আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুকনো বৃষ্টি, ভেজা চোখ

যাহার পা-দুটা আছে, সেই ভ্রমণ করিতে পারে; কিন্তু হাত দুটা থাকিলেই তো আর লেখা যায় না ! সে যে ভারি শক্ত। - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বৃষ্টির বেগ বাড়বে। পাশে রাখা ছাতাটা একবার দেখে নেয় নিষাদ।

তারপর শাটল ট্রেনের জানালা দিয়ে বিষণ্ণ চোখদুটি মেলে দেয় বাইরে। সারি হয়ে থাকা গাছগুলো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রাখে দৃষ্টিসীমা। কৃষ্ণচূড়া গাছটা যেন ভেজা আগুন! দৃষ্টি সরিয়ে এনে আবার শাটলের ভিতর চোখজোড়া এক করে। একটু সামনে, কোণায় বসে থাকা মেয়েটার দিকে চোখ যায়। মেয়েটাকে এর আগে বেশ কয়েকবার দেখেছে সে।

নাম জানা আছে; দীপান্বিতা। তারপরও তাদের মধ্যকার সম্পর্কটা পরিচিত আর অপরিচিতের মাঝামাঝি কোথাও আটকে আছে। তবে মেয়েটাকে পরিচিত ভাবতে ইচ্ছা হয় নিষাদের। এই মেয়েটার সাথে কোথাও একটা যোগসূত্র আছে তার। যোগসূত্রটা কোথায় সে ধরতে পারে না।

ধরতে না পারার মাঝে একরকম অস্বস্তি কাজ করে। দীপান্বিতার সাথে একবারের জন্য চোখাচোখি হলো। মেয়েটি সাথে সাথেই চোখ ঘুরিয়ে নিলো। অপ্রয়োজনীয় দ্রুততাটুকু নিষাদের চোখ এড়ালো না। মৃদু এলোমেলো মুহূর্তটুকু সুস্থির করতেই হয়তো চার চোখের মাঝখানে নিষাদের স্কুল লাইফের বন্ধু রাশেদের আগমন।

দীপান্বিতার পাশে এসে বসলো। একই সাথে পড়ে তারা। রাশেদ চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিয়ে নিষাদকে লক্ষ্য করে বললো, কী রে তোর গ্রুপের বাকিরা কই? - গ্রুপ ছড়ায় ছিটায় আছে। তোর খবর বল। আমার কোন খবর নাই।

নিজের খবর আর নিজেই রাখি না! - হতাশ নাকি? হ্যাঁ, হতাশ। তাই নিজ জীবনের খবর ছাপানো পত্র-পত্রিকা আর খুলে দেখি না! হতাশার গল্পে আগ্রহ নেই নিষাদের। নিজের সময়গুলোই কেমন বিষণ্ণ হয়ে উঠছে। সেখানে আর কারো হতাশা যুক্ত করার মানে হয় না। অনাগ্রহেই বন্ধুর কথা শুনছিলো।

কথাগুলো কানে আসার আগেই কোথাও হারিয়ে যাচ্ছিলো। কারণ, নিষাদের মনোযোগ তখন তার উপর স্থির একজোড়া চোখে আটকে গেছিলো! মনোযোগী শ্রোতার ভূমিকায় থাকা নিষাদের দিকে দীপান্বিতার জোড়া চোখ স্থির। অপলক চোখ দুটি নিষাদের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিলো। নিষাদ তার মনোযোগ ওই চোখজোড়ায় রাখলেও নিজের চোখ দুটি বন্ধুর উপর ধরে রাখলো। দীপান্বিতাকে কোন চাহনি উপহার দিয়ে ক্ষণিক আগের অস্বস্তিকর মুহূর্তটুকু আবার ফিরিয়ে আনতে চায় না।

কিন্তু সময়ের সাথে নিষাদের অস্বস্তি বাড়তে লাগলো। দীপান্বিতা পলক ফেলার আগেই সে উঠে দাঁড়ালো। কী রে, যাস কই? রাশেদ কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো। - সামনে থেকে ঘুরে আসি। বাকিদের খুঁজে দেখি! বলেই আর দাঁড়ালো না নিষাদ।

