জাহেদ সরওয়ার
কিছুদিন আগে ঢাকা থেকে কঙ্বাজার যাত্রাকালে বাসের ভেতর একদঙ্গল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ তরুণীদের সহযাত্রী হবার সুযোগ ঘটে। স্বভাবতই তার খুব উচ্ছল ছিল। গাড়ীতে উঠার সাথে সাথে আমার মনে হল, আমি যেন ভূল জায়গায় এসে পড়েছি। অদ্ভুদ এক বাংলাভাষায় কথা বলছে তারা। বাংলা ইংরেজী মিশেল এক জগা খিচুড়ি ভাষা।
যেন বাংলাভাষায় কথা বলতে না হলেই তারা বাঁচে। ভয় পেয়ে গেছি। এইতো আমাদের তরুণ প্রজন্ম, যারা অত্যাধুনিক বিজ্ঞান সম্মত জীবন যাপন করে। এদের বিচরণ ইন্টারনেট, এরা দেখে হলিউড, এরা বি.বি.সি, সি. এন. এন।
মাইক্রোসফট' এনকার্টা ওয়ার্ল্ড ডিকশনারি' যে দিন প্রকাশিত হয়।
তার উদ্বোধনী ভাষণে খুব দম্ভভরে বিলগেটস বলেন' এক পৃথিবী এক অভিধান। এটাকি তথাকথিত বিশ্বায়নের নামে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের হুমকি নয়! একটা ভাষা যখন বিলুপ্ত হয় তখন সেটা একটা সংস্কৃতি নিয়েই বিলুপ্ত হয়। কারণ মানবিকতার কেন্দ্রে থাকে ভাষা।
ইদানিং ইন্টারনেট যোগাগোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্দেহ নেই মানবজাতির জন্য এটা অসাধারণ পাওয়া।
কিন্তু সাথে সাথে তার সকর ভাষার ভার্ষাণ হওয়া উচিত।
ইউনেস্কোর এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় মাত্র এগারটি ভাষা এখন গোটা পৃথিবীর মাতৃভাষা। এদের মধ্যে শীর্ষে আছে ম্যান্ডোরিন চায়নিজ।
1.মাতৃভাষার দিক দিয়ে ভাষাভাষির সংখ্যাঃ- 2.ব্যবহারিক দিক দিয়ে ভাষাভাষির সংখ্যাঃ-
1.চায়নিজ ম্যন্ডোরিন-80 কোটি 2.ইংরেজি-190কোটি
1.ইংরেজি -35কোটি 2.ম্যন্ডোরিন চায়নিজ-100কোটি
1.হিন্দি-উর্দূ-35কোটি 2.হিন্দি-উর্দূ-55কোটি
1.স্পেনিষ-31কোটি 2.স্পেনিষ-45কোটি
1.বাংলা-17কোটি 2.রাশিয়ান-29কোটি
1.আরবি-16কোটি 2.ইন্দোনেশিয়া-20কোটি
1.রাশিয়ান-16কোটি 2.আরবি-18কোটি
1.পর্তুগীজ-16কোটি 2.পতর্ুগীজ-18কোটি
1.জাপানিজ-12কোটি 2.বাংলা-17কোটি
1.জার্মান-9কোটি 2.জাপানিজ-14কোটি
1.ফ্রেঞ্জ-7কোটি 2.ফ্রেঞ্জ-13কোটি
এই হিসাবটি এক ভাষা অন্য ভাষাকে গিলে খাবার চিত্র তুলে ধরে। ইংরেজি নিয়েছে শাদা তিমির ভূমিকা।
করমচাঁদ গান্ধী 1946 সালে ইংরেজির এই অভিযাত্রা দেখে বলেছিলেন' মনে হয় ইংরেজি মদে দুনিয়া সবাই মাতাল হয়ে গেছে। অবশ্য তিনি ইন্টারনেট, হলিউড আর মিডিয়ার দৌরাত্ম্য দেখেন নি। ইংরেজি এখন সর্বগ্রাসী। যেখানে তার থাকার কথা নয় সেখানেও তার বিচরণ। কেবল ফরাসীরা আজো নিজেদের ভাষাটাকে জোঁকের মত ঝেঁকে ধরেছে।
আমার এক ফরাসী বন্ধু শিঁমন আমার সাথে সপ্তাহকাল বিহার কালে একটাও ইংরেজি শব্দ উচ্চারণ করেনি। আমিও ফরাসী জানিনা। ফলে আমাদের ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছিল আদিম জাতির ভাষা। মানে ইশারা ইঙ্গিত। ইংরেজি ভাষার আগ্রাসনের একটি নিজস্ব ভঙ্গি আছে তা হচ্ছে আত্মীকরন।
সে যে ভাষাকে গ্রাস করে তার শব্দ সমুহ সে নিজের করে নেয়। এতে সেই ভাষাভাষি লোকজনের মনে সান্তনা থাকে যে আমাদের ভাষা জাতে উটল। কিন্তু সেতো মরিচীকা!
ইউনেস্কোর এই পরিসংখ্যানে দেখা যায় ইংরেজীর সাথে পাল্লা দিয়ে সব ভাষাই মোটামুটি তাদের অবস্থান পাল্টিয়ে নিতে সচেষ্ট। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে কেবল বাংলাভাষা তার নিজস্ব স্থানে দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের কথা বলতে গেলে হিন্দি আর ইংরেজি আমাদের বেডরুমে ঢুকে আছে।
অথচ ভারতীয় উপমহাদেশে এই ভাষা আলাদা সমীহ পেত একসময়। আনর্্তজাতিক অঙ্গনে এই ভাষাই দক্ষিন এশিয়ার মুখ উজ্জল করেছে। আর বাঙালী শব্দটাই মূলত একটা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যা একান্তই ভাষা গত। আমরা যদি অচিরেই এমন একটা ভাষা হারিয়ে ফেলতে না চাই। তাহলে আমাদেরকেও সেই ভাষার আগ্রাসন সামলানোর জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।