রাঙামাটি
বিপণীকেন্দ্র
টাইবাল মহিলাদের বিপণীকেন্দ্রে আমরা গিয়েছিলাম।
আমি, আমার বউ আর আমাদের মেয়ে।
তারা খুবই উৎসাহী, নানান পোশাক দেখায়।
আমরা হেঁটে হেঁটে ঘুরে ঘুরে সরল পোশাকগুলি দেখি
হ্যান্ডিক্রাফটস (উহাদের নাম)।
আমার মেয়ের পোশাক কিনি, তামাটে লাল।
আমার বউ কথা বলে, ওরাও উত্তর দেয় একই ভাষায়
তথাপি নিজেদের পৃথক পর্যটক মনে হয়
ট্রাইবালরাও হয়তো একই কথা ভাবে, খামোখাই।
#
বাস থেকে নেমে
বাস থেকে নামি। বাসের ভিতর বসে থেকে
পাহাড় দেখতে দেখতে
পেয়ারা খেতে খেতে
এই এতদূর এসেছি, রাঙামাটিতে।
হাঁটু জড়োসড়ো বসে থাকা শেষ।
নিজ পায়ে দাঁড়ালাম, ভূ-মন্ডলে, পাকা রাস্তার উপর।
রিজার্ভ বাজারের আগে পড়েছি নেমে
দুপুর 12 টার আগে।
বাস থেকে নেমে গিয়ে আমরা খুশি,
রাঙামাটিতে এসেছি, তাহলে !
#
হরতাল
হরতাল হয় রাঙামাটিতেও।
সম্ভবত শুধুমাত্র, ঢাকা আর রাঙামাটিতেই হরতাল হয় এখন।
না আসলে বিশ্বাস করতাম না
এমন ভর দুপরে রাস্তায় বের না হয়ে পড়লে।
রোদ-গন্ধ দুপুরের ভিতর হাঁটতে হাঁটতে এই এতদূর
ফিরে যাওয়ার পথ খোলা নাই
হরতাল শেষ হলে, তারপর
এর আগে সমস্তই বন্ধ;
বন্ধ বিপণীকেন্দ্রগুলি, তবলছড়ি বাজার
ফাঁকা রাস্তায় তিন চাকার সাইকেল চালাচ্ছে শিশু
তারপর একটা মিলিটারী জিপ ছুটে গেলো হঠাৎ।
#
ভান্তের দরবারে
ভান্তের বাড়িতে দাওয়াত নাই কারো আজ।
তবু ভীড়।
বুদ্ধের মূর্তির কাছে গিয়ে যে কেউ দাঁড়িয়ে পড়তে পারে
চোরাকাঁটা পায়ে নিয়ে আমিও তাই, দাঁড়িয়ে গেলাম।
ভক্তরা দেখছে আড়চোখে
সোজা চোখে তাকিয়ে দেখি সামনে
ভগবান।
#
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছি
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে থাকি, দাঁড়াই শেষে এসে।
পানিতে নৌকা বাঁধা, বিকালবেলায়, ঘোলা জলে।
জলের ঐপারে টিলা, ছোট ছোট বাড়ি ঘর।
সূর্য ডুবে যাবে, তার ছায়া জলের ভিতর।
মলিন দিনের স্মৃতি, শেষ হয়ে যেতে চলেছে
চলো, উঠে আসো;
মাঠের চোরাকাঁটায় আর একটু হাঁটি।
#
ছড়ানো ছড়ানো টিলা
ছড়ানো ছড়ানো টিলা, এই রাঙামাটি।
উচুঁ নিচু পথ।
সমতলের মন ধাক্কা খায়, একটু একটু
ভালোই লাগে, ল্যান্ডস্কেপ।
চেনা চেনাও লাগে হঠাৎ
একই বাজার ও বিনিময় প্রথার
ভিতরই তো এই শহর।
এইখানে ঢুকে পড়েছে সভ্যতা,
উন্নত হচ্ছে জনপদ।
#
ট্রাইবাল বন্ধু আমার
ট্রাইবাল বন্ধু আমার, টেম্পো ড্রাইভার
অপেক্ষার মূল্য তুমি জানো, হিসাব কিতাব।
আমার ব্যাপক মাথা-ব্যথা
তোমার কাছেই ঠকে শিখি
দরদাম করা, একটা কঠিন বাস্তবতা।
ঠকেই শিখা, ঠকতে ঠকতে পর্যটনের
রেস্টহাউজ পর্যন্ত যাওয়া।
#
মিলিটারি
শালা, মিলিটারির দাপট কতো, দেখো!
মন কেন তুমি মিলিটারি হৈলা না?
জিপ চালাইতা ফাঁকা রোড দিয়া
স্পীড বোটে করে যাইতা অনেক দূরে
পাহাড়ের চিপা দিয়া ক্যাম্প পরিদর্শনে!
আজ শুধুই দীর্ঘশ্বাস, ট্রাইবাল বেদনা চাপা, মনে।
#
ফিরে যাচ্ছি
ফিরে যাচ্ছি, আবার আসবো বলে।
এই যেমন, বিদুৎ কর্মকর্তার বউ উঠলেন, দুইজন বাচ্চাসহ
বাপের বাড়ি কয়েকটা দিন থেকে আবার ফিরে আসবেন বলে।
জেলা মৎস অফিসারের তিনজন ফ্রেন্ড বউ-বাচাসহ ভেকেশন কাটিয়ে
ফিরে চলেছেন; তারাও আবার আসবেন কখনো সময় পেলে, কথা দিলেন।
হিন্দু নব-দম্পতির হানিমুন হলো এই রাঙামাটিতেই
(কি লাল বউটির কপালের সিঁদুর!)
