ছোটবেলায় ইংরেজি ওয়ার্ড বুকে পড়েছিলাম,"বাগ" মানে ছারপোকা,জিনিসটা নাকি খুব জ্বালাতুনে। দেখার ভাগ্য হয়নি। একটু বড় আর পাকা হয়ে যখন তিন গোয়েন্দা আর স্পাই থ্রিলার পড়া শুরু করলাম,তখন জানলাম 'বাগ' এর নাকি আরেক অর্থ আছে,আড়ি পাতার যন্ত্র। এটাও দেখার ভাগ্য হয়নি। ভার্সিটিতে আসার পরে,নিজে প্রোগ্রাম করতে গিয়ে আর সফটওয়্যার বানানেওয়ালা বন্ধুদের কল্যাণে জানা গেল,'বাগ' নাকি আরেক প্রকার হয়ে থাকে,যেটাকে নাকি 'প্রোগ্রাম' এ পাওয়া যায়,সেটাকে নাকি মাঝে মাঝে 'ডিবাগ' ও করা যায়,আর সেটা নাকি খুবই কষ্টের।
তা ভাল,আমার বিদ্যা ঐ পর্যন্তই। আসল 'বাগ',মানে কিনা ছারপোকার সাথে পরিচয় ঘটলো যখন নাকি সেকেন্ড ইয়ারের শেষ দিকে হলে থাকতে গেলাম,রশীদ হল তখন ছারপোকার আক্রমণের জন্য (এবং রশীদ হলের ছেলেরা ছারপোকার বিরুদ্ধে তাদের আপোষহীন সংগ্রামের জন্য) পুরা বুয়েটে বিশেষ খ্যাতি পেয়ে গেছে। প্রতিদিনই হলে গেলে দেখা যায় আগুন জ্বলছে,মানে কোন না কোন রুমের সব বিছানা লকার টেবিল বাইরে এনে নিচে উপরে পাশে আগুন দিয়ে ছারপোকা মারা হচ্ছে,আর সে কি গন্ধ! বইপত্র সব বাইরে ফেলে দেয়া,হইচই,কেরোসিন,সব মিলে এলাহি কারবার। সেই সাথে আছে তাদের নিত্যনতুন গবেষণালব্ধ ছারপোকা মারার পদ্ধতির বিবরণ,কীটনাশক বেশি কার্যকর নাকি কেরোসিন,ঠিক কোন অনুপাতে কীটনাশক প্রয়োগে ছারপোকার বদলে নিজেই কাত হয়ে যাবে না,ছারপোকা আসলেই কিসে মরে আর কিসে শুধু ফিট খায়,ইত্যাদি ইত্যাদি। এত কিছুর ফলাফল,কিছুদিন অত্যাচার কম,এরপরে যেই-কে-সেই।
আর কামড়ানো?? যে খেয়েছে সেই শুধু বুঝবে 'কি যাতনা বিষে'! রাতের ঘুম নেই,দিনে বিশ্রাম নেই,হলের ছেলেদের নাকি গন্ডারের চামড়া,গায়ে উঠলেও নির্বিকারভাবে ছারপোকা ফেলে দেয়,তারাও শেষমেশ বিছানা-তোষক বাইরে ফেলে মাটিতে থাকা শুরু করলো অনেকেই। আমি এক মাস সহ্য করে ছিলাম,এরপরে আমি পালিয়েছি হল ছেড়ে।
অনেকদিন পরে আবারো 'বাগ' এর দেখা পেলাম,এইবারে অবশ্য 'ভার্চু্যাল বাগ',কিন্তু যন্ত্রণা দেয়ার বেলায় আসল 'বাগ' কেও ছাড়িয়ে যাবার পাল্লায় নেমেছে মনে হয়। অনেক হইচই,বেটা ভার্সন নিয়ে এক মাসের টেস্টিং,তারপর আমদানি,কিন্তু তারপরো জটিল অবস্থা,গোদা সাইজের ফন্ট,আজব চোখে ধাক্কা দেয়া রং,সাম্প্রতিক মন্তব্যের জায়গায় মন্তব্যকারীর নামের বদলে পোস্টারের নাম,সবচেয়ে ভয়াবহ,আগের অনেক মন্তব্য,এমনকি কারো কারো পোস্টও নাকি হাওয়া। হলের 'বাগ' থেকে নাহয় পালিয়ে গেছিলাম,ব্লগের 'বাগ' থেকে বাচি ক্যামনে??(খাইয়ালামু)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।