দেখতে চাই ধরনী
পরিকল্পনা শুরু হয়ে গেল। এভারেস্ট অভিযানের রোমাঞ্চকতায় আমি বিভোর। আমি যেন ঠিক তাদেরই একজন যারা ছিলেন 1921 সালে প্রথম এভারেস্ট অভিযানের দু:সাহসী পথিকৃৎ। আমার নেতা ছিলেন জন নোয়েল, আমি এসব বই পড়ে জানি আর অনুভত করি। ম্যালরিকে আমার আদর্শ বলে মনে হয়।
শুধু তার ঐতিহাসিক অভিযানের জন্যই নয়, তার অদম্য পর্বতপ্রেমের জন্য। আমি একটু একটু করে ভালবাসতে শিখি পর্বতমালাকে। যেগুলো বিশাল এবং মহান; আমাদের হিমালয়সহ সারা পৃথিবীর পর্বতমালাকেই আমি ভালবাসি।
এভারেস্টের বর্ণময় শোভা আমি প্রথম দেখেছিলাম সানদকফু থেকে। পশ্চিমবঙ্গ ভারতের সবের্াচ্চ এই স্থান থেকে মহীরূহ কাঞ্চনজংঘা দেখতে গিয়ে তার থেকে আর বেশ খানিকটা বাঁয়ে ভোরের সোনালি আলোতে প্রথম যে শিখরটি রঞ্জিত হয়ে উঠেছিল, বহু দূর থেকে যার আকারকে অবহেলা করা যাচ্ছিলনা মোটেও।
আমার গাইড সোমান চিনিয়ে দিল, ওটাই এভারেস্ট। আমার সামনের কাঞ্চনজংঘার বিশালত্বের মাঝে আমার মনে একটুকরো ভেজাল ঢুকিয়ে দিয়েছিল ডিসেম্বরের সেই সূর্যের আলোটাই। এত কাছে থাকার পরেও কাঞ্চনজংঘার শিখরের চেয়েও আগে কেন এত দূরের এভারেস্ট এর মুকুট আলোকিত হলো ? জানতে পারলাম ধরণীর সবের্াচ্চ এই পর্বতের অংশীদারিত্বের দাবিদার মূলত তিব্বত এববং নেপাল। আর যা উচ্চতায় কাঞ্চজংঘার থেকে প্রায় শ'তিনেক মিটার উঁচু। উচ্চতার বিচারে এটা তৃতীয় উচ্চতম, আর এভারেস্ট আছে প্রথমায়।
মনে মনে প্রস্তুতি নিতে থাকলাম, আর যোগাযোগ শুরু করে দিলাম কীভাবে যেতে হবে এভারেস্টের দিকে, যতটা পারা যায়। একমাত্র সাহায্য করতে পারল ইন্টারনেট আর নীলক্ষেতের বই-ম্যাগাজিনের দোকান। এখানে আমি আমার সালাম জানাই যারা আমাকে অনেক দিন সময় দিয়েছেন বই খুঁজে বের করতে। তাদের মত সহযোগিতা করেনি আমাদের নিউমার্কেট কিংবা আজিজ সুপার মার্কেটের উন্নাসিক(!) সেলসম্যানরা। একে তো তথ্যের অভাব, তার ওপর বিশাল অঙ্কের টাকার চিন্তাটাও অস্থির করে তুলল মনটাকে।
পরিচিতদেও মাঝে খোঁজ নেয়া শুরু করে দিলাম কেউ আগে গেছে কীনা, এখানেও হোচট খেলাম। অন্নপূর্ণার পথে কিছু বন্ধুর পা পড়লেও আমার পথের পথিক হয়নি এখনও কেউ।
অনেক ঘেটে-ঘুটে দেখা গেল পর্বতে তথা হিমালয়ে যাওয়া বা অভিযানের সময় দুই ঋতুর মাঝেই সীমাবদ্ধ। মওসুমি জলবায়ু তথা মনসুনের আগের মার্চ-এপ্রিল-মে এবং বড়জোর জুনের প্রথম সপ্তাহ এবং মনসুনের পরের জুলাইয়ের শেষ থেকে নভেম্বরের শুরু পর্যন্তুই অভিযাত্রীদের আনাগোনা বেশি। প্রথম দিকে সেই 19 'শ সালের প্রথম থেকে আজ অবধি বেশির ভাগ সফল অভিযানই হয়েছে এই সময়গুলোতে।