আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইউরোপে হত্যাযজ্ঞের স্বীকার ইহুদীদের মেমোরিয়াল এবং কিছু ভাবনা (1): উৎসর্গ রেজওয়ান ভাইকে

যে ঘড়ি তৈয়ার করে - সে - লুকায় ঘড়ির ভিতরে

পুরো ইউরোপ সফরে অনেকবার ইচ্ছে ছিলো ইহুদীদের ধর্ম মন্দির সিনাগগ দেখতে যাবো। ওদের প্রার্থনায় যোগ দিবো। ভিয়েনায় দুটো সিনাগগ ছিলো। অনেক কষ্টে প্র্রথমটা খুঁজে পেলাম। বেচারা ইহুদীরা ইতিহাসে এবং বর্তমান সময়ে প্রচুর টানাপোড়েনের ভিতর দিয়ে গিয়েছে বলে তাদের সিনাগগকে বানিয়ে রেখেছে হাই সিকিউরিটি প্রিজন।

উচু প্রাচীরে ঘেরা সেই সিনাগগের খুব ছোট একটা গেট দিয়ে ভিতরে চত্ত্বরে প্রবেশ করে দেখি অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে ইয়া ষন্ডা মার্কা প্রহরী ঘোরা ঘুরি করছে। বললাম আমি সিনাগগের ভিতরে যেতে চাই, প্রথমেই আমার বাদামী চামড়া দেখে আপাদমস্তক দেখে বললো, ইউ কান্ট গো ইন। আমি বললাম কেন? বললো অনলি জিউস ক্যান গো। ইউ আর নট জিউ, আর ইউ? আমি মুখে না বললেও মনে মনে বলি, বাই ডিফলট অল মুসলিম ইজ এ জিউ এন্ড খ্রিস্টান এ্যাট দি সেম টাইম। বলতে ইচ্ছে করছিলো, জিউ এর ডেফিনিশন কি? মোসেস এর টেন কমান্ডমেন্টে বিশ্বাস করা? ওই কমান্ডমেন্ট কুরআন শরীফেও আছে এবং সেটা আমরাও পালন করি।

সেই হিসাবে আমিও ইহুদী। তর্ক করতে ইচ্ছে হলো না। ভিয়েনার ঘন মেঘে ঢাকা মেঘলা আকাশ আর ঠান্ডা ঠান্ডা শান্ত পরিবেশে মনটা সবসময় কেমন যেন উদাস হয়ে থাকে। উদাস মনে তর্ক করতে নেই। আমি নিরস মুখে দালানের ভিতরে উঁকি দিয়ে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পেলাম না।

ও তখন বললো আরেকটা সিনাগগ আছে যেটায় সাধারনদের প্রবেশানুমতি আছে। ওর কাছ থেকে ঠিকানা বুঝে নিয়ে সেই দিকে হাটা দিলাম। খুঁজে পেয়ে সেখানেও হতাশ হতে হলো। কেবলমাত্র সপ্তাহের একদিন সেটা দেখা যায়। সুতরাং ভিয়েনায় আমার সিনাগগ দর্শন বাতিল, হাতে সময় নেই।

বার্লিনেও সময় ছিলো না। কাসেলে দেখবো মনে করেও পরে ভুলে গেছি। এই যখন অবস্থা তখন বার্লিনে ইহুদীদের হলোকাস্ট মিউজিয়াম (মেমোরিয়াল অফ মার্ডারড জিউজ অফ ইউরোপ) দেখার প্রথম সুযোগেই রেজওয়ান ভাইয়ের সাথে সেটা পরিদর্শন করতে যাই। একটা জাতি তার ইতিহাসকে কতখানি তীব্রতার সাথে সংরক্ষন করতে পারে, কতটা ক্রিয়েটিভ ও নিখুঁতভাবে ভবিষ্যতের জন্য ধরে রাখতে পারে, হলোকাস্ট মিউজিয়াম না দেখলে অবিশ্বাস্য। হাইটেক প্রযুক্তির দারুন ব্যবহার, খুব সুন্দর পরিকল্পনায় তারা ইহুদী জাতির খুব গোড়ার ইতিহাস, ইউরোপে আগমন থেকে শুরু করে হিটলারের উত্থ্যান, ওদের উপরে অত্যাচার এবং নরহত্যাকারীদের বিচার করা .. সব কিছু খুব সাবলীলভাবে সেখানে তুলে ধরা হয়েছে।

ইউরোপে ইহুদীদের উপরে হলোকাস্ট বা হত্যাযজ্ঞে ছবি এবং ইতিহাসগুলো দেখলে ও পড়লে মনটা ভারী হয়ে আসে। এত অবিচার হয়েছে পৃথিবীর বুকে। অবোধ শিশু, নারী কেউ রক্ষা পায়নি সেই অন্যায় থেকে। কিছু নিবোর্ধ লোকের নিবুদ্ধিতার কারনে একটা পুরো জাতির উপরে এভাবে অমানবিক অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ কোন বিবেকবানই মেনে নিতে পারে না। হলোকাস্ট মিউজিয়াম দেখছিলাম আর মনে আসছিলো, হায়রে এরাও ইতিহাস সংরক্ষন ও উপস্থাপন করে .. আর আমরা আমাদের ইতিহাস উপস্থাপন করি।

কতটাই না পার্থক্য ... !! পরের কিস্তিতে সেই সময়ে মনে আসা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষন নিয়ে ভাবনাগুলো লিখবো। ওদের মেমোরিয়ালের উপস্থাপনার মডেলটা খুব ভালো লেগেছে। কেন সেটা পরে জানাচ্ছি। তার আগে রেজওয়ান ভাইয়ের কাছে অনুরোধ থাকলো ঐ মিউজিয়াম পরিদর্শনের সময়ে আপনার কি অনুভুতি হয়েছিলো সেটা জানানোর। আমি নিশ্চিত - ইহুদীদের থরে থরে পড়ে থাকা মৃতদেহের ঐ ছবিগুলো দেখে মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের ছবিগুলো আপনার মনেও ভেসে উঠে ছিলো।

আপনার তখনকার সেই অনুভুতির কথাগুলোই জানতে পারলে ভালো লাগতো। মিউজিয়ামটি সম্পর্কে বিস্তারিত: http://tinyurl.com/ph3xk

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.