একদিন তোর কথা শুনবে নদি...
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের রাষ্ট্র প্রধান ক্যাস্ট্রো সমাজতান্ত্রিক কিউবার তো বটেই ল্যাটিন অ্যামেরিকার কিংবদন্তি পুরুষ। 1959 সালে বিপ্লবের মাধ্যমে তিনি কিউবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতাসীন হন। দীর্ঘ 48 বছর ধরে তিনি দেশটির শাসন ক্ষমতায় টিকে আছেন। দেশটির উপর যুক্তরাষ্ট্র 40 বছর ধরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র গত চার দশকে অসংখ্যবার ক্যাস্ট্রোকে মতাচু্যৎ করার বহু ষড়যন্ত্র করেছে।
কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে লাগেনি। সফল হয়নি। অবরোধ, নিষেধাজ্ঞা ও নানামুখী চাপ উপো করেই তিনি ক্ষমতাচর্চা করেছেন। বহুবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতাসীন ক্যাস্ট্রোকে হত্যার জন্য সিআইএ শত শতবার চেষ্টা করেছে।
কিউবার নির্বাসিত রাজনৈতিক গ্রুপগুলোও মার্কিন ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু ক্যাস্ট্রো এসব জেমস বন্ডদের মিশন ব্যর্থ করে দিয়ে বহাল তবিয়তে ক্ষমতায় আছেন। সিআইএ ক্যাস্ট্রোকে হত্যা করার জন্য প্রায় 63টি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। ক্যাস্ট্রোর দূরের কাছের অনেক পরিচিত-অপরিচিত মুখ অংশ নিয়েছে এসব ষড়যন্ত্রে। এগুলোর মধ্যে ছিল বিষের ওষুধ, বিষাক্ত সিগারেট ও বিস্ফোরক প্রয়োগে তাকে হত্যা করা।
এ সুযোগগুলো নেয়া হয়েছিল ক্যাস্ট্রোর চুরুটপ্রীতি কিংবা স্কুবা ডাইভিংয়ের প্রতি নজর রেখে। এসব ষড়যন্ত্রের কোনটাই যে কাজের লাগেনি তা বলাই বাহুল্য। তবে এটা ঠিক যে, কোনো কোনো কাহিনীর রূপবিন্যাস জেমস বন্ডকেও হার মানাবে।
ফিদের ক্যাস্ট্রো কেবলমাত্র কিউবার 1 কোটি 10 লাখ মানুষের নেতা নন; ল্যাটিন অ্যামেরিকার অবিসংবাদিত এ নেতার প্রভাব আফ্রো-এশিয়া এবং ইউরো-এশিয়ায়ও বিস্তৃত। বর্তমানে তিনি অসুস্থ্যতা এবং বার্ধক্যজনিত কারনে সাময়িকভাবে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
কোনো প্রকার চাপের কাছে নতিস্বীকার করে নয়, শারীরিক অসুস্থতার কারনেই আপন ভাই রাউল ক্যাস্ট্রোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন।
সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের আইকন হিসেবে খ্যাত ক্যাস্ট্রো কালের সাক্ষী। বহু ঐতিহাসিক ঘটনা-দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতায় তিনি ছিলেন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী গণমানুষ ও কথিত তৃতীয় বিশ্বের অনুপ্রেরনা। আমেরিকার 10টি মতাধর প্রেসিডেন্টের উত্থান-পতন এবং তার ওপর বৈরী নীতিকে তিনি অত্যন্ত বিচলনতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছেন। একটা কথা বিশেষভাবে ভাবতে হবে, প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে নেতৃত্ব দিয়েও তিনি 'ক্যাস্ট্রোবাদ' প্রতিষ্ঠা করেননি কিংবা প্রচলন করেননি 'কিউবান মডেল' নামক কোন নীতি।
'মস্কোপন্থী-পিকিংপন্থীর' মতো 'কিউবানপন্থী'র অস্তিত্ব শোনা যায় না। কেবলমাত্র এসবগুনের কারনেই তিনি পৃথিবীর কাছে একজন আপোষহীন শাসক হিসাবে পরিচিত হয়ে আছেন।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের প্রতিবাদী এক লড়াকু মানুষের প্রতিচ্ছবি ক্যাস্ট্রো হয়তো আর কোনোদিন সুস্থ হয়ে আগের অবস্থায় ফিরে আসবেন না। কিন্তু সাহসী এ নেতার প্রতিকৃতি বারবার শোষন, বঞ্চনা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াকু মানুষদের অনুপ্রাণিত করবে, সাহস জোগাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।