আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল অরুন্ধতী রায়

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

অরুন্ধতী রায়ের পুরো নাম সুজানা অরুন্ধতী রায়। 1961 সালের 24 নভেম্বর আসামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। 1997 সালে প্রথম উপন্যাস দি গড অফ স্মল থিংস-এর জন্য বুকার পুরস্কার পান তিনি। প্রেস্টিজিয়াস এ পুরস্কার পাওয়ার পরও অরুন্ধতী সেলিব্রেটি লেখকের অভিজাত জীবন বেছে নেননি।

বুকার পাওয়ার পর তিনি নিজেকে গড়ে নিয়েছেন একজন অ্যাক্টিভিস্ট লেখক হিসেবে। লিখেছেন অনেক। কিন্তু লেখাগুলোর প্রায় সবটাই রাজনৈতিক। সমকালীন পৃথিবীর নানা ঘটনা নিয়ে তীক্ষ্ন বিশ্লেষণধর্মী এ লেখাগুলোও তার উপন্যাসের মতোই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে ইরাক ও আফগানিসত্দানে হামলার বিরোধিতা করেছেন তিনি।

প্রত্যক্ষ আন্দোলনে নেমেছেন মেধা পাটকারের সঙ্গে নর্মদা বাধ নির্মাণবিরোধী আন্দোলনে। সমালোচনা করেছেন ইনডিয়ার পারমাণু নীতির। কাশ্মির থেকে সেনা প্রত্যাহারের দাবি করেছেন জাতীয় গণমাধ্যমে। 2006 সালে ইনডিয়ার সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার বর্জন করেছেন। এই পুরস্কারটি তিনি পেয়েছিলেন দি অ্যালজাবরা অফ দি ইনফিনিট জাস্টিস বইটির জন্য।

2006 সালের শেষ দিকে অরুন্ধতী রায় আবারো আলোচনায় এসেছেন ইনডিয়ান পার্লামেন্টে হামলার মামলা বিষয়ে সাহসী কথাবার্তা বলে। 2001 সালের 13 ডিসেম্বর পাচ কিংবা ছয়জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি ইনডিয়ান পার্লামেন্টে একটি অ্যামবাসাডর গাড়িতে করে ঢুকে বোমা হামলা করে। সন্ত্রাসবাদী হামলা হিসেবে এটি ছিল বিস্ময়করভাবে কাচা কাজ। নিরাপত্তা বাহিনী আক্রমণকারী পাচজনকে হত্যা করে। হামলার পর পুলিশ দিলি্ল ইউনিভার্সিটির লেকচারার এস এ আর গিলানিকে গ্রেফতার করে।

তারপর গ্রেফতার করা হয় আফসান গুরম্ন ও আফজাল গুরুকে। দীর্ঘ 40 মাস ধরে তাদের বিরম্নদ্ধে মামলা চলছিল। মামলা চলার সময় এ নিয়ে ক্যাম্পেইন শুরু করেন অরম্নন্ধতী রায়। 2006 সালের 30 অক্টোবর তিনি লেখেন ডোন্ট হ্যাঙ আফজাল শিরোনামে একটি লেখা। এ লেখাটি কভার স্টোরি হিসেবে প্রকাশ করে ইনডিয়ান পত্রিকা আউটলুক।

2006 সালের 18 ডিসেম্বর আবারো আউটলুকে আরেকটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় তার। এটি একটি বইয়ের ভূমিকা। একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক, সেনসেটিভ লেখক, যুক্তিবাদী সমাজকর্মী ও সাহসী অ্যাক্টিভিস্টের শক্তি নিয়ে 13 ডিসেম্বরের হামলা, পরবর্তী ঘটনা ও সংশিস্নষ্ট রাজনীতি বিষয়ে লিখেছেন অরুন্ধতী । বইয়ের নাম 13 ডিসেম্বর এ রিডার : দি স্ট্রেঞ্জ কেস অফ দি অ্যাটাক অন দি ইনডিয়ান পার্লামেন্ট। পেঙ্গুইন প্রকাশিত এই বইটিতে লিখেছেন এজি নুরানী, অরুন্ধতী রায়, অশোক মিত্র, ইন্দিরা জয়সিং, জাভেদ নাকভি, মিহির শ্রীবাস্তবসহ অনেকই।