যদি তারা নাও আসেন কখনো, চিরকাল এর গল্প করবেন
এই ভ্রমণের (বিয়েটা টিকে গেলে নাতি-নাতনিদেরও বলবেন হয়তো)
কাঠের ব্যবসায়ী যিনি, উনাকে তো আসতেই হয়
এক সপ্তাহ পর পর;
রাঙামাটি তো এখন উনার বাড়ি ঘরের মতোই।
শেষ বাসে আরো অনেকের সাথে আমরাও ফিরে চলেছি।
সূর্য ডুবে গেছে।
বৃষ্টি হচ্ছে একটু একটু।
পথ ভিজে যাচ্ছে।
অনেক হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত আমদের মেয়েটা এখন
তার মায়ের কোলে ঘুমাচ্ছে।
জেগে উঠে শে কি বুঝবে কোনদিন, তার কি মনে থাকবে
শেও এসেছিল রাঙামাটিতে একদিন;
দেখেছিল; পাহাড়, উঁচু নিচু পথ
গ্লানিময় জলের ছোট্ট ট্রাইবাল শহর।
#
হ্রদের জলে সেটেলারের বোটে
বোটে করে যাচ্ছি সকালবেলায়।
যাচ্ছি শুভলং এর ঝর্ণা দেখতে।
3 ঘণ্টার পথ, আমরা 3 জন আরোহী।
বোট চালাচ্ছেন একজন সেটেলার,
ট্রাইবালদের পেশায় কম্পিটিটর তিনি,
তথাপি ভদ্রলোক যেহেতু নতুন
বাতসের গতিবেগ বুঝতে কিছুটা বিমূঢ়।
সেইটা বোঝা গেল
যখন তার তেলের পাইপ জ্যাম হৈল,
মেশিন ছাড়া বোট তার এক টিলা থেকে
আরেক টিলায় টক্কর খেতে লাগলো।
হ্রদের জল কি সেটেলারদের এখনো মানলো না?
কত বড় সাহস (এই কল্পনার) !
#
উদ্ধার-কর্তা
উদ্ধার-কর্তা মহান, কিন্তু সে নিতান্ত-ই কিশোর।
আমার বউ তাকে ধন্যবাদ জানায়,
আমি বিনম্রভাবে হাসি, মেয়েকে বলি,
'আন্কেলকে টা টা দাও, গুডবাই বলো'।
#
ঝর্ণার কাছে
ঝর্ণার বুকেও আছে ছোট্ট চায়ের দোকান।
তৃষ্ঞায় অথবা আনন্দে কারো গলা শুকিয়ে গেলে
সেখানে পাওয়া যাবে, মিনারেল ওয়াটার।
#
ঝর্ণা
ঝর্ণার পানির সে কি শব্দ!
সে কি ঠান্ডা এই জল!
কোনদিন ফুরাবে না এই প্রপাত
চির অস্ফুট এই কোলাহল!
#
বিকালবেলা
এই যে বিকালবেলা, নরোম রোদের আলো
আমি আর শে পাশাপাশি হাঁটি
মনে হয় অন্য কোন অবয়ব, অন্য কোন সময়ের ভিতর
আমাদের এই হেঁটে যাওয়া; বিকালবেলার আলো
আরো নুয়ে আসে পথটির উপর, গাছের ছায়াদের পাশে।
সেই পথ ধরে হেঁটে হেঁটে
আরো দূর রোদের আলোর খেলার সাথে
সরে যাচ্ছে আমাদের মেয়ে;
রাঙামাটির শান্ত, ছবির মতো পথটির উপর দিয়ে।
#
ঝুলন্ত ব্রীজ
ঝুলন্ত ব্রীজ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি।
হেঁটে যেতে যেতে মেয়েকে দেখাই,
দেখো, কাঠের ফাঁকে ফাঁকে দেখা যাচ্ছে জল, স্থির পানি।
অর্থাৎ কিনা আমরা হেঁটে যাচ্ছি পানির উপর দিয়ে!
এই যুক্তি শুনে মেয়ে ভয় পেয়ে উঠলো কোলে।
একপাশে বিডিআর এর বাংলো
আরেক টিলায় সেটেলারদের বেড়ার নতুন ঘর।
আমি ভাবছি, ট্রাইবালরা আজ গেলো কোথায়
ওদের কি এখনো শেখা শেষ হয় নাই বাংলা অক্ষর?
#
সমতলের শেষ বাজার
সমতলের শেষ বাজারে এসে বাস বিরতি দিলো।
জিলাপি ভাজছে হোটেলে, গরম গরম
তার পাশে ড্রামভর্তি তেলের দোকান
মুদির দোকানে দেখি একই সাবান
অ্যান্টিনা দিয়ে বসছে মোবাইল ফোনের নতুন কলিং শপ।
বেসরকারীভাবে ব্যক্তিগত যোগাগের এটাই শেষ সুযোগ
তারপর গর্ভমেণ্ট এর দায়িত্ব নিয়েছেন।
এই পর্যন্ত বাঙ্গালী এলাকা
তারপর শুরু হৈছে ট্রাইবাল অন্বঞল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।