বাংলা একাডেমীর 'ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে' যখন আদল শব্দের মূল হিসাবে সংস্কৃত 'আদর্শ' শব্দটিকে দেখেছিলাম তখন আমার মনে ভীষণ খটকা জেগেছিল। কিন্তু হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'বঙ্গীয় শব্দকোষে' শব্দটি বাজিয়ে দেখতে গিয়ে ভুল ভেঙে গেলো। ওখানে অবশ্য আদল শব্দের মূল হিসেবে সরাসরি আদর্শ লেখা হয়নি, আদলের সমার্থক শব্দ 'আদরা'য় মূল হিসেবে 'আদর্শ' লেখা হয়েছে।
আদরা শব্দের অর্থ 'ইষৎ সাদৃশ্য' ('এর মুখে এর ভাইয়ের একটু আদরা আসে')। আদরা দিয়ে প্রতিবিম্বও বোঝায়।
বিহারীলাল চক্রবর্তীর বঙ্গসুন্দরীতে লেখা হয়েছে : 'ঢুলু ঢুলু সেই নেশার নয়নে, যেমতি মুরতি স্ফুরতি পাবে, আপনা-আপনি হৃদি-দরপনে, তেমনি আদরা পড়িয়া যাবে'। অধিকাংশ অভিধানে আদল শব্দের অর্থে সাদৃশ, অবয়বের মিল, আকৃতি, গঠন বলা হয়েছে।
কিন্তু মূলগত দিক থেকে আদল মানে চেহারা নয়, চেহারার মিল। কিন্তু আদল শব্দটিকে চেহারা অর্থে ব্যবহার করা হয়। যেমন নারায়ণ চৌধুরী রবীন্দ্র সংখ্যা ১৯৭৮-এ লিখেছেন, 'পুরাতন যুগের রুচি-বিশ্বাস অভ্যাস ও দৃষ্টিভঙ্গির আদল তিনি এমনভাবে বদলে দিয়েছিলেন'।
এখানে আদল চেহারা অর্থে লেখা হয়েছে।
অথচ সত্যজিত রায় আদল শব্দটিকে ঠিক অর্থেই ব্যবহার করেছেন তার 'ক্লাস ফ্রেন্ড' গল্পে : 'সেই ছবিতে চোদ্দ বছর বয়সের মোহিতের সঙ্গে আজকের মোহিতের আদল খুজে বের করতে অসুবিধা হয় না'। বোঝা যাচ্ছে এখনে আদল মানে মিল বা সাদৃশ্য, মোটেও চেহারা নয়।
বাংলায় আদল শব্দের আরেকটি অর্থ আছে। সেটি হচ্ছে ন্যায় বিচার।
এ আদল আরবি থেকে বাংলায় ঢুকেছে ('এমন আদলে খুব করেন বাদশাই' - ফকীর গরীবুল্লাহ)।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।