আমিও সুরের মত মিলিয়ে যাবো। ততদিন পর্যন্ত পাওয়া যাবে paintlove@gmail.com এ...
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। দুই দিনে ক্লাস হয়েছে মাত্র ৩টা...। অবাক কান্ড ...আমরা ছাত্ররা যেমন অনেকদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলায় একসঙ্গে হতে পেরেছি.. আড্ডা দিচ্ছি। স্যাররা তেমনি এসে আড়মোড়া ভাঙছেন।
কেউ কেউ তো ক্লাসেই আসলেন না। আবার কেউ এসে বললেন, " আমি আসলে আজকে প্রিপেয়ার হয়ে আসি নাই, বল তো কতদূর পড়ানো হয়েছিল...! আমার ঠিক মনে নাই" ....যাক আজকে তাইলে ক্লাস হচ্ছে না। ভালোই হবে। স্যাররা যথারীতি আমাদের মনের কথা বুঝতে পারলেন। নামটা প্রেজেন্ট করে চলে গেলেন।
অথচ চতূর্থ বর্ষ শেষ হবে কবে তার কোনো ঠিক নাই। যদিও কথা ছিল আগামী মার্চ মাসে পরীক্ষাটা হয়ে যাবে...কিন্তু বিশাল একটা বন্ধ পড়ায় তা অনিশ্চিত। হিসেব মতে দুই মাস দেরী হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পরীক্ষাটা আরো ছয় মাস পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে। চার বছরের অনার্স কোর্সের ইতিমধ্যে সাড়ে ৫ বছর পূর্ণ হয়ে গেছে।
একদিকে মনটা খারাপ কারণ বন্ধুরা সবাই পাস করে চাকরী করছে। কেউ কেউ তো আবার বাচ্চার বাপ হয়ে গেছে বিয়ে করে। কবে যে...
এর মধ্যে তিন বন্ধু মিলে জুড়ে দিলাম গল্প। তার মাঝে আঁতেল টাইপের একজন শুরু করলো আজব কথা...
: দেখ, এই যে আমরা সব কিছু দেখি, এই যে তোকে দেখছি..আমরা তো থ্রি-ডি দেখছি। অথচ, টিভিতে দেখি যা সেটা তো টু-ডি...
: আরে ধুর কি থ্রি-ডি আর টু-ডি..? তোরে কে বলছে এই সব..? সবই থ্রি-ডি দেখি।
: না..চিন্তা কর...এই যে টিভি ...সেটাতো আসলে টু-ডি..
এইবার আরেক আঁতেল বন্ধু তাতে সমর্থন দিলো...
: যদি এখন এই রুমের মধ্যে একটা ত্রিমাত্রিক ইমেজ তৈরী করতে পারে..তাইলে সেইটারে থ্রি-ডি বলা যাবে।
: তোগো কি মাথা খারাপ হইছে?
: তোরা আমার কষ্টটা বুঝলিনা..
: তোর আবার কিসের কষ্ট..?
: এই যে আমরা আয়নাতে নিজেরে দেখি..এইটা কি টু-ডি দেখি না থ্রি-ডি দেখি? ....মানুষ কত কিছু আবিষ্কার কইরা ফেললো অথচ এখনও নিজেরে থ্রি-ডি দেখতে পারলো না...আমি এখনও নিজেরে দেখতে পারলাম না..
এবার ২য় আঁতেল বন্ধু বলছে,
: জানস, নতুন একটা খবর শুনছি...মানুষরে নাকি থ্রি-ডি থাইকা..টু-ডি করা যাবে ...তখন আমেরিকা যাইতে ২মিনিটও লাগবে না..
: হা হা....একেবারে টম এন্ড জেরীর মত...টু-ডি কইরা ফেলব..তা তোরে কেমনে আমেরিকা পাঠাইবো?
: আরে বুঝলিনা...ওরে টু-ডি কইরা ফ্যাক্স কইরা দিতে হইব...
এসব আজেবাজে হাসাহাসি করে দিন পার করে দিতে হল...শেষ ক্লাসে স্যারকে জিজ্ঞেস করা হল...কবে পরীক্ষা হতে পারে..তিনি তার সমস্ত রাগ ঝাড়লেন..."আরে ওদের ভার্সিটি, প্রাইভেট ভার্সিটি ২দিনের মাথায় খুলে যায়..আর পাবলিক ভার্সিটি কি দোষ করল, যে বন্ধ থাকতে হবে...তোমরা সময় পেলে জাফর ইকবালের লেখাটা পড়বে...এই যে নেতা দের ধরছে...দুর্নীতির অভিযোগে..কোচিং সেন্টার গুলো তো আরো দুর্নীতি করছে...লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে..ওরা এমন কি যে ধরা ছোঁয়ার বাইরে...এখন তোমাদের ২মাস ক্লাস হলো না..বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তো চেষ্টা করবেই। কিন্তু তোমাদেরও দোষ আছে...তোমাদের তো গরজ নাই, আটটার ক্লাস তোমরা হেলে দুলে সাড়ে আটটা পর্যন্ত আসতে থাকো, টিউশন ফি দুই টাকা বাড়লে তোমরা আন্দোলন শুরু কর..জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও। ....এই যে হলে থাকো..কত টাকা সিট ভাড়া দাও? আচ্ছা তোমরাই বল একটা বাল্বের দাম কত? দেখা যায় পানি ছেড়ে রেখে একজন শেইভ করে যাচ্ছে...এই যে অপচয়গুলো , এসব কখনও চিন্তা করেছ?....আর সাথে কিছু সাংবাদিক এটাকে আরও উসকে দিচ্ছে.....এই যে দেখ সেদিন ভার্সিটি খুললো..টিভি তো রিপোর্ট হল, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে..তারপর ছবি দেখালো কিসের...অপরাজেয় বাংলার নিচে বসে কয়েকজন আড্ডা দিচ্ছে। বল তোমরা এইটা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণচাঞ্চল্য? বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হলো তার ক্লাসে, ল্যাবে....আড্ডা তো তোমরা দিবেই...সেটা হলো একটা পার্ট..কিন্তু এখন তো এটাই মেইন হয়ে গেছে..।
সুতরাং দোষ তো তোমাদেরও আছে...."
স্যারের ঝাড়ি খেয়ে আমরা সব নিশ্চুপ বসে রইলাম....এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে লাগলাম...জানিনা আমাদের টু-ডি লাইফ কখন থ্রি-ডি হবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।