আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন সফল মুক্তিযোদ্ধা, একজন সফল ব্যবসায়ী

এলোমেলো

আমি মুক্তিযুদ্ধে গেলাম, বেচে থাকলে দেখা হবে- মা-কে এই চিঠি লিখে 1971-এর শেষের দিকে বাড়ি ছাড়লেন গোলাম দসত্দগীর গাজী। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে চলে গেলেন আগরতলায়। ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধ করলেন 2নং সেক্টরে। যুদ্ধে তার বীরত্বের প্রমাণ- তিনি বীরপ্রতীক। 21 বছর বয়সে গোলাম দসত্দগীর গাজী যখন যুদ্ধে যান, তখন তিনি বিএসসি পাস করে ল' কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন।

ফিরে এসে পড়া হয়নি। ভাবলেন ব্যবসা করবেন। কিন্তু ব্যবসা করতে চাই বিদু্যৎ, চাই অবকাঠামো। অথচ নিজের হাতেই পাওয়ার স্টেশন, ব্রীজসহ তার সেক্টরের সমসত্দ অবকাঠামো ধূলোর সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিলেন। তেমনটিই হয়েছে সারা দেশে।

ভেবেছিলেন এ যুদ্ধ হবে ভিয়েতনাম যুদ্ধের মতোই বছরের পর বছর ধরে। মাত্র নয় মাসেই স্বাধীন হবে, একেবারেই ভাবেননি। যুদ্ধের আগে এদেশে প্রায় সব ব্যবসীয়ই ছিল পাকিসত্দানী এবং বিহারী। বাঙালিরা নামেমাত্র, তাও ছোটখাট ব্যবসায়। পাকিসত্দানি আর বিহারীরা তাদের ব্যবসা ফেলে পালিয়ে গেলে দেখা দিল শূণ্যতা।

সে সময়ে তাই যে-ই ব্যবসা করেছে, লাভের মুখ দেখেছে। তিনি শুরম্ন করলেন ট্রেডিং-এর ব্যবসা। বাবার কাপড়ের দোকান ছিল, তিনি তা বিক্রি করে 70 হাজার টাকা তুলে দিলেন ছেলের হাতে। 1974-এ 70 হাজার টাকা দিয়েই পুরোন ঢাকায় তিনি কারখানা করলেন। হাওয়াই চপ্পল তৈরি হবে।

লাভের অংক যেমন বাড়তে থাকলো, তেমনি বাড়তে থাকল কারখানার পরিধি। 1974 সালে করলেন বাইসাইকেলের টায়ার তৈরির প্রতিষ্ঠান। 1995-এ পস্নাস্টিক ট্যাংক, গাজী ট্যাংক নামেই পরিচিত। 2002-এ হটপট-এর ব্যবসায়। এদেশে এই তিন ব্যবসাতেই তিনি পাইওনিয়ার।

শুধু গাজী ট্যাংক-ই প্রথম পাঁচ বছর মোটা অংকের লস দিয়েছিল। যে পণ্যের ধারণাই এদেশের ক্রেতার নেই সে পণ্য উৎপাদনের ব্যবসায় জড়ানোর রিস্ক তিনি কেন নিলেন। এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'জীবনের রিস্ক নিয়ে যদি যুদ্ধে যেতে পারি তবে ব্যবসা কেন করতে পারব না। বিশ্বাস ছিল, মানুষ একদিন আমার এ পণ্য কিনবেই'। এরপর এসেছেন অটোমোবাইল টায়ার এবং ব্যাংকিং ব্যবসায়।

যমুনা ব্যাংকের তিনি ডিরেক্টর। তিনি সফল হয়েছেন কারণ তিনি আশাবাদী ছিলেন। ব্যবসার ক্ষেত্রে সবসময় পণ্যের মানের দিকে লক্ষ্য রেখেছেন। মূল্য নয়। গোলাম দসত্দগীর গাজী ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর ডিরেক্টর এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট।

