কিছু দেশ দেখার সুযোগ হয়েছে এই জীবনে। ভ্রমণ আমার ভাল লাগে্ তাই সবার মাঝে তা জানাতে চাই। সবার উপরে ভালোবাসি বাংলাদেশ । ধন্যবাদ নতুন দেশ দেখতে খুব ভাল লাগে। ভাল লাগে নতুন নতুন মানুষ দেখতে, চাইলেই কি সব সময় দেখা যায় ।
থাই অ্যাম্বাসীতে ভিসা নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফরম পুরণ করে পাসপোর্ট জমা দিয়ে থাইল্যান্ডের তিন মাসের সিংগেল এন্ট্রি ভিসা পেলাম । বাংলাদেশ বিমানে করে ঢাকা থেকে থাইল্যান্ডের ব্যাংককের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম । বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স- আকাশে শান্তির নীড়, যেন মনে হয় নিজ দেশেই আছি। সুপরিসর বিমান । বিমান মায়ানমারের উপর দিয়ে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।
বিমানের খাবার দাবার ও আতিথেয়তা ছিল চমৎকার। দুপুর নাগাদ আমারা ব্যাংককের ডং মুয়াং এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করলাম ।
ডং মুয়াং এয়ারপোর্ট - থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ডের সাথে আমাদের দুই ঘন্টার সময়ের পার্থক্য। বিমান থেকে নেমে বোর্ডিং ব্রিজ দিয়ে সাইন পোষ্টিং দেখে ইমিগ্রেশনের দিকে গেলাম । সুন্দর ভাবে লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে সবাই।
ইমিগ্রেশনের পুরুষ ও মহিলা অফিসাররা একটা একটা করে পাসপোর্ট ক্লিয়ার করে দিচ্ছে। ইমিগ্রেশন শেষ করে দোতলা থেকে এক্সেলেটরে একতলাতে নেমে এলাম। ব্যক্তিগত লাগেজ কনভেয়ার বেল্ট থেকে সংগ্রহ করে গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ইমিগ্রেশনের বাইরে অনেক লোকজন বিভিন্ন নাম লেখা প্লেকার্ড হাতে অপেক্ষা করছিল । বিভিন্ন দেশের বিমানের কাউন্টারগুলো বেশ সুন্দর ভাবে সাজানো ।
সব কিছুই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন লাগছিল ।
ব্যাংকক - থাইল্যান্ড
আমরা ছুটির দিনে পৌঁছাই, তাই একদিন আমাদেরকে ব্যাংককে থাকতে হবে। সুকুমভিত এলাকার সয় বা লেন ১১ তে এক হোটেলে প্রথমে আসি। হোটেল মালিক পশ্চিম বংগের বাংগালী, স্ত্রী থাই । এখানে হোটেল ব্যবসা করেন এবং বেশ ভাল আছেন।
ছোট্ট হোটেল, ছোট রুম , রুমগুলো ছোট সাথে এটাচ বাথরুম। বেশী পরিস্কার বলা যাবে না তবে নতুন চাদর দেয়া হয়েছে । জিনিসপত্র রুমে রেখে যখন আমরা বাইরে এলাম তখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। রাস্তার পাশে দোকানে রান্না হচ্ছে। এক ধরনের থাই সস এর গন্ধে ভরা চারিদিক, কেন যেন বমি আসে ।
এই থাইল্যান্ড আজ অনেক বদলে গেছে তবে সেই দিনের অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর ছিল না । রাস্তার পাশে অনেক সুন্দর সুন্দর ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর। কাছেই রবিনসন্স নামের একটা ভাল ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর আছে, সব জিনিষ এখানে পাওয়া যায় । পথে মানিচেঞ্চার থেকে ডলার চেঞ্চ করে নিলাম । ক্ষুধা লেগেছিল ঠিক করলাম মুসলিম ফুড খাব ।
এম্বেসেডর হোটেলের নীচে খাবারের ব্যবস্থা আছে। সেখানে মুসলিম ফুডের অর্ডার দিলাম । শো কেসে লাল রং এর রান্না করা গরুর মাংস দেখে জিভে পানি এসে গেল। যখন খেতে দিল তখন এক বিচ্ছিরি অবস্থা। এসব এলাকার মুসলিম লোকজন খাবার চিনি দিয়ে রান্না করে ।
মিষ্টি গরুর মাংস মুখে দিয়ে বমি করার মত অবস্থা। খাওয়া ছেড়ে বিল দিয়ে বাইরে চলে এলাম। এদিকে বেশ ক্ষুধা লেগেছে তার উপর এই অবস্থা। শেষমেষ রাস্তার পাশে প্রন ও ভাত ভাজা খেতে বসে গেলাম। বরফের মধ্যে থেকে কয়েকটা চিংড়ি নিয়ে তেলে ভাজা করে তার উপর ভাত দিয়ে দেয় সাথে কিছু মসলা পিয়াজ ও সস এরপর একটা প্লেটে তা উঠিয়ে দেয় ।
ওয়ান টাইম চামচে করে খেতে হয়। বেশ মজা লাগল এটা খেতে, তৃপ্তি করে খেলাম সাথে কোল্ড ড্রিংস নিলাম । আমাদের হোটেলটা সুকুমুভিতে। এটাকে অ্যাম্বেসেডর সিটিও বলা হয়। পাঁচতারা হোটেল হোটেল অ্যাম্বেসেডর আমাদের হোটেল এর সামনেই।
