কাবুলে কালাশিনকভের বুলেট ছোড়ার শব্দ শুনলে সাধারণ মানুষ সাধারণত আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ছুটে যায় নিরাপদ আশ্রয়ে। কিন্তু গত বুধবার ঘটল ঠিক তার উল্টো ঘটনা। কালাশিনকভের ধ্রিম ধ্রিম আওয়াজে সাধারণ মানুষ বেরিয়ে এলো রাস্তায়। উল্লাসে মেতে উঠল আফগানরা। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আফগানিস্তান।
যে ভারতের কাছে দুই বছর আগেও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ৪-০ গোলের পরাজয় স্বীকার করেছিল আফগানরা, সেই ভারতকেই হারিয়ে নির্মম প্রতিশোধ নিয়েছে তারা।
আফগানিস্তানের জন্য এই জয় কেবল একটি প্রতিশোধ কিংবা একটি শিরোপা জয়ই নয়, এর চেয়েও অনেক বেশি কিছু। যাদের জীবনে বোমারু বিমানের শব্দ, গান ফাইটের আওয়াজ আর আহতদের চিৎকার ছাড়া আর কিছু নেই, তাদের জন্য এ জয় অনেক বড় কিছু। যারা কখনো রাশিয়া, কখনো আমেরিকা আবার কখনো বা নিজেদের সঙ্গেই লড়াই করে বেঁচে আছে, তাদের কাছে এই জয়ের মাহাত্দ্য অনেক। এএফপির সঙ্গে আফগানিস্তানের সরকারি কর্মকর্তা গোলাম রসুল যেমন বলেছেন, 'এটি আমাদের জন্য অনেক বড় কিছু।
এই শিরোপা আমাদের যুদ্ধের দুঃসহ দিনগুলোকে ভুলতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। যে যুদ্ধ আমাদের প্রতিদিনের জীবনের স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ' আফগানিস্তানের ইতিহাস এমনই। কিন্তু এই আফগানরা বিস্ময়কর এই ঘটনার জন্ম দিল কী করে? যেখানকার ফুটবল মাঠগুলো বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে আছে, যেখানে মুক্ত ময়দানে বেরিয়ে আসা মানেই গুলির আঘাতে প্রাণ হারানোর ভয়ে ভীত থাকা, সেই আফগানরা ভারতের মতো দক্ষিণ এশীয় ফুটবল শক্তিকে কীভাবে হারিয়ে দিল দুর্দান্তভাবে! এর প্রধান রহস্য আফগানদের ইউরোপীয় সংস্পর্শ। বর্তমান জাতীয় দলে চারজন তারকা রয়েছে জার্মানিতে খেলেন।
এ ছাড়া ডাচ ও আমেরিকান লিগে আছেন একজন করে। ইন্ডিয়ান লিগেও আছে তিনজন। সব মিলিয়ে বাইরের এই সংস্পর্শই আফগানদের দ্রুত এগিয়ে দিয়েছে। এনে দিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। আন্তর্জাতিক ফুটবলে আফগানদের সেরা অর্জন ২০১১ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্সআপ এবং ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এসএ গেমসের ফাইনালে বাংলাদেশের কাছে হেরে সিলভার পদক জয়।
আফগানরা নিজেদের অতীতকে ছাড়িয়ে গেল। আফগানদের এই বিস্ময়কর উত্থানের পেছনের কারিগর কোচ মোহাম্মদ ইউসেফ কারজার।
২০১০ সালের নভেম্বর থেকে জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এই আফগানই বদলে দিয়েছেন দলকে।
বিজয়ের মন্ত্র শিখিয়েছেন দিনে দিনে।
এখন আফগানরা বলতে পারবে, আফগানিস্তান কেবলমাত্র যুদ্ধ এবং আক্রমণের দেশ নয়। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে আফগানদের এই আধিপত্য সামনের দিনগুলোতেও যে বজায় থাকবে, তা বেশ বুঝা যায়। ধারাবাহিক একটা দল গড়ে তুলেছেন ইউসেফ। কে জানে, এশিয়ান শক্তিগুলোর সঙ্গে একদিন হয়তো আফগানরা সমানতালে লড়াই করবে। এগিয়ে যাবে ফুটবলের বিশ্ব আঙিনায়।
সেদিন কতদূর বলা মুশকিল। আফগানরাও এমন স্বপ্ন দেখে। তাই বলে তারা স্বপ্নে বিভোর হয়ে বসে নেই। ইতিহাসের প্রথম সাফল্যটাকে একান্তই নিজেদের করে নিতে সমগ্র আফগান জাতিই এখন মেতে আছে আনন্দে। ফুটবলের হাত ধরে একই সুরে কথাও বলছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান।
ফুটবল আরও একবার প্রমাণ করল যে কোনো বিভেদ দূর করার জন্য তার শক্তি কতটা অপ্রতিদ্বন্দ্বী!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।