আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে (অতিপ্রাকৃত গল্প)

timursblog@yahoo.com

অ্যামব্রোস বিয়ার্স An Occurrence at Owl Creek Bridge রেলসেতুর মাঝখানে ফাঁসিকাঠে দাঁড়ানো মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তবন্দী, কুড়ি ফুট নিচের পাক খেতে থাকা আউল ক্রিক নদীর পানির দিকে চাইলো । লোকটার কব্জিজোড়া শরীরের পেছনে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা, গলায় আরেকটা মোটা দড়ির ফাঁস পরানো । ফাঁসির দড়িটার অন্য প্রান্তটা মাথার ওপরের আড়াআড়িভাবে আটকানো ক্রস টিম্বারের সাথে বাঁধা, দড়িটার ঝুলন্ত প্রান্ত নেমে এসেছে বন্দীর হাঁটুর কাছে । রেলসেতুর পাশ থেকে বেরোনো কতগুলো তক্তা বন্দী ও তার জল্লাদদের--মানে ফেডারেল বাহিনীর দু সৈনিকের পা রাখবার জায়গা করে দিয়েছে । কয়েকহাত তফাতে দাঁড়িয়ে আছে এই কোর্ট মার্শালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন র‌্যাংকের একজন অফিসার ।

ব্রিজের দুমাথায় নিয়মমাফিক যাকে বলে, সাপোর্ট পজিশনে রাইফেল উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে দুজন প্রহরী । সাপোর্ট পজিশন হচ্ছে রাইফেলটা বাঁ কাঁধের ওপর ব্যারেল আর বাঁ বাহুর ওপর হ্যামার রেখে দাঁড়ানো, ডান হাতটা বুকের ওপর আড়াআড়ি ভাবে থাকবে । সেতুর মাঝখানে কি হচ্ছে সেটা জানা ওই সান্ত্রী দুজনের কাজ নয়, তারা বন্দীর দিকে পিঠ দিয়ে সেতুর দুপাশের রাস্তার ওপর নজর রাখছে । ওদিকে রেললাইনটা ব্রিজ থেকে নেমে শ খানেক গজ গিয়ে ঘন জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে গেছে, তার একটু পরে বাঁক চলে গেছে দৃষ্টিসীমার বাইরে । কোন সন্দেহ নেই জংগলের মধ্যে ফেডারেল বাহিনীর আরও চৌকি আছে ।

সেতুর এদিকটা খোলামেলা, বাহিনীর মুল ঘাঁটি এখানে । গাছের গুঁড়ি বেড়া দিয়ে ছোটমতো একটা স্টকেড বানানো হয়েছে, দেয়ালে গুলি করার জন্য ছোট ছোট গর্ত করা আছে - লুপহোল । গাছের দেয়ালের কোনে একটা বড়ফাঁক, ব্রিজটা কাভার করে একটা মস্তো পিতলের কামানের ব্যারেল চেয়ে আছে নদীর দিকে । সেতু আর স্টকেডের মাঝামাঝি জায়গাটায় এই ফাঁসি দেয়ার দৃশ্যটা দেখছে লাইনে দাঁড়ানো এক কোম্পানি পদাতিক সৈন্য । এই নৃশংস দৃশ্যটা দেখার জন্য একবেলা ছুটি পেয়েছে ওরা, প্যারেড রেস্ট ।

রাইফেলের বাটগুলো মাটিতে, ব্যারেল হেলানো কাঁধের দিকে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওরা । লাইনে সবার আগে এক লেফটেন্যান্ট, হাতের তরবারির আগা মাটিতে গাঁথা । সবাই নিশ্চুপ, নিথর । সব নিয়ম কানুন মেনেই পৃথিবী থেকে বিদায় দেয়া হচ্ছে কনফেডারেট বন্দীকে । বুকের ওপর দুহাত ভাঁজ করে ক্যাপ্টেন দাঁড়িয়ে ।

যদিও তার নিত্য আনাগোনা, মৃত্যু খুব সন্মানিত অতিথি এখানে । যাঁকে ফাঁসি কাঠে আটকানো হয়েছে তার বয়স বছর পঁয়ত্রিশেক । সিভিলিয়ান, যদি পোশাক আশাক দেখে বোঝা যায় প্ল্যান্টেশনের মালিক । চেহারা সুরত খারাপ নয়, খাড়া নাক, চওড়া কপাল, কপালের উপর থেকেই লম্বা চুলগুলো টেনে পিছন দিকে আঁচড়ানো, লতানো চুলের প্রান্ত চমৎকারভাবে কাটা ফ্রক কোটের কলারের ওপর লুটিয়ে পড়েছে । গাঢ় ধুসর রঙের আয়তাকার চোখগুলো থেকে সহৃদয়তার ছাপ বিচ্ছুরিত হচ্ছে, যেটা গলায় যার ফাঁসির দড়ি, এমনলোকের কাছ থেকে সাধারনত আশা করা যায় না ।

