সরকারের শেষ দিন পর্যন্ত সংলাপ ও সমঝোতার দুয়ার খোলা রাখার পাশাপাশি দাবি আদায়ে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি নিতে যাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে আগামী ২৭ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত টানা পাঁচদিন হরতালের প্রাথমিক ছক তৈরি করা হচ্ছে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি মানতে মহাজোট সরকারকে বাধ্য করতে পর্যায়ক্রমে হরতাল অবরোধের পর অসহযোগের মতো কঠিন কঠোর কর্মসূচির দিকে এগোচ্ছে বিএনপি। ১৮ দলের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য দলগুলোও সেই আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার কাছে। এমনকি জোটের বাইরের অনেক রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গও সম্ভাব্য কর্মসূচির প্রতি আগাম সমর্থন দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির আশা এখনো না ছাড়লেও সরকার পতনের লক্ষ্যে চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচির প্রাথমিক ছক তৈরির কাজও শেষ করে এনেছে বিএনপি। সে অনুযায়ী আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত টানা পাঁচ দিনের হরতাল কর্মসূচির মাধ্যমে শুরু হবে সরকার বিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলন। ১ ও ২ নভেম্বর বিরতি দিয়ে শুরু করা হবে সারা দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বাত্দক অবরোধ কর্মসূচি। পর্যায়ক্রমে সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ঘেরাও কর্মসূচি শেষে রাজধানী ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচির মাধ্যমেই শুরু হবে অসহযোগ। তখন অনির্দিষ্টকালের হরতাল কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি সরকারকে সব ধরনের অসহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হবে জনগণের প্রতি। এ কর্মসূচির আওতায় সরকারের মন্ত্রীদের ঢাকায় অবরুদ্ধ করার ঘোষণাও দেওয়া হতে পারে। বিএনপির সূত্রগুলো জানায়, সব ধরনের মামলা-হামলা কবুল করেই এবার মাঠে নামবে বিরোধী দল। দলের সিনিয়র নেতাদের মতে, অক্টোবরের চূড়ান্ত আন্দোলনে এমন সব ব্যক্তিবর্গ সমর্থন দিতে যাচ্ছেন- যা কল্পনাও করতে পারছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব। রাজনীতিতে নতুন চমক নিয়ে আসতে পারে আগামী ঘটনাবলী।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আগামী কর্মসূচি সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকেই বিরোধী দল চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সংবিধানের দোহাই দিয়ে একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা করলে জনরোষের কবলে পড়ে তাদের পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। তাদের একগুঁয়েমি অবস্থান এবং ক্ষমতার অতিলোভ দেশকে ক্রমেই সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতা ধরে রাখতে তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায়। আওয়ামী লীগ যত কূটকৌশলই গ্রহণ করুক না কেন, দলীয় সরকারের অধীনে পাতানো নির্বাচনের চেষ্টা জনগণ সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীকে জোট ছাড়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যে চাপ প্রয়োগ বা টোপ দেওয়া হয়েছিল- তাতে এখনো কোনো ইতিবাচক সাড়া পায়নি সরকার। সরকারের কোনো ফাঁদেই জামায়াত পা না দেওয়ার ফলে সরকারের 'মোল্লা থেরাপি'ও কোনো কাজ করছে না। তিনি জানান, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অক্টোবরের আন্দোলনে সর্বাত্দক অংশগ্রহণের ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছে। প্রয়োজনে তারা জোটের কর্মসূচির পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও কর্মসূচি দিতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অপরিহার্য। এই গণদাবি মানার আগে সরকারের পাতানো কোনো ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি। এমনকি রাষ্ট্রপতি কিংবা স্পিকারের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তাব দিলেও তা মেনে নেওয়া হবে না। কারণ রাষ্ট্রপতি এবং স্পিকার দুজনই আওয়ামী লীগ মনোনীত। আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি 'লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড'। এ জন্য আমরা সরকারের শেষ দিন পর্যন্তও সংলাপ ও সমঝোতার জন্য অপেক্ষা করব। কিন্তু শেষ পর্যন্তও যদি সরকার দেশবাসীর এই দাবি মেনে না নেয়, তাহলে ঈদের পর ঢাকায় যে বিভাগীয় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে সেখান থেকেই আমাদের নেত্রী চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দেবেন। আর এতে উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতির জন্যই সব দায় নিতে হবে সরকারকেই।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিতে। কিন্তু বিএনপি কোনো ভুল করবে না। তিনি জানান, বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব ইতোমধ্যেই সরকার দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেগুলো আমাদের কাছে কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এবার হয়তো শেষ চেষ্টা করবে দল ভাঙার, জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার, কিংবা জাতীয় পার্টিকে দিয়ে কিছু করানোর। কিন্তু তেমন কোনো রেজাল্টও হয়তো তারা পাবে না। বিএনপির এই নীতি-নির্ধারক আরও বলেন, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিএনপি কোনো ধরনের প্রতিহিংসা-নৈরাজ্যে বিশ্বাস করে না। এজন্য আমরা সরকারকে শেষ পর্যন্ত সময় দিতে চাই। চেয়ারপারসনের বিভাগীয় শহরে সমাবেশ চলছে। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর খুলনায় এই সমাবেশ। ঈদের পর সর্বশেষ ঢাকার সমাবেশ থেকে আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বেগম খালেদা জিয়া।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।