আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তন্বী তরুণী ও যুবকের ইচ্ছার বলি আমার একটি বিকেল একটি সন্ধ্যা এবং একটি রাত। অসহায় এই আমি তাই নিরালায় নির্জনে বসে আছি আনমনে

সময়কে কাধে নিয়ে চলো বন্ধু

খুব কাছ থেকে যাদের ভালোবাসি তেমন দুজনের ডাকে শত কাজের চাপ ও চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে রওয়ানা হলাম। তখন সূর্যটা পশ্চিমাকাশে নুয়ে পড়েছে। খুজতে খুজতে তাদের পেলাম ইটের খাচার ৪তলায়। ৬তলা আর ৪তলা ঘুরোঘুরি করে অবশেষে পেলাম শপিং মলের এক কোনে ক্যাফের একদম কর্ণারে বসে দুজন আড্ডা দিচ্ছে। তারা কারা? একজন তার ফলাফল হয়নি তাই বিষন্ন মনে উদাসীন।

ফলাফল হয়নি কারণ ফলাফলের পূর্বে জয়পরাজয়ের যুদ্ধে যাওয়ার শুরুতেই সে ধ্বসে পড়েছে। ঘটনাটি খুব দুঃখজনক। আর তাই সকালেই চেয়েছিলাম তার এই ব্যথিত শোককে কিছুটা সাহসের প্রলেপে লেপ্টে দিতে। এই তন্বী তরুণী অপার হয়ে ছুটে এসেছে শুধু আমাদের সাথে আড্ডায় কিছুটা সময় কাটাতে। যদিও তার সাথীরা আজ মিষ্টি বিলাতে বিলাতে ক্লান্ত বিধ্বস্ত।

অপরজন এ জগতের এক উদাসীন বাউন্ডুলে। মস্তবড় জ্ঞানী লোক। কবি কবি ভাব থাকলেও কবিতা লেখেন বেখেয়ালে। তিনি যখন তিনার সাথে উত্তেজিত রংতামাশায় মত্ত থাকেন তখন আনমনে কাগজে আকাআকি করে কিছু লিখে ফেলেন। তাকে আমরা শখ করে বলি কবিতা।

এই কবির ভাইও ফলাফল পেয়েছে। পূর্বের যুদ্ধে বিরাট বিজয় থাকলেও এবার তেমন ভাল করেনি। তাই তারও মনটা কিছুটা মেঘে ঢাকা ঘটনা নতুন চাকুরী। তার উপর কাধের উপর এত চাপ যে কয়েক বস্তা চালের চেয়েও কম নয়। তবুও ট্রাকের মতো পুষ্টি নিয়ে সেসব চাপ শামলে চলছি।

এমন সময় হুট করে কলিগ জুনিয়র যুবকের আচমকা আহবান; একটু এদিকে আসেন কথা আছে। অফিসে আরো কিছু লোক ছিল বলে আড়ালে ডেকে আনা। বললো তন্বী মেয়েটির কথা। যে আমাদের অনেক জুনিয়র হলেও হৃদয় মাঝে ঝড় তুলে তুমুল বেগে। এ ঝড় প্রেম, রোমাঞ্চ কিংবা রোমিও জুলিয়েটের হৃদয়ের বসন্ত হাওয়া নয়।

হাতের কাজটা শেষ না করে কি করে বের হই। আর সে যখন বের হল তবে আমাকে জিজ্ঞেস করলো না কেন? তার যত পাগলামি। এমন সময় সেই তরুণীর ফোন বেজে উঠলো। রিসিপ করতেই বলে উঠলে আমি আপনাদের অফিসের ১০মিনিট দূরত্বে ....... দিঘীর পাড়ে দাড়িয়ে। আমি বললাম আমি যে কাজটিতে বসেছি তা শেষ করতে ১০মিনিট লাগবে।

ততক্ষণ অপেক্ষা কর। তারপর বাউন্ডুলে কবিকে বললাম তার সাথে সময় দিতে। আমি কাজটা শেষ করে আসছি। প্রথমে পিড়াপীড়ি করে সে গেল। সে যেত।

