আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাদের মোল্লার ফাঁসি

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। জনাকীর্ণ বিচারকক্ষে আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের একটি নির্দিষ্ট বেঞ্চের পক্ষে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন অপেক্ষমাণ রাখার ৫৭তম দিন গতকাল সরকার ও আসামি পক্ষের দুটি আপিলের রায় ঘোষণা করেন। কাদের মোল্লার সাজা বাড়াতে সরকারের আপিল সর্বসম্মতভাবে মঞ্জুর করেছেন আদালত। একইসঙ্গে খালাস চেয়ে আসামি পক্ষের আপিল খারিজ করা হয়েছে সর্বসম্মতভাবে। হত্যা ও ধর্ষণের একটি ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে।

প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও পঞ্চম অভিযোগে বহাল রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়। তবে প্রমাণিত হওয়ায় চতুর্থ অভিযোগে যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয়েছে; এ অভিযোগ থেকে বিচারিক আদালতে (ট্রাইব্যুনাল) খালাস পেয়েছিলেন কাদের মোল্লা। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে এটি হচ্ছে প্রথম কোনো আপিলের রায়। আরও চারটি আপিল শুনানির অপেক্ষায়। রায় ঘোষণা উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা।

৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল-২। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে সরকার পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ বিচার না হলে অর্থপূর্ণ হতো না স্বাধীনতা। তবে রায় রিভিউর (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে আসামি পক্ষ। পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপির জন্য আবেদন করেছে আসামি পক্ষ। রায় স্থগিতের আবেদন করা হতে পারে আজ।


সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে নির্ধারিত এই বেঞ্চের পাঁচ সদস্য আসন গ্রহণ করেন এজলাসে। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি এস কে সিনহা, বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। ৯টা ৩৮ মিনিটে রায় ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি। পরে এজলাস ত্যাগ করেন বেঞ্চের সদস্যরা। আদালতে সরকার পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান এবং আসামি পক্ষে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ও অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামসহ অন্যান্য আইনজীবী।


সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের রায় : আদালত জানান, আবদুল কাদের মোল্লার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে দুটি আপিল করে সরকার ও আসামি পক্ষ। সরকার আপিল করতে পারবে বলে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত দেন সুপ্রিম কোর্ট। আর সরকারের করা আপিল আবেদনটি মঞ্জুর করা হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে। চতুর্থ অভিযোগে আসামিকে খালাস দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এ বিষয়ে বিচারিক আদালতের ওই আদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ।

একই সঙ্গে কাদের মোল্লার সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া গেছে ওই অভিযোগে। তাই এই অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেন আদালত। ষষ্ঠ অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। তবে আদালতের এই সিদ্ধান্তের (ফাঁসির আদেশ) সঙ্গে পাঁচ সদস্যের চারজন একমত হলেও ভিন্নমত পোষণ করেছেন একজন। আদালত আরও জানান, কাদের মোল্লার করা আপিলটি খারিজ করা হয়েছে সর্বসম্মতভাবে।

প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও পঞ্চম অভিযোগে দণ্ড দেওয়া হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে।

একজন বিচারপতির ভিন্নমত : কাদের মোল্লার আপিল শুনানির জন্য নির্ধারিত পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে ভিন্নমত পোষণ করেছেন একজন বিচারপতি। আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ব্যাপারে অন্য চারজনের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন ওই বিচারপতি। বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে আপিল বিভাগের রায়ে। তবে সংক্ষিপ্ত আদেশে ওই বিচারপতির নাম জানাননি আদালত।


সব অভিযোগ প্রমাণিত : কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে গত বছরের ২৮ মে ছয়টি অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। বিচারিক আদালতে প্রমাণিত হয় পাঁচটি অভিযোগ। এর মধ্যে পঞ্চম ও ষষ্ঠ অভিযোগে যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয় কাদের মোল্লাকে। আর প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিযোগে আসামিকে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। তবে প্রমাণিত না হওয়ায় চতুর্থ অভিযোগ থেকে অভিযুক্তকে অব্যাহতি দেন ট্রাইব্যুনাল।

