আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাধবী ও গালবের গল্প

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

মহামতি যযাতি যখন মঞ্চে এলেন তখন তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মহিলা সমিতির মঞ্চ লাগোয়া বামপাশের দরজাটা বন্ধ হয় না, বৃষ্টির আঁচ এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল আমার পা পর্যন্ত। মেঘের গুরুগুরুম শব্দ তো আছেই। থিয়েটারের মাধবী নাটকটি মহাভারতের একটা শিক্ষামূলক গল্প থেকে অনুপ্রানিত। কর্তব্যপরায়নতা, ভালোবাসা ও নারী অধিকার প্রসংগটি স্পষ্টভাবে এখানে এসেছে।

যযাতিরূপী রামেন্দু মজুমদার, মাধবী চরিত্রে ত্রপা আর গালব হিসাবে ছিলেন আপন। জগলুল আলম দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভূগে থিয়েটার কর্মীদের প্রচেষ্টায় ক্যানসারমুক্ত হয়ে প্রথম অভিনয় করলেন কাশীর রাজার চরিত্রে। জগলুল এমনিতেই চমৎকার অভিনয় করেন, সেদিন দেখলাম তার অভিনয়ের পুনর্জ্জীবন, আমি মুগ্ধ, হল ভর্তি দর্শকও মুগ্ধ ছিল অল্প কিন্তু পুরো নাটকের একমাত্র কমেডি অংশটুকুতে তার মনমুগ্ধকর ও প্রানবন্ত অভিনয় দেখে। মাধবী নাটকটির প্রাণ বলতে আমি বুঝলাম ত্রপার অভিনয়। পুরো নাটকটি বৃষ্টি আর কালবৈশাখের জোরালে বাতাসী শব্দ, বিদ্যুত বিভ্রাট আর মাঝখানে মোবাইলের আর্তচিৎকারে সরগরম ছিল।

নাটকের শেষের দিকে যযাতির বাড়ী বিশ্বামিত্রা এসেছে। মাধবীর স্বয়ম্ভর সভা আর গালব গুরুদক্ষিনা দিতে সমর্থ হওয়ায় তার জন্য সন্বর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে। বিশ্বমিত্র আর জজাতি তাই নিয়ে কথা বলছেন। পেছন থেকে জনৈক দর্শকের মোবাইল দুইবার চ্যাচিয়ে উঠলো। রামেন্দ্র মজুমদার ডায়লগ বাদ দিয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠলে, দয়া করে ফোনটা বন্ধ করবেন! মনযোগ দিয়ে নাটক দেখায় আমার মনে হলো এটাও নাটকের একটা অংশ।

তিনি এবার বিকট জোরে হাততালি দিয়ে আবার ঐ একই কথা বললেন। দর্শকদের কানঘুসা বন্ধ হয়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যে তিনি আবার তার ডায়লগে ফিরে গেলেন, কনসেন্ট্রেশন বিঘ্ন হওয়ার কোন প্রভাব তার পরবর্তী উচ্চারণে টের পেলাম না। নাটকের পুরো কাহিনী মোটামুটি এমন। গালব বারো বছর অধ্যায়ন শেষে তার গুরু বিশ্বামিত্রকে গুরুদক্ষিনা দিতে চাইল।

গুরু বললো, কিছু লাগবে না। সে জেদ ধরাতে গুরু তাকে ৮০০ অশ্বামেধ ঘোড়া গুরুদক্ষিনা হিসাবে চাইলো। গালব বাটে পড়লো। কারণ সমগ্র আর্য্যমর্তে ৮০০ ঘোড়া কোন রাজার কাছে ছিল না। কিন্তু অনঢ় গালব ঘোড়ার সন্ধানে বের হয়ে হতাশ হয়ে পড়ে।

নিজেকে হত্যা করতে গেলে বিধাতা দয়াপরবশ হয়ে যযাতির কাছে যেতে বলে। জজাতি বিখ্যাত দানবীর। রাজ্য ছেড়ে এখন আশ্রম চালায়। তিনি গালবকে তার বিদূষী, সুন্দরী কন্যা মাধবীকে দান করেন গালবের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য। মাধবী বরপ্রাপ্তা।

সে কুমারীত্ব অর্জন করতে পারে প্রতিবার সন্তান উৎপাদনের পর। এবং তার গর্ভের সন্তান হবে চক্রবর্তী রাজা। গালব মাধবীকে রাজাদের কাছে নিয়ে যায়, এমন করে তিন রাজা দুইশ ঘোড়ার বিনিময়ে মাধবীকে বিয়ে করে ও প্রত্যেকে একজন করে রাজপুত্রের পিতা হবার সৌভাগ্য অর্জন করে। বাকী দু্ইশ ঘোড়া আর কোথায় না পাওয়া গেলে মাধবী বিশ্বামিত্রের কাছে গিয়ে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। এভাবে গালব তার গুরুদক্ষিণা প্রদানে সক্ষম হয়।

গালবকে সাহায্যের জন্য যযাতি তাকে দান করলেও মাধবী গালবের প্রেমে পড়ে। সে গালবের গুরু দক্ষিণা সংগ্রহের প্রধান অবলম্বন হয়। কিন্তু নাম হয় জজাতির তার দানের জন্য, নাম হয় গালবের তার অসম্ভব গুরু দক্ষিনা সংগ্রহ করার সমর্থতার জন্য। কিন্তু মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত মাধবী যখন গালবের কাছে ফিরে আসে তখন গালব তার ক্ষয়িত যৌবন আর গুরুর সাথে শয়নের অজুহাতে মাধবীকে গ্রহণ করতে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। মাধবী পুনরায় কুমারীত্ব গ্রহণের সুযোন না নিয়ে দেখতে চায় গালব তাকে ভালবাসে কিনা।

কিন্তু গালব নাচার। সে বলে, তুমি কেবল দায়িত্ব পালন করেছো, আমিও দায়িত্ব পালন করেছি। চারজন রাজা পুত্রসমেত মাধবীর স্বয়ম্ভর সভায় হাজির হয়েছে, তাদের কাউকে বেছে নেয়ার জন্য বলে। গালবের আচরণে আশাহত মাধবী তাকে মুক্ত করে দেয়। গালব তাকে বলে, তুমি যা চাও আমি তাই দেব।

মাধবী জানায়, আমি যা তোমার কাছে চাই, তা কখনই তোমার কাছে ছিল না। এ জায়গাটাতে এসে ত্রপার অভিনয়, তার ক্রন্দন আমাকে নাড়িয়ে দিয়েছে আপাদমস্তক! স্যালুট টু ইউ ত্রপা, মাই ফ্রেন্ড!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।