ডিসেম্বরে বাজারে এসেছে বইটি। অরুন্ধতী ভূমিকায় 13 সূত্র উলেস্নখ করেছেন, যেগুলো থেকে এই হামলাটিকে সন্দেহজনক, সাজানো ও অদ্ভুত বলে অভিহিত করা যায়। তিনি এই মামলা থেকে আফজালকে অব্যাহতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। (11 জানুয়ারি ইনডিয়ান সুপৃম কোর্ট আফজাল গুরম্নর আপিল আবেদন খারিজ করে তার মৃতু্যদ- বহাল রাখে। এখন অপেক্ষা প্রেসিডেন্টের ক্ষমার।

ইনডিয়ার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রেসিডেন্টের প্রতি ক্ষমা প্রার্থনা মঞ্জুর করার আহ্বান জানিয়েছে। ) গতবছর ইনডিয়ার তেহেলকা ডট কমের পক্ষ থেকে সে দেশের কয়েকজন বুদ্ধিজীবীকে পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল অভিধা দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে অরম্নন্ধতী রায় অন্যতম। এ উপলক্ষে অরুন্ধতী র একটি সাক্ষাৎকারও প্রকাশিত হয়েছে তেহেলকায়। সাক্ষাৎকারটির উলেস্নখযোগ্য অংশ এখানে অনুবাদ করা হলো।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন অমিত সেনগুপ্ত। সাক্ষাৎকারটির কিছু অংশ এখানে দেয়া হলো। প্রশ্ন : আপনি একবার বলেছিলেন ইনডিয়ার জন্য একজন নোয়াম চমস্কি দরকার। ইনডিয়ার প্রেক্ষাপটে নোয়াম চমস্কির আইডিয়ার কথা কেন ভাবছেন আপনি? কেউ যদি বিদ্যমান কাঠামোগুলোর বিরুদ্ধে যান তবে সামগ্রিকভাবে তিনি সম্মানিত হন না। এমন ঘটনা বারবার আপনার ও চমস্কির ক্ষেত্রে ঘটেছে।

উত্তর : এখন পর্যনত্দ আমরা মনে করি, প্রকৃত ঘটনা তুলে আনা, প্রকৃত তথ্য বের করে আনার প্রক্রিয়াটা কাজে লাগে। একবার যদি মানুষ বুঝতে পারে ঘটনাটা কি তবে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে পারে। তাদের সচেতনতার ফলে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যেতে পারে। আমরা দেখি, শুধু তথ্য বের করে আনার মধ্যেই প্রক্রিয়াটা শেষ হয় না। এটা লড়াইয়ের একটা অংশমাত্র।

উদাহরণ মাইকেল মুরের ফারেনহাইট নাইন ইলেভেন। আমেরিকার নির্বাচনের আগে এই মুভিটি আমেরিকার প্রত্যেক ছোট শহরের মুভি থিয়েটারগুলোতে চলেছিল। মুভিটি ছিল তথ্য-প্রমাণভিত্তিক ডকুমেন্টারি। কিন্তু এতে কোনো মৌলিক রাজনৈতিক চিনত্দা ছিল না। এর বিষয় ছিল বুশের পলিটিকাল স্ক্যান্ডাল।

পরে আমরা দেখলাম নির্বাচনে বুশ আরো বেশি জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এলেন। এটা সত্য, চমস্কির মতো মানুষ আজকের পৃথিবীতে অনেক অবদানই রেখেছেন। কিন্তু তথ্য বলতে এখন কি বোঝায়? সত্য বলতে কি বোঝায়? আমাদের চারপাশে এখন এতো তথ্য যে, এর সবটাই প্রায় অর্থহীন ও অক্ষম হয়ে পড়েছে। কোথায় গেল এর ক্ষমতা? লাখ লাখ মানুষ ইরাক অভিযানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল। কিন্তু সেখানে এখন শক্ত হয়ে গেড়ে বসেছে দখলদারিত্ব।

