আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
রাত ১.৩০ বাজে ঘড়িতে। চ্যানেল আইতে তৃতীয় মাত্রা দেখছিলাম। ইয়াবা ব্যবহারকারী এক মহিলা তার ইয়াবা সেবনের কাহিনী তুলে ধরছেন। মহিলা সাহসী বটে, সেই সাথে সুন্দরীও। অপরপক্ষে ছিলেন, একজন রাজনীতিবিদ নুরে আলম সিদ্দিকি।
ভালই লাগল, কিন্তু ঘুম আসছে না। একদমই আসছে না। তাই ব্লগে লেখা শুরু করলাম। আজকের আমার ধূমপান শুরু করা ও তার থেকে মুক্তির কিছু কথা বলব।
আমি সিগারেট ধরি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষে থাকাকালীন।
এর আগে কখনো আগ্রহ আসে নি এই জিনিসের প্রতি। যদিও আমার বাবা চেইন স্মোকার, ঘরে আমাদের সামনেই ধুমপান করে। আমি কেন ধুমপান শুরু করলাম জানি না। সত্যি বলতে কি হরলিক্সের সেই বিজ্ঞাপনের ভাষায় “এমনি এমনিই খাই” বলাটাই সঠিক হবে। যদিও এটা ঠিক আমার মানসিক অবস্থা সেই সময় স্থির ছিল না।
বাহ্যিক ভাবে প্রকাশ না পেলেও, মনের ভিতর নিজের জীবন নিয়ে ঝড় চলছিল। সে কথা পরে কোন এক পোস্টে লিখতে চেষ্টা করব।
প্রথমে একটা দুইটা এরপর চার-পাঁচ শেষ পর্যন্ত দিনে বিশ পচিঁশটা পর্যন্ত স্মোক করেছি। জীবনের সব সমস্যার সমাধান ধরে নিয়েছিলাম স্মোকিং। ধুয়া টেনে নিতাম বুকের গভীর পর্যন্ত।
বুকের মাঝের শুন্যতাটাকে ভরে নিতে চেষ্টা করতাম, কিন্তু অসীম এ শুন্যতা ভরা সম্ভব হত না। চলত একের পর এক। প্রায় এক দেড় বছর আমি স্মোকিং করেছি প্রায় নিয়মিতই। কিছু কষ্টের কথা মনে পড়ত আর শুরু হত আমার ধুয়া নিয়ে খেলা। খেলতে খেলতে নিয়ম উলটা হয়ে গেল।
ধুয়া চলত সারাদিন আর কষ্ট গুলো চলত তারই সাথে।
মাঝে মাঝে চিন্তা করেছি ছেড়ে দেব। কিন্তু, শুরু করতেই পারি নি। কিন্তু, একদম শেষ পর্যায়ে এসে নিজেকে শক্ত করে সিদ্ধান্ত নিলাম। প্রথম পদক্ষেপ ছিল, হাতের কাছের সব সিগারেট ফেলে দেওয়া, তাই দিলাম ফেলে।
প্রথম দুই তিন দিন ভালই চলল। এরপর শুরু হল ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া। রাস্তার সিগারেটের দোকান গুলোও টানতে শুরু করল। কিন্তু, নিজেকে বেধে ফেলতাম।
একদিন রাতে দেখি আমার হাতে সিগারেট।
জ্বলন্ত সেই জিনিসটার দিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে আমি তাকে টানছি। আসে পাশের সব কিছুই আবছা, শুধু সিগারেট স্পষ্ট। কেমন লাগে চিন্তা করুন, এত করে ছাড়তে চেষ্টা করেও ছাড়তে পারলাম না। কিন্তু, মন বলে উঠল এ হতে পারে না। রাত বাজে একটা, আমার কাছে কোন সিগারেট নেই।
তাই তো?? আমি সিগারেট পাব কোথায় এত রাতে? ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে দেখি আমি ঘামছি, খুব ঘামছি। স্বপ্নটার অনুভব এত প্রখর ছিল যে, ক্ষণিকের জন্য আমি বাস্তব কেই অবাস্তব ভেবে নিয়েছিলাম। তখনই বুঝলাম আসক্তির ভয়াবহতা।
নিজেকে আরো শক্ত করতে হল।
এবার বলতে পারেন কংক্রিট করে ফেললাম। অবশেষে, মুক্তি। এরপর কয়েক মাস আর স্মোকিং করি নাই। এরপর মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে দুই একটা চলে।
সিগারেট ছেড়ে দিতে গিয়ে আমি কিছু শিক্ষা পেয়েছি।
সবথেকে বড় শিক্ষা, আসক্তি মানুষের সবথেকে বড় দূর্বলতা। তা সে সিগারেট হোক আর প্রেমই হোক না কেন। একটা কথা বলি, সিগারেটের সাথে সাথে আমি সব প্রকার আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছি। এর মধ্যে প্রেম অন্যতম। সিগারেট ছাড়তে পারলেও, প্রেম ছাড়তে পারি নাই, কারন একটাই! প্রেম যে আমাকে ধরে রেখেছে।
সিগারেটকে আমি ধরে রেখেছিলাম যতক্ষণ, সিগারেটও আমাকে ততক্ষণই আকঁড়ে রেখেছিল। যেই না ছেড়ে দিলাম, অমনি চলে গেল। অথচ, প্রেমে আমি যত ঢিলা দিলাম, প্রেম আমাকে ততই আকঁড়ে ধরল।
তারপরও তারপরও তারপরও বলব আসক্তি খুব খারাপ। এমনকি, প্রেমে আসক্তিও ক্ষতিকর।
প্রেমে পড় কিন্তু আসক্ত হয় না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।