দেখতে চাই ধরনী
[লিংক=িি.িসঁহঃধংরৎসধসঁহ.পড়স][/লিংক]
এভারেস্ট। বিশ্বব্যাপি সব বয়সী মানুষের কাছে আজও চরম উত্তেজনার মাপকাঠি। মাপকাঠি বলাটা বোধ করি মোটেও ভুল হবে না। উত্তর-দক্ষিণের বরফ রাজ্য বিজিত হয়ে যাবার পর তৃতীয় মেরু হিসেবে খ্যাত এই পর্বত শত শত বছর আগে থেকেই মানব জাতির কাছে ছিল বিপুল আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দু। একে জগদ্দল পাথর আর বরফের আবরন, অন্যদিকে ধরণীর সবের্াচ্চ স্থান, সব বিচারেই অদ্বিতীয়।
আধুনিক সভ্যতার শুরু থেকেই তাই একে নিয়ে হয়েছে নানা কল্পনা-জল্পনা। জ্ঞানপিয়াসী থেকে শুরু করে রোমাঞ্চপ্রিয় সবার মনযোগের অকুস্থল হয়ে পরে হিমালয়ের সবচেয়ে উচু এই শৃঙ্গ, মাউন্ট এভারেস্ট।
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এই পর্বতমালা আমাদেরই বাড়ির একেবারে পাশে। হিমালয়। আকাশের মত ব্যাপ্তি নিয়ে ঘিরে রেখেছে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াকে।
ভৌগোলিক সৃষ্টিতত্ত্ব অনুসারে ভারতীয় বিশাল ভুমন্ডলীয় চাপের ফলে উৎপত্তি লাভ করেছে এই বিশাল পর্বতমালা। কোনও রকম বিরতি ছাড়াই এটা পাকিস্তানের পূর্ব প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে সামান্য বাঁক নিয়ে ভারতের নামচে বাড়োয়ায় শেষ হয়েছে। যার পুরো ব্যাপ্তি হবে প্রায় 1500 মাইল বা তার চেয়ে বেশি। দু'পাশে অবারিত ভাবে বয়ে চলছে ব্রক্ষ্মপুত্র সিন্ধু নদ। আর তিব্বতের পুণ্য ভূমি থেকে শুরু হয়ে ভারত মানচিত্রের একেবারে উত্তর দিকে শেষ হয়েছে এই সুবিশাল পর্বত দেয়াল, যা কোনওক্রমেই 100 মাইলের কম হবে না।
আরও সহজ ভাবে বলা যায় যদি আমরা হিমালয় পর্বত শ্রেণীর একেবারে পূর্বের নাঙ্গা পর্বতকে লন্ডনে স্থাপন করি তবে পশ্চিম প্রান্তের নামচে বাড়ওয়াকে বসাতে হবে মস্কোতে। সে হিসাবেই এর দৈঘর্্য হবে নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে জর্জ বুশের টেঙ্াসের হিউসটন পর্যন্ত।
যুগে যুগে নানা অভিযানে জর্জরিত এই মহাপর্বতে 1953 সালের 29 মে নিউজিল্যান্ডবাসী এডমন্ড হিলারি এবং তিব্বত শেরপা বংশোদ্ভুত তেনজিং নোরগে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে আরোহন করেন। এতো গেল মাত্র 50 বছর আগের ঘটনা। আরও প্রায় শ'খানেক বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছিল এ পথে এগুবার যাত্রা।
আজ অবধি ক্ষান্ত হয়নি অভিযানপ্রিয় মানুষেরা। চলছে অবিরাম অভিযান।
আর আমার কথাগুলো এই এভারেস্টকে নিয়েই।
ঘটনার শুরুটা কীভাবে হয়েছিল তা বলাটা বোধ করি রোমাঞ্চকর। কেননা প্রথম যেবার আমাদের পাহাড়গুলোতে পা পড়েছিল স্রেফ সৌন্দর্য উপভোগের জন্য, ধমনীর মত বাঁকা পথে পা মাড়িয়ে দেয়ার অন্তিম ইচ্ছা থেকেই মনে হয় হারিয়ে গিয়েছিলাম সবুজে ঘেরা আমাদের বান্দরবানে।
