আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেনাপ্রধান পেশাদারিত্বের সীমা ছাড়িয়ে গেছেন



সাক্ষাৎকার - মামুনুর রশীদ দেশের বর্তমান সরকারের চরিত্র প্রসঙ্গে মামুনুর রশীদ বলেন বর্তমান সরকার একটি অন্তর্বর্তীকালীন অরাজনৈতিক সরকার। এটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয় এবং সরকারের সদস্যরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও নন। গত ১৭ বছরের গণতান্ত্রিক শাসনের দুর্বলতার জন্য এ ধরনের একটি সরকারকে মানুষ সমর্থন জানাচ্ছে। বিগত সরকারগুলি যথার্থ গণতন্ত্র চর্চা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের ব্যর্থতা এখন আমাদের সামনে স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে।

বর্তমান সরকার কিছু ভালো, কিছু ভুল, কিছু বিভ্রান্তি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের ভবিষ্যত কী তা অস্পষ্ট রয়ে গেছে। কেরোসিন, জিজেল-সহ সকল ধরণের জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মামুনুর রশীদ বলেন পেট্রোল বা অকটেনের দাম বাড়লে আমি আশংকিত হই না। কিন্তু কেরোসিন ও ডিজেলের দাম বাড়লে বিচলিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। তিনি বলেন এই মূল্য বৃদ্ধিতে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

নিম্ন আয়ের মানুষদের কষ্ট বাড়বে। দ্রব্যমূল্য বেড়ে গিয়ে শহরের নিম্ন মধ্যবিত্তরাও দুর্ভোগের শিকার হবে। তাই যে সকল জ্বালানি কৃষিতে নিত্য প্রয়োজনীয় সেগুলোর দাম কমানো দরকার। বন্দর, রাষ্টয়াত্ব ব্যাংক, বিমান ও রেলের মত গুরুত্বপূর্ণ খাতকে বেসরকারীকরণ করার বিষয়গুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছে। এ প্রসঙ্গে মামুনুর রশীদ বলেন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ঐক্যমতের প্রয়োজন আছে।

রাষ্ট্রের সম্পদকে অধ্যাদেশের মাধ্যমে অন্যদের হাতে তুলে দেয়া যায়না। শুধু বর্তমান সরকার কেন একটি নির্বাচিত সরকারও এটি করার অধিকার রাখে না। সরকারের দায়িত্ব জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা। জাতীয় সম্পদ কোন বিদেশী কোম্পানী বা বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া সরকারের দায়িত্ব নয়। সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুধু রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে।

দুর্নীতিবাজ আমলা, ব্যবসায়ী-সহ বিভিন্ন কর্পোরেট কোম্পানীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার নীরব। এই প্রসঙ্গে মামুনুর রশীদ বলেন দুর্নীতির সাথে তিন জনের সম্পর্ক খুব নিবিড়। সে-তিনজন হচ্ছে মন্ত্রী, ব্যবসায়ী ও আমলা। তাই দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে সবাইকে ধরা দরকার। বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশন যদি সঠিকভাবে কাজ করে তাহলে তারা দুর্নীতি দমনে সফল হতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের বর্তমান চেযারম্যানের পক্ষে পক্ষপাত মুক্তভাবে কাজ করা সম্ভব বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। মামুনুর রশীদ বলেন বিদেশী কোম্পানীগুলো যদি তাদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি করে থাকে তাহলে তাদেরও বিচারের সম্মুখীন করা দরকার। পৃথীবির বহু দেশে এরকম নজির রয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলছে দেড় বছর পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একটি অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে যাচ্ছে।

এই প্রসঙ্গে মামুনুর রশীদ বলেন নির্বাচন বিলম্বিত করা এবং অনির্বাচিত সরকারের বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা যৌক্তিক নয়। সরকার এমন সব বিষয় নিয়ে কাজ করছে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য তারা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে চায় বলে আমার মনে হচ্ছে। মানুষ চায় দুর্নীতিবাজদের বিচার হোক। তাই নির্বাচন নিয়ে অতি বেশী অসহিষ্ণু হওয়ার কিছু নেই। সরকার বিশ্বব্যাংক ও দাতাগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষার জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জোর গুঞ্জন চলছে।