প্রথম দিনে রাতের ব্যাংকক ভালই লাগল । তবে কিছু কিছু লোক হাতে এলবাম নিয়ে আমাদের পিছু নিল । তারা ভেবেছে আমরা হয়ত অন্যান্য পর্যটকের মত রাতের থাইল্যান্ডের স্বাদ নিতে এসেছি । বিউটিফুল গার্ল, সুইট ইত্যাদি বলে অনেক ছবি দেখাতে চায় । আমরা নো নো বলে সামনে হেটে চলে এলাম ।
এখানে ২/৩ লিটারের কোক প্লাস্টিকের বোতলে পাওয়া যায় । দামও বেশী না । এখানকার ফেরিওয়ালারা বিভিন্ন ধরনের ফল চার চাকা ওয়ালা ভ্যানে ফেরি করে বিক্রি করে । সবাই এখানে বরফ দিয়ে পানীয় খায় । বিভিন্ন ধরনের জুস ও পানীয় ফেরী হয় এখানে।
হোটেলে রাতে ফিরে এসে কিছু ম্যাগাজিন নিলাম। থাই পর্যটন কর্তৃপক্ষ বিনামূল্যে হোটেলে বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত ম্যাগাজিন রেখে দেয় । এগুলো দেখে আমরা কোথায় কোথায় যাব ও কি কি দর্শনীয় স্থান দেখব তা ঠিক করলাম। রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে অনেক দেরী হলো । হোটেলে রিসিপশনে একটা নেপালী ছেলে ছিল ।
দেশী খাবারের কথা বলায় সে বলল আশে পাশে অনেক বাংগালী হোটেল আছে, ভাল খাবার পাওয়া যায় । পরদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে খাবারের হোটেল খুজতে বেরুলাম। ২/৩ টা গলি পরেই সুন্দর প্লাস্টিক ও কাপড়ের শেড দিয়ে হোটেলের মত বানানো, নীচে টেবিল চেয়ার পাতা, একটু দুরে চুলাতে পরোটা ভাজা হচ্ছে । কুক ও ওয়েটার কয়েকজনকে দেখে বাংগালী মনে হলো । দেখেই বলল কেমন আছেন ? নাস্তার সন্ধান পেলাম।
এখানে লাঞ্চও খাওয়া যাবে । দুপুর বেলা সুকুমভিত এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখছি । রাস্তায় ঘন ধোয়া, অনেক ট্রাফিক জ্যাম, এখন যেমন এক্সপ্রেস ওয়ে হয়েছে ১৯৯২ সালে এগুলো ছিল না । ২/৩ টা বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর এ ঢুকলাম দেখার জন্য। কেনাকাটা এখন করব না ।
বাংলাদেশে এ ধরনের ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর হয়নি তখনো । আমাদের দেশের চেয়ে এ দেশের অবস্থা উন্নত মনে হলো। ট্রাফিক সিস্টেম, মল, ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরগুলো সবই ভাল। তবে সব হোটেলে ডিসকো ও থাই হোষ্টেসদের ছড়া ছড়ি । মেয়েরা যেন একটা পন্য।
বাংলাদেশী ও এশিয়ানদেরকে তেমন একটা আমল দেয়না। তাদের টার্গেট আমেরিকান ও ইউরোপীয় পর্যটক । সস্তা টাকার সুবাদে এরা ধুম ফুর্তি করে নিচ্ছে এদেশে । অজস্র টাকাও ঢালছে এই পর্যটকরা । ব্যাংককে টেইলারিং শপগুলো খুব ভাল দামে স্যুট বানায় ।
৫০-৬০ ডলার দিয়ে কমপ্লিট স্যুট বানিয়ে দেয় । একটা দোকানে ঢুকলাম, মাস্টার বাংলাদেশী ওর স্ত্রী থাই, বিয়ে করার সুবাদে ব্যবসা করছে এখানে। টাকা পয়সা থাই মহিলা বসে বসে হিসেব করে । দেশের চেয়ে ভাল আছে এখানে । আমরা ছুটিতে এসে স্যুট বানাবো বললাম ।
এর মধ্যে আশে পাশের এলাকা এবং খাবারের হোটেল সম্বন্ধে একটা ধারণা পেলাম । ফাওরাত বলে একটা জায়গার নাম জানলাম, ওখানে নাকি অনেক বাংলাদেশী ও ইন্ডিয়ান লোকজন থাকে। ফেরীওয়ালাদের কাছ থেকে পেয়ারা কিনলাম বিশাল সাইজ ১০ বাথ দাম । কেটে লবণ, চিনি ও মরিচ দিয়ে প্যাক করে দেয় । ভালই লাগে খেতে।
দেখতে দেখতে ব্যাংককে একদিন কেটে গেল।
পরদিন দুপুরে আমাদেরকে নেয়ার জন্য মাইক্রোবাস এলো । ব্যাংকক থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিনে লপবুরি নামের একটা ছোট শহরে আমাদের থাকতে হবে । ব্যাংকক থেকে বের হলেই প্রাচুর্য আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে দেখলাম । টিনের ঘরও আছে ।
গরীবও দেখা যায় । তবে রাস্তাগুলো মসৃণ ও প্রশস্ত । দুধারে ধু ধু খালি মাঠ কিংবা লতাগুল্মর জংগল । দুরে মাঝে মাঝে ছোট গ্রাম দেখা যায় । আমাদের দেশে এত খোলা জায়গা নেই।