সামরিক আইনে অনেক জাতের মানুষকেই ফাঁসিতে লটকানোর সুবন্দোবস্ত রাখা আছে, 'ভদ্রলোক' নামক প্রজাতিটি এর বাইরে নয় । প্রস্তুতি পর্ব সমাপ্ত । বন্দী যে তক্তাটার ওপর দাঁড়িয়ে আছে সেটা সরিয়ে নেয়া হলো, সার্জেন্ট ক্যাপ্টেনের দিকে ঘুরে স্যালুট করে ক্যাপ্টেনের পিছনে দাঁড়াল, ক্যাপ্টেনও এক পা আগে বাড়ল । ফলে এখন বন্দী আর সার্জেন্ট এখন একই তক্তার ওপর দাঁড়িয়ে । তক্তাটা এখন ব্রিজের দুটো ক্রস-টাইয়ের (আড়-কাঠ) উপর আছে ।

তক্তার নদীর দিকে বাড়ানো অংশে বলা বাহুল্য বন্দীর অবস্থান, তক্তাটা হেলে পড়া ঠেকাচ্ছে শুধু মাত্র সার্জেন্টের ওজন । সার্জেন্ট তার পা তক্তা থেকে সরিয়ে নিলেই বন্দী পড়ে যাবে নীচে। চোখ বুঁজল লোকটা, শেষ চিন্তাগুলো যাতে পরিবার পরিজন নিয়ে থাকে । দিনের প্রথম আলোয় সোনালী হয়ে উঠছে নদীর পানি, পানি ভেসে কাঠের টুকরো সবই মনোযোগ টেনে নিল বন্দীর । আরো একটা ব্যাপার আজব লাগল তার, কোত্থেকে যেন কামারের হাতুড়ি পেটানোর মতো আওয়াজ আসছে ।

মৃত্যুঘন্টা? না, সেরকম কিছু নয় আওয়াজটা আসলে আসছে বুক পকেটে রাখা বন্দীর পকেটঘড়ি থেকে । চোখ খুলে আবার নদীটাকে দেখলো বন্দী । মনে মনে বললো সে 'যদি হাতদুটোকে মুক্ত করতে পারতাম ফাঁসটা খুলে ফেলা কোন ব্যাপার ছিলোনা, ডাইভ দিয়ে বুলেট এড়াতে পারি আমি, জোরে সাঁতরে বাঁকের আড়ালে চলে যাওয়ায়টা সহজ । বাঁকের আড়ালে বনে ঢুকে পড়বো, তারপর সোজা বাড়ি । ঈশ্বরকে ধন্যবাদ আমার বাড়ি, শত্রুর নাগালের বাইরে ।

' যে শব্দগুলো লিখলাম সেগুলো ভাগ্যাহত লোকটার মগজে খেলে গেলো বিদ্যুৎচমকের মতো । মাথা নাড়ল ক্যাপ্টেন, আর সে ইঙ্গিতে সার্জেন্ট তক্তা থেকে পা সরিয়ে নিল । আর সাথে সাথে ফাঁসির দড়িতে ঝুলে পড়ল পেইটন । ****** পেইটন ফারকুহার বেশ একজন বেশ পুরনো ও সম্ভ্রান্ত ঘরের অবস্থাপন্ন প্ল্যান্টার । প্ল্যান্টার ও বেশ ক'জন ক্রীতদাসের মালিক হওয়ার কারনে ফারকুহারের রাজনৈতিক সহানুভুতি অবশ্যই ছিলো দক্ষিনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি ।

কিছু একান্ত ব্যক্তিগত কারনে কনফেডারেট আর্মিতে যোগ দেয়া হয়নি পেইটনের । তা বলে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকার বান্দা ছিলোনা পেইটন । টাকা-পয়সা, আশ্রয়, যেভাবে কনফেরডারেটদের সাহায্য করা যায়, পেইটন সাহায্য করেছে । এক সন্ধ্যায় পেইটন আর তার স্ত্রী বাড়ির বারান্দায় বসে আছে, এমন সময় কনফেডারেট বাহিনীর ধুসর উর্দি পরা এক পিপাসার্ত অশ্বারোহী সৈনিক ফটক দিয়ে ঢুকে পানি চাইল । মিসেস ফারকুহার নিজেই ছুটলেন পানির আনতে ।