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সবদেশই কমবেশি কৃষি নির্ভর। আর এ নির্ভরতার অন্যতম কারণ এই মহাপর্বতমালা হিমালয়। মে মাসের পর থেকে উত্তর গোলার্ধ হতে যে ঠান্ডা বায়ূ দক্ষিণ দিকের আমাদের বঙ্গোপসাগর হয়ে ভারত মহাসাগরের দিকে ধাবিত হয় তা যদি হিমালয় দিয়ে রোখা না যেত তবে বোধ করি ভূমন্ডলের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে আমরা পড়তাম না। হিমালয়ে বাধা প্রাপ্ত হয়ে আমাদের উত্তর দিকের দেশগুলোতেই জলবায়ুর তারতম্য ঘটায় এই মনসুন। তাই এভারেস্টকে দেখতে দক্ষিণ থেকে যেমন মনে হতে পারে , উত্তর দিক থেকে তেমন হওয়ার কোনও কারণই নাই।
আকৃতিগত ভাবে এভারেস্ট যেন এক নিপুণ শিল্প। নেপাল এবং তিব্বত থেকে দেখতে প্রায় দু'রকম এই পর্বত। নেপাল থেকে খানিকটা পিরামিডের মতোই মনে হয়। তবে সাধারণত পিরামিডের চারটা ধার থাকলেও এর মাত্র তিনটি ধার। উত্তরে, পূর্বে এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে।
দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে শৃঙ্গ থেকে কুম্ভ আইস ফল পর্যন্ত প্রায় 7000 ফুট পর্যন্ত বরফের দেখা মেলা ভার। তাই স্তরীভূত শিলাগুলোকে এই পাশ থেকেই সব থেকে ভাল ভাবে দেখা যায়। সমুদ্র তলে জমে থাকার সময় সমান ভাবে জমে থাকলেও প্রচন্ড চাপে হাজার হাজার ফুট ওঠার সময় সেটা সমান ভাবে বাড়তে পারেনি। চাপের তারতম্যের জন্য এভারেস্টের এই সব শিলাস্তর উত্তরে তিব্বতের দিকে প্রায় 30 ডিগ্রি নেমে গেছে। এর চূড়া বা শৃঙ্গটি এবং এর কাছাকাছি অংশ তৈরি হয়েছে জুরাসিক যুগে, তাও প্রায় 19 কোটি বছর আগে পুরোনো কালো শেল আর আরগিলেসাস বেলে পাথর দিয়ে।
তার ঠিক নিচের অংশ ট্রায়সিক যুগের 22 কোটি বছরের পুরোনো কোয়ার্টজাইট আর শেল দিয়ে তৈরি। আর তারও নিচে আছে পারমোকার্বোনিফেরাস যুগের 30 কোটি বছরের পুরোনো ক্যালকেরিয়াস নাইস আর সিস্ট। আর তাই এভারেষ্ট দেখার মোক্ষম স্থল নেপালের কালাপাত্থর থেকে একে দেখলে আমরা সাধারণত দুটো রঙের বৈচিত্রবই দেখতে পাই। এক হলো সাদা বরফ আর কালো রঙের পাথর। তবে আসলে এর রং মোটেও কালো নয়, বরফের সাদা অংশটুকু বাদ দিলে বাকি অনাবৃত পাথরের রং নীরেট ধূসর তো নয়ই বরং হাল্কা বেলে খয়েরি।
আবার তিব্বতের দিকে থেকে তা ঘন খয়েরি। এভারেস্ট সম্পর্কে তাই জনৈক লামার কথা গুলো একদম খাঁটি
.[/লিংক] to see the greatness of a mountain, one must keep one
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।