মানুষ কম তাই ফাঁকা ফাঁকা লাগে। দুধারে প্রকৃতি দেখতে দেখতে কখন যে দু ঘন্টা পার হয়ে গেছে। আসার পথে ফিলিং ষ্টেশনগুলো দেখলাম,বেশ বড় ও সুন্দর। এখানে টয়লেট এর ব্যবস্থা এবং খাবারের দোকানও আছে । অনেকে গাড়ী পার্ক করে নিজেদের কাজকর্ম খাওয়া দাওয়া সেরে নিচ্ছে ।
লপবুরি শহরটা ছোট খাট । বাড়ীঘর দোকানপাট বেশীর ভাগ এক তলা । তিন তলা ও এর বেশী বাড়ীর সংখ্যা বেশ কম। কাঠের দোতলা বাড়ীতে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হলো। ঢুকতে কাঠের বারান্দা মাটি থেকে একটু উপরে সবকিছু পাটাতনের উপর ।
বন্য প্রাণীদের হাত থেকে বাঁচার জন্য হয়ত এ ব্যবস্থা । কাছেই পাহাড় ও জংগল আছে । নীচ তলায় ডাইনিং রুম, সাথে কিচেন । কিচেনে কফি, চিনি, চা,দুধ ইত্যাদি আছে। যে কেউ নিজেরা রান্না করে খেতে পারে ।
দোতলাতে থাকার জায়গা । ডাবল ডেক খাট এসি লাগানো রুম পরিবেশ মোটামুটি ভালই । ডাবল ডেক খাটে থাকা এই প্রথম । পাশেই বাথরুম আছে ২/৩ জনের জন্য এ ব্যবস্থা। থাইল্যান্ড কখনো কারো কলোনী ছিল না এবং বরাবর স্বাধীন ছিল তবুও এর আর্মি প্রতিবেশী দেশগুলোর এবং নিজেদের মধ্যকার বিদ্রোহী উপজাতিদের বিরুদ্ধে সময় সময় যুদ্ধরত থাকে।
থাইল্যান্ড আমাদের তুলনায় বেশ বিশালই বলা যায়। বার্মা, লাওস,কম্বোডিয়া,ভিয়েতনাম,মালয়েশিয়ার সাথে এর ভৌগোলিক সীমানা রয়েছে। বিশাল দেশ উত্তর দক্ষিণে লম্বালম্বি। ব্যাংকক মোটামুটি মাঝামাঝি জায়গায়।
আবহাওয়া গরম, ত্রিশ ডিগ্রির মত তাপমাত্রা ।
সকালেও ঠান্ডা বাতাস নেই । বিকেলে রুমে ফিরে ঠান্ডা পানিতে গোসল তারপর এসি রুমে ঢুকে একটু বিশ্রাম। বিদেশে এসে রুমে বসে থাকতে কারইবা মন চায়, তাই সন্ধ্যায় বাইরে যাওয়ার প্লান করলাম। লপবুরি শহরে সন্ধ্যা ৮ টার মধ্যেই সব দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায় । রাতে কেবল মাত্র ডিসকো,খাবারের কিছু কিছু দোকান ও হোটেল খোলা থাকে।
আমরা রওয়ানা দিতে দেরী করেছি কাজেই তেমন কিছুই দেখা হলো না প্রথম দিন। শহরটা গাড়ীতে চক্কর দেয়া হলো। তেমন ছোটও বলা যায় না। ট্রাফিক ব্যবস্থা ভাল তবে গাড়ীও কম মানুষও কম । থাইল্যান্ডের ম্যাসেজ বিশ্ব বিখ্যাত তবে এতকম সময় নিয়ে ম্যাসেজ পারলারে যাওয়া হয়নি ।
এরপর দিনের আলোতে শহরে এলাম। ছোট ছোট দোকান পাট । এক একটা পরিবার নিজেরা দোকানগুলো চালায় । সামনে দোকান পেছনে ষ্টোর ও থাকার ব্যবস্থা । কাজের ফাঁকে ভেতরে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে নিচ্ছে ।
গোটা পরিবার যার যার সময় মত দোকানে সময় দিচ্ছে।
লপবুরি বাঁদরের জন্য বিখ্যাত । এখানকার লোকজন বাঁদরকে খুব সম্মান করে এদেরকে কলা খেতে দেয় এবং অন্যান্য খাবারও দেয়, তাই এখানকার বৌদ্ধ মন্দিরগুলো বাঁদরের অভয়াশ্রম । একটা বৌদ্ধ মন্দিরে বেড়াতে গেলাম। সেখানে সুশৃংখলভাবে বাঁদরকে খাবার দেয়া হচ্ছে ।
নির্বিঘেœ বানরগুলো চলাফেরা করছে । মানুষ তাদেরকে কোন রকম ডিষ্টার্ব করছে না । প্রায় প্রতিদিন এলাকার সাথে পরিচিতির জন্য একটু একটু বাইরে যাওয়া হতো । এখানে পাত্থরে পাহাড়ের গুহার ভিতর একটা বেশ প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির আছে । অনেক উচুতে পাহাড় কেটে এই মন্দির বানানো হয়েছে ।
গাড়ী বেশ অনেক উচুতে উঠে তারপর পার্কিং এবং এরপর হেটে যেতে হয় । সাধারণের জন্য টিকেটের ব্যবস্থা আছে । পাহাড়ের অনেক উপরে প্রাকৃতিক গুহাকে মন্দিরে রুপ দেয়া হয়েছে । ভেতরে বিশাল এলাকা। অনেক বৌদ্ধ মুর্তি, গেরুয়া বসনধারী বিভিন্ন বয়সের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা আছে।
অনেক প্রাচীন ভিক্ষুও এখানে আছে। উপাসনা করছে । মৃত ভিক্ষুদের মমিও ২/১ টা আছে। প্রধান পুরোহিতের দেহ সংরক্ষণ করা হয়েছে। গুহার বাইরে থেকে গোটা লপবুরি শহরটা দেখা যায়।
নয়নাভিরাম দৃশ্য। একদিকে পাহাড় অন্যদিকে সমতল। একটু ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব গুহাতে, কোন কোন গুহাতে পাথরের গা বেয়ে পানি চুইয়ে পড়ছে । গুহাগুলোতে একটু বাজে গন্ধ পেলাম পরে ভেতরে গিয়ে দেখলাম সেখানে অন্ধকার কোনায় অসংখ্য চামচিকা/বাদুর ঝুলে আছে। ওগুলোর বিষ্টার গন্ধে এলাকার বাতাস বিষাক্ত হয়ে গেছে।
