আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপূর্ণ স্বপন

যদি নির্বাসন দাও.................................................................. আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো আমি বিষ পান করে মরে যাবো! বিষণ্ন আলোয় এই বাংলাদেশ নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ, প্রান্তরে দিগন্ত নির্নিমেষ- এ আমারই সাড়ে তিন হাত তুমি।

সকালে জানালার কাঁচ গলিয়ে নরম রোদ এসে ঘুম ভাঙিয়ে দিলো অনিন্দ্যের। ছুটির দিনে কোথায় একটু আরাম করে ঘুমোবে তারো জো নেই। হঠাত ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই সে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো। প্রায় নয়টা বাজতে চলছে।

মা'টা যে কি! একটু ডেকে দিলে কি হয়। না কখনোই তিনি তা করবেন না। এখন দাঁত ব্রাশ করা, নাস্তা করা, বাজার করা সবকিছুতেই তাড়াহুড়ো করতে হবে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নেয় অনিন্দ্য। ছুটির দিনে সে-ই বাজার করে।

হাতঘড়িটা নিতে গিয়ে দেখে তার ডায়েরীটা খোলা পড়ে আছে। তাতে লেখা একটা প্রিয় কবিতার কিছু লাইন। "যাওয়া বলে কিছু নেই সবই ফিরে ফিরে আসা . . . . . . . . শুধু নারীরা একবার গেলে আর ফেরে না। " শেষ লাইনটায় এসে অনিন্দ্য কিছুক্ষণ থমকে থাকে। কোন নারী কি এসেছিলো তার জীবনে? না, কেউ তো আসেনি তার কাছে বসন্তের সুবাস কিংবা বর্ষার জল নিয়ে।

তৃষ্ণার্ত নয়নে সে শুধু প্রতীক্ষায় থেকেছে কেউ এসে ধরবে তার দুটি হাত- কিন্তু কেউ আসেনি! ওই যে পাশের বাড়ির শান্তা যাকে দেখলেই তার বুকের ভেতর কেমন একটা অচেনা শিহরণ জাগে, অনুভবে বয়ে যায় শীতল স্রোত, সে কি পারতো না কোন এক সুন্দর সকালে এসে ধরতে তার দুটি হাত? িকংবা অনিন্দ্য যদি এক বুক সাহস নিয়ে একিদন তাকে বলে !!! না, তা সম্ভব নয়। জয়াটা সেই পথ বন্ধ করে দিয়ে গেছে। হুট করে সহপাঠী এক ছোকরাকে কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছিল। মা অনেক আশা করে ছিলেন মেয়েকে সাজিয়ে-গুজিয়ে, কতো হৈ চৈ করে বিয়ে দেবেন কিন্তু সে কিনা বিয়ে করলো চুপিচুপি রেজিস্ট্র করে। জয়াটা সুখেই আছে তবুও মা কখনো তাদের মেনে নিবেন না।

স্বপ্নভেঙ্গর বেদনা যে বড় কষ্টের। অনিন্দ্য কিছুতেই মাকে কষ্ট দিতে পারবে না। একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। দরজার মুখে মাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। মায়ের হাত থেকে বাজারের লিস্ট আর থলিটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

আজকের দিনটা খুব সুন্দর। ঝকঝকে আকাশ, ইচ্ছে করছে বেশ খানিকক্ষণ ঘন সবুজের মাঝে প্রিয়জনের হাত ধরে পাশাপাশি হাঁটতে। আফেসাস, অনিন্দ্যের তেমন কেউই নেই। মোড় ঘুরতেই দেখলো শান্তা আসছে প্রাইভেট থেকে। ছুটির দিনেও এত পড়াশোনা! আচ্ছা অনিন্দ্য কি শান্তাকে বলেব তার সাথে কিছুটা পথ পাশাপাশি হাঁটেত।

শান্তা কাছ দিয়ে যাবার সময় জিজ্ঞেস করে -'বাজারে যাচ্ছেন বুঝি?' অনিন্দ্য হেসে বলে, 'হ্যাঁ, ছুটির দিনে আমিই বাজারে যাই। তুমি কি প্রাইভেট থেকে আসছ? ' 'হ্যাঁ, সামনে পরীক্ষা তো'- শান্তা উত্তর দেয়। অনিন্দ্যের মনে হয় তার যেন আরো কিছু বলার আছে কিন্তু বলা হয় না। 'আচ্ছা চলি বলে শান্তা বিদায় নেয়। অনিন্দ্য কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে শান্তার চলে যাওয়ার দিকে।

শান্তা দূর থেকে দূরে চলে যায়। অনিন্দ্য ভাবে এভাবেই শান্তা একিদন আরো অনেক অনেক দূরে চলে যাবে অন্য কারো হাত ধরে। আর অনিন্দ্যের কখনোই বলা হবে না- সেই চিরসত্য কথাটি - শান্তা, আমি তোমাকে চাই। সে ভাবে, এটাই নিয়তি। এক জীবনে মানুষ অনেক কথাই বলতে পারে না, কত হাহাকারই না মানুষ বয়ে চলে এই ছোট্ট জীবনে! তার মনে পড়ে - শুধু নারীরা একবার গেলে আর ফেরে না -


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।