আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ...

অনেকের মাঝেও একা থাকা যায়, নি:সঙ্গতায় কারো অনুভব ছুঁয়ে যায় ...

আমাদের কোম্পানীর বিজ্ঞাপন নানা পত্রিকাতে দিতে হয় । বিভিন্ন পত্রিকার সাথে আলাদা আলাদা ভাবে যোগাযোগ মাঝে মাঝে সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তাই আজকাল কিছু বিজ্ঞাপন কালেকশন এজেন্সীগুলো বেশ রমরমা ব্যবসা করছে। সরাসরি পত্রিকা অফিসের সাথে যোগাযোগ করলে স্বভাবতই প্রতিটা বিজ্ঞাপনের জন্য ভাল ছাড় অর্থ্যাত ডিসকাউন্ট পাওয়া যায় । এজেন্সীগুলো একটু কম দেয় কারণ তাদেরও তো লাভ করতে হবে ব্যবসায়।

তবে প্রথম সারির পত্রিকাগুলো বেশীই ব্যস্ত থাকে তাই এজেন্সীগুলোর সাথে যোগাযোগ করাটাই ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়ায়। এজেন্সীগুলো তাদের লাভের একটা নির্দিষ্ট মার্জিনে আমাদের সাথে একটু দরাদরি করতে চেষ্টা করে। আমরাও চেষ্টা করি আমাদের বাজেটটা ঠিক রাখতে। একেকটা বিজ্ঞাপন পত্রিকায় ছাপা হওয়ার পর দেখা যায় অন্য সব বিজ্ঞাপন কালেকশন এজেন্সীগুলোর ফোন আসা শুরু হয়ে যায় কিনবা তাদের লোক আমাদের অফিসেই চলে আসে । একবার অমুক এজেন্সী দ্বারা কাজ করানোর পর, পরেরবার তমুক এজেন্সী দ্বারা কাজ করালে আবারো ফোন - কেন, কি কারণ ইত্যাদি ইত্যাদি... কখনো কখনো এগুলো উপভোগ করি কিন্তু সবসময় চেহারায় অযথা হাসি টেনে কথা বলতে বিরক্ত লাগে, কেমন জানি যান্ত্রিক অনুভুতি সম্পন্ন মনে হয় নিজেকে! মাঝে আমাদের কোম্পানীর অনেক বিজ্ঞাপন বিভিন্ন পত্রিকায় গেল একটা এজেন্সীর মাধ্যমে।

স্বভাবতই সেই এজেন্সী সচেতন ছিল আমাদের কোম্পানীর সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখার। সেক্ষেত্রে তাদের ধারণা ছিল আমাকে খুশী রাখতে পারলে ব্যবসায়িক সম্পর্কটাতে চিড় ধরবেনা। ওই এজেন্সী থেকে একটা কম বয়সী ছেলে আসতো। ওর পরিচ্ছদে আমি ধীরে ধীরে একটা চকচকে পরিবর্তন খেয়াল করছিলাম। মাসিক বেতন ছাড়াও যতদূর জানি ওদের প্রতিটা কালেকশনের উপর বোধহয় কমিশন দেয়া হয় এজেন্সী থেকে।

বুঝলাম ওর কালেকশন ভালই যাচ্ছে । দেখতে গোবেচারা টাইপ হলেও ছেলেটা কড়িতকর্মা ও চালাক ছিল নিঃসন্দেহে । একবার একাউন্টস ডিপার্টমেন্ট থেকে বিল কালেকশন করে ছেলেটা আমার সাথে দেখা করতে আসলো। সামনে কোন শিডিউল আছে কিনা জানতে চাইল । বললাম, এই মুহুর্তে নেই তবে হলে আবার জানিয়ে দিব।

এবার ছেলেটা বলল তাদের অফিসে একটা মিটিং হয়েছে যারা রেগুলার কায়েন্ট তাদের ব্যাপারে । তাদের এজেন্সী আমাদের কোম্পানী এবং বিশেষতঃ আমার উপর খুবই খুশি। আমি হাসলাম। যে সময়ের কথা বলছি তখন এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দিকে সবার চোখ। তবে সে চোখে অনেক বিশ্বাস এখনকার মত দোলাচলে দোদুল্যমান নয়।