শাটলের বাইরে পা রেখে লম্বা একটা শ্বাস নিলো। ঠিক সে সময় প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হলো। যাকে বলে আকাশ ভাঙা বৃষ্টি। আকাশটাই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ছে এমন! নিষাদের হাতে ছাতা নেই। শাটলে ফেলে এসেছে।

আবার গিয়ে নিয়ে আসতেও ইচ্ছা করছে না। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সামনে হাঁটতে লাগলো। তার শরীর কাঁপছে! দীপান্বিতা বড় বড় চোখ মেলে নিষাদের হেঁটে যাওয়া দেখছে। তার খুব ইচ্ছা করছে এই বৃষ্টিতে নিষাদের পাশে একটু হাঁটে। পাশে না হোক, একটু পিছনে।

না হয় অনেক পিছনে! দীপান্বিতা নিষাদকে যতটা সময় পারলো দেখে নিলো। আচ্ছা নিষাদ কি একটু কাঁপছিলো ঠাণ্ডায়? তার দৃষ্টি নিষাদের ছাতার উপর পড়লো। দীপান্বিতার ভীষণ ইচ্ছা করছে এখনি ছুটে গিয়ে নিষাদের হাতে ছাতাটা দেয় আর বলে, এই বোকা ছেলে! এই বৃষ্টির মাঝে ছাতা ফেলে এসেছো কেন? তোমার জ্বর হলে তোমার চেয়ে বেশি কষ্ট আমার হবে, জানো? তার চোখ দুটো হয়তো একটু ছলছল করবে। আচ্ছা, কণ্ঠে কি অভিমান থাকবে? ভালোবাসার মানুষ ছাড়া আর কারো উপর অভিমান করা যায়? দীপান্বিতা ভাবছে! বাইরের অঝর বৃষ্টির কয়েক ফোঁটা তার গায়ে এসে পড়ছে। তাতে দীপান্বিতার ভাবনায় ছেদ পড়ছে না।

বৃষ্টিতে ভিজতে তার খুব ভালো লাগে। তবে সে ঠিক করেছে আর কখনো বৃষ্টিতে ভিজবে না। খুব বেশি ইচ্ছা হলেও না! কেন যেন তার নিজেকে কষ্ট দিতে ইচ্ছা হচ্ছে। বৃষ্টিতে না ভিজে থেকে নিজেকে একধরণের শাস্তি দেয়ার ছেলেমানুষি ইচ্ছেটুকু কেন হচ্ছে সে জানে না কিংবা জানলেও নিজেকে বুঝতে দিতে চায় না। তার অবাধ্য মনটা কষ্ট পাক, অনেক কষ্ট! দীপান্বিতার একটা স্বপ্ন আছে।

স্বপ্নটার কথা সে কাউকে বলবে না। কোনদিন যদি স্বপ্নটা পূরণ হয়ে যায়, তবেই সে বৃষ্টিতে ভিজবে। সেই বৃষ্টিতে শুধু শরীর না, হৃদয়ও ভিজবে। দীপান্বিতা ছিটকে আসা বৃষ্টির ফোঁটা থেকে একটু সরে আসলো। সে নিজেকে এই বৃষ্টিতে ভিজতে দিবে না।

তবে পলকহীন চোখ জোড়া বারবার ভিজে উঠছে। কেন কে জানে! ভেজাই থাক। সে এসে মুছে না দিলে আজীবন ভিজে থাকবে! - তোমার চোখে আমি আকাশ দেখেছিলাম, তারপর দেখলাম মেঘ, মেঘের ভেসে যাওয়া। আমার চোখে তো তোমাকে ছাড়া আর কিছু দেখিনি। তবে কেন তোমার চোখে দেখা মেঘের ভারী কণাগুলো শুধু আমার চোখেই বৃষ্টি হয়ে ঝরে...!?


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।