আমি স্বপ্ন দেখি একদিন বাংলাদেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে
অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম, এটা নিয়ে লেখা ঠিক হবে কি না। কিন্তু আজ লিখতে বসে গেলাম। বলা যায় একটি হাতির বিরুদ্ধে এ এক মশার প্রতিবাদ। শুরুতেই বলে রাখি, এই লেখাটা পড়ে যারা আমার জ্ঞান-বুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চান, তারা জেনে রাখুন, ও দুটোই আমার বড্ড কম।
যা হোক, হকিং যা বলেছেন তা সংক্ষেপে হলো, পরকাল বলে কিছু নেই, যারা অন্ধকারকে ভয় পায়, এটা তাদের বানানো রূপকথা।
তিনি আরো বলেছেন, মস্তিষ্ক কম্পিউটারের মতোই মনের একটি কর্মসূচি (প্রোগাম), তাই তাত্ত্বিকভাবে কম্পিউটারে মস্তিষ্কের প্রতিলিপি তৈরি করা সম্ভব, আর এভাবে মৃত্যুর পরেও একটি জীবনকে ধরে রাখা যায়।
link: Click This Link
পরকাল নিয়ে আমার দীর্ঘদিন-লালিত ধারণা (যা এতকাল আমার স্ত্রী ও বুয়েটের রুমমেটরা ছাড়া কাউকে ফলাও করে বলিনি), মানুষের মৃত্যুর পর তার শরীর নিয়ে আল্লাহ বা ফেরেশতাদের কোন মাথাব্যথা নেই। শরীর একটি হার্ডওয়্যার, যাকে চালায় মন বা মস্তিষ্ক। কাজেই ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দ সব কিছুর কৃতিত্ব বা দোষ একমাত্র অপারেটিং সিস্টেম বা মনের। হকিং এর মতো আমিও মনে করি মন অবিনশ্বর, কারণ তার কোন ভৌত অস্তিত্ব নেই।
মনকে ধরা-ছোঁয়া যায় না; অনুভব করা যায় না, অনুধাবন করা যায়। মনের কোন ভৌত বা রাসায়নিক ধর্ম নেই। সফটওয়্যারেরও তাই।
১৯৯৬ সালে আমি প্রথম কম্পিউটার নামক যন্ত্রটির সাথে পরিচিত হই। Word Perfect 5.0, MS Word ও Paranoid Games – এর মধ্যে আমার কম্পিউটার সাক্ষরতা সীমাবদ্ধ ছিল।
১৯৯৯ সালে বুয়েটে ভর্তি হবার সুযোগ পাবার পুরষ্কার হিসেবে বাবার কাছ থেকে একটি Pentium-2 ডেস্কটপ কম্পিউটার আদায় করেছিলাম। সে ইতিহাস অপ্রাসঙ্গিক; তবে এর সাথে আমার মতবাদের যোগসূত্র আছে বলেই উল্লেখ করলাম। সেই তখন থেকে বিভিন্ন ধরনের গেমস খেলতে খেলতে আমি অনুধাবন করলাম, আমাদের জীবনটা একটা প্রোগ্রাম করা গেমস-এর মতো। এখানে কিছু বিষয় পূর্বনির্ধারিত এবং অপরিবর্তনীয়। কিছু বিষয় customize করা যায়।
আর কিছু বিষয় নির্ভর করে পরিস্থিতি ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধা্ন্তের ওপর। আমি অনেককেই এটি বলেছি যে, জীবনে কে কী করবে তার কিছু পরিসীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে, তবু প্রত্যেকেরই স্বাধীনতা আছে কিছু কাজ করার বা না করার। কাজেই যা কিছু হয়, তার সব আল্লাহর ইচ্ছায় হয়, এটি আমি পুরোপুরি সমর্থন করি না। গেমসগুলোয় কখন কোন লেভেলে কী কী ঘটবে, তার কিছু অংশ আগেই প্রোগ্রাম করা থাকে। কিন্তু একজন প্লেয়ার কোন লেভেল পর্যন্ত যাবেন, কত স্কোর করবেন ইত্যাদি নির্ভর করে তাঁর পারফর্ম্যান্স-এর ওপর ।
জীবনের আলোচনায় ইতি টেনে আসি মূল কথায়, তথা পরকাল প্রসঙ্গে। মানুষ মারা যাবার পর তার শরীরটিকে এক কালে মমি করা রাখা হতো। কেন হতো, আমরা জানি। বর্তমানে কোনো কোনো ধর্মে শরীরকে সমাধিস্থ করা হয়, কোনো কোনো ধর্মে পুড়িয়ে ভষ্ম করা হয়। অনেকেই রেখে দেন হিমঘরে।