ভিক্ষুরা থাকতে থাকতে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে। আমাদেরকে বিভিন্ন রুমগুলো ঘুরিয়ে দেখালো । আমাদের সাথে থাকা দোভাষী তা বুঝিয়ে দিল। বহু আগে এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং যুুগ যুগ ধরে এখানে থাকার ও উপাসনার প্রথা চলে আসছে। আশে পাশের এলাকা থেকে ধর্মপ্রাণ লোকজন এখানে নিয়মিত আসে।
লপবুরির লেক সাইড রিসোর্টে গেলাম এক দিন। বাঁধ দিয়ে কৃত্রিম লেক বানানো হয়েছে। লেকের পাড়ে সুন্দর রাস্তা ,বসার জায়গা থেকে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখা যায় । লেকে নৌকা ও স্পীড বোট ভাড়া করে ঘোরা যায় চমৎকার ব্যবস্থা । লেকের মাঝে মাঝে পাহাড় মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে।
লেকের পানি থেকে জল বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় । এখানে কিছু কটেজ আছে । বেশ মনোরম পরিবেশ। ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে হাওয়াই মিঠাই ও ফল কিনে খেলাম। বিকেল বেলা অনেক লোকজন এখানে বেড়াতে আসে।
মাঝে মাঝে শহরে যাই টুকটাক কেনাকাটা করতে । কিনতে কিনতে বেশ কিছু জিনিষও কেনা হয়ে গেল। গেঞ্জি,ব্যাগ, কেটস, নাইফ ইত্যাদি ছোট খাট সামগ্রী । প্রায় প্রতিদিন একটু ঘোরাফেরা ভালই লাগে।
উইকএন্ডে এবার ব্যাংকক থাকার প্লান হলো ।
ব্যাংকক ঘুরে দেখা হবে । শনিবার ও রবিবার ছুটি । শনিবার সকালে আমরা মাইক্রোবাসে করে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম হোটেল আগ্ইে বুক করা আছে । হোটেলে উঠলাম। এখন দুই একটা কথাও বলতে পারি।
দেখা হলেই সোয়াসদিকপ (স্বাগতম ),মিদাই ( আমি অপারগ ) ইত্যাদি। নিম,সাম,সং,সি, হা, হোক, কেত,পেত,কাও, সিপ, এক থেকে দশ পর্যন্ত সংখ্যা এধরনের টুকটাক শব্দ । হোটেল থেকে এখন প্লান করতে বসলাম। কোথায় কোথায় যাওয়া যায় । দেশের সবার জন্য টুকটাক কেনাকাটা সাথে শহরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা।
ব্যাংককে আমরা নাইট বাজার ,ফাওরাত, বাংলাংফো জুতার মার্কেট .ববে মার্কেট,ইত্যাদি অনেক জায়গায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। পাতপং বলে একটা জায়গা আছে সেখানে কিছু কিছু এলাকা রেড লাইট এলাকা । এখানে অনেক বার ও ডিসকো আছে বিভিন্ন রকম শো দেখা যায় । তখন সারা থাইল্যান্ড এইডস এর আতঙ্কে ভুগছিল। থাইদের প্রাচীন ব্যবসায় বেশ চিড় ধরিয়ে ছিল এই আতঙ্ক ।
শোনা যায় অনেক এইডস আক্রান্ত কর্মী সুঁচ নিয়ে তেড়ে আসে ও সুঁচ দিয়ে জীবানু ঢুকিয়ে দেয়। অবশ্য এগুলো নিজ চোখে দেখা হয়নি কখনো । সারারাত এই এলাকার মার্কেট খোলা থাকে । প্রজাপতি তুলোর মধ্যে ষ্টাফিং করে ফ্রেম করা স্যুভেনির, থাইল্যান্ড লিখা গেঞ্জি,তখন এগুলো খুবই আকর্ষনীয় মনে হতো। নিজের জন্য ২/৩ টা কিনেও ফেললাম।
থাইল্যান্ডে জিন্স প্যান্ট,শার্ট ,গেঞ্জির দাম তুলনামূলক ভাবে তখন কম ছিল। ববে মার্কেট হলো কাপড়ের বাজার সেখান থেকে জিন্স প্যান্ট ও শার্ট কিনলাম কয়েকটা । বাংলাংফোতে শত শত জুতার দোকান, পরতে আরাম লাগে এ ধরণের ২/৩ জোড়া জুতাও কেনা হলো । ফাওরাত এ আসলাম টুকটুক এ চড়ে, এটা এক ধরনের খোলা টেক্সি । ডাইহাটসু ইঞ্জিন।
চড়ে আরাম আছে । বললাম বাংগালি এলাকায় যাব । ফাওরাতে বাংলাদেশী পাকিস্তানী ও বেশীর ভাগ ইন্ডিয়ান দোকান। প্রায় সব শিখ ব্যবসায়ী। এরা যুগ যুগ ধরে থাইল্যান্ডে ব্যবসা করছে ।
ফাওরাত এটিএম ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর থেকে টি শার্ট কিনলাম। এখানে শিখদের দোকানে জর্জেট শাড়ী পাওয়া যায় । শাড়ী কেনা হলো বেশ কিছু। দুপুরে খেতে চাই, বাংগালী খাবার কোথায় পাওয়া যাবে বলাতে একটা গলি দেখিয়ে দিল । মিতালী হোটেলের সন্ধান পেলাম এভাবে ।