কিন্তু সব অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও পঞ্চম অভিযোগে বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। তবে চতুর্থ অভিযোগে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আর ষষ্ঠ অভিযোগে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগে বলা হয়, তিনি '৭১ সালের ৫ এপ্রিল ঢাকার মিরপুর বাঙ্লা কলেজের ছাত্র পল্লবকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, '৭১ সালের ২৭ মার্চ কাদের মোল্লা তার সহযোগীদের নিয়ে কবি মেহেরুন্নেসা, তার মা এবং দুই ভাইকে হত্যা করেন। তৃতীয় অভিযোগ হচ্ছে, '৭১ সালের ২৯ মার্চ সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে ঢাকার আরামবাগ থেকে ধরে নিয়ে কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা জবাই করে হত্যা করেন। চতুর্থ অভিযোগে, '৭১ সালের ২৫ নভেম্বর কাদের মোল্লা তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর সদস্যসহ পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে ভাওয়াল খানবাড়ি ও ঘাটারচর (শহীদনগর) এবং পাশের দুটি গ্রামে যান। সেখানে কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা হামলা চালিয়ে অনেক নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা করেন। পঞ্চম অভিযোগ অনুসারে, '৭১ সালের ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনা ও অবাঙালি রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে কাদের মোল্লা মিরপুরের আলোকদী গ্রামে হামলা চালান।

এতে ৩৪৪ জনের বেশি মানুষ নিহত হন। ষষ্ঠ অভিযোগ অনুযায়ী, '৭১ সালের ২৬ মার্চ কাদের মোল্লা, তার সহযোগী ও পাকিস্তানি সেনারা মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে হযরত আলী লস্করের বাসায় যান। সেখানে কাদের মোল্লার নির্দেশে হযরত আলী, তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যা করা হয়। ধর্ষণ করা হয় এক মেয়েকে।

ট্রাইব্যুনাল থেকে আপিল বিভাগ : মোট ৩৯ কার্যদিবস লেগেছে কাদের মোল্লার আপিলের শুনানিতে।

প্রথমে সরকার পক্ষ ও পরে অনুষ্ঠিত হয় আসামি পক্ষের করা আপিলের শুনানি। এর মধ্যে ১ থেকে ২৯ এপ্রিল, ৬ থেকে ২০ জুন এবং ২৩ জুলাই পর্যন্ত মোট ১৫ কার্যদিবসে সরকার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। অন্যদিকে ২৯ এপ্রিল থেকে ৬ জুন এবং ২৩ জুলাই পর্যন্ত ১৯ কার্যদিবসে আসামি পক্ষে শুনানি করেন কাদের মোল্লার আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। এ ছাড়া সাতজন অ্যামিকাস কিউরির বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। সরকার পক্ষে শুনানিতে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-২-এ দেওয়া সাক্ষীদের সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়ার বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তার সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা, ট্রাইব্যুনালের রায় পাঠ, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ সংশোধনী বিষয়ে বক্তব্য এবং আসামি পক্ষের যুক্তির জবাব দেওয়া হয়।

অন্যদিকে আসামি পক্ষ কাদের মোল্লাকে খালাস দেওয়ার পক্ষে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন এবং সরকার পক্ষের যুক্তির জবাব দেয়। এর আগে ১০ মার্চ প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের বেঞ্চ শুনানির জন্য ৩১ মার্চ দিন ধার্য করেন। তবে ওই দিন আপিল বিভাগের নতুন বিচারপতিদের শপথ গ্রহণ ও সংবর্ধনার জন্য এ মামলার শুনানি ১ এপ্রিল শুরু হয়। পরে একজন বিচারপতি অবসরে চলে যাওয়ায় পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ করেন। এর আগে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কাদের মোল্লাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন মোজাফফর আহমদ খান।

এতে একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফাকে হত্যার অভিযোগ আনা হয় কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। ২০০৮ সালে ঢাকার পল্লবী থানায় কাদের মোল্লাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয় আরও একটি। ওই মামলার অভিযোগে ২০১০ সালের ১৩ জুলাই গ্রেফতার করা হয় তাকে। একই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেখানো হয় কাদের মোল্লাকে। অভিযোগের তদন্ত শুরু হয় ২০১০ সালের ২১ জুলাই।

২০১১ সালের ১ নভেম্বর দাখিল করা হয় তদন্ত প্রতিবেদন। এতে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ ও অগি্নসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয় কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। বিচার শুরু হয় গত বছরের ২৮ মে।

রায় কার্যকরের পথ : আপিল বিভাগের সংক্ষিপ্ত আদেশ পেয়ে কারাগারে মৃত্যু পরোয়ানা পাঠাবেন ট্রাইব্যুনাল। মৃত্যু পরোয়ানার বিষয়টি আসামিকে জানাবে কারা কর্তৃপক্ষ।

চাইলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন করতে পারবেন আসামি। ক্ষমা চাইলে আসামির ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করতে হবে কারা কর্তৃপক্ষকে। ক্ষমা না চাইলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কারাবিধি অনুযায়ী। কারাবিধির ৯৯১(৬) উপবিধিতে বলা হয়েছে, রায় কার্যকর করা যাবে না মৃত্যু পরোয়ানা পাওয়ার ২১ দিনের মধ্যে। ২১ থেকে ২৮তম দিনের মধ্যে কার্যকর করতে হবে রায়।

এ ছাড়া চাইলে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করতে হবে।

এই সেই কসাই কাদের : আবদুল কাদের মোল্লার জন্ম ১৯৪৮ সালে ফরিদপুরে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। '৭১ সালে তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে ফরিদপুর-৪ আসনে সংসদ নির্বাচন করে পরাজিত হন ১৯৮৬ ও '৯৬ সালে। ১৯৭১ সালে নৃশংসতার জন্য একসময় তিনি ঢাকার মিরপুর এলাকায় পরিচিত ছিলেন জল্লাদ বা কসাই কাদের নামে। মিরপুরের আলোকদী গ্রামে তার উপস্থিতিতে গুলি করে হত্যা করা হয় অন্তত ৩৪৪ জনকে। '৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে '৭২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মিরপুর, রায়েরবাজার, কেরানীগঞ্জ, সাভারসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে নৃশংসতা চালিয়েছেন তিনি। ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে বিহারি ও অবাঙালিদের নিয়ে বাঙালি নিধনে নেতৃত্ব দেন কাদের মোল্লা।

বিশেষ করে মিরপুর ও মোহাম্মদপুর ছিল তার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা। মিরপুর ছাড়াও শিয়ালবাড়ী ও রূপনগরে তার প্রত্যক্ষ মদদে মাটিচাপা দেওয়া হয় অনেককে। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া যাবজ্জীবন দণ্ডের জবাবে তিনি ইংরেজিতে বিজয় চিহ্ন 'ভি' প্রদর্শন করেন ৫ ফেব্রুয়ারি।

অন্য আপিলের কী অবস্থা : সুপ্রিম কোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের আরও চারটি মামলার আপিল। তা হলো ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও সাবেক আমির গোলাম আযমের ব্যাপারে করা আপিল।

সাঈদী ও গোলাম আযমের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে সরকার ও আসামি পক্ষ। প্রমাণিত হওয়ার পরেও যেসব অভিযোগে সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল কোনো দণ্ড দেননি সেসব অভিযোগেও তার সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আপিল করে সরকার। তবে কামারুজ্জামান ও মুজাহিদের রায়ের বিরুদ্ধে আসামি পক্ষ আপিল করলেও সরকার পক্ষ করেনি।

প্রতিক্রিয়া নেই বিএনপির : বরাবরের মতো এবারও মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই জামায়াতের রাজনৈতিক মিত্র প্রধান বিরোধী দল বিএনপির। গতকাল আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধে আগের করা রায়ের আপিলে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ দেন।

 

রায়ের পর সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন আসামির প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা দলের পক্ষ থেকে সেখানে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, 'এ রায়ের বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত কোনো মন্তব্য নেই। দলের বক্তব্য পরে জানানো হবে।


দ্রুত কার্যকর করার সুপারিশ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির : আদালত আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ প্রদান করায় স্বস্তি প্রকাশ করে এ রায় দ্রুত কার্যকর করার ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। জাতীয় সংসদ ভবনে গতকাল অনুষ্ঠিত আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। কমিটির সভাপতি মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।  
গণজাগরণ মঞ্চের আনন্দ সমাবেশ : একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের পুনঃবিচারে শেষ পর্যন্ত ফাঁসির রায় পেলেন জামায়াতে ইসলামের নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা। আর এ রায়ে আনন্দ সমাবেশ ও মিছিল করেছে গণজাগরণ মঞ্চ।

গতকাল 'কসাই' খ্যাত কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় ঘোষণার পর পুরো শাহবাগ এলাকা আনন্দ সমাবেশে রূপ নেয়। সেখানে জড়ো হয় ছাত্র-জনতাসহ সব শ্রেণীর মানুষ। সকালের দিকে বৃষ্টি থাকলেও তা উপেক্ষা করে লোকজনের আগমন শুরু হয়।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.