যখন মিসেস ফারকুহার পানি আনতে ভিতরে গেছেন, তখন পেইটন জানতে চাইলো অশ্বারোহীর কাছে যুদ্ধের খবরাখবর । আলাবামার কনফেডারেটরা করিন্থের পতনের পর থেকে বেশ হতদ্যম হয়ে পড়েছে তখন । 'ইয়াংকিরা রেললাইন মেরামত করছে, আউল ক্রিক ব্রিজ পর্যন্ত চলে এসেছে, ক্রিকের উত্তর ধারে একটা স্টকেড বসিয়েছে ওরা । নতুন একটা জোরালো হামলা চালানোর জন্য তৈরী হচ্ছে ওরা । ওদের কমান্ডান্ট নোটিশ টাঙ্গিয়ে দিয়েছে আশে পাশে, আমি নিজের চোখে পড়েছি সে নোটিশ, কোন সিভিলিয়ানকে যদি রেললাইন নিয়ে কোন নাশকতা করতে দেখা যায়, সাথে সাথে ঝুলিয়ে দেয়া হবে ফাঁসি কাঠে ।

' 'এখান থেকে কদ্দুর, আউল ক্রিক ব্রিজ?" জানতে চাইলো পেইটন । 'তা মাইল তিরিশেক তো হবেই । ' 'কোন সৈন্য নেই ক্রিকের দক্ষিন পাড়ে?' 'প্রায় আধমাইল মতো দুরে একটা ছোট ফাঁড়ি আছে , একটা ছোট পিকেট পোস্ট, একজন প্রহরী ব্রিজের এ মাথায়' 'ধরা যাক একজন সিভিলিয়ান, পিকেট পোস্টটা এড়িয়ে চলে এলো ব্রিজের কাছে, এবং ব্রিজের এমাথায় দাঁড়ানো প্রহরীকেও ঘায়েল করলো, ঠিক কি করতে পারবে সে? হাসতে হাসতে জিগ্যেস করল পেইটন । ভেবে দেখল কনফেডারেট আরোহী । 'মাস খানেক আগে গেছিলাম আমি ওখানে, গতশীতের বন্যায় প্রচুর আলগা কাঠ ভেসে এসে ঠেকেছে ব্রিজটার লাগোয়া পিয়ারটার কাছে, এখন নিশ্চয়ই শুকিয়ে গেছে সেসব, দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে আগুনের ছোঁয়া পেলে ।

' ততক্ষণে মিসেস ফারকুহার পানি নিয়ে এসেছেন, তৃপ্তির সাথে পানি পান করে সৈনিক ধন্যবাদ দিল মিসেস ফারকুহারকে । তার পর মি. ফারকুহারে দিকে মাথা নুইয়ে ঘোড়ায় চাপলো । ঘন্টাখানেক পরে রাত নামলে আবার প্ল্যান্টেশনটা চুপিসাড়ে পার হতে পর দেখা গেল তাকে । উত্তর দিকে যাচ্ছে সে, যেদিক থেকে এসেছিলো সে । কনফেডারেট এলাকায় রেকি করতে এসেছিলো, লোকটা আসলে একজন ফেডারেল স্কাউট, শত্রুর গুপ্তচর! তবে গুপ্তচরকে দোষ দেয়া বোধহয় ঠিক হবেনা, কারন রেল ব্রিজে আগুন লাগানোর পরিকল্পনা ও তার ব্যর্থ বাস্তবায়ন পেইটন ফারকুহারের একক কৃতিত্ব ।

আর সেই রেল ব্রিজের ওপরেই এখন পেইটন ফারকুহারকে ফাঁসি দেয়ার মহড়া চলছে । ******** পেইটন ফারকুহারের মনে হলো সোজা নীচের দিকে পড়ে যাচ্ছে সে । গলার কাছে একটা তীব্র ব্যথা অনুভব করছে সে, সে সাথে দম আটকানো ভাব । ঘাড়ের গোড়া থেকে ব্যাথাটা ছলকে পরছে, বিচ্ছুরিত হচ্ছে সারা শরীরে । মনে হলো তার কয়েক যুগ ধরে সে শুন্যে ঝুলে আছে, কয়েকযুগ ধরে পড়ে যাচ্ছে সে, পেন্ডুলামের মতো শুন্য দুলছে সে ।

