কিন্তু দু-দশক থেকে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে চাপ দেয়া হচ্ছে খাদ্য উৎপাদনে দেয় ভর্তূকি প্রত্যাহার করার জন্য, এর সবই করা হচ্ছে মুক্ত বাণিজ্যের নামে। এ জাতীয় চাপ দেবার অর্থ হল দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া। প্রকারান্তে বাণিজ্যের ওপর নির্ভওশীর হয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নামান্তর মাত্র। এ পদ্ধতি অনুসরণে আমাদের কৃষি বাজার অচিরেরই বন্ধ হয়ে যাবে। আলু উৎপাদনের খরচ যদি কেজিপ্রতি ৪.০০ টাকা হয় তাহলে উন্নত দেশের কৃষক তা ভর্তূকির কারণে বিক্রি করবে প্রয়োজনে ৩.০০ টাকা দামে।
অন্যদিকে আমাদের কৃষককে লাভের জন্য একই আলু বেচতে হবে ৫.০০ টাকা দামে। ফলে ক্রেতারা সহজে কম দামে বেচার আলুর দিকেই বেমি ঝুকবেন। আবার সমান দামেও যদি বেচতে চান আমাদের দেশের আলু উন্নত দেশে প্রবেশ করানো যাবে না। তখন একই পণ্যেও ওপর মোটা অংকের শুল্ক চাপিয়ে দেয়া হবে। সাথে ডাম্পিং চার্জ, আরো ম্যালা কিছু।
একটা কথা মনে রেখে এগোনো ভালো হবে যে, শিল্পোন্নত দেশে কৃষি বলে কিছু নেই, আছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফুড প্রডাকশান। মার্কিন দেশে আগামিতে শুমারির সময় কৃষকদের আর গণনা করা হবে না। যে সব দেশে কৃষি ধ্বংস হয়ে গেছে তারা এখন কারখানা মার্কা খাদ্য তৈরি করে। তাদের আর কৃষি কিংবা কৃষক বলেও কিছু নেই।
উদাহরণের জন্য আমাদের পাটের কথা বলা যেতে পারে।
সেদিন আর তেমন দূরে নয় যেদিন ক্লাসে মাস্টারমশায় পড়াবেন, এককালে পাটকে বাংলাদেশের সোনালি আঁশ বলা হতো। বাংলাদেশের কৃষক কখনো আন্তজার্তিক বাজারের বিরোধী নয়। কেননা বিশ্ব বাজারে অংশগ্রহণ করেই আমাদের কৃষকরা চাষাবাদ করেছিল। কিন্তু সেখান থেকে আমাদের বের করে দেয়া হয়েছে। আদমজী বন্ধ হয়ে গেছে।
কৃষকের পাট এখন আর বিক্রি হয় না। প্রাইভেটরাইজেশন আমাদের আদমজী খেয়েছে, চট্টগ্রামের ইস্পাত কারখানা গিলে নিয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক আজ পথে বসেছে। রফতানি বহুমুখী করার নামে কৃষিপণ্য রফতানি স¤প্রসারণ করা হলো। বৈদেশিক বাণিজ্য ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণের নামে দেশকে আমদানি নির্ভর করে তোলা হয়েছে।
যা কিছু আমাদের পরিবেশবান্ধব তার সবকিছুই আমরা হারিয়েছি। সব চলে গেছে বিদেশের মাটিতে, রফতানির নামে। পৃথিবীর অন্যতম প্রাণের বৈচিত্রের দেশ বাংলাদেশ। ছয়টি বিচিত্র ঋতুতে ভরা। এখন তার কিছুই নেই।
ব্যাঙ, কেঁচো, সাপ, গুইসাপ, নানা জাতের ঔষধি গাছ- যা কিছু গ্রামীণ পরিবেশ রক্ষা করতো তার সবই রফতানির নামে ধ্বংস হয়ে গেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।