ব্যানার হাতে চট্টগ্রামের ব্লগাররা।
ধর্ষণ সহ সকল যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন শীর্ষক- আলোর মিছিল গত ১১ জানুয়ারি ২০১২ শুক্রবার বিকেল ৫ টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রামে আলোর মিছিল নিয়ে পোস্ট আলোর মিছিল শেষের পর ওই দিন রাতেই দেয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ছবি গুলো আমার কাছে ছিলনা বিধায় ওই দিন রাতে পোস্ট দিতে পারিনি। তাই ব্লগার এবং শুভাকাংখীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
আমার ভালো ক্যামেরা নেই। যারা ছবি তুলেছেন ওনারা বলেছিলেন বাসায় পৌঁছেই পোস্ট দিবেন। কিন্তু আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেল আমি ছবি গুলোও পেলাম না এবং চট্টগ্রামের আলোর মিছিল নিয়ে কোন পোস্টও দেখলাম না, তথাপি এই বিষয়ে সাধারণ ব্লগারদের নিকট আমার একটি দায়বদ্ধতা রয়েই যায় বৈকি; কেননা আমিই চট্টগ্রামে আলোর মিছিল আয়োজনে সবার অংশগ্রহণ এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করে পোস্ট দিয়েছিলাম এবং ইভেন্ট ক্রিয়েট করেছিলাম। সহ ব্লগার যারা পোস্ট দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তারা হয়ত কোন আপাত সীমাবদ্ধতার কারণে পোস্ট দিতে পারেন নি। একারণে আমি ব্লগারস চিটাগাংয়ের পক্ষ হয়ে পুনরায় ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
এখানে তাই অনেক বেশি ছবি দিতে পারলাম না। অনেক খুঁজে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লগার শাহরিয়ার রাসেলের ফেসবুক টাইমলাইন ঘেটে তিনটা ছবি পেলাম। ওগুলোই এখানে শেয়ার করলাম।
সে যাই হোক, এবার আসল কথায় আসি। সিদ্ধান্তটা হঠাৎই হয়।
আমরা ব্লগারস চিটাগাংয়ের মেম্বাররা অন্য একটি কাজে আলোর মিছিলের ঠিক ২ কি ৩ দিন আগে মিলিত হই। তখন শোভন ভাই আলোর মিছিলের প্রস্তাব করলেন। হুট হাট সিদ্ধান্ত, তাই স্বল্প সময়ের প্রস্তুতিতে যতটুকু সম্ভব প্রচারণা চালিয়েছি। আলোর মিছিলের আগের দিন রাতে স্থানীয় এবং জাতীয় সংবাদ পত্রের অফিস গুলোতে চিঠি দিয়ে আলোর মিছিল সম্পর্কে জানানো হল। সব থেকে কঠিন ছিল ডিজিটাল ব্যানার তৈরি করাটা।
বৃহস্পতি বার রাত তাই আন্দরকিল্লার প্রিন্টিং প্রেস গুলোতে কাজের চাপ বেশি। শুক্রবারে প্রোগ্রাম বেশি থাকে। কয়েকটি দোকান ঘুরে একটিতে দামের সাথে আর্জেন্ট ব্যানার করে দেওয়ার সুবিধাটা পেয়ে যাওয়ায় ওখানেই অর্ডার দিলাম। শোভন ভাই পেনড্রাইভ থেকে ডিজাইনটি দিলেন। জে পি জি ফরম্যাট ছিল তাই রেজুলেশন কম এবং ডিজাইন সেটিংয়ে পিক্সেল ফেটে যাচ্ছিল।
শোভন ভাই বললেন ওনাকে ব্যানারের মডেলটা ঢাকা থেকে "আমরা ব্লগার" এর আমিনুর রহমান ভাই পাঠিয়েছেন। শোভন ভাই সমস্যাটা জানিয়ে আমিনুর ভাইকে ফোন দিলেন। আমিনুর ভাই শোভান ভাইকে মেইল চেক করতে বললেন। উনি শোভন ভাইকে মেইলে পিডিএফ ফর্মেটে ডিজাইনটা পাঠিয়েছেন। শোভন ভাই কোন কারণে মেইল থেকে ডিজাইন নিতে ভুলে গিয়েছিলেন হয়ত।
উনি ''আমরা ব্লগার''এর গ্রুপ ফটো থেকে হয়ত কালেকশন করেছিলেন। মেইল চেক করতে গিয়ে আরেক ঝামেলা। ওই দোকানে নেট কানেকশনের অবস্থা খুবই খারাপ। জি মেইল খুলছেই না, লোডিং পজিশনে আছে। অগত্য আমার বাংলা লায়ন মডেম দিয়েই কাজ সারলাম।
ডিজাইনে একটু পরিবর্তন এনে ব্যানার তৈরি করতে দিলাম। আধ ঘন্টা পরই ডেলিভারী পেয়ে গেলাম। এর পর গেলাম পত্রিকা অফিসগুলোতে। চিঠি গুলো পত্রিকা অফিসে দিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
শহীদ মিনার বেদীতে মৌন সমাবেশরত ব্লগাররা।
