আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উইলিয়াম ডালরিম্পলের ইন্টারভিউ (পর্ব -১)

বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে

১৮৫৭ সালে বৃটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিতে শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের মধ্যে প্রবল অনিচ্ছা ও সংশয় ছিল। উইলিয়াম ডালরিম্পল দিল্লিতে মোগল সাম্রাজ্যের শেষ দিনগুলোর কথা তার নতুন বইয়ে বর্ণনা করেছেন। এ বইটিতে মোগল ডায়নেস্টির ট্র্যাজিক পরিণতির বিষয়টি উঠে এসেছে। দিল্লিতে মোগলদের আকস্মিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটটির পাশাপাশি উন্মত্ত বৃটিশ সেনাদলের বর্বরতা আলোচিত হয়েছে বইটিতে। এ বর্বরতা কেবল একটি নগরী দখল করে নেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না।

এটি ছিল একটি সভ্যতার ধ্বংসযজ্ঞ। ১৮৫৭ সালের সেই ঘটনার প্রেক্ষাপট নিয়ে ডালরিম্পলের এই লেখা এখন পর্যন্ত তার সেরা কাজের একটি। এতে তিনি প্রচুর পরিমাণ উপাত্ত ব্যবহার করেছেন। এগুলো ঘটনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ধারণা পেতে পাঠকদের সাহায্য করবে। বাহাদুর শাহ এমন এক সময়ে সম্রাট ছিলেন যখন বিশাল মোগল সাম্রাজ্যের উজ্জ্বলতা নিভু নিভু।

কেবল নামেই সম্রাট ছিলেন তিনি। কিন্তু ডালরিম্পলের চোখে তিনি ছিলেন ইসলামিক সিভিলাইজেশনের প্রতীক। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন খুবই সহনশীল এবং বহুত্ববাদী। কবি এবং গজল লেখকও ছিলেন জাফর। তিনি দিল্লিতে সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন।

১৮৫৭ সালে বিদ্রোহের নামে বৃটিশরা অনেক কিছুই করেছিল। ডালরিম্পলের যুক্তিতে বৃটিশরা এতে শুধু একটি সাম্রাজ্য এবং নগরী ধ্বংস করেনি বরং বহুত্ববাদী দর্শনসত্তার যৌগিক একটি সভ্যতাকে ধ্বংস করেছে। এসব বিষয় উঠে এসেছে ডালরিম্পলের নতুন বইটিতে। এই নতুন বই দি লাস্ট মোগল নিয়ে দি হিন্দুর সঙ্গে কথা বলেছেন উইলিয়াম ডালরিম্পল। প্রশ্ন : দি লাস্ট মোগলকে আপনি প্রধানত কিভাবে দেখেন - ইতিহাস, আত্মজীবনী, হারানো সভ্যতার দিকে লোকগাথা ও গল্পের সুতোয় পাঠকদের টানা, নাকি একটু একটু করে সবকিছু? উত্তর : একটি ইতিহাস।

নিশ্চিতভাবে এটি কোনো আত্মজীবনী নয়। কারণ আমি সত্যিই বাহাদুর শাহ জাফরের জীবনের প্রথম ৭০ বছর নিয়ে কিছুই লিখিনি। আমি মনে করি এটি সমগ্র দিল্লির একটি পোর্ট্রেইট, দিল্লিতে মোগলদের শেষ দিনগুলোর কথা। সেই সঙ্গে বৃটিশদের দ্বারা মহাপ্রলয়তুল্য ধ্বংসযজ্ঞের ইতিহাস। প্রশ্ন : আপনার দৃষ্টিতে বিদ্রোহটি (১৮৫৭ সালের) সবকিছুরই সংমিশ্রণ একটি সেনা বিদ্রোহ, স্বাধীনতা যুদ্ধ, কৃষক শ্রেণীর বিদ্রোহ।

কিন্তু সেই সময়ের অন্যান্য ইতিহাস থেকে আলাদা করে বোঝার জন্য কোন একক প্রেক্ষাপটটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? এই বিদ্রোহের বিষয়টি কোনো না কোনোভাবে কি ধর্মের যুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল? উত্তর : এটিকে ধর্মের যুদ্ধ হিসেবে কেউ কেউ অভিহিত করেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সেখানে গভীর কোনো দুঃখ-দুর্দশা ছিল না। যে কেউ পশ্চিমের বিপরীতে সমকালীন ইসলামিক অভ্যুত্থানের বিষয়টি সমান্তরাল পর্যায়ে আকতে পারবে। মিডল ইস্টে যে বিষয়টিতে বিন লাদেন সমর্থন যুগিয়েছেন তাকে আমেরিকার ফরেইন পলিসির বিরোধের বাস্তব রাজনৈতিক দুঃখ-দুর্দশা বলা যায়। আমেরিকার প্রতি ইসরেলের সমর্থন এবং ধর্মের ও দেশের অন্তর্বিরোধসহ আরো বেশ কিছু বিষয়ের ভিত্তিতে।