কিন্তু এই শরীরটির ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে আমার আলোচনা নয়। মূল প্রশ্ন, মৃত্যুর পর মানুষটি যায় কোথায়? মানুষটি যেহেতু শুধু শরীর নয়, বা শুধু আত্মা নয়, কাজেই একজন আস্তিক হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, শরীরের যে পরিণতিই হোক না কেন, আত্মাটি রয়ে যায় কোথাও না কোথাও। ধর্মে কী বলা আছে, তা সবাই জানেন, (কেউ মানেন, কেউ মানেন না)। আমি বিশ্বাস করি আত্মাটি বিলীন হয়ে যায় না।
জন্মের আগে আত্মা কোথায় ছিল? সব আত্মাই ছিল " আলমে আরওয়াহ"-তে।
আত্মা এক অবিনশ্বর শক্তি। কাজেই মৃত্যুর পর তা শূন্যে মিলিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। অনেকটা কম্পিউটারে Shift+delete করলে যেমন ফাইল/ডেটা চিরতরে গায়েব হয়ে যায়, আমার এই কথার সাথে যারা একমত, এবার তারা বলুন, হারিয়ে যাওয়া ডেটা পুনরুদ্ধার করা অসম্ভব কি না? IT বিশেষজ্ঞরা জানেন, সেটি সম্ভব। অন্তত কিছুটা হলেও (নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে) তো সম্ভব । কীভাবে সম্ভব? তার মানে ওটা কোথাও না কোথাও ছিল…।
তাহলে বলুন, বিলীন হয়ে যাওয়া আত্মার পক্ষে কোথাও না কোথাও সংরক্ষিত থাকা খুব কি অসম্ভব?
কবরে আযাবের যে বর্ণনা আমাদের ধর্মে আছে, অনেকেই তা উড়িয়ে দেন এই বলে যে, কেউ যদি প্লেন ক্র্যাশে বা জাহাজডুবিতে মারা যায়, তাহলে তার কবর কোথায়, আর আযাবটাই বা হবে কোথায়? আমার ধারণা, শরীরটি কোথায় আছে তা মূখ্য নয়। আত্মাটি যেখানে সংরক্ষিত থাকে, সেখানেই পৌঁছে যান মুনকার-নাকীর নামের সেই কবরের ফেরেশতা, শুরু হয় সওয়াল জবাব। প্রশ্ন আগে থেকেই ফাঁস হয়ে আছে, তবু নাকি ‘ভাল ছাত্র’ ছাড়া কেউ এই পরীক্ষায় পাশ করে না। পরীক্ষায় পাশ না করার ফলাফল: ভয়ংকর আযাব। আমার মতে, এই আযাব ঘটে Virtually, একমাত্র আত্মা এটি অনুভব করে।
(আমরা যারা স্বপ্নের ভেতর পানিতে ডুবেছি, বা মার খেয়েছি, তারা জানি, বাস্তবে মার না খেলেও ব্যথা একই রকম অনুভূত হয়। কিছুদিন আগে আমি স্বপ্নে দেখছিলাম আমি পানির গভীরে ডুবে যাচ্ছি; এবং অনেক দীর্ঘসময় আমি শ্বাসকষ্ট অনুভব করছিলাম। ) স্বপ্ন বিষয়টি একটি ভারচুয়াল রিয়েলিটি। পরকালও আমার কাছে তাই।
শেষ বিচারের দিন কী ঘটবে তা সব ধর্মেই বিস্তারিত বলা আছে।
আমাদের ধর্মে আছে, সূর্য মাথার ওপর নেমে আসবে, সবাইকে পুনরুত্থিত করা হবে, কারো গায়ে কাপড় থাকবে না, কেউ কাউকে চিনতে পারবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা যারা অ্যানিমেটেড মুভি দেখি, তারা জানি অবাস্তব বস্তুকে কতটা বাস্তব করে সৃষ্টি করা যায়। কাজেই একজন মানুষ তার মৃত্যুর পর যদি দেখেন, তার কবরে (কবর বলতে আমি সেই স্থানকে বুঝাচ্ছি না যেখানে তার শরীর রাখা আছে; বরং যেখানে তার আত্মাকে রাখা হয়েছে সেটি তার জন্যে কবর) সওয়াল-জবাব হচ্ছে, তার কিছু বছর পর ইস্রাফিল শিঙ্গায় ফুঁ দিলেন, তারপর তার বিচারকার্য শুরু হলো এবং জীবনকালে তার কৃতকর্ম অনুযায়ী বিচার করে তাকে জান্নাত বা জাহান্নামে পাঠানো হলো – সেটা কি খুব অসম্ভব? এই ঘটনাগুলি বাস্তবেই ঘটতে হবে কেন? এটি যদি মৃত ব্যাক্তির মনের ভেতর ঘটে, তাহলে সমস্যা কী?