স্বাধীন দেশ হিসেবে ব্যবসা বাণিজ্যে যে বাংলাদেশ হবে ভেবে তিনি যুদ্ধ করেছিলেন তা হয়নি বলে তিনি মনত্দব্য করেন। আরো বলেন, 'স্বাধীনতা নয়, আমরা সায়ত্ত্বশাসন চেয়েছিলাম। কিন্তু যখন আমাদের জীবনেরও কোন মূল্য রইল না তখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করার কোন বিকল্প ছিল না। সে যুদ্ধে ভারতীয় সৈন্য না এলেও তাদের দেয়া অস্ত্রের সাহায্যে বাংলাদেশকে আমরা স্বাধীন করতে পারতাম। আরো সময় লাগত।

আরো রক্ত ঝড়ত। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি তা হওয়াতে আমাদের চেতনায় কোন বিপস্নব আসেনি'। কিন্তু এ স্বাধীন দেশে আমরা অর্থনৈতিক ভাবে কেন শক্তিশালী হতে পারিনি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে হলে গণতন্ত্র প্রয়োজন। কিন্তু রাজনৈতিক হত্যাকান্ড গণতন্ত্রকে ব্যাহত করে বলে তিনি মনত্দব্য করেন। তারপরও গত পনের বছর গণতান্ত্রিক শাসন আমরা পেয়েছি।

কিন্তু প্রধান রাজনৈতিক কোন দলেই গণতন্ত্র নেই। আমরা দুর্নীতিতে পাচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। যা বারবার ক্ষতিগ্রসত্দ করেছে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যকে'। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তিনিও ক্ষতিগ্রসত্দ। তবে কিছু করতে হলে চাই ক্ষমতা।

আর এ লক্ষ্যেই সরকারের অংশ হতে তিনি 2007 এ তিনি নারায়নগঞ্জ-1 আসন থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। কারণ আওয়ামী লীগ মন্দের ভালো। কিন্তু সংসদে গিয়ে তিনি ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষে প্রথম কী করবেন সেই প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'আমি নিশ্চিত নই আমার কিছু করার ক্ষমতা থাকবে কিনা'। কিন্তু সংসদে কথা তো বলতে পারেন। তিনি জানান, এদেশের রাজনৈতিক দলে কথা বলারও সুযোগ নেই।

তাই তার উপস্থিতিতে হঠাৎ করে হয়ত কোন পরিবর্তন হবে না। কিন্তু নতুন প্রজন্মের সময় অবশ্যই হবে বলে তার বিশ্বাস। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন মানসম্পন্ন শিৰা। তবে তিনি বলেন, 'আমাদের শিক্ষার মান এখন নিন্ম মুখী'। গোলাম দসত্দগীর গাজীর মতো প্রায় সব ব্যবসায়ী, সচিব এবং রাজনৈতিক নেতারা তাদের ছেলেমেয়েদের পড়ান ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে, তারপর ইউরোপ, আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশে।

তিনি বলেন, 'আমার ছেলে স্কলাসটিকায় পড়া শেষ করে তারপর আমেরিকায় পলিমার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছে। বাংলাদেশে এ সাবজেক্ট নেই বলেই তাকে যেতে হয়েছে'। কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে তো তা নয়ই বরং ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ার সামর্থও আছে শুধু এ এলিট শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের। এ শিক্ষব্যবস্থাকে মানসমপন্ন করার ক্ষমতা তাদের রয়েছে অথচ তারা উপলব্ধি-ই করতে পারেন না আমাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান কতটা ভয়াবহ পর্যায়ে। এ পর্যায়ে তিনি বলেন, 'হয়ত তোমার কথাই ঠিক'।

তারপরও নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'আশাবাদী হও। প্রায় পনের কোটি ভোক্তা যে দেশে রয়েছে সেখানে ব্যবসা বা ক্যারিয়ার গড়ে তোলা কোন সমস্যা নয়। বিশেষ করে ফুড, রিয়াল এস্টেট, টেক্সটাইল এবং হেলথ সেক্টর আগামীতে আরো শক্তিশালী হবে'। প্রথম প্রকাশ: 17 ডিসেম্বর 2007, ক্যারিয়ার ক্লাব, যায়যায়দিন ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.