আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শব্দের পোস্টমর্টেম - ৮৬



অভিধানে 'টিটকারি' শব্দের অর্থে বলা হয়েছে : ঠাট্টা, উপহাস, ধিক্কার, নিন্দাবাদ, অপবাদ, অবজ্ঞাসূচক বিদ্রুপাত্মক ধ্বনি, শরম, লজ্জা বা আউ আউ ছি! ছি! রব ইত্যাদি। ইসমাইল হোসেন সিরাজী টিটকারি শব্দটিকে উপহাস অর্থে ব্যবহার করতেন ('বিশাল জগতে ঘৃণা টিটকারি উথলি উঠিছে দিগন্ত টিকরি')। আর সমালোচক মোহিতলাল মজুমদার টিটকারি শব্দটিকে ব্যবহার করেছেন অবজ্ঞাসূচক বিদ্রুপাত্মক ধ্বনি হিসেবে ('টিটকারি দাও মৃত্যুরে')। অন্যদিকে কাজী নজরুল ইসলাম শব্দটিকে ব্যবহার করেছেন ছি! ছি! রব হিসেবে ( 'পিকবধূ সব টিটকারি দেয়')। একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, পশু চরানো বিশেষত লাঙ্গল চালানো বা মই দেয়ার সময় গরু বা মোষকে ঠিকমতো গতিমুখর ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাষী মুখে টিট-টিট-টিট শব্দ করে।

এটাই টিটকারি। তবে মানুষকে টিটকারি দিলে সে খুশি হতে পারে না। পরিবেশ বুঝে টিটকারি দিতে না পারলে অনেক সময় অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। অন্যরা বলেছেন, সংস্কৃত ধিক্কার শব্দটিই নাকি পরে টিটকার হয়ে যায়। আর এ টিটকার থেকেই বাংলায় টিটকারি শব্দটির সৃষ্টি।

টিটকারি শব্দটির ব্যবহার টিটকিরি হিসেবেও আছে। টিটকার শব্দটিও অশুদ্ধ নয়। কৃত্তিবাসী রামায়ণের উত্তর কান্ডেও টিটকারি শব্দটি এসেছে 'কাহাকে কে মারে নারদ দেঅ টিটকারি/মুনি তবে দিল টিটকারি। ' কবি কঙ্কনচন্ডীর 'বঙ্গবাসী' কাব্যে টিটকারি শব্দটি বারবার এসেছে : 'শেল কাটা গেল বানর দিল টিটকারি', 'টিটকারি করে পাইক। ' মজার ব্যাপার হচ্ছে ঠিক ঠিক অর্থেও টিটকারি শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে বিজয়গুপ্তের মনসামঙ্গলে : 'বেহুলার বচনে লখাই দিল টিটকারী, বড় পুণ্যে তোমা হেন নারী।

' টিটকারি শব্দের মূল যা হোক না কেন, বাংলা 'টিট' শব্দটি দিয়ে ধূর্ত ও চতুর বোঝায়। আলাওল তার 'পদ্মাবতী'তে ধূর্ত অর্থে টিট শব্দটি ব্যবহার করেছেন ('কোথাতে নাহিক দেখি হেন যোগী টিট')। অন্য দিকে 'পিয়া বড় টিট' যখন বলা হয়, তখন বোঝাই যায় বলা হয়েছে, প্রেমিকা বড়ই চতুর। আবার টিটপনা মানে চতুরতা ('জ্ঞানদাস কহে তুমি ছাড় টিটপনা')। (চলবে)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।