যাইহোক ছেলেটা আমাকে বলল, অনেক কোম্পানীতে বিজ্ঞাপন বিলে কিছু এডজাস্টমেন্ট করা হয় ...। সেসময় অনেক কোম্পানী তাদের আয়-ব্যায়ের হিসেব-নিকেশের কাগজ-পত্র ঠিক রাখতে তত্পর ছিল। আমি প্রথমে ভাবলাম হয়ত কোন ধরনের খোঁজ-খবরের জন্য সরকারী লোকজন আসতে পারে। সে কথাটা জিগেস করলামও। এবার ছেলেটা ঝেড়ে কাশল।

এরকম অভিজ্ঞতা নেই, আমার মাথা বন্ বন্ করতে লাগল যেন। আমাকে ঘুষ সাধা হচ্ছে!!! কিন্তু এক মুহুর্তেই সামলে নিয়ে হেসে উঠলাম। বললাম আপনি কি আমাকে ক্যাশ দিতে চান নাকি অন্য ভাবে ...? ছেলেটা একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল আমার কথার ঢং এ। বলল, ম্যাডাম আপনি অন্য কিছু মনে করবেন না। আমাদের এজেন্সী আপনার উপর খুশী; আমরা ভাবতেছি আপনাকে কিছু গিফট্ করব।

আপনার কিছু লাগলে আমাকে বলবেন। আমার হাসি আরো বিস্তৃত হয়েছে ততক্ষনে, ভীষন উপভোগ করছি। একবার ভাবলাম রেগে উঠি কিন্তু ইচ্ছে করলনা । বললাম, শোনেন, যা বলার বলেছেন, এরকম কথা আমাকে আর কখনই বলবেন না। আমি খালেদা-হাসিনা কিনবা এরশাদের সরকার না; আমি হলাম এবারের তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

আমাকে আলাদা করে ঘুষ না দিয়ে তারচেয়ে বিজ্ঞাপনে আরেকটু বেশী ডিসকাউন্ট দিতে চেষ্টা করেন। আর আপনার গিফট আইটেম এর মধ্যে যদি ডায়রী, ক্যালেন্ডার ইত্যাদি ইত্যাদিও থাকে তাহলে আমাদের এম.ডি স্যারের জন্য যাতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ছেলেটা একটু ইতঃস্তত করল। বলল, আসলে ম্যাডাম, অনেক কোম্পানীতে তো রিসিপশন থেকেই কায়দা করে টাকা নেয়া হয়, না হলে অফিসারদের দেখা পাওয়া যায়না ! আমি বললাম, এখানে এরকম কিছু হলে আমাকে জানাবেন। ইদানীং আমরা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া খানিকটা কমিয়ে দিয়েছি তবে সেরকম শিডিউল হলে আমি এখনো সেই ছেলেটিকেই ডাকি।

অবশ্য সেদিনের পর ছেলেটা কখনোই আমাকে এরকম প্রস্তাব দেয়নি। একবার আমার কিছু বিজ্ঞাপন ডিজাইনের ইলাস্ট্রেটর ফাইল কমপিউটার ফরম্যাট করার সময় বেখেয়ালে মুছে গেল। মনে পড়ল ওই এজেন্সীর ছেলেটাকে সিডিতে করে অনেক ডিজাইন দিয়েছিলাম; নিশ্চয়ই এখনো আছে। ফোন করাতে ভাবল বুঝি বিজ্ঞাপনের শিডিউলের ব্যাপারে। আমার আসল প্রয়োজনটা জানালাম।

ছেলেটা তত্ক্ষনাত বলল, ম্যাডাম আমি খুঁজে দেখব। সত্যি সত্যি ওরকাছে যেকটা সিডি ছিল পরদিন সেগুলো এসে দিয়ে গেল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।