বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে
১৯৮৪ সালের ১৬ জানুয়ারি যখন কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের রাতে মাত্র ১৮ বছর বয়সে দিল্লিতে পৌছাই তখনই আমি প্রথমেই এর প্রেমে পড়ি। এয়ারপোর্টটিতে তখন শাল আচ্ছাদিত মানুষে পরিপূর্ণ ছিল। আশ্চর্যজনক ঠান্ডা আবহাওয়া ছিল তখন।
ইনডিয়া সম্পর্কে আমি মোটেও কিছু জানতাম না। আমার শৈশব কেটেছে স্কটল্যান্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
এডিনবার্গের দক্ষিণ-পশ্চিমের ফর্থের মোহনার কাছাকাছি থাকতাম শৈশবে। আমার স্কুলের সময়টিতে আমি খুবই ঘুরে বেড়াতাম। সম্ভবত এ কারণেই দিল্লি এবং ইনডিয়া সাধারণভাবে আমার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এছাড়া নগরীটিতে কসমোপলিটান টিনএজার বেশি ছিল। শুরু থেকেই নগরীটি আমাকে ব্যাপকভাবে টেনেছিল।
আমি চারপাশ দেখে কিছু মাস কাটিয়ে দিয়েছিলাম। গোয়াতে আটকে ছিলাম কিছুদিন। কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই দিল্লির ফিরতি পথ ধরতে হয়েছিল আমাকে। সবকিছুর মধ্যে ধ্বংসাবশেষগুলো আমাকে আলাদাভাবে আকৃষ্ট করেছে। মৃদু দীপ্তিমান কংকৃটের নতুন কলোনি গড়ার চেষ্টা বুঝতে পারছিলাম।
গির্জার টাওয়ার, পুরনো মসজিদ অথবা প্রাচীন ইসলামিক কলেজ সবকিছুতেই পরিকল্পনাবিদরা অনাকাক্সিক্ষতভাবে প্রবেশ করার চেষ্টা করছিল। নিউ দিল্লি কোনোভাবেই নতুন ছিল না। এর প্রশস্ত এভিনিউয়ের চতুর্দিকে রাজবংশগুলোর সমাধিক্ষেত্র রয়েছে।
বিশেষত জাফরের প্রাসাদ মোগলদের ‘দি রেড ফোর্ট’ আমাকে অতীতের স্মৃতিতে নিয়ে যায়। সেখান থেকেই প্রথম আমি মোগলদের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু লেখার চিন্তা করি।
আইডিয়াটিই এখন চারখন্ডে ঠাই পাচ্ছে, মোগলদের চার ভলিউম একটি ইতিহাস। আমি আশা করছি এটি শেষ করতে আরো দুই যুগ লেগে যাবে।
প্রায়ই আমি রেড ফোর্ট দেখতে যেতাম। সেখানে একটি বই নিয়ে ঘুমাতাম এবং সারা বিকাল কাটিয়ে দিতাম। ঠান্ডা প্যাভিলিয়নের ম্লান আলোতে বসে থাকতাম।
রেড ফোর্ট সবসময়ই আমাকে ব্যথিত করতো। যখন বৃটিশরা ১৮৫৭ সালের পর এটি দখল করে নেয়, তারা জাকমজকপূর্ণ অ্যাপার্টমেন্টগুলো ভেঙে ফেলে। সেই স্থানে তারা কুতসিত কিছু ভবন গড়ে তোলে। কিছু কিছু ব্যারাক গুল্মবিশেষে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে।
এখনো এই ধ্বংসপ্রাপ্ত কাজটিকে খেয়ালি এবং সংস্কৃতি বিবর্জিতদের কর্মকা- হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
গ্রেট ভিক্টোরিয়ান আর্কিটেকচুয়াল হিস্টোরিয়ান জেমস ফার্গুসন কোনো কিছু নিয়েই বিস্তারিত বর্ণনা করেননি। কিন্তু তিনি তার ‘হিস্টোরি অফ ইনডিয়ান আর্কিটেকচার’ এ কিছু ঘটনার রেকর্ড তুলে ধরেছেন। এগুলো ধ্বংস-উন্মাদনার চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে। তিনি যা লিখেছেন তা এখনো চিন্তা করা হয়নি। পৃথিবীর জমকালো একটি প্রাসাদের যে কোনো রেকর্ড রক্ষার পরিকল্পনা করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আধুনিককালে শুধু পেকিনের সামার প্যালেসের সঙ্গে এ ধ্বংসাবশেষের তুলনা চলে।
হত্যাযজ্ঞের পরও যেসব নগরবাসী বেচে ছিল তারাও আত্মরক্ষার্থে চলে গিয়েছিল দেশের সীমান্ত এলাকায়। দিল্লি হয়ে পড়েছিল শুধু ধ্বংসাবশেষ। যদিও সম্ভ্রান্ত পরিবারটি শান্তিপূর্ণভাবেই আত্মসমর্পণ করে। সম্রাটের ১৬ পুত্রের অধিকাংশকেই বিচার করে ফাসিতে ঝোলানো হয়।
এর মধ্যে তিনজনকে নগ্নভাবে গুলি করে মারা হয়।
‘চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আমি বাড়িটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের শেষ করে ফেলি। ’ ক্যাপ্টেন উইলিয়াম হডসন পরদিন তার বোনের কাছে চিঠিতে এমনটাই লেখেন। ‘আমি হিংস্র নই তবে আমি মনে হয় ভাগ্যপীড়িতদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার সুযোগ পেয়ে আনন্দিত হয়েছি। ’
জাফরকে তার পুরনো প্রাসাদে ট্রায়ালের মুখোমুখি করা হয়।
তাকে নির্বাসনের আদেশ দেয়া হয়। ছোট কৃষকের দুই চাকার বলদের গাড়ি চড়ে তাকে প্রিয় দিল্লি ছাড়তে হয়। প্রিয় সব কিছু ছেড়ে ভাঙা হৃদয়ে তাকে চলে যেতে হয়। এই শেষ গ্রেট মোগল ৮৭ বছর বয়সে ১৮৬২ সালের ৭ নভেম্বর শুক্রবার রেঙ্গুনে নির্বাসিত অবস্থাতেই মারা যান।
এটি খুবই অসাধারণ ও ট্র্যাজিক একটি কাহিনী।
আমি এ বিষয়ে গবেষণার জন্য গত তিন বছর সময় উৎসর্গ করেছি। জাফরের চিঠি এবং তার কোর্ট রেকর্ডের আর্কাইভ লন্ডন, লাহোর এমনকি রেঙ্গুনেও পাওয়া গেছে। তবুও এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ জিনিস দিল্লিতে রয়েছে। দিল্লি ছিল সাবেক মোগল রাজধানী, জাফর এ স্থানটিতে বাস করতেন এবং ভালোবাসতেন এ স্থানটিকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।