মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন, মেয়াদভিত্তিক দণ্ড নাকি খালাস? আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আবদুল কাদের মোল্লার ভাগ্যে কী আছে, তা জানা যাবে আজ। জামায়াতে ইসলামীর এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের ব্যাপারে করা দুটি আপিলের রায় ঘোষণা করবেন সুপ্রিম কোর্টর্। রায় ঘোষণার জন্য আপিল বিভাগের আজকের কার্যতালিকার প্রথম ক্রমিকে রয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বনাম আবদুল কাদের মোল্লা নামের মামলাটি। এ রায় ঘোষণা করবেন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের একটি নির্দিষ্ট বেঞ্চ। এটি হবে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথম কোনো আপিলের রায়।
কাদের মোল্লার ব্যাপারে করা আপিল ৩৯তম দিনের শুনানি শেষে রায়ের অপেক্ষায় ছিল ২৩ জুলাই থেকে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। সাজা বাড়াতে সরকারপক্ষ ৩ মার্চ আপিল করে। খালাস চেয়ে পর দিন আপিল করেন কাদের মোল্লা। ১ এপ্রিল আপিলের শুনানি শুরু হয়।
আপিল শুনানি : কাদের মোল্লার আপিলের শুনানিতে মোট ৩৯ কার্যদিবস লেগেছে। প্রথমে সরকারপক্ষ ও পরে আসামিপক্ষের করা আপিলের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ১ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত, ৬ জুন থেকে ২০ জুন এবং গতকাল পর্যন্ত মোট ১৫ কার্যদিবসে সরকারপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। অন্যদিকে ২৯ এপ্রিল থেকে ৬ জুন এবং ২২ জুলাই পর্যন্ত ১৯ কার্যদিবসে আসামিপক্ষে শুনানি করেন কাদের মোল্লার আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। এ ছাড়া সাতজন অ্যামিকাস কিউরির বক্তব্য গ্রহণ করা হয়।
সরকারপক্ষে শুনানিতে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-২ এ দেওয়া সাক্ষীদের সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়ার বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তার সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা, ট্রাইব্যুনালের রায় পাঠ, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন-১৯৭৩ সংশোধনী বিষয়ে বক্তব্য এবং আসামিপক্ষের যুক্তির জবাব দেওয়া হয়। অন্যদিকে আসামিপক্ষ কাদের মোল্লাকে খালাস দেওয়ার পক্ষে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন এবং সরকারপক্ষের যুক্তির জবাব দেয়। এর আগে ১০ মার্চ প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের বেঞ্চ শুনানির জন্য ৩১ মার্চ দিন ধার্য করেন। তবে ওই দিন আপিল বিভাগের নতুন বিচারপতিদের শপথ গ্রহণ ও সংবর্ধনার জন্য এ মামলার শুনানি ১ এপ্রিল শুরু হয়। পরে একজন বিচারপতি অবসরে চলে যাওয়ায় পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ করেন।
অ্যামিকাস কিউরিরা কী বললেন : আপিল শুনানিতে দুটি আইনগত প্রশ্ন দেখা দেয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কাস্টমারি ইন্টারন্যাশনাল ল' (প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন)-এর আওতায় কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে এই মামলা পড়বে কিনা এবং দ্বিতীয়টি হলো আপিলের সমান সুযোগ রেখে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন-১৯৭৩-এ যে সংশোধনী আনা হয়েছে এবং ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে তার যে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেওয়া হয়েছে_ তা এ মামলায় প্রযোজ্য কিনা? এ বিষয়ে আদালতকে সহায়তা করতে গত ২০ জুন সাতজন বিশিষ্ট আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি নিযুক্ত করেন আপিল বিভাগ। অ্যামিকাস কিউরিদের মধ্যে এ সংশোধনী আবদুল কাদের মোল্লার মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে মতামত দিয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি এবং ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। অন্য দুই অ্যামিকাস কিউরি টি এইচ খান এবং এ এফ হাসান আরিফ বলেন, এটি প্রযোজ্য হবে না।
অন্যদিকে কাস্টমারি ইন্টারন্যাশনাল ল' (প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন)-এর আওতায় এ মামলা পড়বে বলে তিনজন, পড়বে না বলে দুজন এবং অন্য দুজন ভিন্ন ধরনের মত দেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদের মতে, প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য নয়। অন্যদিকে ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম এবং এ এফ হাসান আরিফের মতে, প্রযোজ্য হবে। আর ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসির মতে, প্রযোজ্য হবে, যদি তা দেশীয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। দেশীয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে এটি প্রযোজ্য হবে না।
টি এইচ খানের মতেও প্রযোজ্য হবে। তবে তিনি মনে করেন, যে ক্ষেত্রে দেশীয় আইনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনকে সাংঘর্ষিক বলে মনে হবে, সে ক্ষেত্রে দেশীয় আইন প্রাধান্য পাবে।
শুনানির অপেক্ষায় আরও চার মামলা : আপিল বিভাগে আরও চারটি মামলা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। তা হলো ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও সাবেক আমির গোলাম আযমের ব্যাপারে করা আপিল। সাঈদী ও গোলাম আযমের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার ও আসামিপক্ষ আপিল করেছে।
প্রমাণিত হওয়ার পরও যেসব অভিযোগে সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল কোনো দণ্ড দেননি সেসব অভিযোগেও তার সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে সরকার আপিল করে। কামারুজ্জামান ও মুজাহিদের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল করলেও সরকারপক্ষ করেনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।