যেখানে বাতাসের বেগ কিছুটা আলাদা আর মেঘগুলো বেশ বন্ধুপ্রতিম, একেবারে গা ছোঁয়া। অনেক উঁচু থেকে দেখা শংখ নদী। কেমন জানি আলাদা মেজাজ। মেলানো কঠিন অন্য কারও রূপের সাথে। তখন কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠেছিল - যদি আরও খানিকটা উপরে যাওয়া যেত? তখন কেমন হত নিচের গাছগুলো দেখতে? নদীর রূপটাও কি বদলে যেত আমূলে? বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিখরে বর্ষার শেষ দিকে পা থেকে জোঁক সরাতে সরাতে ক্লান্ত হয়ে আমারই এক বন্ধু বলে উঠেছিল - ধূর, এর চেয়ে মনে হয় এভারেস্টে যাওয়া অনেক আরামের, অন্তত জোঁকের জালা তো আর নেই ! কথাটা শোনার পর কেমন জানি বোকার মত হয়ে গিয়েছিলাম আমরা ক্ষণিকের জন্য, সামান্য জোঁকের জ্বালায় আমরা কিনা চিন্তা করছি ধরণীর সবোচ্চ বিন্দুর কথা।
অপরিণামদশর্ী আমরা তখনও তেমন ভাবে বুঝেই উঠতে পারিনি যেখানে আমরা বসে আছি তা থেকে প্রায় আরও হাজার ছাবি্বশেক উঠতে হবে। এভারেস্ট অনেক উঁচু, অ নে ক। যে উচ্চতায় কখনও কোনও পাখি উড়েনি, আর ফুল? দালাইলামার ছোট্ট ফটোটার সামনে দু'একটা পড়লেও নিজ থেকে ফোটেনি কোন দিন। অর্বাচিন আমার মাঝে সেদিনই কথাটা আটকে গিয়েছিল। একটাই নাম এভারেস্ট - মনে প্রাণে দেহে।
সময় চলতে থাকল নিজের মত। পড়ালেখার পাশাপাশি চলতে থাকল অভিযান, একের পর এক। জানি না কতবার গিয়েছি শুধু এক বান্দরবানেই। শীতে, গ্রীষ্মে, বর্ষায়। কোনওবার মাসে দু'বার।
উঁচুতে উঠতে চাই, অনেক উঁচুতে। উচ্চতায় পেয়ে বসল আমাদের। শুধু একটাই চিন্তা পাহাড়ে যেতে হবে। তখনও সঠিকভাবে আমি এভারেস্টকে জানিই না। দুটো বছর যে কীভাবে কাটিয়ে দিলাম তা নিজেই জানি না।
2003 সাল। এতদিনে এতটুকু জেনে গেছি 2003 মে মাসে এভারেস্ট বিজয়ের 50তম বার্ষিকী উদযাপন। তাই এ সময়টাকেই কেন জানি আদর্শ মনে হল। তবে সমস্যা হলো কে যাবে আমার সাথে ? অতু্যৎসাহী অনেক বন্ধুর দেখা পেলাম। তবে আসল কাজে কেউ নেই।
বড়ই নিরাশ হলাম। হঠাৎ করেই এক শুক্রবারের বিকালে রিফাত ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেলাম। 2002 সালের 26 মার্চের ছুটিতে জীবনের কঠিনতম অভিযানে তিনি ছিলেন আমাদের সাথে। খুবই সাধারণ, প্রচন্ড মানসিক শক্তিধর এই মানুষটির সাথে এক দিনে মোট 18 ঘন্টা হেঁটে ছিলাম সেবার। তখনই কেমন জানি একটা ছন্দ তৈরি হয়ে গিয়েছিল নিজেদের মধ্যে।
শেষ ভরসায় তার কাছেই গেলাম। সপ্তাহিক ছুটির দিনে ধানমন্ডি লেক নানান ধরনের মানুষে গিজ গিজ করে। তার মাঝেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম আমাদের চিন্তা আর কথোপকথন নিয়ে। দেখতে যাব এভারেস্ট। এবারই।
উত্তেজনায় রীতিমত কাঁপছিলাম আমি। এতদিন পর
অন্তত একজনকে তো পাওয়া গেল। ট্রেকিং আমার মত তারও শখ। আমি আর একা নই, আমরা। সামনে কী হবে জানি না ! তবে চেষ্টাটা তো এবার করা যায় তাই বা কম কোথায়?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।