জন্মদিনে আমার মেজাজ বরাবর তিরিক্ষি থাকে। একটা কারণ,মাসের ৩০ তারিখ,আমার পকেটে থাকেনা টাকা-পয়সা,যে কয়দিন ধরে কিছু পাই আরকি। বন্ধু-বান্ধবকে খাওয়াতে হলেও ধার করে খাওয়াতে হয়। আরেকটা কারণ,পরিচিত মানুষজন আমার জন্মদিন ভুলে যায়,সেটা কি আমাকে গুরুত্বপূর্ণ কেউ না ভাবায় নাকি মাসের শেষে উপহার দেবার ভয়ে,ঠিক নিশ্চিত হতে পারিনি। এবার মেজাজ আরো খারাপ ছিল,গেছি খালার বাড়িতে,ঢাকার বাইরে,ভাবলাম সবাই একসাথে আছে,এবার কেউ না কেউ মনে রাখবেই।
এর মাঝে উঠলো দাঁতে ব্যথা,গেলাম ডাক্তারের কাছে,ডাক্তার আন্টি দেখে বললেন,২টা দাঁত খতম,রুট ক্যানাল করাতে হবে,অনেকদিনের ধাক্কা। কি আর করা,প্যাঁচার মত মুখ করে বললাম করেন,কি করবেন! এরপরে কাজ শুরু,ডাক্তারকে দেখে সুন্দরী নরম স্বভাবের মানুষ মনে হয়েছিল,কিন্তু বজ্রমুঠিতে চোয়াল ধরে যখন চিমটা আর কাঁটা নিয়ে দাঁতগুলিতে গুঁতানো শুরু করলেন,মনে হলো সিনেমার ভ্যাম্প।
যাই হোক,জন্মদিনে ভালো কিছু খাওয়াদাওয়ার আশায় ছিলাম,গেলো। বাসায় ফিরে সন্ধ্যা থেকে মুখ গোমড়া করে বসে আছি। কারো মনেহয় মনেও নেই।
সময় যাচ্ছে,রাত ১১টার দিকে দেখি,বড় আপা ওভেন আর কেক বানানোর জিনিসপত্র নিয়ে ব্যস্ত,জিজ্ঞেস করতে বললো,খেতে না-ই পারলি,তাই বলে জন্মদিন হবে না নাকি? সত্যি সত্যিই দেখি অত রাতে কেক বানিয়ে ফেললো,ছোট বোন কই থেকে যেনো ১টা মোমবাতিও যোগাড় করে ফেললো,এরপরে চিরাচরিত মোম নেভানো,ঐ ছোট্ট কেক কাটা,৪ জন মিলে হাততালি(ছোটখালাও ছিলো),হইচই। আপনজন কাকে বলে,মনে হয় আরো একবার বুঝতে পারলাম।
ঠিক ১২টার একটু পরে,পাগলা দোস্ত লাব্বুশের এসএমএস,"হ্যাপি বার্থডে দোস্ত",তারপরে টুমপুর ফোন,না,আসল না,আমার পাতানো বোন,ভাইয়া হ্যাপি বার্থডে। সেটা ছাড়তেই,চরম কাঠখোট্টা বন্ধু দিপুর এসএমএস,ওর মতই শুকনো,তা-ও কি ভালো---"হ্যাপি বার্থডে"। এরপর সুমিতের--"হ্যাপি বার্থডে,কই খাওয়াবি,আমি ফ্রি আছি"।
নিঝুমের--" হ্যাপি বার্থডে ভাইয়া"। একটার পর একটা। মনে মনে বলছি,কে বললো বাবা কেউ তোমাকে মনে রাখেনা? তোমার মত ভাগ্যবান কয়জন আছে? কয়জনের ঋণ শোধ করলে এই জীবনে? না-ই বা হলো বড় কোন দোকানে খাওয়াদাওয়া,না-ই বা মিললো খুব দামী কোন উপহার,নিজের আপনজনদের এত ভালোবাসার ঋণ কিভাবে শোধ করবে,ভেবেছ কখনো? এর দাম তো অনেক অনেক বেশি,তোমার তো সাধ্য হবেনা বদলি দেবার।
শুভ জন্মদিন রাজন!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।