আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

=পর্বতের পাদদেশীয় বুবিনী -স্বপ্নে

কাব্য-দিনের কথাঃ স্পর্শের আগুনে! অন্যদিগন্ত: www.fazleelahi.com

এ ধারার পূর্ব পর্ব- !@@!473211 !@@!473212!@@!473213 !@@!473214!@@!473215 !@@!473216-!@@!473217(!@@!473218)!@@!473219 !@@!473220-!@@!473221(!@@!473222) লোকে বলে বোবা ভূত; তাই আমিও বলি, আবার দেখা হলে জিজ্ঞেস করে নিতাম তাদের বংশীয় ভাল নাম কি; অবশ্য সে সুযোগই থাকে না, কেননা ও বেটা/বেটি ধরলে এমনভাবে চেপে ধরে যে, তার পিতৃপুরুষের নাম জিজ্ঞেস করা তো লক্ষ কিলোমিটারের পথ; ঠিক মত নিঃশ্বাস নিতেই কষ্ট হয়ে দাঁড়ায়। যদি কোনমতে হাতপা ছুঁড়ে একবার নড়ে উঠা যায় অথবা আশপাশে ঘুমিয়ে থাকা কেউ সাহায্য করে তবেই নিস্তার। একেবারেই উড়িয়ে দেয়ার মত নয়; তাদের জন্য আমাদের পিতৃপুরুষেরাও এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন নাম প্রতিষ্ঠিত করেছেন, জীবনে তো অন্ততঃ কয়েকবার তাদের সাথে যুদ্ধ হয়ে গেছে; করবেনই বা না কেন। এই তো বছর পনর আগে সশ্মানের উপর গড়ে উঠা স্কুল হোস্টেলে ঘুমিয়ে, পাশেই পরানপুরের টিটু; বন্ধু ও সহপাঠী, তখনকার হোস্টেলে ভোররাতে উঠে পড়াটাকে রীতিমত উপভোগ করতাম, সেদিন ছিলাম ঘুমিয়ে, নিশ্চয়ই ভোর রাতই হবে, ঘুম ভেঙ্গে গেল ক্রমাগত গোঁঙানীতে। জেগে দেখি টিটু দাঁতে দাঁত পেশাপেশি করছে আর প্রাণপণে লড়ে যাচ্ছে, লড়াটা বুঝলাম শরীরের মোচড়ামুচড়ি দেখে, হারিকেনে তখনো মন্দা আলোয় সলতে জ্বলছিল।

পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বুঝে নিলাম, বোবার সাথে শুরু হয়ে গেছে কুরুক্ষেত্র; দিলাম কষে ধাক্কা, কাজ হলো না, আরো জোরে, তাও না, লাগাও ঘুষি, তেড়ে মেড়ে উঠে বলে- 'দোস্ত, ধরেছে'। বলি পাশ ফিরে শো' ঘুমে অস্থির আমিও। কিন্তু পারলাম কই, একটু পরেই আবার শুরু হলো যুদ্ধ; আবারো একই ওষুধ, তারপর বললাম আর ঘুমাসনে, উঠে যা, কিন্তু ওর বোধহয় উঠে বসা ও কথা বলা সবটাই ঘুমের ভেতরই চলছিল। এভাবেই বেশ কয়েক দফা লড়াইয়ের পর মনে হয় বেচারা 'ছিঁচকে বোবা' টিটুর কাছে হেক্টরের মত পরাজয় বরণ করলো। চলুন শোন যাক বুবিনীর সাথে কিভাবে আমার সাক্ষাত।

ছ'মাসের পরিভ্রমণের চেরাপুঞ্জি-কোলের দিনগুলি তখন কিছুটা ফুরিয়েছে স'বে। লুৎফাদের বাড়ী থেকে চলে এলাম, তাদের পাশের গাঁয়ে। এ বাড়ীটিও গাঙের পাড়ে; বরং লুৎফাদের বাড়ীর চাইতে আরো বেশী পাহাড়ী সুন্দর এবং তটিনি ঘেরা। থাকার ঘরের বাঁশের (অথবা টিনের বেড়া মনে পড়ছে না) বেড়াটি ছিল কৌণিকতার সংযোগে কিছুটা ফাঁকা। হাফপ্যান্ট পরা বয়স, তারোপর অস্থায়ী দীর্ঘমাসী মেহমান, এসব মিলিয়ে তখনো বাবামায়ের সাথেই ঘুমোতাম; রাতে ভয় পেলে, চৌকি থেকে পড়ে গেলে অথবা 'এক নম্বর' এলে উপায়. . . , তাই বাবামায়ের কাছাকাছি থাকা।

গাঙের পাশটি ধরেই তিন কি পাঁচ কিলোমিটার দূরে 'বোগলা বাজার'; এ অঞ্চলের একমাত্র বাজার, সপ্তাহে একবার তো আমাদের যেতেই হতো, মজাই লাগতো। তো সেদিন ঘুমের ভেতরই রওয়ানা দিলাম আমি আর কাঁধ বরাবর ছোট মিঞা। আধপথে পৌঁছেই হঠাৎ শুনি সমবয়সীদের হৈ হুংকার, ব্যাপারের দিকে তাকাতেই হৃদপিণ্ড কইমাছ, ইয়া--- বড় এক বুড়ি, 'ইয়া'টা এত যে তার হাতের তালুতে আমাদের দু'ভাইয়ের জায়গা হয়ে যাবে। একটা সাদা পুরোনো কাপড় পরে, হাতে মোটা মোট দু'গাছা বালা আর একহাতে একটা কাঁসার বাটিপড়া টাইপের বাটি, আধপাকা চুল। হাফপ্যান্ট পরা পুসকে বাহিনী পাগল তাড়ানোর মত করে ঢিলিয়ে ঢিলিয়ে বুড়ির বারটা প্রায়, বুড়ি রাস্তা ছেড়ে গাঙের পাশ দিয়ে কোনমতে ওদের থেকে পালাতে চাইছে আর বকাঝকা করে যাচ্ছে।

অথচ আমরা দূর থেকে দেখেই কুপোকাত, কাতটা ঠিক কুয়োতে হইনি, পাশেই দেখলাম একটা সীমের 'মুড়া' (গোল করে লাগানো লতানো সীম গাছ) পড়িমরি করে পালাতে গিয়ে পড়লাম ওটায়; ব্যস, শুরু হলো লড়াই! ঘুম তো ভেঙ্গে খান খান, কিন্তু হাত পা, শরীর কিছুই নাড়তে পারছি না; চিৎকার করে যাচ্ছি কিন্তু শব্দ বেরুচ্ছে না মুখে; ভাবলাম মরে যাচ্ছি না তো! অন্তে বাবা টের পেলেন আর দিলেন ধাক্কা, কোন মতে বুড়ি আমাকে ছাড়লো, বাবাকে বললাম সে কি ভয়াবহ হাঁপিয়ে ঝাঁপিয়ে, বাবা বুঝলেন আর আচ্ছা করে বকা দিয়ে দিলেন বুড়িকে। তারপর ভয়ে, কাঁপুনিতে ধীরে ধীরে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম পর্বতের পাদদেশে। ০৮.০২.২০০৭ মদীনা মুনওয়ারা, সৌদি আরব। (((আরো কিছু দূর>>>>>))) ছবির জন্য !@@!473764 যেখানে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.