গোপন তথ্যগুলো বের হয়ে পড়ায় মানুষ ইরাক যুদ্ধের বিরম্নদ্ধে মত দিয়েছে। আমেরিকার গোপন ইতিহাস এখন খোলা আলোচনার বিষয়। কিন্তু তারপর? কোনো কিছুকে উন্মোচিত করা আর তাকে প্রতিরোধ করা দুটো ভিন্ন বিষয়। আমি এখন প্রতিরোধের নতুন কৌশলের বিষয়েই বেশি আগ্রহী। এখন তর্ক হলো, কৌশলটা সহিংস হবে নাকি অহিংস... প্রশ্ন : আমি বুদ্ধিজীবী সংজ্ঞাটা পছন্দ করি না।

দক্ষতা ও বুদ্ধি থাকলে যে কেউ বুদ্ধিজীবী হতে পারে। একজন মুচিও বুদ্ধিজীবী হতে পারে। উত্তর : আমি সত্যিকার অর্থে কোনো সংজ্ঞা বের করতে চাই না। সংজ্ঞা নির্ধারণ ঔপন্যাসিকদের কাজের ঠিক বিপরীত। তারা চান সংজ্ঞায়ন থেকে নিজেদের চিনত্দাকে মুক্তি দিতে।

তেমনি টাকার বেলায়ও, একে আমি হালকাভাবে নেয়ার চেষ্টা করি। আমি টাকাকে আসলে বিদায় জানাতেই চাই, কিন্তু সেটা কঠিন। টাকা হলো পারমাণবিক বর্জ্যের মতো। এটা দিয়ে আপনি কি করবেন, এটা কি পরিবর্তন আনবে সেটা বোঝা এক জটিল প্রক্রিয়া। আর এটা আপনার মুখে একটা চড়ও বসিয়ে দিতে পারে।

কম নিয়েই আমি খুশি। ইয়ে দিল মাঙ্গে লেস। কম টাকা, কম খ্যাতি, কম চাপ আর বেশি বদমাইশি। আমি ফালতু দায়িত্ববোধকে ঘৃণা করি। অথচ এটা মাঝে মাঝে আমার ওপর চেপে বসার চেষ্টা করে।

প্রথম জীবনে আমি এমন কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে আমাকে দায়িত্ব পালনের গ-ির মধ্যে যেতে না হয়। আর এখন... মানুষ সব সময়ই আইডল, নায়ক, ভিলেন, ডানাঅলা পরীর খোজে থাকে। ব্যক্তিত্বের খোজ করে। গোলমালের খোজে থাকে। যে কারো ওপর তারা তাদের মাঝারি মানের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা আরোপ করতে পারে।

যারা নিয়ম মেনে ও সব দিক ঠেক রেখে সফল তারা সেলিব্রেটি হয়। এটা এখন এক ধরনের পেশা। এখন আমাদের চারপাশে অনেক পেশাদার সেলিব্রেটি আছেন। কলেজগুলো এ বিষয়ে একটি কোর্সও চালু করতে পারে। এই মেকি প্রদর্শনীতে এই সেলিব্রেটি প্যারেডে ব্যর্থতা ও হারানোর কোনো জায়গা নেই।

আর এখানে একজন লেখক হিসেবে ব্যর্থতা আমাকে বেশ টানে। সাফল্য হলো বিরক্তিকর ও কষ্টকর। এর জন্য প্রত্যেকেই নিজেকে প্রবলভাবে প্রমোট করে যাচ্ছে। প্রশ্ন : আপনি বুকার পুরস্কারের টাকা এনবিএ-কে (নর্মদা বাচাও আন্দোলন) দিয়েছেন। সিডনি পুরস্কারের টাকা দিয়েছেন অ্যাবোরজিন গোষ্ঠীগুলোকে।

আরেকটি পুরস্কারের টাকা আপনি 50টি সংগঠনকে দিয়েছেন। আপনি আপনার টাকা দিচ্ছেন। ঠিক আছে, এটা আপনার টাকা নয়। এটা এক জায়গা থেকে আসছে আরেক জাযগায় দিয়ে দিচ্ছেন আপনি। কেউ এটা করছে না।

ফলে সমাজ আপনার দিকে ভিন্নভাবে তাকাবেই। উত্তর : আমি সবটা দিয়ে দেইনি। আমার কাছে দরকারের চেয়ে বেশি টাকাই আছে। আমি যদি সবটা দিয়ে দেই তাহলে হয়তো আমি সেই ধরনের লোকে পরিণত হবো, যা ভেবে আতঙ্কিত হই আমি। সবাই বলবে, ইনি নিজের সবকিছু উৎসর্গ করেছেন।

