সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে সংবিধানের ১২৩(৩)(ক) অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনতেই হবে বলে মনে করছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকেরা এখন চাইছেন সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন হোক। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা মনে করছেন, সংসদের মেয়াদ শেষের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হলে সংসদ ভেঙে যাবে, তখন আর কেউ সাংসদ পদে থাকবেন না। তা ছাড়া ওই সময় যে পদ্ধতিতেই অন্তর্বর্তী সরকার থাকুক না কেন, তাঁরাও তখন অনির্বাচিত থাকবেন। ওই সরকারের কাঠামো কী হবে, নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে না পারলে তখন কী হবে—এসব বিষয় ঠিক করারও প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে।
তবে আপাতত এই সংশোধনী আনলে সংকট সমাধানের জন্য আরও কিছুদিন সময় পাওয়া যাবে। আর এটা করতে হবে গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে। কারণ এটি নবম সংসদের শেষ অধিবেশন। সংবিধানের ১২৩(৩)(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। ’বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সরকার বলছে, সংবিধান সংশোধন না করেই নির্বাচন করবে।
কিন্তু বিএনপি মনে করে, এটা সম্ভব না। এই সংসদেই ১২৩(৩)(ক) অনুচ্ছেদে সংশোধন আনতে হবে। বিএনপি খুঁজে দেখেছে, সংসদ বহাল রেখে পৃথিবীর কোথাও নির্বাচন হয় না। তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সংসদ ভেঙে নির্বাচন দেবেন। কিন্তু কেন তিনি সরে এসে অন্যায়ভাবে সংকট তৈরি করলেন, সেটা বুঝতে পারছি না।
’খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, সংসদ ভেঙে দিলে নির্বাচনকালীন সরকার অনির্বাচিত হয়ে যাবে। তখন একটা সমাধানে আসা হয়তো সম্ভব। তবে সংসদ রেখে নির্বাচন হলে বিএনপি অংশ নেবে না, এটা চূড়ান্ত। বিএনপির আরও একাধিক নেতা জানান, সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে গুলশান কার্যালয়ে দলটির একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ গত বুধবার রাতেও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকগুলোতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, এম কে আনোয়ার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুক প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া খালেদা জিয়া দলের আইনজীবী নেতাসহ অন্যান্য নেতার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এসব বৈঠকে সংকট নিরসনে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে নেতারা একমত হন। সংবিধানের মধ্য থেকে সমাধানের উপায়ও খোঁজা হয়। সম্প্রতি এক বৈঠকে বলা হয়, সংবিধানের ১২৩(৩)(খ) অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে, ‘মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।
’ এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী চাইলে মেয়াদের শেষ সময়ে সংসদ ভেঙে দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে মেয়াদের পরের ৯০ দিনে নির্বাচন দিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বৈঠকে এ বিষয়ে বিএনপির একজন আইনজীবী নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলেই সংসদ ভেঙে দিতে পারেন না। এর একটা প্রক্রিয়া আছে। সরকারের হাতে সময়ও আছে কম।
তা ছাড়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করার মতো সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও তিনি মনে করেন না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।