"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"
আমি, তন্বী ও একটি বিকেল - ১ম পর্ব
(পূর্বে প্রকাশিত)
কাল সন্ধ্যে থেকেই শরীরটা বেশী সুবিধের নয়। অভ্যাসবশত রাস্তার ধারের কিছু ভাজা পোড়া জাতীয় খাবার কিনে খেয়েছিলাম। আর তাতেই এই অবস্থা। ইদানিংকালে দ্বিতীয়বার এমনটা হলো। রাতে বমি করে কিছুটা স্বস্তি পেলাম।
ঘুম তেমন ভাল হয়নি। উঠতে দেরী হলো। সকালে অফিসের গাড়ী এসে ফিরে গেল। সময়মত অফিস যাওয়া হলো না। ৯টা নাগাদ উঠলাম বিছানা ছেড়ে।
বাথরুম ও গোসল সেরে হালকা নাস্তা করলাম। বাসে করেই অফিস যেতে হবে। বাসার কাছেই কাকলী বাস স্ট্যান্ড। সামান্য একটু পথ। হেঁটেই যাতায়াত করি।
কাকলী থেকে প্রিমিয়াম বাসের টিকিট কিনলাম। মতিঝিল-উত্তরা রুটের একমাত্র এসি বাস। তবে প্রায়শই এসি ঠিকমত কাজ করে না। গরমে ঘামতে হয়। প্রিমিয়াম বাসের শেষ স্টপেজ জীবন বীমা টাওয়ারের ঠিক উল্টোদিকে।
আমার অফিসের কাছেই। অফিসের গাড়ী না থাকলে সচারচর এই বাসেই যাতায়াত করি। রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামের কারনে অফিস পৌঁছুতে বেলা ১১টা বেজে গেল। অফিস পাড়ায় আজকাল বিদ্যুৎ বেশ উৎসাহের সাথে নিয়মিত হা-ডু-ডু খেলছে। তাই মাঝে মধ্যেই দম ফুরিয়ে যায়।
এর মধ্যেই বেশ কবার এলো গেল। শেষবারের মত যখন বিদ্যুৎ গেল বেলা তখন আড়াইটা। গরমে আর বসে থাকা যায় না। অগত্যা রুমে তালা দিয়ে বেরিয়ে পরলাম। উদ্দেশ্য বাসায় যাওয়া।
মাধ্যম সেই প্রিমিয়াম বাস।
বাস স্ট্যান্ডে যেয়ে দেখি একটা বাসও নেই। কাউন্টার বন্ধ। পরে শুনলাম আজ চৌদ্দ দলের অবরোধ কর্মসূচী। তাই অনেক রুটেই বাস চলাচল বন্ধ।
সামনে এগুতেই দেখলাম স্টার্ট দেয়া অবস্থায় দাঁড়িয়ে মতিঝিল-সাভার রুটের একটা বাস। এটাও এসি বাস, নাম ট্রান্স মিলেনিয়াম। যেহেতু কলাবাগান হয়ে যাবে তাই লাজ ফার্মা থেকে ঔষধ কেনার কথা মনে হলো। অনেকদিন যাব যাব করে যাওয়া হয়না। কী মনে করে সেই বাসেই উঠে পড়লাম।
বাসটা কলাবাগান ছাড়িয়ে মেট্রো শপিং মলের সামনে থামতেই নেমে পরলাম। ওখান থেকে সোজা লাজ ফার্মা। ঔষধ কেনা শেষে আবার সেই মেট্রো শপিং মল। এবার সোজা বেভকো বাসের কাউন্টার। আজিমপুর-উত্তরা রুটের এসি বাস।
যাব বনানী, তাই কাকলির টিকিট নিলাম। টিকিট চাইতেই কাউন্টারে বসা ছেলেটা বললো, বাস আসতে একটু দেরী হবে। টিকিট পরে দেব। কী আর করা। অপেক্ষা করছি বাসের জন্য।
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। বাস আর আসেনা। একটু দূরে দেখি ফুটপাতে এক বৃদ্ধ এক ঝুরি কলা নিয়ে বসে আছে। দেশী সবরী কলা। এক ডজন কলা কিনে ব্যগে পুড়লাম, সময়ে কাজে দেবে।
গত রাতের পেটের ব্যথার কথা ভুলিনি। ভয়ে দুপুরে বাইরে কিছু খাইনি। সামনে ঝালমুড়ি দেখে কিছুতেই লোভ সামলাতে পারলাম না। পেটে তখন প্রচন্ড ক্ষুধা। বেলা তখন সাড়ে তিনটার।
দ্বিধা সংকোচ কাটিয়ে ঝালমুড়ি কিনে খেলাম। কিছু উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েও খাচ্ছিল পাশে দাঁড়িয়ে। ইতিমধ্যে খবর এলো বাস আসছে। সবাই টিকিট কেটে যার যার মত লাইনে দাঁড়িয়ে বাসে উঠলাম। বাসে উঠেই দেখি সামনে একটা সিট খালি।
আমার ঠিক পেছনে একটা মেয়ে। পরনে ম্যাজেন্টা রঙের সালোয়ার কামিজ। সুন্দরী এক তরুনী। আমি মেয়েটাকে সিটটা দিয়ে পিছনে গিয়ে বসলাম। আমার ঠিক সামনের সিটেই বসা ছিল দুজন মেয়ে।
একজনের পরনে ছিল লাল সালোয়ার কামিজ। বাস চলতে লাগলো। অবরোধ ঘোষনার কারনে সেদিন সমস্ত রাস্তাজুড়ে ভয়াবহ যানজট।
চলবে-
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।