এক সপ্তাহ পরে ভাত,সব্জী,মাছ সব দেশী খাবার দেখে সবাই ব্যস্ত হয়ে গেল কে কোনটা খাবে । রান্না চমৎকার লাগল । বিশাল বিশাল কই মাছ ব্যাংককের ময়লা খালগুলোতে চাষ হয় । মিতালী হোটেলের মালিক বাংগালী,খুশী মনে খাওয়ালো এবং ব্যাংককে আসলে তার এখানে খেতে বলল । তৃপ্তির ঢেকুর তুলে আবার পথে বের হলাম ।
গলিটা একটা ময়লা খালের পাড় দিয়ে চলে গেছে । এখানে পাকিস্তানী ও ভারতীয়রা মানি এক্সচেঞ্জ এর মত টাকা ভাংগানোর ব্যবসা করে । একটু ভিতর দিকে বলে ভাল রেট পাওয়া যায় । সিদ্ধান্ত নেয়া হলো যে ছুটিতে আসলে আমরা সবাই এখন ফাওরাতে এসে মনের সাধ মিটিয়ে দেশী খাবার খাব । খাওয়ার পর ব্যাংকক দেখতে বের হলাম ।
সামনেই অনেকগুলো ইলেকট্রনিক্স এর দোকান । থাইল্যান্ডেই সনির সব সেট এসেম্বল করে ।
এরপর জুতা কেনার সখ হলো । সবাই মিলে টুকটুকে করে, বাংলামফোতে এলাম । এখানে জুতার বিশাল সমাহার ।
ছোট ছোট দোকানে হরেক রকম জুতা । এখান থেকে তখন বাংলাদেশে জুতা যেত । আমরা চার পাঁচটা দোকান ঘুরে বিভিন্ন দামের বেশ ক’জোড়া জুতা কিনলাম । এগুলো পড়তে সত্যই আরাম । সন্ধ্যার দিকে হোটেলে ফিরে এলাম।
কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়ে ফ্রেস হয়ে আবার বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হলাম । রাতের খাবার বাইরে প্রন ফ্রাই দিয়ে শেষ করলাম। রাস্তার ফুটপাতে অসংখ্য দোকানে নানা রকম স্যুভেনির বিক্রি হচ্ছে । দোকানী ছেলে মেয়ে সবাই তাদের পশরা আকর্ষনীয় ভাবে ক্রেতার কাছে উপস্থাপন করে।
সকালে বাংগালী হোটেলে পরটা চা দিয়ে নাস্তা করে প্লান করলাম কয়েকটা ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরে ঘুরব ।
তারপর ববে মার্কেটে গিয়ে শার্ট ও জিন্সের প্যান্ট কিনব । ববে মার্কেট হলো রেডিমেইড গার্মেন্টস এর পাইকারী বাজার । এক ডজন এর নীচে কোন কিছুই এখানে বিক্রি হয় না । তারপর দুই তিনটা বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর এ গেলাম । ৫/৬ তলার ষ্টোর ।
একেক ফ্লোরে একেক ধরনের জিনিষ সাজানো আছে । ক্যাপসুল লিফ্টে করে উঠা যায় । এখান থেকে নাইকি ব্যান্ডের কেডস কিনলাম একটা খুবই নরম ও আরামদায়ক। বিকেলে হোটেলে ফেরত এলাম । উইক এন্ড শেষ করে আবার লপবুরির দিকে রওয়ানা হলাম ।
আগামী সপ্তাহে প্লান হলো পাতাইয়া ভ্রমন। এর পরের সাপ্তাহে চিয়াংমাইতে এবং শেষ সপ্তাহে যাওয়ার আগে আবার ব্যাংকক এ থাকা হবে দুই দিনের মত । শনিবার সন্ধ্যায় উইক এন্ড কাটিয়ে ফিরে এসে ক্যাসেটে থাই গায়িকা মাই এর গান চালিয়ে দিলাম । ’নাই পান হা’ গান বেশ জনপ্রিয় ছিল সে সময় । একটা টিভি ছিল আমাদের বাড়ীতে সেখানে থাই চ্যানেলে এই গানটা বেশ জনপ্রিয় ছিল ।
পাতাইয়া থাইল্যান্ড
এবার উইক এন্ডে ঠিক করলাম পাতাইয়া যাব । সকালেই রওয়ানা হতে হলো কারন মাইক্রোবাস পাতাইয়াতে রাখা যাবে না ব্যাংককে রাখতে হবে। পাতাইয়া ব্যাংককের কাছে । ৯০ কিঃ মিঃ হবে ব্যাংকক থেকে । ২ ঘন্টা লাগল ব্যাংকক তারপর পাতাইয়ার পথে কোষ্টার চলল ।
এসি কোষ্টার আমরা মনের আনন্দে চলছি । পাতাইয়ার গল্প অনেক শুনেছি এবার দেখা হবে । সান সী এন্ড স্যান্ড এর এলাকা আরো আছে নাইট লাইফ, ডিসকো ইত্যাদি। তবে গিয়ে যে কেমন লেগেছে তা পরেই জানাচ্ছি । পাতাইয়া যেতে কিছু পাহাড়ী ও জংগলের মত জায়গা অতিক্রম করে যেতে হয় ।
রাস্তা খুবই ভাল। কোন রকম সমস্যা নেই ট্রাফিক ও তেমন নেই। পথে লোকজন খুব অল্প। ঘন বসতির দেশ থেকে গিয়ে থাইল্যান্ড আমাদের কাছে ফাঁকাই লাগে একরকম । পাতাইয়া শহরে ঢুকে সীফ্রন্ট এর দিকে গাড়ী চলছে আমাদের চোখে ভাসছে কক্সবাজার এর মত বিশাল বিচ ।
সাগর দেখা যায়, বিচ কোথায় গাইড বলল এটাই বিচ । বেশ ঢালু বিচ ১০০ থেকে ১৫০ ফিটের মত হবে এতেই হরেক রকম বিচ সামগ্রী, বিচ চেয়ার ও ছাতা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে । সামনে একটা পার্কে আমরা নামলাম ।
আমাদের বলা হলো আজকে এখানে থাকতে হবে কাল ব্যাংকক নিয়ে যাবে । বিচে নেমে হতাশ হলাম ।