চট্টগ্রামের সাংবাদিক এবং ব্লগার জিয়া চৌধুরী ভাই আলোর মিছিলে আসার ওয়াদা করলেন। শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে নতুন নিউজ চ্যানেল ''চ্যানেল নিউজ ২৪'' থেকে একজন সাংবাদিক আলোর মিছিলের আপডেট জানতে চেয়ে ফোন করলেন। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে কোন চ্যানেলকে নিউজ কভারের জন্য কল করিনি, সাংবাদিক ভাইয়া হয়ত আপূর্ণ ভাইয়ের স্টিকি পোস্ট থেকে আমার নাম্বার পেয়েছেন। ওনাকে আলোর মিছিলের আপডেট জানালাম। বিকেল ৫টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সবার উপস্থিত থাকার সিদ্ধান্ত আগে থেকেই ছিল।
ওই দিন এত কুয়াশা এবং শীত পড়ছিল, কম্বল ছেড়ে উঠতে মন চাইছিল না। সবাই শহীদ মিনারে পৌঁছেছে। আমার পৌঁছুতে দেরী হল।
আমাদের ব্লগারস চিটাগাংয়ের ফেসবুক ইভেন্টে বেশ সাড়া পেয়েছিলাম। আগের অভিজ্ঞতায় বলে ইভেন্টে ''গোয়িং'' দিলেও বাস্তবে আশানুরূপ সমাগম হয় না।
এখানে তার ব্যতিক্রম দেখলাম। চট্টগ্রামের পরিচিত ব্লগাররা প্রায় সবাই এসেছেন শীত উপেক্ষা করে। নোমান নমি ভাই ঢাকায় থাকায় উনি আসতে পারেন নি। পরে জানলাম উনি ঢাকার আলোর মিছিলে ছিলেন। চাটকিয়াং রুমান ভাই লিউ ইউুথ লীডারশীপ ক্যাম্পে ৩ দিনের জন্য কক্সবাজার ছিলেন ওই সময় তাই ওনাকেও পেলাম না।
পরিচিতের বাইরে ব্লগারদের মধ্যে ঢাকার নর্থ সাউথের একজন ব্লগার, চুয়েটের ৩ জন ব্লগার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন ব্লগার উপস্থিত ছিলেন। বাকী যারা এসেছেন প্রায় ১০ জনের মত ওনারা অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, ফেসবুক ইভেন্টের মাধ্যমে খবর পেয়ে এসেছেন। পরিচিত ব্লগারদের মধ্যে তানজিম ভাই, হারু ভাই, বিজু ভাই উপস্থিত ছিলেন। জিয়া চৌধুরী ভাইয়ের আসার কথা থাকলেও শেষ মেশ উনি আসতে পারেন নি।
মোমবাতি দিয়ে লেখা '' STOP RAPE''
সন্ধ্যার শীতে আমরা একত্রে ব্যানার নিয়ে মৌন মিছিল করলাম হাতে মোমবাতি নিয়ে।
মৌন মিছিল তাই নীরবতাই ছিল যৌন অপরাধীদের প্রতি ঘৃণা জানানোর মাধ্যম। নীরবতা অনেক সময় শক্তিশালী অস্ত্রের মত। মিছিল শেষে শহীদ মিনারের বেদীর রেলিঙ্গয়ে ব্যানার টাঙ্গিয়ে বেদীতে মোমবাতি জ্বালিয়ে ইংরেজীতে '' STOP RAPE'' লিখলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লগার বন্ধুরা। এরই মাঝে চ্যানেলের সাংবাদিকরা ক্যামেরা হাতে মূহুর্ত গুলো ধারণ করছিলেন। মোমবাতি নিভে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা পাশা পাশি দাঁড়িয়ে মৌন প্রতিবাদ জানিয়েছি ধর্ষক পশু গুলোর প্রতি।
পরিচিতের বাইরে যারা এসেছিলেন তাদের সাথে আগে কখনো দেখা হয়নি। তা সত্ত্বেও একটি বিষয়ে আমরা পরিচিতের চেয়েও বেশি এবং তা হল ধর্ষকদের প্রতি ঘৃণা, ধর্ষকদের শাস্তির প্রচলিত বিধানের পরিবর্তন এবং সর্বোপরি নারীদের নিরাপত্তা জনিত বিষয়গুলোর প্রতি আমরা একাত্ম।
কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর টংয়ে চা খাওয়ার পাশাপাশি দলগত আড্ডায় সাম্প্রতিক অনেক বিষয়ই উঠে আসে। অনেক ইস্যুতে সবার মতাদর্শন জানার সুযোগ হল। অনলাইল অ্যাক্টিভিস্ট, ব্লগাররা চাইলেই সামাজিক ইস্যুগুলোতে অনলাইনের পাশাপাশি বাস্তবেও সক্রিয় হতে পারে তা ওই দিন আরো ভাল মত উপলব্ধি করলাম।
ভার্চুয়াল লাইফে আমরা হয়ত অনেক বেশি শিক্ষিত মানুষদের কাছে আমাদের চিন্তা ভাবনা শেয়ার করতে পারব; কিন্তু এই চিন্তা চেতনার কোন মূল্যই নেই যদি না তা সমাজের তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছায়। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা এই দায়িত্ব নিবে না। আমাদের সময় সুযোগ মত যতটুকু সমর্থ্যের মধ্যে থেকে পারা যায় অনলাইনের পাশা পাশি বাস্তবেও সক্রিয় হওয়া জরুরী বলে মনে করি। আমাদের প্রোগ্রাম চালাকালে আশেপাশের অনেক পথচারী, কিশোর , তরুণ উৎসাহী দৃষ্টিতে ব্যানারে ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে লেখা শ্লোগান গুলওো পড়ছিল এবং ব্যানারের ছবি তুলছিল। ওই পথাচারী গুলোর মধ্যে অন্তত কয়েকজনও যদি বিষয়টির মমার্থ বুঝতে পারে তাহলে সেটিই আমাদের সফলতা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।