আর এই বিরোধকে একই ভাষায় ধর্মের যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করা যায়। ১৮৫৭ সালে একইভাবে বিষয়টি সত্যি হয়েছিল। তাই বলা যায়, সেই বিদ্রোহটিকে ধর্মের ভাষায় প্রকাশ করা মানেই ততকালীন সময়ের পার্থিব, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, দুঃখ-দুর্দশার বিষয়গুলোকে অস্বীকার করা নয়। এছাড়া আমি নিজে বিশেষভাবে দিল্লি সম্পর্কে লিখেছি। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও রয়েছে।

দিল্লি একটু ব্যতিক্রম ছিল। উদাহরণস্বরূপ লক্ষৌর-এর সঙ্গে তুলনা করা যায়। প্রশ্ন : কিন্তু যদি বইটিতে নতুন কোনো ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তাহলে বিষয়টি কি? উত্তর : আপনি জানতে চাইছেন কোন বিষয়টি ইউনিক। আমি এখানে বলতে চাই, সেখানে দুটি বিষয় রয়েছে। এগুলো আশাব্যঞ্জকভাবে ১৮৫৭ সালের ঘটনার নতুন কিছু মজাদার দিক বর্ণনা করে।

প্রথমটি হচ্ছে দিল্লির কেন্দ্রীয়তার প্রতি অধিক গুরুত্ব দেয়া। বিষয়টি ১৮৫৭ সালের অনেক ইনডিয়ান জাতীয়তাবাদী ইতিহাসবিদের কাছেই অস্বস্তিদায়ক ছিল। কারণ এখানে আপনাকে সিপাহিদের বিষয়টি দেখতে হবে। শতকরা ৮৫ ভাগ সিপাহিই নিচু জাতের হিন্দু ছিলেন। তারা তাদের আবার শাসন করার জন্য মুসলিম সম্রাটের কাছে গিয়েছিল।

এটি সাভারকারের ফার্স্ট ইনডিয়ান ওয়ার অফ ইন্ডিপেন্ডেন্স-এ যা বলেছেন তেমন কিছু নয়। উদাহরণস্বরূপ তিনি মঙ্গল পা-ের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তাকে আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে দাড় করিয়েছেন। নিশ্চিতভাবে পান্ডে বিভিন্ন দিক থেকে একজন হিরো ছিলেন কিন্তু পক্ষপাতিত্বহীনভাবে বলতে গেলে তিনি ছিলেন প্রান্তিক পর্যায়ে। ১ লাখ ৬৭ হাজার সিপাহির মধ্যে ১ লাখ সিপাহি সরাসরি দিল্লিতে গিয়েছিল এবং জাফর শাহকে বলেছিল তাদের নেতৃত্ব দিতে। এ ব্যাপারটি বিবেচনায় রাখা উচিত।

আমি আগেই বলেছিলাম এই লোকগুলোর শতকরা ৮৫ ভাগই নিম্ন জাতের হিন্দু ছিলেন। ইনডিয়া সম্বন্ধে এসব বিষয় কি বলে - আনুগত্য, বিশ্বস্ততা, নাকি আরো কিছু? মোগল শাসনের ধারণা সম্পর্কে সত্যিকার অর্থেই ইনডিয়াতে খুবই দ্বৈত অবস্থা বিদ্যমান। ১৯৯২ সালের ঘটনা এবং ১৮৫৭ সালের ঘটনার মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ রয়েছে। ১৯৯২ সালে মোগল সিম্বলের (বাবরি মসজিদ) বিরুদ্ধে হিন্দুদের বিরোধ দেখা যায়, কিন্তু ১৮৫৭ সালে নিম্ন শ্রেণীর হিন্দুরাই সিংহাসনে মোগলকে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল। প্রশ্ন : আর দ্বিতীয় বিষয়টি? উত্তর : দিল্লিতেই এগুলো নিয়ে ২০ হাজারের মতো উর্দু এবং ফার্সি প্রাইমারি সোর্স রয়েছে।

এগুলো আমাকে বিদ্রোহটি সম্বন্ধে অবিশ্বাস্য কিছু তথ্য জানতে সাহায্য করেছে। আমি এই আর্কাইভের সামান্য কিছু ভাগ কৃপণভাবে ব্যবহার করেছি মাত্র। প্রশ্ন : এটি কি তাই যাকে আপনি মিউটিনি পেপার বলছেন? উত্তর : এটি ক্যাটালগের মতোই। এই পেপারগুলোতে রেড ফোর্টের চ্যান্সেলর, সিপাহি রেজিমেন্টের রেকর্ড, দিল্লি জজ কোর্টের রেকর্ড, দিল্লি কোর্টওয়াল এবং থানাগুলোর রেকর্ড রয়েছে। এগুলো স্টৃট লেভেলের আর্কাইভের মতো।

তবে এগুলো প্রায় অব্যবহৃতই ছিল। (চলবে) অনুবাদ : একরামুল হক শামীম

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.