শহরের নর্দমার পানি বিচ দিয়ে সাগরে নামছে গন্ধে ভরা পানি তারপর ও অজস্র পর্যটক উদোম হয়ে রোদ পোহাচ্ছে কেউ কেউ ছাতির নীচে । বেশীর ভাগই পুরুষ সাথে থাই মেইড আছে একজন করে অনেকের সাথে । সাগরে নামার জন্য রেডি হলাম, কিছু ছবি তুললাম বেশ সুন্দর ছবি আসে । এলাকাটাতে তখনও উন্নয়ন কাজ চলছিল । নতুন নতুন হোটেল ও রিসর্ট হচ্ছিল ।
সাগরে প্যারা গ্লাইডিং, সী স্কিইং, স্পীড বোট ভ্রমন ও দুরের দ্বীপে স্পীড বোটে করে ভ্রমন ইত্যাদি মজার সব ব্যবস্থা আছে । ফেরীওয়ালারা চিংড়ী মাছ ভাজা, চিপস, কোক বিক্রি করছে সুন্দর সুন্দর ভ্যানে ও কার্টূনে, সব মিলিয়ে পর্যটকদের জন্য সময় কাটানোর ব্যবস্থা ভালই সব কিছুই পয়সার বিনিময়ে পাওয়া যায় । অনেকক্ষণ বিচে ছিলাম, শুয়ে বসেও সময় কাটালাম বিকেলের দিকে আর থাকতে ভাল লাগল না । রাতে ব্যাংককে এসে আবার হোটেলে উঠলাম । দিনের বেলা খাওয়া দাওয়া হলো ফাওরাতে ।
আশে পাশের এলাকা ঘুরে দেখা হলো । ফাওরাতে তখন কে এফ সি ছিল না । সুকুমভিত এলাকায় অন্যান্য দোকান পাট ঘুরলাম মোটামুটি নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে উইক এন্ড শেষ হলো।
আমাদের পাশের রুমের পুংসাক এর রুমে একজন মেহমান এসেছে । সে বেশ খুশী আবার লজ্জাও পাচ্ছে ।
আমাদেরকে বলল তার বান্ধবী । দক্ষিণ থাইল্যান্ডের কোন গ্রামে থাকে । সাধারন থাই মেয়ে । লাজুকও । ওর সাথেই একই রুমে থাকছে ।
পুংশাক এর মনে বেশ ফুর্তি, ঘুরতে যায় দু’জন, রাতে নির্জন বাস । আমরা জানতে চাইলাম একে কি বিয়ে করবে ? সে বলল কখনোই না । বান্ধবী স্রেফ বান্ধবী । তাহলে সে থাকছে তোমার সাথে । বলল তার ভাল লাগছে থাকতে আমারও ভাল লাগছে ।
দুজন আনন্দ ফুর্তি করছি তারপর সে চলে যাবে । সহজ সরল জীবন, চিন্তা বিহীন । মেয়েটাও বেশ খুশী । খাচ্ছে দাচ্ছে বেড়াচ্ছে দুজনে আনন্দ করছে ,ভালই নিশ্চিত জীবন । চার পাঁচদিন পর পুংসাক ওকে বাড়ী পৌছানোর জন্য বাসে উঠিয়ে দিয়ে এলো ।
লপবুরির থেপ আমাদেরকে তার জীবনের অনেক গল্পই বলত। থেপ ব্যাচেলার, লপবুরি শহরে একটা কটেজ ভাড়া করে থাকে। সুন্দর বাসা। তার সাথে তার মেইড কাম গার্লফ্রেন্ড আছে একজন মেয়ে । কলেজে পড়ে ।
থেপের এলাকার, ওর সব ধরনের সুখ শান্তি নিশ্চিত করে এই মেয়েটা । একহারা আকর্ষনীয় সরল মেয়ে, বেশ হাসি খুশী । থেপের ঘর বাড়ী গুছিয়ে রাখে বাজার থেকে শুরু করে রান্না বান্না কাপড় কাচা ইস্ত্রি সব এই মেয়েই করে উপরি মাঝে মাঝে ড্রাইভ করে থেপের জন্য, অন্যান্য কাজও করে দেয় । থেপ তাকে থাকতে দিয়েছে । হাত খরচ দেয়, এখানেই কলেজে পড়াশোনা করে ।
অসম্ভব শান্ত, বেশ মিষ্টি করে আস্তে আস্তে কথা বলে । থেপের আদেশ মাথা নত করে পালন করে । এক কথায় স্ত্রীর চেয়েও অনেক অনেক বেশী, থেপ কখনোই একে বিয়ে করবেনা মেয়েটাও জানে একথা থেপও বলে দিয়েছে । যে কদিন সে অবিবাহিত থাকবে এই সব কাজ কর্ম করে দিয়ে ওকে তৃপ্ত রাখবে । এজন্য থাই ছেলেরা বিয়ে তেমন একটা করতে চায়না ।
মেয়ে গুলোর ভাগ্য আসলেই খারাপ । থেপের কাছ থেকে চলে গেলে হয়ত কোন বৃদ্ধ লোকের সাথে সংসার করবে এই মেয়েটা । এদেশে জীবন এভাবেই কেটে যায় । থেপ এর সাথে ওর সম্পর্ক বেশ সাবলিল যে কোন আহবান বেশ আনন্দের সাথে খুশী মনে সাড়া দেয় । প্রতিদিন দেখা হলে মনে হয় বেশ তৃপ্ত ।
থেপও বেশ সুখী, খুশী হলে মাঝে মাঝে উপরি কিছু গিফ্ট বা অন্য কিছু কিনে দেয় । এরা মদ খায় প্রায় নিয়মিত তবে ডিউটির সময় মাতাল অবশ্যই থাকতে পারে না । থেপের জীবন যৌবন এভাবেই কেটে যাচ্ছে অনেকটা চিন্তা বিহীন ও নিরঝনযাট।
এখানে সেলুনে চুল কাটতে ইচ্ছে হলো মহিলা নাপিত ৩০/৩৫ বৎসর এর যুবতী । বসলাম চেয়ারে ।
বলল ওর স¦ামী এখানেই চাকুরী করে মহিলার দুটো বাচ্চা । এখানে দুইটা পর্যন্ত নাপিতের কাজ করে তারপর সংসার গোছায় স¦ামী স্ত্রী এক সাথে থাকে স¦ামীর বেশ প্রশংসা করল বেশ হাসিখুশী মহিলা । সবাই তার সাথে গল্প করছে । সেও হেসে উত্তর দিচ্ছে । ভালই চুল কাটা হলো ।
