ময়ুরক্ষী নদীটাকে মিস করছি! ১৫.০৩.০৯
রাত ১০.১০
লতিফ ছাত্রাবাস
ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট । ।
হলের সামনে আসতেই চিৎকার, শোরগোল আর দৌড়াদৌড়ীর আওয়াজ। থমকে দাড়ালাম হলের সামনের ফুটপাতে। হলের মধ্যে তখনও হৈ হুল্লোর চলছে।
এমন সময় পুলিশ আসল এবং হলে ঢুকে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে সবাইকে ধমকাতে লাগলো। এই ফাকে আমি বুকের ধকধক ভয় নিয়ে হলের ভেতরে ঢুকে পরলাম।
৩য় তলায় আমার ব্লকের সামনে এসে যে পরিস্থিতি দেখলাম তাতে বুকের ধকধকানি বৃদ্ধি পেয়ে কাপতে লাগলাম। ব্লকের সবাই হাতিয়ার সমেত পজিশন নিয়ে করিডোরে বেরিকেট দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে এক বড় ভাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসতে হুকুম দিল।
তারপর বেরিকেট মাড়িয়ে কোন মতে রুমে পৌছলাম।
সংঙ্গে সংঙ্গে এক ভাই এসে ধমকিয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন এতক্ষন কোথায় ছিলাম.. বললাম অফিস করে এসেছি.. ভাই আর কিছু না বলে তার হতে থাকা চকচকে একটা *** দিয়ে বলল, আয় পেছনে থাকিস, তোদের সামনে যেতে হবে না। মনে মনে চাচ্ছিলাম পেছনে নয় একেবারে হলের বাইরে থাকতে কিন্তু তখন তা আর সম্ভব নহে।
আমরা ১ম বর্ষের ব্যাচ। ব্লকে আমাদের ব্যাচের জনা দশের মত ছিলাম ।
সবাইকে *** সজ্জিত অবস্থায় পেয়ে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করলাম কিন্তু কোন ভাবেই মনকে বুঝাতে পারছিলাম না। আশার কথা ছিল, গন্ডোগেলটা ছিল অন্য দুটি গ্রুপের মধ্যে তাই এ গ্রুপ এর (আমি গ্রুপে কখনো সক্রিয় ছিলাম না বাট ব্লকে ছিলাম তাই ) প্রস্তুত ছিল সতর্কতা মূলক। তাই আমি কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে সবার পেছনে অবস্থান নিলাম। এরই মধ্যে বাহিরথেকে কয়েকজন নতুন সদস্য যোগ দেওয়ায় হাতিয়ারের সংকট পড়লে আমি আমার হাতিয়ার অন্য এক ভাইকে সোপর্দ করে মুক্ত হলাম। ।
মনে হল উহুদ পাহাড় সড়ে গেল। সবার পিছনে এসে আমি আর আমার এক ব্যাচ মেট তাবলীগের একটা রুমের সামনে এসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করতে লাগলাম। তেমন কিছু দেখলেই তাবলীগী ভাইজা্নদের রুমে আশ্রয় নিব বলে ঠিক করেছিলাম....
এর মধ্যে পুলিশ হল থেকে কেন যে হল থেকে প্রস্থান করল আমি বুঝতে পারলাম না অথচ হলের প্রত্যেক ব্লকে এভাবে অস্ত্রসহ ছাত্ররা অবস্থান নিচ্ছে। । তাই পরিস্থিতির ষোলকষা তখনই পূর্ণ হল,,
মুহু মুহু গুলি আর বোমার শব্দে আমার কান ফেটে যাবার উপক্রম হল।
আমার ছিলাম তৃতীয় তলায় আর গোলাযোগ হচ্ছিল দ্বীতিয় তলায়। আমরা প্রস্তুত ছিলাম এজন্য যে দোতালা থেকে ঐ রেশ যেন আমাদের ব্লকে না আসে।
যে দুগ্রুপের মধ্যে গন্ডগোল ছিল তারা হল চিকা রাসেল গ্রুপ এবং জাকির গ্রুপ। চিকা গ্রুপের প্রবল আক্রমণের মুখে জাকিরের সৈন্য সামন্ত ক্রমেই পিছু হটছিল। এক পর্যায়ে তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেল।
তখন হলের জানালাগলেোতে কোন গ্রীল ছিল না। তাই জাকির গ্রুপের সবাই জানালা দিয়ে পালায়নের দিকে মনোযোগ দেয়। কিন্তু বিধি বাম সেখানেও চিকার পুলাপাইন কিল ঘুষি এবং বাংলা হাতিয়ারের কোপ সহ যার যা ছিল (মানিব্যাগ, মোবাইল, ঘড়ি, শার্ট ইত্যাদি) এগুলো চিকার লোকজনের হাতে সোপর্দ করে তারপর ভো দৌড়।
প্রায় ২০-৩০ জন সেদিন আহত হয়েছিল। গুরুতর আহত ৫ জন, দুজনের পায়ে গুলি আর অনেকর হাত, মাথা জখম হয়েছিল।
সর্বশেষে বাংলা ছবির শেষ দৃশ্যপটের মত পুলিশ এসে উপস্থিত, ততক্ষণে জাকির গ্রুপের ব্লকের যাবতীয় মালামাল চিকার পোলাপান ভ্যানিস করে দিয়েছে। এবং আহতের চিৎকারে লতিফের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছিল।
এতক্ষণে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। কারণ আমাদের গ্রপের সাথে ওরা লাগতে আসেনি। পরের দিন ফোন রিসিভ এবং ঘটনার বর্ণনা দিতে প্রাণ উষ্ঠাগত হয়ে পড়ল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।