‘দশজন মানুষ একজনের লাভের জন্য মরার চেয়ে একজন মানুষ দশের স্বার্থে মরা অনেক ভালো। ’ ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১০ তারিখে কিয়াং হাই লী আত্মহত্যার আগে তার লেখা শেষ চিঠিতে এ কথাটি লিখে গেছেন। কিয়াং হাই লী একজন কৃষক। তিনি বসবাস করতেন দক্ষিণ কোরিয়ায়। মেস্কিকোর কানকুন শহরে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার পঞ্চম মন্ত্রী পর্যায়ে সভা চলাকালে তিনি আত্মহত্যা করেন।
নিজের বুকের পাঁজরে ছুরি বসিয়ে দেন তিনি নিজে।
এরও আগে ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে ভারতে হাজার হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। তারা আত্মহত্যা করেছিলেন বিষ পান করে। ইংল্যান্ড ও কানাডাতে কৃষকদের আত্মহত্যার হার সাধারণ নাগরিকদের তুলনায় অনেক বেশি। গণচিনেও একই অবস্থা।
ওয়েলেসে সপ্তাহে একজন করে কৃষক আত্মহত্যা করে। আমেরিকার মিডওয়েস্টে কৃষকদের মৃত্যূর কারণের মধ্যে আত্মহত্যা অন্যতম পঞ্চম প্রধান কারণ। ১ লী এই সব খবরই রাখতেন। তার আত্মহত্যা শুধু একজনের আত্মহত্যা নয়, দুনিয়াব্যাপি কৃষকদের সকল আত্মহত্যা ও আত্মহত্যা কারণকে মনে করিয়ে দেবার জন্যই তিনি এ রাস্তা বেছে নেন। আত্মহত্যা মধ্যদিয়ে লী যে কথাটি বলতে চেয়েছেন, তা হচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা দুনিয়াব্যাপি কৃষকদের আত্মহত্যার প্রধান কারণ।
এ বিপর্যয়ের কারণ কৃষিতে উদারীকরণ নীতি। এর ফলে কৃষক তার পেশা থেকে সরে যাচ্ছে। নতুন জীবিকার সন্ধানে শহরমুখী হচ্ছে। আর যারা মাটি ধরে বসে থাকছে তারাও এক সময় দেনা দায়ে আবার আত্মহত্যামুখী হচ্ছে। আমাদের দেশের জন্য বিষয়টি আরো অনেক বেশি বিপদের।
কেননা আমাদের ৮০ ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে আর নব্বই ভাগেরও বেশি মানুষের সম্পৃকতা হচ্ছে কৃষির সাথে। কিন্তু সেই কৃষি উদারীকরণ নীতির কারণে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র ও তাদের মুখযন্ত্র বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা গরিব দেশগুলোর সরকার চাপ দিচ্ছে কৃষিতে ভর্তূকি কমানোর জন্য। অন্যদিকে অনেক বেশি শ্রমে ও দামে কৃষক ফসল উৎপাদন করেও ফসলের সঠিক দাম পাচ্ছে না। আমাদের সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনার অনুপস্থিতি ও কৃষকপ্রেমী সরকারের অভাবে ধীরে ধীরে কৃষক তার পেশা থেকে সরে যাচ্ছে। আর কৃষকের সেই জায়গাটুকু দখল হয়ে যাচ্ছে মুনাফাভোগী বহুজাতিক কোম্পানির হাতে।
এ রাস্তাটুকু পরিস্কার করার জন্য কৃষকদের মাঝে ব্যাপক পরিমাণে উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ দেয়া হচ্ছে। এ সকল বীজ ব্যবহারের কারণে রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের কারণে আমাদের মাটির শরীর আমাদের শরীর দু-ই নষ্টের পথে। আর্সেনিক তো তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা চাপ তৈরি করছে উন্নশীল দেশগুলো কৃষিতে ভর্তূকি কমানোর জন্য। অন্যদিকে তারা নিজেরা তাদের দেশে কৃষিতে দিন দিন ভর্তূকির মাত্রা বাড়াচ্ছে।
আমরা মুক্তবাণিজ্যের এ জায়গাটির ঘোর বিরোধিতা করি। ৩০ এর দশকে আমেরিকার মহামন্দার সময় গ্রামাঞ্চলে জীবনযাত্রার মান নিচে নেমে যাওয়া ঠেকাতে খামার ভর্তূকি দেয়া শুরু হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ইউরোপ, আমেরিকা ও জাপান দেশীয় খাদ্যে উৎপাদন পুর্নগঠন এবং পল্লীজীবনকে সহায়তার লক্ষ্যে কৃষিতে ব্যাপকভাবে ভর্তূকি দিতে শুরু করে। চাউলে স্বংয়সম্পূর্ণ হতে জাপানও একই নীতি অবলম্বন করে। উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোও উৎপাদন বাড়াতে কৃষিতে সহায়তা দেয়।
এ সহায়তা দেয় দেশীয় কৃষিতে ভর্তূকি প্রদানের মাধ্যমে অথবা ধনী দেশগুলো থেকে ভর্তূকিপ্রাপ্ত সস্তা খাদ্যশস্য আমদানি নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।