বিক্ষিপ্ত জীবন. . . কখনো হাসায় . . . কখনো কাদাঁয় . . . আবার কখনো নির্ভেজাল অন্ধকার ঘিরে ফেলে চারদিক থেকে . . .
অফিসার : আপনাকে জানতে হবে, ইয়্যু আর দি জেনারেল সেক্রেটারি অফ আওয়ামীলীগ।
আব্দুল জলিল : সিন্ডিকেট ব্যবসা আমি জানি না।
অফিসার : আপনি জানেন স্যার, সব জানেন।
আব্দুল জলিল : হাজি সেলিমের অবৈধ ব্যবসা আছে এইটা আমরা নিজেরা বুঝি। আমরা জানি।
অফিসার : এইতো, কাম টু দ্যা পয়েন্ট।
আব্দুল জলিল : আমি একটা কথা বলি। আমাদের সময় একটা টেনডেনসি হইছিলো একসময় আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে। আমি তখন বানিজ্য মন্ত্রী লাস্ট পার্টে। আমাদের সময় যখন সিমেন্টের দাম বাড়ানোর প্রবনতা হলো।
পেয়াজের দাম বাড়ানোর প্রবনতা হলো। আমি তখন ব্যবসায়ীদের ডাকলাম। ডেকে বললাম এটা বাড়ানোর চেষ্টা করবেন না। কাউন্টার আমি করবো। এবং সঙ্গে সঙ্গে আমি টিসিবি থেকে আমদানি করে বাজার নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করেছি।
এবং হাজি সেলিম তখন সিমেন্টের যে ক্রোকাইজার, তার ক্রোকারিজ ছিলো। আমি তাকে বলেছি যে তুমি এই কাজটা করো না, তুমি এই পার্টির এমপি। এই সরকারকে কোনরকম বেকায়দায় ফেলো না। এবং যদি বেকায়দায় ফেলো তোমার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।
অফিসার : আর কে কে ছিলো বলেন না স্যার?
আব্দুল জলিল : না আমি যেটুকু জানি সেটুকু বললাম।
অফিসার : কামাল মজুমদার কি করতো স্যার ?
আব্দুল জলিল : কামাল মজুমদারতো গার্মেন্টসের ব্যবসা করে। গার্মেন্টসের ব্যবসা করে। তারপরে হলো গিয়ে হাশেম . . .
অফিসার : মানে, বিএনপি’র হাশেম?
আব্দুল জলিল : বিএনপি’র হাশেম। এরাতো স্যাক্টও হয়ে গেলো তখন।
অফিসার : বিএনপি’র ৭০ জন এমপি আপনাদের পোষা কুত্তা।
সেই কুত্তার মধ্যে হাশেম একটা কুত্তা।
আব্দুল জলিল : না না, আপনি যে ৭০ জনের কথা বলছেন সেটার সত্যতা নেই। আমি বলি আমরা যেটুকু শুনেছি সিন্ডিকেটের মধ্যে হাজি সেলিম ছিলো। বাজার নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে হাজি সেলিম ছিলো। আমাদের সময়ও তার প্রবনতা ছিলো পরবর্তীতে ছিলো।
অফিসার : এই যে আপনি বলেন যে আপনি সত্য কথা বলতেছেন, আপনি করআন শরীফ ছুঁয়ে বলতে চাইতেছেন কিন্তু ছুইতে দেই নি আমরা। আপনি প্রত্যেকবার বলতেছেন জানি না, বুঝি না, এসব কথাগুলো বলেন। এগুলো কোরআন শরীফ ছুঁয়ে বললে কোরআন শরীফের অবমাননা হবে। সব চুল পাইকা গেছে আপনার। তারপর হইতে পারে, জানিনা এইগুলোর বাইরে যাইতে পারতেছেন না কেন?,শোনেন বয়সের একটা শেষ পর্যায়ে এসে মানুষ সত্য কথা বলে।
আপনি বলছেন না কেন ?
আব্দুল জলিল : আমি সত্য কথাই বলছি। আমি যেটুকু জানি সেটুকু বলার চেষ্টা করছি। সেলিমের কথা বলেছি। হেলালের ইনভলমেন্ট আছে বলে শুনেছি।
অফিসার : মুক্তিযুদ্ধের ক্রেডিট যদি কেউ নিতে চায় সেটা একমাত্র আওয়ামীলীগ নিতে পারে।
বিএনপি টিএনপিতো অনেক পরে আসছে। দলছুট লোকেরা বিএনপি বানাইছে। আপনারা এতকিছু করলেন কিন্তু এখন আপনাদের কথা এবং কাজের মধ্যে এত অমিল কেন ? আপনাদের আশেপাশে যারা আছে সবাইতো চোর বাটপার। তোফায়েল আহমেদ বিরাট হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। ওনার কি আছে? কোন বিজনেস টিজনেস আছে ?