এ ধরনের ব্যক্তি আশপাশের সবার কাছে ভয়ঙ্কর এক বস্তু। আমি বুঝেছি, টাকা বিলিয়ে দেয়া কাউকে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু এটা ধ্বংসাত্মকও হতে পারে, আপনার উদ্দেশ্য যতোই মহৎ হোক না কেন। এটা অদ্ভুত ও অনাকাঙ্ক্ষিত জায়গায় সংঘর্ষ তৈরি করতে পারে। টাকা নিয়ে আমি কি করবো তা সব সময় বুঝতে পারি না।

আমি সবকিছু করি। হালকাভাবে ছেড়ে দেই। টাকা ওড়াই। আমি এর জন্য তক্কে তক্কে থাকি না। এ ব্যাপারটা আমাকে শান্তি দেয়।

আবার একই সঙ্গে আমি খুশি যে, নিজের বিলটা শোধ করার ক্ষমতাও আছে আমার। আমি এর ধ্বংসাত্মক শক্তির ক্ষমতায় ভীত। আমি খুশি যে, উত্তরাধিকার সূত্রে এ টাকা আমি পাইনি। কারণ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া টাকা একটি অভিশাপ। টাকা বিলিয়ে দেয়া ভয়ঙ্কর ও জটিল এক প্রক্রিয়া, কখনো এটা আমার রাজনৈতিক বিশ্বাসেরও বাইরে।

আমি সদিচ্ছার রাজনীতির সমর্থক নই। কিন্তু কি করবো? টাকার ওপর বসে আরো টাকা আয় করার চেষ্টা করবো? আমার করা অনেক কাজ নিয়েই আমি অস্বসতিতে থাকি। কিন্তু এর চেয়ে ভালো কিছু খুজে পাই না। এটা একটা বিশেষ সমস্যা। এটা হলো উদ্বৃত্তের সমস্যা।

ব্যথা, বেদনা ও দারিদ্র্যের একটি দেশে এ নিয়ে কথা বলাটাও অস্বসত্দিকর। প্রশ্ন : আপনি একবার বান্টি আউর বাবলি মুভির একটি ডায়ালগ আউড়ে বলেছিলেন, মুঝে ইয়ে ইজ্জত আউর শরাফত কি জিন্দেগি সে বাচাও...। আপনার ব্যক্তিত্বের মধ্যে একটা পরস্পর বিরোধিতা আছে। অবস্থান গ্রহণ করা, কমিটমেন্ট কিংবা জ্ঞানের ক্ষেত্রে ঋজুতা অন্যদিকে সুদূর এক অতীতচারিতা। আপনি কেন এক জগৎ থেকে অন্য জগতে লাফ দিতে পারেন না? উত্তর : আমার মনে হয়, আমরা সবাই জীবনের পথে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছি।

আদর্শবাদী ব্যক্তি যারা প্রতিকারের স্বপ্ন দেখেন, একটি পরিপূর্ণ ও চূড়ানত্দ সমাজের স্বপ্ন দেখেন তারা আমার কাছে ভয়ঙ্কর। হিটলার ও স্টালিন মনে করতেন সামান্য কিছু সামাজিক প্রকৌশল, অল্প কয়েক লাখ লোককে খুন করার মধ্য দিয়ে তারা এক নতুন ও পরিপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তুলতে পারবেন। এই শুদ্ধতা ও পরিপূর্ণতা হলো অধিকাংশ সময়ই গণহত্যার আলামত। জন গ্রে এ বিষয়ে লিখেছিলেন। অন্যদিকে আমরা কর্মের ভিত্তিতে ফল_ এই নীতিকে গ্রহণ করে বসে আছি, যা সমাজের উচ্চ শ্রেণী ও বর্ণগুলোর স্বার্থই দেখে।

অবশ্য আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এই দুই বিশ্রী আদর্শের মধ্যে পেন্ডুলামের মতো দোল খাচ্ছেন। মাঝামাঝি রাসত্দা খুজে বের করার চেষ্টা করছেন। কখনো তাতে আলো ফেলারও চেষ্টা করছেন। অনুবাদ ও ভূমিকা : মাহবুব মোর্শেদ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.