এই বিষয়ে মামুনুর রশীদ বলেন আমরা সকলেই জানি বিশ্বব্যাংকের পরিকল্পনা আছে। তবে পৃথিবীর কোন দেশে বিশ্বব্যাংক ও দাতারা ভাল কোন কাজ করেছে এমন দৃষ্টান্ত নেই। বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতি সচেতন। তাই বিশ্বব্যাংকের প্রবল ইচ্ছা থাকলেও নিজস্ব কর্মসূচী চাপিয়ে দিতে পারবেনা। তিনি বলেন নির্বাচিত সরকারের আমলেও বিশ্বব্যাংক ব্যর্থ হয়েছে।

অন্যায্য চুক্তির বিরুদ্ধে দেশের মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছে। ফুলবাড়ীর কয়লাখনি বিরোধী অন্দোলন এখনও মানুষের মনে জ্বলজ্বল করছে। সমপ্রতি সেনাবাহিনীর প্রধান দেশের রাজনীতি নিয়ে খোলামেলা বক্তব্য রাখছেন। এ বিষয়ে মামুনুর রশীদ ইউকেবেঙ্গলীকে বলেন সেনাপ্রধানকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করতে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির পঠিত প্রবন্ধে রাজনীতিক বক্তব্য থাকবেই।

আয়োজকরা তাকে আমন্ত্রণ জানালে তিনিতো রাজনৈতিক বক্তব্যই দেবেন। দেশের রাজনীতিক দলগুলো ব্যর্থ হওয়ার কারণে সেনাপ্রধান এ ধরণের সুযোগ পাচ্ছেন। বর্তমান সরকার গঠনে সেনাবাহিনীর একটা ভূমিকা রয়েছে। এই কারণে সেনাপ্রধানের কিছু অধিকার জন্ম নেয়াটা অযৌক্তিক নয়। তবে এই অধিকার সেনাপ্রধানের পেশাদারিত্বের সীমাকে ছাড়িয়ে যায়।

জঙ্গী মদদদাতা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীটি এই সময়ে বেশ জোড়ালো হচ্ছে। এই বিষয়ে মামুনুর রশীদ বলেন জঙ্গীদের ফাঁসি হয়েছে তাতে আমি খুশী। বিচারের সময় জঙ্গীরা জবানবন্দী দিয়েছে। তাদের দেওয়া জবানবন্দী খতিয়ে দেখে জঙ্গী মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে। যাচাই ও অনুসন্ধান করে জঙ্গীদের মূল উৎস খুঁজে বের করা কঠিন কোন কাজ নয়।

সরকার ইচ্ছা করলেই এই কাজটি করতে পারে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন অবশ্যই বিচার হওয়া দরকার। আমরা একটা ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে সামনে এগুতে পারি না। সরকার কার্যকর ভূমিকা রাখলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব। আমরা সাংস্কৃতিক কর্মীরা সরকারকে এই বিষয়ে সবরকমের সাহায্য সহযোগীতা করতে প্রস্তুত।

ক্ষুদ্র জাতিসত্তা সমূহের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে মামুনুর রশীদ বলেন সরকার ইচ্ছা করলেই অনেক কিছু করতে পারে। আওয়ামী লীগ ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু তারা চুক্তি বাস্তবায়ন করে নাই। বিএনপি জামাত জোট সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখায়নি। বর্তমান সরকার শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা দরকার। বর্তমান সময়ে সংস্কৃতি কর্মীদের করণীয় সম্পর্কে মামুনুর রশীদ বলেন সংস্কৃতি কর্মীদের দলীয় লেজুড়বৃত্তি ছাড়তে হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলাম, স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনে শরীক ছিলাম। গণতান্ত্রিক, মানবিক সমাজ গঠনে এদেশের বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। দুর্নীতিবাজ ও শোষকদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সংস্কৃতি কর্মীদের এই সময়ের অন্যতম প্রধান কাজ।

সেই সাথে এদেশের সকল জাতিসত্তার বিচিত্রতা ও স্বকীয়তা রক্ষার বিষয়ে সংস্কৃতি কর্মীদের সোচ্চার হতে হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.