আব্দুল জলিল : না, আমি জানি না।
অফিসার : মোবাইলে ফ্ল্যাক্সিলোডের মাধ্যমে আপনারা টাকা পয়সা আমালাদের পাঠান, খোঁজ খবর নেন।
আব্দুল জলিল : না, আমি ফ্ল্যাক্সিলোড বুঝিও না। ব্যাপারাটা জানি না। আমি কলা ধরা জানি আর করা জানি। টোটাল যোগাযোগটা আমাদের নেত্রীর সঙ্গে।
অন্য কাউকে তারা বিশ্বাসও করে না। যোগাযোগও রাখে না। এগুলো ঠিক রাখত ওনার এপিএস আলাউদ্দিন নাসিম। এখন ওনার এপিএস হিসেবে কাজ করছে ড. হাসান।
অফিসার : এখনও কি উনি যোগাযোগ করছেন ?
আব্দুল জলিল : তা বলতে পারবো না।
রিসেন্টলি ও এই দ্বায়িত্ব পাইছে।
অফিসার : আপনারা যেই আন্দোলনগুলো করতেন, সেগুলোর ফিনেন্স হতো কিভাবে ?
আব্দুল জলিল : আন্দোলনের ফিনান্স ঐ যে যারা সাপোর্টার তারা দিতে। ব্যবসায়ীরা দিত।
অফিসার : কিভাবে টাকাটা আপনার কাছে আসতো ?
আব্দুল জলিল : না, আমার কাছে কোন টাকা আসে নাই। নেত্রীর কাছে যেতো।
অফিসার : একজন পার্টির প্রেসিডেন্ট যে কিনা এক্স পাইম মিনিষ্টার, আমাদের জাতির পিতার মেয়ে-ওনার কাছে-কেন টাকা যাবে স্যার ?
আব্দুল জলিল : কারণ কোন ব্যবসায়ী আমাদেরকে টাকা দিতো না। তার কাছে সরাসরি টাকা দিতো ভালো থাকার জন্য, পরিচিত থাকার জন্য। টাকাটা তার হাতে দিয়ে আসতো। এবং সেই টাকাটা কোন সময় জাফরুল্লাহ সাহেব কোন সময় হেলাল নিয়ে যেতো। এই জিনিসটা তারা ডিল করতো।
অফিসার : আপনি আপনার নেত্রীকে এলিগেশন দিচ্ছেন ?
আব্দুল জলিল : না না, এলিগেশন আমি দিচ্ছি না। আমি সত্য যেটা সেটা বলছি। আমি আমার নেত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলবো কেন ? আমি যেটা জানি, যেটা যেভাবে চলে সেই কথাটা বলেছি।
অফিসার : কারা দিতো এই টাকা ?
আব্দুল জলিল : বিভিন্ন ব্যবসায়ী দিতো, বিভিন্ন।
অফিসার : এইজন্য মিডিয়াম ছিলো কারা ?
আব্দুল জলিল : বললামতো, জাফরুল্লাহ করতো, সালমান করতো, হেলাল করতো, আবুল হোসেন করতো, শেখ সেলিম হয়তো এরমধ্যে ছিলো তবে অতভাবে না।
দুই চারটা অকেশনে হয়তো শেখ সেলিমও নিয়ে যেতো।
অফিসার : কোন এলাকায় কত টাকা পাঠাতে হবে- এই ডিষ্ট্রিবিউশনতো আপনি করতেন?
আব্দুল জলিল : না না। এইট্যা নেত্রী করতেন। সরাসরি ওনার পার্সোনাল স্টাফ দিয়ে করতেন।
অফিসার : রিকয়ারমেন্টতো আপনার কাছে আসতো।
আমরা আপনার কনভার্সেশনে এটা পেয়েছি।
আব্দুল জলিল : হ্যাঁ রিকয়ারমেন্ট আমার কাছে আসতো। আমি নেতৃকে বলতাম। হয়তো উনি সরাসরি দিতেন অথবা বলতেন যে টাকা নিয়ে যান। ওদেরকে দিয়ে দেন।
আমি খুব বেশি টাকা ডিস্ট্রিবিউট করি নাই। মেইনলি আমাদের নেত্রী করতো। আর মুভমেন্টের সময় ওবায়দুল কাদের করতো।
অফিসার : ওবায়দুল কাদের আপনার চেয়ে এত জুনিয়র হয়েও এত গুরুত্ব পেলো কেন ?