ব্যাপারটা হঠাৎ পরিস্কার হলো, ফাঁসির দড়িটা ছিঁড়ে নদীতে পড়ে গেছে সে । শেষমেষ পানির নীচে দম আটকে মরতে হবে?? হাস্যকর ব্যাপার, মাথার ওপর একটা আলোর আভাস দেখতে পাচ্ছে পেইটন । আলোটা উজ্বল হতে শুরু করলো । হাত বাড়িয়েও আলো নাগাল পাচ্ছেনা পেইটন । কানের কাছে একটা শোঁ শোঁ আওয়াজ, ক্রমে গর্জনে রুপান্তরিত হচ্ছে ।

যদিও সচেতন ভাবে কাজটা করছে না পেইটন কব্জির ব্যথাটা থেকে টের পেলো পেইটন, হাতদুটো বাঁধন মুক্ত করার চেষ্টা করছে সে । দানবীয় শক্তি ভর করছে পেইটন ফারকুহারের শরীরে, অনায়াসেই খসে পড়লো কব্জির বাঁধন । হাত দুটো চলে এলো গলার কাছে, ছিঁড়ে ফেলল ফাঁসটা । বাতাসের অভাবে পাগলের মতো লাফাচ্ছে তার হৃৎপিন্ড । ভুশ করে ভেসে উঠলো পেইটন নদীর পানির ওপর ।

লাটিমের মতো পাক খেল শরীরটা, নদীর বাঁক, জঙ্গল সবই নজরে এলো তার । ফাঁসি না হয়ে নদীতে পড়ে যাওয়া, বেশ বেশ । এখন গুলি খেয়ে না মরলেই হলো । তারপরেই গুলির আওয়াজটা পেল পেইটন, কয়েক ইঞ্চি দুরে লাগল গুলিটা, পানি ছিটকে লাগল মুখে । নদীর পারে হেঁটে যাচ্ছে লেফটেনান্ট, হুকুম দিলো জোরগলায় "অ্যাটেনশন, কোম্পানি, টেক এইম! ফায়ার!" গুলি এড়াতে ডাইভ দিলো ফারকুহার ।

যতদুর সম্ভব গভীরে ডুব দিতে চাইছে সে, কানে শুনতে পাচ্ছে নায়াগ্রা প্রপাতের মতো পানির গর্জন । আবার যখন ভেসে উঠলো পেইটন অনেক ভাটিতে চলে গেছে সে, বেশ অনেকটা দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে সৈন্যদের সাথে । আবার গুলি করলো দুজন সৈন্য লাগলোনা একটাও । জোরেশোরে সাঁতরাতে শুরু করলো পেইটন ফারকুহার । 'আর ভুল করবেনা অফিসার, সাবধানে নিশানা করে গুলি করতে বলবে এ পরের বার ।

' প্রচন্ড শক্তিতে দু'গজ দুরে আঘাত হানলো একট কিছু, একটা বিশাল ঢেউ এসে চুবিয়ে দিলো পেইটনকে । পিতলের কামানটা এই মানুষ শিকারের খেলায় যোগ দিয়েছে ! পরের গোলাটা গেলো মাথার ওপর দিয়ে, জঙ্গলের ডালপালা দুমড়ে মুচড়ে যাবার আওয়াজ পেলো পেইটন । 'এর পরে কামানে গ্রেপ শট (ছররা) ভরবে কামানে,' মনে মনে বললো পেইটন । গ্রেপশট ছড়িয়ে পড়বে চারদিকে, এর এক আধটা গাঁথলেও জিন্দেগি কাবার পেইটন ফারকুহারের । আবার পাক খেলো তার শরীরটা, সবকিছু ঝাপসা দেখাচ্ছে ।

মানুষ, নদীর পানি, জঙ্গল সব রঙের টানা দাগ । তারপরে স্রোত নদীর কিনারে এনে ফেললো পেইটনকে , বালিতে নখ বেঁধালো পেইটন । কোনমতে উঠে বসলো শক্ত মাটিতে । একমুঠো বালু তুলে নিল পেইটন, হীরার টুকরার চেয়েও দামী মনে হচ্ছে বালির কনাগুলোকে । আশেপাশের গাছগুলো বাগানের মতো করে সাজানো ।