আমরা চিয়াংমাইতে যাব এক সপ্তাহের জন্য । সকাল বেলা সবাই প্রস্তুত হয়ে রওয়ানা হলাম । ৭০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার পথ । দুই ধারে ফাঁকা জায়গা দেখতে দেখতে এগিয়ে চলছি, ভাল জীপ এসি আছে ১০০ কিলোমিটার এর বেশি গতিতে চলছে । পথে একটা ফিলিং ষ্টেশনে যাত্রা বিরতি।
গাড়ী ওয়াস ও তেল ভরা হলো । ক্যান্টিন আছে ২/৩ টা এই ষ্টেশনে । একটা ক্যান্টিনে ঢুকলাম । এক পরিবার এটা চালায় তিন চারটা মেয়েও মা মিলে কাজ করছে, মেয়েগুলো কিশোরী ও তরুনী । আমাদের সাথের থাইরা ওদের সংগে হাসি তামাসা করছে ।
একজন শিখিয়ে দিল আমি তোমাকে ভালবাসি এটা বলতে। কি বলল কিছু বুঝিনি দেখি মেয়েরা হেসে কুটি কুটি। একজন বলল আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তোমাকে ভাল লাগে, তারপর কি হাসি । ওদের হাসি মুখে রেখেই বিদায় নিয়ে রওয়ানা হলাম।
চিয়াং মাই পৌছাতে পৌছাতে বিকেল হয়ে গেল। আমাদের হোটেল এর নাম ফুকাম, ৫ তারা বিশাল হোটেল । ১৩/১৪ তলা অনেক রুম বিশাল রিসিপশন। চিয়াং মাই শহরটা বেশ সুন্দর এটা থাইল্যান্ডের উত্তরে মাইনরিটি ও মুসলমান প্রধান এলাকা, পাশেই বার্মা । সর্ব উত্তরের প্রদেশ হলো চিয়াংরাই।
শহরের রাস্তা ঘাট ভালও উন্নত এবং এখানেও পর্যটক আসে । নাইট লাইফ বেশ উদ্দাম । এইডস এর প্রকোপ আছে । মসজিদ আছে আজান হয় মুসলিম নামে রাস্তার নামও আছে এখানে। মাঝে মাঝে এখানে বিদ্রোহ হয় তখন নির্মম হাতে নৃশংস ভাবে তা দমন করা হয় ।
অনেক রক্তপাতের ইতিহাস এখানে আছে । এখানে একদিন নাইট বাজারে ঘুরতে গেলাম। ডোনাটের দোকান আছে প্রথম বারের মত খেলাম তেমন স্পেশাল লাগেনি । এখানে একটা রিসোর্ট এ গেলাম । চিয়াংমাই এয়ার পোর্ট দেখলাম ছোট অভ্যন্তরীণ বিমান বন্দর তবে অনেক পর্যটক আসে ও বেশ ব্যস্ত ।
চিয়াংমাই থাইল্যান্ড
এখানে পাহাড়ের উপর একটা রিসোর্টে আমাদের পার্টি হলো । পাহাড়ের কোনে বাঁশের সুন্দর সাজানো রেস্তোরা নীচে বাগান, লেক, ইত্যাদি দিয়ে সাজানো বিশাল এলাকা বাঁশ কাঠের ধাপ বেয়ে বেয়ে উপরে রেস্তোরাতে যেতে হয়, অনেক বিদেশী এখানে আসে । ছেলে ও মেয়ে গাইড তাদের গেষ্ট নিয়ে আসে । গাইড দেরকে আবার ট্রাভেল এজেন্সি নিয়োগ দেয়। বিদেশীরা ১৫/২০ দিনের জন্য গাইড নিয়ে নেয় এবং তাদের সাথেই গাইডের থাকা খাওয়া।
নিজেদের মধ্যে আন্ডারষ্টান্ডিং এর মাধ্যমে তারা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে নেয়। খাওয়া দাওয়া বেশ চমৎকার ছিল । ট্রাডিশনাল থাইফুড ভালই লাগল । খেয়ে আমরা সবাই নীচে কৃত্রিম লেকে বিভিন্ন ধরনের রংগীন মাছ দেখতে গেলাম । ফুলের বাগানে বেশ কিছু ছবিও তোলা হলো ।
খোলা মেলা জায়গা বলে ঘুরতে বেশ ভাল লাগছিল । চিয়াংমাইএর নাইট মার্কেট ও বেশ জম জমাট । চিয়াং মাই লিখা গেঞ্জি ও ব্যাংককের অন্যান্য জিনিষও এখানে পাওয়া যায় দাম প্রায় ব্যাংককের কাছাকাছি , দুই চারটা স্যুভেনির কেনা হলো স¥ৃতি হিসেবে রাখার জন্য । চিয়াং মাইর দিনগুলো শেষের পথে। এখন ফেরার পালা লপবুরিতে ।
সপ্তাহান্তে লববুরির বেশ নামী একটা হোটেলে ডিনার এর ব্যবস্থা হলো । এখানে গায়ক গায়িকারা লাইভ শো বা গান করে । ইচ্ছে করলে যে কেউ ষ্টেজে গিয়ে গান করতে পারে বা সিংগারকে টেবিলে ইনভাইট করতে পারে । তারা হাসি মুখে গেষ্টকে সময় দেয়, গল্প করে । এই পার্টিতে সব থাই ফুড ।
¯কুইব রান্না করে আনল মজাই একটু রাবার টাইপ, চিংড়ী, কাকড়া ইত্যাদিও সুন্দর ভাবে পরিবেশিত হলো । খাবার পর গান শুনলাম ।
থাইল্যান্ডের দিনগুলো শেষের দিকে চলে এসেছে প্রায় এক মাস কাল অবস্থান কালীন টুকটাক জিনিষপত্র দিয়ে ব্যাগ ভর্তি । ব্যাংককে আগের মতই আমাদের হোটেল নিউ রোজ ইন এ উঠলাম দুই দিনের মত থাকব তারপর ফিরতী বিমানে ঢাকা । আবার সেই ডং মুয়াং এয়ার পোর্ট এবার ডিপারচার এর ফর্মালিটিজ সব শেষ করে বিমানে উঠলাম ।
কোরাল আইল্যান্ড ও সাফারি ওয়ার্ল্ডে কিছুক্ষণ - থাইল্যান্ডের স¥ৃতি
