজাদ মৃত্যুর আগে ভাত খেতে পারে নি তাই তার মা বাকি জীবনে কোন দিন ভাত খাননি। সুদীর্ঘ ১৪ বছর খালি রুটি খেয়েছেন দুইবেলা কখনো একবেলা শুধু পানিতে চুবিয়ে। ৩১সে আগষ্ট,১৯৮৫ আজাদের ধরা পরার সেই দিনেই এই রত্নগর্ভা নারীর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।
তার কবরে তার ইচ্ছা অনুযায়ি খালি একটা লাইন লিখা, শহীদ আজাদের মা।
গত ৩ তারিখ ছিল শহীদ জননী জাহানারা ইমামের জন্মদিন। রুমি যখন তার মায়ের কাছে এসে মুক্তিযুদ্ধে যেতে চাইল তখন তার মা বলেছিল "যা তোকে দেশের জন্য কোরবানী করে দিলাম। এই শেষ কথাটার জন্য জাহানারা ইমাম সারা জীবন আফসোস করেছেন। আল্লাহ মনে হয় কোরবানী কথাটি কবুল করে নিয়েছেন।
উনি কেন বললেন না, যা রুমি যুদ্ধ করে বীরের বেশে স্বাধীন দেশে ফিরে আয়। তাহলে হয়তবা তার ছেলে রুমি ফিরে আসত ১৬ ডিসেম্বর।
স্বাধীনতার ৩৬ বছর পর আজও বাংলার ঘরে ঘরে হাজার হাজার আজাদের মা, রুমির মা, জুয়েলের মায়েরা নিভৃতে চোখের পানি ফেলে। পৃথিবীর সব কষ্ট হয়ত সময়ের সাথে সাথে হালকা হয়ে যায় কিন্তু সন্তান হারাবার কষ্ট কি কোন দিন কমে। জীবনের প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত সেই ছেলে হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে তারা বেঁচে থাকে।
মায়ের কাছে সন্তান বিদায় নিয়ে দূরে কথাও চলে গেছে। সেই শহীদ মায়েরা তাদের ছেলের মুখ আর কোন দিনও দেখতে পাবে না, তাদের ছেলেরা বর্ষার তুমুল বর্ষণে মায়ের হাতের আদরে মাখা খিচুরী খাবে না, ঘোমটার ফাঁক গলে চেয়ে থাকা মায়ের দৃষ্টি নিয়ে শরতের আকাশে ঘুড়ি উড়াবে না, কনকনে শীতের রাতে মায়ের বুকের উষ্ণতা নিবে না, ক্লান্ত হয়ে বাসায় এসে মায়ের শাড়ির আঁচলে মুখ মুছবে না, গ্রীষ্মের উত্তপ্ত দুপুরে মায়ের খোলা শীতল পিঠে কচি শরীর লেপটে ঘুমাবে না, মায়ের অনেক আদরের মানুষটি কখনই মাকে নিয়ে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশেকে দেখতে পাবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।