পৃথিবীতে যখন টেলিভিশন ছিল না, তখন মানুষ ভাবতে পারেনি একই ব্যক্তিকে একাধিক স্থান থেকে দেখা সম্ভব। যখন ইন্টারনেট আসেনি, তখন মানুষ কল্পনা করতে পারেনি কত দ্রুত দূরতম স্থানে বার্তা পাঠানো সম্ভব। একটি ঘটনা দ্বিতীয়বার দেখা যায়, এমনটা এক সময় কেউ ভাবতে পারকতো না।
তখন মানুষের বিশ্বাস করতে কষ্ট হতো, সে জীবনে যা কিছু করেছে, শেষ-বিচারের দিনে তাকে সব দেখানো হবে। এখন আমরা কথায় কথায় মোবাইলের ক্যামেরায় ভিডিও করি, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফেসবুকে আপলোড করে দুনিয়াকে জানিয়ে দিই; এখন তো আমরা বিশ্বাস করতেই পারি যে, আমরা জীবনে যা করছি, প্রত্যেকের একটি বিশেষ একাউন্টে তার ফুটেজ save হয়ে যাচ্ছে। এবং কেয়ামতের দিন তা বিশাল প্রজেক্টরে দেখানো সম্ভব।
স্বর্গ-নরক বলুন আর জান্নাত-জাহান্নাম বলুন, সব ধর্মে মৃত্যুর পর দুই ধরনের জীবনের কথা বলা আছে। একটি পরম শান্তির, অপরটি চরম শাস্তির।
আমি সব ধর্মের গ্রন্থ পড়িনি। আমার জ্ঞান আমার ধর্মের ভেতর সীমিত। সেই সীমিত জ্ঞানে বলতে পারি, সেই যে শীতল বায়ুপ্রবাহ, স্বর্ণের ইট দিয়ে তৈরি গৃহ, বিশালাকার ছায়াদার বৃক্ষ অথবা জমিনের তলদেশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সোতস্বিনীর যে লোভনীয় বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা তৎকালীন উষ্ণ আরব দেশীয় লোকেদের পরম কাম্য বস্তুগুলোর মধ্যে অন্যতম বলেই দেওয়া হয়েছে। ইসলাম ধর্ম যদি আরবে অবতীর্ণ না হয়ে ভারতবর্ষে বা ইউরোপে অবতীর্ণ হতো, বেহেস্তের বর্ণনা অন্যরকম হতো। মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই ভোগবিলাসী, আর তাইতো পুরুষদের জন্যে অল্পবয়স্কা সেবাদাসীর প্রলোভন…।
“যে যা ইচ্ছে খাবার খেতে পারবে” এই bottomless offer আজকাল তো অনেক রেস্টুরেন্টই দিচ্ছে, সেই আমলে এটা ছিল কল্পনাতীত, আর হয়তো তাই তা চলে এসেছে জান্নাতের বর্ণনায়…। জাহান্নামের বর্ণনায় তেমনি উঠে এসেছে বিশালাকার সাপের দংশন আর অন্তহীন আগুনের লেলিহান শিখার ভীতিসঞ্চারক বিবরণ।
আমার বক্তব্য হলো, স্টিফেন হকিং এর মতো যাঁরা ভাবছেন, এসব আসলে কিছুই exist করে না, তারা ভুল বলছেন না, আবার ঠিকও বলছেন না। আমি মনে করি, আসলেই এসবের কোন existence নেই বাস্তব জগতে। সৃষ্টিকর্তা সব বানিয়ে রেখেছেন এক ভার্চুয়াল জগতে।
যারা “হ্যারি পটার” এর সিনেমাগুলো দেখেছেন, তারা জানেন বাস্তব জগত থেকে অবাস্তব জগতে পৌঁছানোটা আর কল্পনাতীত নয়।
শেষ করি, আল-কোরআনের একটি বাণী দিয়ে, যার মর্মার্থ হলো, আল্লাহ এমন অনেক কিছু ঘটান যা আমাদের ক্ষুদ্র বুদ্ধি দিয়ে আমরা অনুধাবনও করতে পারি না। কাজেই ধর্মে বর্ণিত সবকিছুকে Physics, Chemistry বা Philosophy-র এ যাবৎকালের আবিষ্কৃত তত্ত্ব দিয়ে বিচার করতে যাওয়াটা জ্ঞানীর লক্ষণ নয়।
- কাজী মিতুল
22.9.2013
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।