প্রাণ ভরে বুনোফুলের সুবাস নিলো পেইটন । কিন্তু মাথার ওপর আরেক দফা গ্রেপশটের আওয়াজ শুনে ঘোর ভাঙল, অন্ধের মতো দাগছে গোলন্দাজ, দ্রত সটকে পড়তে হবে এখান থেকে । দ্রত পায়ে পাড় ধরে উঠে জংগলে ঢুকে গেলো পেইটন । সারাদিন পথ চললো পেইটন, সুর্য দেখে বাড়ি যাবার পথ ঠিক রাখছে । অসম্ভব দুর্ভেদ্য ঠেকছে জংগলটা. একটা কাঠুরেদের পায়ে চলা পথও চোখে পড়ল না কোথাও ।

এতো দুর্গম জায়গায় বাস করে আসছে সে এতোদিন, জানা ছিল না পেইটন ফারকুহারের । দিন শেষে সন্ধ্যা নামার সময় ক্লান্ত, শ্রান্ত, ক্ষত বিক্ষত পা নিয়ে কোনমতে টেনে নিয়ে চলল পেইটন । কেবল পরিবার পরিজনের চিন্তাই একমাত্র পথ চলার শক্তি এখন তার । অবশেষে একটা রাস্তা খুঁজে পেলো যেটা অবচেতন মনেই বুঝলো পেইটন বাড়ি ফেরার সঠিক রাস্তা । কোন মাঠ নেই, কোন বাড়ি নেই, কোন কুকুরের ডাক নেই, মোট কথা এমন কিছু নেই যেটা মানুষের উপস্থিতি প্রমান করবে ।

শুধু কালো কালো গাছগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, রাস্তাটা চলে গেছে সোজা সরল রেখার মতো দিগন্তের দিকে । মাথার ওপর তারাগুলোও অচেনা ঠেকলো পেইটনের, মনে হলো এই তারার জটলা অশুভ কিছুর কিছুর ইঙ্গিত বহন করছে । মাঝে মাঝে গাছগুলোর আড়াল থেকে ফিসফাস কিছু শব্দ ভেসে এলো, কান পেতে শুনলো পেইটন, কোনো অপরিচিত ভাষায় কথা বলছে ওরা । প্রচন্ড ব্যাথা করছে ঘাড়ে, হাত দিয়ে দেখলো ফুলে আছে জায়গাটা, চোখগুলো বন্ধ করতে পারছেনা পেইটন যেন চোখের পাতাগুলো আটকে গেছে । কি চমৎকার নরম পথ, স্প্রিঙ এর মতো নরম আস্তরন রাস্তার ওপর, নিজের শরীরের ওজনই আর অনুভব করা যাচ্ছে না ! মনে হলো পথ চলতে চলতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো ও ।

চোখ খুলে দেখল নিজের বাড়ির সামনে চলে এসেছে পেইটন । নাকি গোটা ব্যাপারটাই একটা স্বপ্ন অথবা ঘোর? নিজের বাড়ির সদর দরজায় নিজেকে আবিস্কার করলো পেইটন । সকাল হয়ে গেছে, নিশ্চই সারারাত চলেছে সে বনের রাস্তায় । ফটক খুলে বাড়ির রাস্তায় পা দিলো পেইটন । বারান্দায় একটা নড়াচড়া চোখে পরলো তার, তার স্ত্রী নেমে আসছে বারান্দা থেকে, ওহ কি অপরুপ রুপসী দেখাচ্ছে তাকে! দুহাত বাড়িয়ে সামনে ছুটে গেল পেইটন, জড়িয়ে ধরতে যাবে স্ত্রীকে, এমন সময় ঘাড়ের ওপর প্রচন্ড একটা আঘাত অনুভব করল সে, একটা অত্যুজ্বল শাদা আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গেল তার...তারপর সব অন্ধকার আর নৈঃশব্দ্য ! ******* পেইটন ফারকুহার মারা গেছে ।

আউল ক্রিক নদীর ওপরের রেলসেতুর আড় কাঠে বাঁধা ফাঁসির দড়ি থেকে তার ঝুলন্ত দেহটা, ভাঙ্গা বাঁকা ঘাড় নিয়ে সকালের আলোয় অল্প অল্প দুলছে । ফাঁসিকাঠ থেকে নদীতে পড়ে যাওয়া, নদী সাঁতরে পার হওয়া, বনের মধ্যে দিয়ে বাড়ি ফেরা, সবই তার জীবনের শেষ কয়েক মিনিটের কল্পনা মাত্র । (শেষ)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.