প্রকৃতির লীলাভূমি এই চট্টগ্রামকে বিভিন্ন যুগে, আমলে কবি সাহিত্যিক, শাসকগোষ্ঠী, রাজন্যবর্গ অনুরাগ বা ভাবের কারণে অনেক নামে অভিহিত করেছেন। বিখ্যাত লেখক পূর্ণচন্দ্র দেববর্ম তাঁর চট্টগ্রামের ইতিহাস গ্রন্থে-চট্টগ্রামের মোট ৩২টি নামের উল্লেখ করেছেন। (১) আদর্শ দেশ (২) সম্মুদেশ (৩) ক্লীংবা কালেন (৪) রম্যভূমি (৫) চিতাগাঁও, চিৎগাঁও (৬) চট্টল (৭) চৈত্যগ্রাম (৮) সপ্তগ্রাম (৯) চট্টলা (১০) চট্টগ্রাম (১১) চক্রশালা (১২) চন্দ্রনাথ (১৩) চরতল (১৪)চিতাগঞ্জ (১৫) চাটিগাঁ (১৬) শ্রীচট্টল (১৭) সাতগাঁও (১৮) সীতাগঙ্গা (১৯) সতের কাউন (২০) পুষ্পপুর (২১) রামেশ (২২) কর্ণবুল (২৩) শহরে সরজ (২৪) পার্বতী (২৫) খোর্দ আবাদ (২৬) মের্রম ঐরটভঢম (২৭) ফতেয়াবাদ (২৮) আনক (২৯) রোসাং (৩০) ইসলামাবাদ (৩১) মগরাজ্য (৩২) উদর্র্ধটথমভথ কিন্তু বর্তমান ইংরেজি (উদর্র্ধটথমভথ) ও বাংলা চট্টগ্রাম যেসব শব্দ থেকে উৎসারিত হয়েছে সেসব মূল শব্দগুলো চিতাগাঁও বা চিৎগাঁ, চৈত্যগ্রাম, সপ্তগ্রাম, চিতাগঞ্জ, চাটিগাঁ, সাতগাঁও, সীতাগঙ্গা, সতের কাউন প্রভৃতি শব্দ সম-ধ্বনি বাচক।
অনেকের মতে সীতাকুণ্ডের বিশাল পাহাড় চন্দ্রনাথ ও বর্তমান চট্টেশ্বরী মন্দির থেকে ভূ-খণ্ডের নামকরণ হয় চট্টগ্রাম। মুন্সী আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ তাঁর ইসলামাবাদ গ্রনে' বলেন, ‘শুধু সাম্প্রদায়িক মনমানসিকতায় ইসলামাবাদ নামটি বাতিল করে প্রাচীন চাঁটিগাম পরে চট্টগ্রাম ও ইংরেজি ‘চিটাগঙ’ প্রচলন শুরু হয়েছে।
’
এছাড়া ব্রিটিশ জার্নালে প্রকাশিত আছে আরবদের চট্টগ্রামে উপস্থিতি ও তার শক্তি সম্প্রসারণে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে সেকালের আরকান রাজ ষোলসিংহ ছন্দ চট্টগ্রাম দখল করার জন্য চট্টগ্রামের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং একে কবলিত করেন। তার এই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এখানে একটি স্তম্ভ নির্মাণ করেন। এবং তাতে খোদাই ছিল (‘চিত-তৌ-গৌঙ’- অর্থাৎ যুদ্ধ করা অন্যায়। এই তথ্য সাহিত্যিক মাহবুব-উল-আলম চট্টগ্রামের নামকরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বলে অভিহিত করেন। বিখ্যাত জাতিতত্ত্ববিদ কর্নেল উইলিয়াম ফোর্ড চট্টগ্রামকে পুষ্পপুর নামে অভিহিত করেছেন।
তাঁর লেখা মতে চট্টগ্রাম ত্রিপুরা কমলক্ বর্মনক নামে তিনটি পুরের অধীন ছিল। এই তিন পুরের মিলিত নাম ত্রিপুরা। তবে চট্টগ্রাম নামকরণের এই সমস্ত নির্ভরযোগ্য তথ্য ছাড়াও আছে নানা কাহিনী। রূপকথা। চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তির সবচেয়ে জনপ্রিয় কিংবদন্তি হল-
প্রাচীনকালে চট্টগ্রামের লোকসংখ্যা ও বাড়িঘরের সংখ্যা খুব কম ছিল।
পাহাড় পর্বত, বন জঙ্গল ঘেরা এই অঞ্চলে তখন জ্বীন পরী, ভূত-পেত্নী, বন্যপশুর উৎপাত ছিল। এই পরীদের বিতাড়িত করে সভ্যতা তথা আলোর পথ দেখাতে একদা এই ভূণ্ডখণ্ডে এসেছিলেন বারোজন পুণ্যাত্মা আউলিয়া। পরীদের অর্থাৎ অশুভ শক্তি বিতাড়িত করতে তারা প্রদীপ প্রজ্বলন করেন এবং প্রদীপের আলোয় জ্বীন পরীরা পালিয়ে গেল। এভাবে জ্বীন পরী, ভূত-পেত্নী তাড়িয়ে এই অঞ্চল হয়ে ওঠে মানুষের আবাসস'ল। সেই থেকে ভূ-খণ্ডের নাম হয় চাটিগাঁ।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় চাটি অর্থ প্রদীপ বা বাতি। এখন শহরের জামাল খাঁন ও মোমিন রোডের মিলনস'লে ‘চেরাগী পাহাড়’ নামে একটি উঁচু টিলা আছে। এই টিলা বা পাহাড়কে ঘিরে একটা সুদৃশ্য স্থাপনাও দেখা যায়। অধিকাংশ মানুষ চেরাগী পাহাড়ের এই স্থানে এলে এখনও হাত তুলে সালাম জানায় বা শ্রদ্ধা করে। এই চেরাগের পুণ্যালোকে আলোকিত হয়ে চেতনার অগ্নিতে প্রজ্বলিত হয় যুগে যুগে।
বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা দিয়েছে এই অঞ্চলের সূর্য সন্তানেরা। ব্রিটিশ আমল থেকে পুণ্যভূমি চট্টগ্রাম প্রসব করেছে স্বাধীনতার অগ্রসৈনিক সূর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, কাজেম আলী মাস্টার, দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত, কবি নবীন চন্দ্র সেন, একুশের কবি মাহবুব উল আলম, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসসহ অনেক কৃতী পুরুষদের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।