আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হারিকেন - দ্য ডিভাইন উইন্ড (১)

পুনরায় রৌদ্রহীন রৌদ্রে আমি, পথহীন পথে

হারিকেন/সাইক্লোন নিয়ে ধারাবাহিক কিছু লিখব ভাবছি। আজ প্রথম কিস্তি। পর্ব এক – কামিকাজি =============== (আমেরিকায় যা হারিকেন, জাপানে তা-ই টাইফুন এবং আমাদের দেশে সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় নামে পরিচিত। এই নামকরণ নিয়ে পরের একটি পর্বে আলোচনা করার ইচ্ছে আছে) এক সময় ইতিহাসখ্যাত দুটো টাইফুন জাপানকে চীন তথা মোংগলদের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল। অন্যথায় আজ জাপান হয়ত চীনের একটি অংশ হয়ে যেত।

১২৩০ সালে মোংগল-রা উত্তর চীন দখল করে নেয় এবং ১২৩১ থেকে ১২৩৮ সালের মধ্যে কোরীয় উপদ্বীপ আয়ত্বে আনে। কোরিয়া থেকে মাত্র ১০০ মাইল দূরত্বে অবস্থিত জাপান এ সময় মোংগল-দের আক্রমণের ভয়ে আতংকিত ছিল। ১২৫৯ সালে কুবলাই খান সিংহাসনে আরোহণের পর অনেকবারই জাপানের সম্রাটের কাছে দূত পাঠিয়েছিলেন বশ্যতা স্বীকার করার জন্য। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দূতগুলো নিহত হয়েছিল সম্রাটের কাছে পৌঁছানোর আগেই। অতঃপর ১২৭৪ সালের ২৯ শে অক্টোবর জাপান দখলের অভিপ্রায়ে কুবলাই খান তার প্রথম অভিযান শুরু করেন।

মোংগলরা সমুদ্রযাত্রায় মোটেও পারদর্শী ছিল না। এজন্য অনেক কোরীয় ও চীনা নাবিককে এ অভিযানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং প্রায় ৪০ হাজার সৈন্যের বিশাল বাহিনী ৯০০ টি জাহাজে করে পাঠানো হয়। ১৯ শে নভেম্বর জাপানের কিয়োশু উপকূলে মোংগল বাহিনী অবতরণ করে। মোংগলদের ব্যাপক আক্রমণে জাপানীরা উপকূল থেকে অভ্যন্তরে পশ্চাদপসরণ করে। রাতের বেলা অভিজ্ঞ কোরীয় নাবিকরা টের পায় বিশাল এক সামুদ্রিক ঝড় ধেয়ে আসছে তাদের দিকে।

জাহাজ সরিয়ে নেবার জন্য মোংগল সেনাপতিদের কাছে কাকুতি-মিনতি করলেও অনভিজ্ঞ মোংগলরা এতে অস্বীকৃতি জানায়। পরদিন সকালে প্রলয়ংকরী এক টাইফুন প্রায় পুরো নৌবহর ধ্বংস করে দেয়। প্রায় ১৩ হাজার সৈন্য বেঘোরে মারা পড়ে। ১২৭৯ সালে দক্ষিণ চীন কুবলাই খানের দখলে আসে এবং তিনশ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত সমগ্র চীন কোন একটি একক সম্রাটের অধীনস্থ হয়। কুবলাই খান তার সাম্রাজ্য আরো সম্প্রসারণের জন্য জাপান দখল করতে বদ্ধ পরিকর হন।

১২৮১ সালের জুন মাসে কুবলাই খানের বিশাল নৌবহর আবার জাপান অভিমুখে রওনা হয়। এবার জাপানী সামুরাই-রা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। প্রায় ছয় সপ্তাহ তারা মোংগলীয় বাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখার পর অগাস্টের ১৫ ও ১৬ তারিখ আবার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। আরেকটি ভয়ঙ্কর টাইফুন কুবলাই খানের নৌবহর-কে ধ্বংস করে দেয়। কুবলাই খান কোনমতে একটি অক্ষত জাহাজে চড়ে পালিয়ে বাঁচেন।

এরপর তিনি আর কখনো জাপান অভিমুখে অগ্রসর হন নি। জাপানীরা বিশ্বাস করত স্বর্গ থেকে দেবতারা-ই এ ঝড়দুটো পাঠিয়ে ছিলেন হানাদারের কবল থেকে জাপানকে রক্ষা করতে। এজন্য তারা টাইফুন দুটোর নাম দিয়েছিল ‘কামিকাজি’ বা ‘স্বর্গীয় বাতাস’ (ডিভাইন উইন্ড)। নিয়তির কি পরিহাস, কুবলাই খান জাপানে পরাজিত হবার ছয়শ’ তেষট্টি বছর পর দ্বিতীয় বিশ্বযূদ্ধের সময় মার্কিন সেনাপতি এডমিরাল হ্যালসির বিশাল নৌবহর পর পর দুটো টাইফুনের আঘাতে আবার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়! কামিকাজি!!! (এ পর্বের সূত্রঃ ডিভাইন উইন্ড- কেরি ইমানুয়েল) (পরের পর্ব- বাংলাদেশে সাইক্লোন)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.