সপরিবারে থাইল্যান্ড বেড়ানোর শখ ছিল , ভিসা পেতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। এই ফাঁকে ‘ ফুফেত এয়ার’ এর টিকেট বুকিং দিলাম । প্লেন রাত ৯ টায় ছাড়ার কথা । সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ভেতরে গেলাম। জানতে পারলাম প্লেন আসতে দেরী হবে ।
এই সময় আস্তে আস্তে অন্যান্য সহযাত্রীদের সাথে পরিচয় হলো । আমরা চেক ইন করে ভেতরে গিয়ে বসলাম । প্লেন রাত ১১ টায় এলো । দেরী দেখে নাস্তা দিল এয়ার লাইন কর্তৃপক্ষ । যাত্রীরা বেশ ধৈর্য্যহারা হয়ে উঠল।
স্বভাবতই এত দেরী কার ভাল লাগে । অবশেষে প্লেনে উঠলাম। বেশ বড় প্লেন বোয়িং ৭৪৭। যাত্রী মাত্র ৩০ জনের মত । একসময় আকাশে উড়ল বিমান ।
প্লেন ভ্রমনে ফুকেত এয়ার বেশ আরামদায়ক তবে রাত বলে বাইরের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ২ ঘন্টার ফ্লাইট , ডিনার সার্ভ করল বিমানে। বেশ মজা করে দুজনে খেলাম। টোনাটুনি দুজন, বাচ্চাদের কথা মাঝে মাঝে মনে হয় । তবে এখন মন খারাপ না করাই ভাল মনে করলাম ।
ব্যাংকক এয়ারপোর্ট এ স্থানীয় সময় রাত ২ টার দিকে আমরা অবতরণ করলাম । বাইরে আসতে আসতে ১ ঘন্টার মত লাগল । তখন ৫ টা ফেমিলি ও ২ জন ব্যবসায়ী আমরা এক সাথে হলাম । রাত তখন অনেক তাই বাইরে টেক্সি নেই জনপ্রতি ৩০০ বাথ করে ভাড়ায় ১ টা মাইক্রো নিলাম । সুকুমভিত লেন তিন এ হোটেল রোজ ইন এ গিয়ে পৌঁছালাম ।
রুম পেতে পেতে আরো ৩০ মিনিট লাগল । ভোর হয় হয় সময়ে রুম এ গেলাম । গোসল,এরপর নামাজ । তারপর ঘুমের আয়োজন । পরদিন সকাল ১১ টাতে বের হবো ভাল হোটেল খোজার জন্য।
পরদিন সকালে আমরাই আগে উঠলাম, গোসল করে ব্যাগ গুছিয়ে ফেললাম । নীচে নেমে দেখি কারুর খবর নেই । হাঁটতে বের হলাম । একটু দুরে বাংলাদেশ থেকে আনা ঠিকানা অনুযায়ী সুমনা রেষ্ট হাউজে গেলাম। বেশ সুন্দর পরিবেশ।
সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে রুম বুক করলাম, নীচে এসে জিনিষ পত্র নিয়ে সোজা সুমনার ২ তলার ৫ নং রুম। পরবর্তী ১০ দিন এখানে ছিলাম । ৫৫০ বাথ ভাড়া এখানেও । কিন্তু এখানে সবকিছু পরিস্কার । সুমনাতে এসে একটু ফ্রি হলাম ।
নীচের থেকে খাবার আনলাম , মনিকার মা রান্না করেন । দুজনে খেলাম , এরপর প্লান করছি বাইরে যাব । খাওয়া শেষ করে একটু রেষ্ট। ২ টা পরিবার আমাদের সাথে । দুপুরের পর হাঁটা দিলাম সই-১১তে রবিনসন্্স এর উদ্দেশ্যে ।
মেইন রোডে উঠেই ফুটপাতে অজস্র দোকান দেখলাম। এত দোকান দেখে মহিলারা কেনাকাটি ও জিনিসপত্র দেখতে লেগে গেল । রবিনসন্স আসতে আসতেই পা ধরে গেল অনেকের । বিকেল ৫ টার সময় ম্যাগনোনাল্ডস্্ এ গেলাম । আইসক্রিম খেলাম ২২ বাথ সস্তা ও বেশ মজা ।
এরপর সবাই ধরল আরো বড় মার্কেটে যাবে । বিগ ‘সি’ তে গেলাম সিয়াম সেন্টার এর কাছে । স্কাই ট্রেন ষ্টেশনে এসে টিকেট কিনে ম্যাপ দেখে মার্কেটে গেলাম । মার্কেট এ ঢুকে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ল কেনাকাটির জন্য। একটা জায়গা ঠিক করলাম ।
৭ টায় টাইম দিলাম সবাই যেখানেই থাকি আসব এখানে, এরপর যার যার মত বেরিয়ে গেল সবাই । সন্ধ্যায় সবাই একত্র হতে হতে ৮ টা বেজে গেল । স্কাই ট্রেন এ করে এলাম।
পরের দিন সকালে উঠে নাস্তা সেরে মালেশিয়ার অ্যাম্বেসীতে যাওয়ার জন্য রেডি হলাম । ্েহটে স্কাই ট্রেন ষ্টেশনে এলাম সেখান থেকে অশোক ষ্টেশন ।
এরপর আন্ডার গ্রাউড ট্রেন এ করে মালয়েশিয়া এম্বেসীর কাছাকাছি ষ্টেশনে নামলাম । প্রায় ২ কিলোমিটারের মত হেঁটে অ্যাম্বেসীতে এলাম। আগে বুঝলে এত কষ্ট করতাম না । কড়া রোদ উপায় নেই । সেখানে গিয়ে জানলাম ভিসা হবে না ।
থাই নাগরিক কিংবা থাইল্যান্ডে চাকুরী করলে যাওয়া যাবে। বিশ্রাম নিলাম কিছুক্ষণ। ছবি তুললাম। এরপর আরো ২ কিঃমিঃ হেঁটে নতুন স্কাই ট্রেন এ উঠলাম । বিকালে আর বাইরে যাইনি ।
রাতে পাতাইয়া যাওয়ার প্লান হলো । আমরা রাত ১১ টায় নাইট মার্কেট এ গেলাম । কনসার্ট চলছে নাইট মার্কেটে । কোক খেলাম পরে গেঞ্জি কিনলাম বেশ কি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।