কিন্তু সে এমনই মহামান্য লোক যে কিছু বললে কখনো বুঝে কিংবা কখনো না বুঝে মুখ ভার করে চুপসে যায়। প্রথমে চুপসে যেতে লাগলেও ধমকে তাকে অভিনয় বন্ধ করতে বললাম। তারা দুজন গিয়ে বসলো আমার অপেক্ষায়। আমি কাজ সেরে সেখানে যেতে যেতে আমার মোবাইলটি যন্ত্রনার কাতর শুর করলো। একসময় সাইলেন্স করে দিলাম।

অতপর সেখানে পৌছে হাফাচ্ছিলাম। যদিও এই দালানে ক্যাপসুল লিফট আছে কিন্তু তখন বন্ধ ছিল বলে আমাকে সিড়ি বেড়ে উঠতে হল। কিন্তু শরীরটা বেশি ক্লান্ত লাগলো যখন তাদের খুজে পাচ্ছিলাম না। আড্ডা হল কিছুক্ষণ। যুবকটি বললো তার বাসায় যেতে।

বললাম যাবো তবে মিষ্টি খাওয়াতে হবে। এরই মধ্যে তার বাসা থেকে খবর এলো তার ছোট ভাই মোবাইল অফ করে কোথায় আছে কেউ বলতে পারছে না। সে কিছুটা ব্যস্ত হল তার ভাইয়ের সন্ধানে। এরপর স্বাভাবিকভাবে বললো যাবেন আমার বাসায়। আমি কখনো যাইনি।

তাই বললাম ঠিক আছে যাবো। আমাদের তিনজন কতটা আপন আমরা বুঝি। তাই একসময় আমরা আমাদের টিমের নাম দিলাম থ্রি ইডিয়টস। আসলে এতো দুষ্টুমি করতাম যে আমাদের সাথে থাকা গ্রুপের অন্যদের মাথায় যেন বাজ পড়তো। আড্ডা শেষ হলে উঠে পড়লাম ঐ কবি যুবকের বাসায় যাবো বলে।

যাওয়ার জন্য সিড়িতে নেমে দুজনের হঠাৎ উত্তেজিত আচরণ। আমি আচমকা থমকে গেলাম ঘটনার কাকতালীয়তায়। দুজন খুব ছোট্ট বিষয়ে মান অভিমানে দুদিকে ঘোড়ার মতোই টগবগিয়ে চলে গেল। আমি এতটাই বিমর্ষ হয়ে গেলাম যে আমি এখন তৃতীয় ব্যক্তি। চলে এলাম সিড়ি বেয়ে।

রাস্তায় নেমে যখন অফিসের পথে হাটছি তখন খুব ক্লান্ত লাগছিল। খানিক দূরে দেখি যে যুবকটি টগবগিয়ে ছুটে চলছিল কোন অজানার পথে যাকে খুব ডেকেও পিছু ফিরাতে পারিনি সে দাড়িয়ে মুখ থেকে সিগারেটের ধুয়ো উড়োচ্ছে। হয়তো আনমনা ভাবছে আমি আর জুনিয়র বন্ধু তরুনীটি সব ভুলে আড্ডায় মেতে তাকে গালাগাল করছি। রাস্তায় চলার পথে পিছনে তাকিয়ে তাকে একটু কাছে আসতে ডাকলাম। এগিয়ে আসলো।

খুব শান্ত ভাষায় বললাম, আমার সামনে এমনটা না করলেও চলতো। পরবর্তীতে আমাকে যেন আর কখনো কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা না করে। ফোন করতেও নিষেধ করে দিলাম তাকে। ঘটনাটা যা ঘটেছে তা ঘটার মত কোন কারণ ছিলনা। মেয়েটি শুধু বলছিল এই সিড়িতে দাড়িয়ে আমরা কথা না বাড়িয়ে যেন নিচে নেমে সিদ্ধান্ত নেই আমরা কি করবো।

সিড়িতে যে সে কেমন অস্বস্তিতে ভুগছিল তা জানা ছিল না। হঠাত সে ক্ষেপে গিয়ে যুবকের উপর তার হাতে থাকা খাকি কাগজের ব্যাগটি ছুড়ে মারলো যুবকের গায়ে। দ্রুত যুবকের প্রস্থান, যুবতীও তার অভিমান দেখে বিপরীত অভিমানে ছুটে চলে। আমি দুজনের একজনকেও থামাতে পারিনি। আসলে তাদের বজ্রপাত আচরণ দেখে আমার ভ্যাবাচ্যাকা চেহারাটা বিবর্ণ হয়ে গেছে।

