রসুলে পাক(দঃ)বলেছেন,যে ব্যত্তি এ জগতে কোন মোমিনের দুঃখ দূর করে,পরজগতে আল্লাহ তার দুঃখ দূর করবেন এ
ইসলামের আলোকে সন্তানের প্রতি পিতামাতার কর্তব্য (২)
মাওলানা মুহাম্মদ নাছির উদ্দীন তৈয়বী
সন্তানের সূন্দর নাম রাখা পিতা মাতার উপর একটি কর্তব্য। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করছেন,মানুষ নিজ সন্তানকে সর্ব প্রথম যে তোহ্ফা প্রদান করে,তা হল সন্তানের সূন্দর নাম। সুতরাং সন্তানের সূন্দর নাম রাখা উচিত। রোজ কিয়ামতে তোমাদেরকে পিতার নামের সাথে একত্রে আহবান করা হবে। তাই তোমরা ভাল নাম রাখো।
(তিরমিজী শরীফ)অন্য এক হাদীসে নবী পাক(দঃ)ইরশাদ করেছেন তোমরা নবীদের নামে নাম রাখো। (আবু দাউদ শরীফ)শরীয়ত বিরোধী ইহূদী ও খৃস্টানদের অনুসরণে অস্লীল ও কূরুচিসম্পন্ন নাম রাখা বৈধ নয়।
শিশু সন্তানকে মাতার দুধ পান করানো ও একটি দায়িত্ব। জন্মের পর শৈশব অবস্থায় শিশুর প্রধান খাদ্য হল মায়ের দুধ। তাই দু বছর পযন্ত সন্তানকে দুধ পান করাতে হয়।
এ সর্ম্পকে পবিএ কুরআন মজিদে আল্লাহ পাক বলেন,মাতাগণ তাদের সন্তানদিগকে পূর্ণ দু বছর দুধ পান করাবে। (সুরা বাকারা)
নিজ মাতার অসুস্থতা,অপারগতা বা অনিচ্ছায় অন্য মহিলা ও কোন শিশুকে দুধ পান করাতে পারে। শরীয়তে ঐ মহিলাকে দুধ মাতা বলা হয়।
ছেলে সন্তানের খৎনা করা ও একটি সুন্নাত। প্রত্যেক মুসলমান পিতা মাতার কর্তব্য যেন নিজ ছেলে সন্তানকে সময়মত খৎনা করানোর মাধ্যমে সুন্নাতের আমল করে।
জ্ঞান মনুষ্যত্ব ও চরিত্র বিকাশের একটি অপরিহায্য বিষয়। জ্ঞান অজন ছাড়া মানব জীবন পরিপূর্ণরুপে বিকশিত হতে পারেনা। ইসলামি বিধানে প্রত্যেক মুসলমান নরনারীর উপর জ্ঞান অজন করাকে ফরজ করা হয়েছে। এ সর্ম্পকে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন প্রত্যেক মুসলমান নরনারীর উপর জ্ঞান অজন করা ফরজ পিতা-মাতার উপর কর্তব্য,সন্তানের জ্ঞান অজনের যথাযথ ব্যবস্থা করা বিশেষ করে দ্বীনি ইল্ম বা ধর্মীয় জ্ঞান।
সে পর্যন্ত অজনের ব্যবস্থা করা,যা দ্বারা শরীয়তের আহকাম যথাযথ ভাবে পালন করতে পারে।
ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী আমল করার জন্য সন্তানকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যেন সন্তান শৈশব কাল থেকেই আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যের দিকে রুজু হয়। সাধারণতঃশিশুরা অণুকরণ প্রিয় হয়। জীবনের প্রারম্ভে যদি সন্তানকে ইসলামী আদশের প্রতি মনোনিবেশ করা হয়,তা পরবর্তী জীবনে তার অন্তরে সুদৃঢ়্ভাবে স্থান পাবে। শিশু হয়ে উঠবে আদর্শবান ও চরিত্রবান মানুষ।
ইহকালে সিরাতে মুস্তাকিমের উপর অবিচল থাকবে। আর পরকালে দোযখ থেকে নাজাত পাবে। পবিত্র কুরআন কারীমে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা বলেন, হে মু মিনগণ তোমরা নিজেদেরকে ও স্বামী পরিবার বর্গকে দোযখ থেকে বাঁচাও,যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর। (সুরা আত্তাহরীম)সুতরাং ইসলামী তরীকা অনুযয়ায়ী সন্তানের লালন পালন করা পিতামাতার জিম্মায় বতায় বিশিস্ট সাহাবী হযরত জাবের বিন সামুরা(রাঃ)হতে বর্ণিত,তিনি বলেছেন রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান,কোন ব্যত্তি স্বীয় সন্তানকে আদব শিক্ষা দেয়া এক সা'সদকা করার চেয়েও উত্তম। (তিরমিজী শরীফ) অপর এক হাদীসে হুযুর(দঃ) ইরশাদ ফরমান,সন্তানের বয়স সাত বছর হলে নামায পড়ার নির্দেশ দাও।
আর দশ বছর হলে নামায না পড়লে নামাযের জন্য প্রহার কর। (আবু দাউদ শরীফ) কন্যা সন্তানের হক আদায়ের ক্ষেত্রে শরীয়তে বিশেষ তাগিদ দেয়া হয়েছে। ইসলাম পূব্বর্তী যুগে কন্যা সন্তানের অধিকার চরমভাবে খর্ব করা হতো। পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের কোন অধিকার ছিলনা। ইসলাম তাদেরকে দিয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক ন্যায্য অধিকার।
অধিকন্তু কন্যা সন্তানের লালন পালনে এক বিশেষ মর্যদা দেয়া হয়েছে ইসলামী শরীয়তে। প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আবু সাঈদ খুদ্রী(রাঃ)বর্ণিত,রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে ব্যত্তি তিনজন কন্যা বা তিন জন বোন অথবা দু জন কন্যা বা দু জন বোনকে লালন পালন করে এবং তাদের সাথে সদাচরণ করে। তাঁর জন্য জান্নাত রয়েছে। (তিরমিজী শরীফ)
কারো একাদিক সন্তান থাকলে তাদের মধ্যে শরীয়তের ভিত্তিতে সমতা বিধান ও ইনসাফ করা ও পিতামাতার উপর কর্তব্য। যাতে কোন সন্তান পিতা মাতা কর্তৃক বৈষেম্যের শিকার না হয়।
প্রসঙ্গতঃউল্লেখ্যযে,সন্তানের লালন পালনে আথিক খরচ বহন করা পিতার দায়িত্ব।
ইসলামী বিধান মোতাবেক সন্তানের হক আদায় করলে নিঃসন্দেহে সন্তান মুত্তাকী,চরিত্রবান ও আদশ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। পারিবারিক জীবনে ইসলামী মুল্যবোধ প্রতিস্টিত হবে। পারিবারিক ও সামাজিক জীবন থেকে বিশৃংখলা,হানাহানি,মনোমালিন্য ইত্যাদি দূরীভূত হবে। পক্ষান্তরে সন্তানের যথাযথ হক আদায় না করলে পিতামাতাকে আল্লাহ তায়ালার নিকট জবাবদিহি করতে হবে।
মহান আল্লাহ প্রত্যেক মু'মিনকে স্বীয় সন্তানের যথাযথ হক আদায় করার তৌফিক দান করুন।
আল্লাহর পাক দরবারে এ প্রাথনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।