আব্দুল জলিল : এজ গ্রুপের একটা ব্যাপার আছে না। ওনেক সময় ওবায়দুল কাদেরকে আমি বলতাম যে তুমি যাও টাকা নিয়ে এসে ডিস্ট্রিবিউট করো।
আমিতো সরাসরি করি না। আমি টাকা নিয়ে এসে হয়তো অফিস সেক্রেটারিকে দিয়েছি বা তাদেরকে দিয়েছি। বলে দিয়েছি যে এই এই অর্গানাইজেশনকে টাকাটা দিয়ে দেও।
অফিসার : টাকাটা কি ব্যবসায়ীরা দিতো, নাকি পার্টি চাঁদা দিয়ে আসতো ?
আব্দুল জলিল : আমাকে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। কেউ পাঁচ হাজার কেউ ১০ হাজার কেউ ২ হাজার এরকম করে সবাই দেয়।
ফিনেনসিয়াল অবস্থা বুঝে দেয়।
অফিসার : স্যার আপনিতো তেমন বড়লোক না তার উপর দলের জেনারেল সেক্রেটারি। তারপরও আপনাকে ৫ হাজার টাকা চাদা দিতে হতো। তাহলে যারা নমিনেশনের জন্য অতিআগ্রহী ছিলো তারাতো আপনারমতো ৫ হাজার টাকায় খালাস পাওয়ার কথা না।
আব্দুল জলিল : তারাও মাসিক কন্ট্রিবিউট অনেকে করতো।
মাসিক পার্টি ফান্ডে দিতো এবং সেই টাকাটা রশিদ দিয়ে নেয়া হতো। ওইভাবে পার্টি ফান্ডে টাকা আসতো। তাছাড়া বাকি যেগুলো বড় ব্যবসায়ীরা তারা সরাসরি নেত্রীকে টাকা দিতো।
অফিসার : এই ব্যবসায়ীরা কারা কারা? মঞ্জুর এলাহি সহ আর কারা আছে ?
আব্দুল জলিল : সব ব্যবসায়ীইতো আছে। কাকে না বলবো।
শাহ আলম আছে, মঞ্জুর এলাহী আছে তারপর লোটাস কামাল আছে। নজরুল ইসলাম মাঝে মাঝে টাকা দিতো।
অফিসার : এরা কেমন টাকা দিতো ?
আব্দুল জলিল : আমি আল্লাহ’র কাছে সাক্ষী রেখে বলি, এডজেক্ট ফিগারটা আমি বলতে পারবো না। নগদ অর্থ দিতো এটা আমি জানি। অনেক ব্যবসায়ী দিতেন।
বাংলাদেশে কোন ব্যবসায়ী নাই যে তারা দিতো না। বিএনপিকে দিতো আমাকেও দিতো। ওরা দিতো নেত্রীর কাছে পরিচিত থাকার জন্য এবং নেত্রীর নলেজে থাকার জন্য। আমাদেরকে ওরা বিশ্বাস করতো না।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অভিযোগে আটককৃত রাজনীতিবিদদের জবানবন্দির সিডি নিয়ে চারপাশে চলছে আলোচনা।
জবানবন্দির সিডি কিভাবে বাইরে এলো এ বিষয়টি রহস্যাবৃত। তবে এটুকু অনুমান করা যায়, হয়তো কর্তৃপক্ষ চেয়েছিলেন জবানবন্দির কথোপকথন বাইরে আসুক। জনমানুষের গোচর হোক।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের জবানবন্দি বা স্বীকারোক্তির একটি অডিও সিডি সাপ্তাহিক ২০০০-এর হস্তগত হয়েছে। যেভাবে জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে অবিকৃত অবস্থায় সেভাবেই এই সিডি বাইরে এসেছে কিনা সেটা নিয়েই নানা প্রশ্ন আলোচনা হচ্ছে।
পাঠক কৌতূহলের কথা বিবেচনা করে সাপ্তাহিক ২০০০-এ আব্দুল জলিলের জিজ্ঞাসাবাদের বিবরণ প্রকাশ করা হলো (অডিও সিডি শুনে বোঝা যায় যে আব্দুল জলিলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন একাধিক ব্যক্তি। যখন যিনি প্রশ্ন করেছেন তাকে অফিসার হিসেবে লেখা হয়েছে)। অডিও সিডিটি শুনে লেখ্যরূপ দিয়েছেন আরাফাতুল ইসলাম
আব্দুল জলিলের পুরো স্বীকারোক্তি পাবেন সাপ্তাহিক ২০০০ এর ওয়েবসাইটে, এখানে ক্লিক করে:
Click This Link Songs.pdf
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।