-কোথায় ছিলে সারাদিন?
-এইতো।
-আচ্ছা তুমার কি কোন পরিবর্তন হবেনা?
আনমনে ভাবটা রেখেই রাফি জবাব দেয়,হুম...হবে....
-কবে?কখন হবে?আমি তো কিছুই বুঝতেছিনা। নীরার মুখে স্পষ্ট বিরক্তির ভাব ফোটে উঠে।
-একশো টাকা হবে তোমার কাছে?
নীরা রাগে গজ গজ করছে। প্রতিদিন সেই একই অবস্থা।
কোন কিছুর সরাসরি উত্তর দিবেনা। মাঝে মাঝে টাকা নিবে। নীরা জানে এই টাকা দিয়ে রাফি সিগারেট খাবে। সারাদিন ভবঘুরের মত ঘুরে বেড়াবে। কোথায় যায় কি করে কিছুই বলেনা।
অনেক বুজিয়েছে রাফিকে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
তিন বছর ধরে রাফির সাথে বন্ধুত্ব নীরার। রাফি ভবঘুরে হলেও তার কথা বার্তা,চলাফেরা যে কাউকেই মুগ্ধ করে। নীরা কখন থেকে যে তাকে ভালবেসে ফেলেছে তা নিজেও জানেনা।
রাফি তাকে ভালবাসে কিনা জানেনা। তবে মাঝে মাঝে ওর আচরনে মনে হয় নীরাকে সে খুব কাছে পেতে চায়। পরক্ষনেই আবার এক উদাসী ভাব। নীরা বুঝতে পারেনা সেটা কি কেবলি রাফির বন্ধুত্ব নাকি ভালবাসা। কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারেনি।
রাফিকে আজ তার মনের কথা জানাতেই হবে। এভাবে আর থাকা যায় না।
সারাদিন খুজে এখন পেয়েছে রাফিকে। আজ অনেক কথা আছে রাফির সাথে। কিন্তু সে জানে সিগারেট না থাকলে তাকে বেশিক্ষন ধরে রাখা যাবেনা।
তাই আগেই এক প্যাক গোল্ডলীফ কিনে ব্যাগে রেখেছিল। ব্যাগ থেকে প্যাকেট বের করে হাত বাড়িয়ে দেয় নীরা,
-এই নাও। এখন কোথায়ও যাবেনা। তোমার সাথে আজ কথা আছে।
-বাহ,তুমি তো আমার অনেক খেয়াল রাখ।
ধন্যবাদ। বলেই মুচকি হাসি দিয়ে একটা সিগারেট ধরায় রাফি।
-আচ্ছা তুমি কি কিছু বোঝতে পারনা?নাকি বোঝতে চাওনা?
-কি?
-তোমার মাঝে কি ভালবাসা নেই?
-ছন্নছাড়া জীবনে ভালবাসা শোভা পায়না।
-ইচ্ছে হয়না কাউকে ভালবাসতে?
রাফি আনমনে সিগারেট টানছে। নীরার কথাগুলো শুনতে পেয়েছে কিনা তা বোঝা দ্বায়।
নীরার অসস্তি লাগছে। রাগ আর বিরক্তি ক্রমশ বাড়ছে। সে জানে এর কোন উত্তর পাবেনা। যা বলার সরাসরি বলতে হবে। গলার স্বর একটু উচু করে আবার ডাক দিল,
-রাফি কি বলছি শুনবে নাকি সিগারেট নিয়েই পড়ে থাকবে?
-হুম
-রাফি আমি তোমায় ভালবাসি।
অনেক অনেক বেশি ভালবাসি। তুমিও কি আমায় ভালবাসো?চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলল নীরা। একটু লজ্জাও লাগছে। নীরা জানে মেয়েরা কখনো ভালবাসার কথাটা আগে বলতে পারেনা। কিন্তু তার বলতে হচ্ছে।
লজ্জায় আর চোখ খোলেনি। চোখ বন্ধ করেই রাফির উত্তরের অপেক্ষায় আছে। আজ রাফিকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরতে খুব ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে রাফির ভবঘুরে জীবনটার স্থায়ী নিবাস করে দিতে এই হৃদয়ের মাঝে। যেন হারিয়ে যেতে না পারে।
কোন জবাব না পেয়ে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসে নীরা চোখ খুলে…
-রাফি প্লীজ যেওনা। আমার কথা শুনে যাও। শুধু একবার বলে যাও তুমি আমায় ভালবাস। প্লীজ রাফি,রাফি..…
রাফি চলে যাচ্ছে তার মত করেই। নীরা একদৃষ্টে দেখছে অশ্রুসিক্ত নয়ণে রাফির চলে যাওয়াকে।
পায়ে সেই পুরাতন স্যান্ডেল। গায়ে টি শার্ট। মাথার চুলগুলো এলোমেলো। সিগারেট একটু পরপর টানছে আর ধোয়া মিশে যাচ্ছে বাতাসের সাথে। ভাবলেশহীনভাবেই তার পথচলা..…..
নীরার চোখ নিচে পরতেই দেখে একটি ভেজা চিরকুট।
হাতে নিয়ে দেখে নীরা চিরকুটের সাথে একটি তাজা লাল গোলাপ। এ যে রাফির লেখা অশ্রুভেজা চিরকুট!
পড়তে থাকে নীরা.…
''নীরা,আবেগ দিয়ে জীবন চলেনা। যে আবেগে আজ আমায় ভালবাসো,হয়ত সেই আবেগেই একদিন আমায় ঘৃনা করবে। ঘৃনা করবে আমার অক্ষমতাকে,আমার দারিদ্রতাকে,আমার ব্যক্তিত্বকে। তোমারতো তাজা গোলাপ অনেক প্রিয়,তাই না?একটি গোলাপ দিয়ে গেলাম।
একদিন এটি শুকিয়ে যাবে,গন্ধ থাকবেনা। শুকনো ফুল কেউ সাজিয়ে রাখেনা। কিন্তু যেদিন তুমি এই শুকনো ফুলের গন্ধ পাবে,সেদিন আমায় ডেকো। ফিরে আসব তোমার চিরচেনা হয়ে একটু পাগলামী করতে। ভাল থেকো..…''
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।