খানিক দূরে দাড়িয়ে তারই বন্ধু আমাকে ডাকছিল চা পানের জন্য। বিনয়ের সাথে বিদায় দিয়ে আবার অফিসের পথে পা বাড়ালাম। কল দিলাম তরুণীটিকে। বললাম এমন যদি করতে তবে আমাকে ডেকে আনা ঠিক হয়নি। আর এমন রুক্ষ মানবদের সাথে হাটতে চাইনা জানিয়ে ফোনটা কেটে দিলাম।

অফিস থেকে ব্যাগটি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম বাসায় যাবো বলে। তখনো সন্ধ্যা নামার কিছু সময় বাকি। সিএনজিতে করে চলে এলাম আমার বাসার কাছেই পুরোনো ঠিকানায়। যেখানে আমার দূরন্ত কৈশোর কেটেছে। পাহাড় অরণ্যের সবুজ গ্রামে আসলাম।

সিএনজি থেকে নেমে বড় ভাইয়ের টেবিলে ব্যগটি রেখে প্যাসন প্রো বাইকে করে সেখানে এলাম। ফোন করলাম কয়েকজন সমবয়সী বন্ধুকে। সবাই ব্যস্ত। সন্ধ্যা নামলো। বসে রইলাম পার্কের বেঞ্চিতে।

মাঠে ছেলেরা খেলা শেষে বাড়ী ফিরলো। এমন সময় এক বন্ধু এসে পাশে বসলো। মোবাইল বেজে উঠলো। ফোন করলো তরুনীটি। বললো আপনি কোথায়? বললাম আমার অবস্থান।

বললো সে আসছে। না করলাম। অনেকক্ষণ পর আবার ফোন করলাম। আসলে কি সে আসছে। এই রাতে সে আসবে তা পাগলামিই মনে হচ্ছিল।

ফোন আর ফোন একবার আমি দেই একবার সে আবার সেই যুবক। আসলে আমি চলে যাবো এখান থেকে। কিন্তু পাগলগুলো যদি সত্যিই আমাকে খুজতে এখানে আসে! তাই ভাবছিলাম সঠিক খবরটি জানার জন্য। কোন ভাববিনিময় কিংবা সব ভুলে খোশ গল্পের জন্য নয়। অন্তুত এখানে যেন এখন না আসে তা জানানোর জন্য ফোন।

ফোন বাজে রিসিভ হয় না। অতপর তাদের কাছ থেকে জানলাম তারা শহরে ঘুরছে। একপর্যায়ে সেই ভদ্রলোক কবির বাসায় তাদের অবস্থান। বাহ! খুব সুন্দর একটি বিকেল। আমার সাথে কেনই বা এমন করা।

কেনই বা এমন অদ্ভুত মানুষদের আর্তনাদে ছুটে যাওয়া। আমি তো মানুষ নই তবে কেন এমন মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব। খুব দুঃখ পেলাম। আমি হয়তো বোকা বলেই আমাকে ঠকায় এই পৃথিবী। আমি কখনো চালাক হলাম না।

এটা আমার আক্ষেপ নয়। আম্মার কথা। আমি জানি তারা ভাই বোন সম্পর্কটা আজ আরো গভীর করেছে। কিন্তু কষ্টটা পেলাম আমাকে মাঝখানে ফেলে এমন নাটক মঞ্চস্ত না করলেও চলতো। আমি পুতুল? নিজেকে খুব অসহায় মনে হল।

বাসায় ফিরে দেখি বিদ্যুৎ নেই । গোসল সেরে আম্মা ও বন্ধু চাচ্চুটি সহ ভাই বোনেরা গল্প করলাম। প্রায় সোয়া এক ঘন্টা শেষে বিদ্যুৎ এলো। আর রাত একটা যখন বাজে তখন আমার লেখা শেষ হল। হয়তো তরুণীটি আমার লেখাটি পড়ার সুযোগ পাবে না।

কিন্তু সেই বাউন্ডুলে যুবক এই ব্লগেই আছে। এখনও আছে। আর তাই সবার বিনোদন নয় যুবকটি যেন একটু ভাবে যা হয়েছে তা ঠিক হয়নি। সেজন্যই এ লেখা


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.