আমরা বার বার সংলাপের কথা বলছি। সংবিধানের আড়ালে এ সরকার বেশি দিন লুকিয়ে থাকতে পারবে না। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা না হয় তাহলে উনাদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন হবে। সংবিধান সংশোধন যদি এতই কষ্টকর হয় তাহলে ইস্যুটা গণভোটে দিন। বর্তমান সাংবিধানিক ব্যবস্থায় ১৮ দলীয় জোট নির্বাচনে যাবে না।
আর এ জন্য সংঘাত-সহিংসতা হলে তার পূর্ণ দায়ভার বর্তমান সরকারের। উনারা যতই ভাবুক বিএনপি দুর্বল, জনসাধারণ কিন্তু দুর্বল নয়। এটা এখন জনদাবি হয়ে গেছে। সরকার বুঝতে না পারলে মারাত্দক ভুল করবে। সোমবার এসএ টিভির টকশো 'লেট এডিশন'-এ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক মন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক এ কথা বলেন।
নঈম নিজামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। ওসমান ফারুক বলেন, তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া বিএনপি বলছে নির্বাচনে যাব না, জাতীয় পার্টি বলছে নির্বাচনে যাব না, ৯০ ভাগ জনগণ বলছে এ নির্বাচন গ্রহণ করব না, সুশীল সমাজ থেকে বিদেশি সংবাদপত্রগুলোও বলছে এটা ন্যায্য দাবি; সেখানে সরকার সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে। আরে ভাই, সংবিধান তো মানুষের জন্য। সংবিধানের জন্য মানুষ নয়। কাজেই সংবিধান সংশোধন করা যাবে না, এটা কোনো কথা নয়।
অতীতে বাকশাল করার সময় যেভাবে সংবিধান সংশোধন করেছেন এটা তো তাদের কাছে কোনো কঠিন কাজ নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তার উপদেষ্টারা এখনো কেন বুঝছেন না যে এ দেশের আপামর জনসাধারণ একটা দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইছে? নির্বাচন কোনো দলের দিকে গেল তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। নির্বাচনের সময় দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ কি আইজি সাহেব শুনবেন না? প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ কি চিফ সেক্রেটারি শুনবেন না?
ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের এক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে যদি বিশ্বাসের জায়গা না থাকে সেখানে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। '৯০-এর দশকে যে কারণে তত্ত্বাবধায়ক হয়েছিল আজও সেই কারণগুলো বিদ্যমান। বরং সংকট আরও প্রকট হয়েছে।
আপনি ভারতের সঙ্গে, ওয়েস্ট মিনিস্টারের সঙ্গে তুলনা করছেন। আমাকে দেখান সেখানে প্রশাসন বা পুলিশ বিভাগে কতটুকু দলীয়করণ হয়েছে। সেখানে বিরোধী দলের কতজনকে ডান্ডাবেড়ি দিয়ে নিয়ে গেছে? এ দেশে প্রথমবারের মতো বিরোধী দলের মহাসচিবকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। ওয়েস্ট মিনিস্টার সিস্টেমে কোনো সংবিধান নেই। আপনার কি সংবিধান নেই? আপনি তো লিখছেন আর ছিঁড়ছেন।
কাজেই আজকে যে রাজনৈতিক পরিবেশ আর সংস্কৃতি রয়েছে তাতে তত্ত্বাবধায়ক বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির জয়লাভ প্রসঙ্গে সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাবে ড. ওসমান ফারুক বলেন, আপেলের সঙ্গে কমলার তুলনা করে লাভ নেই।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলো স্থানীয় একটা পরিবর্তন। জাতীয় নির্বাচন দেশের শাসনযন্ত্রের পরিবর্তন। আমাদের সময়ও তো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমরা অনেক জায়গায় হেরে গিয়েছিলাম।
এর পরও তো তত্ত্বাবধায়ক দিয়েছিলাম। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করব, প্রশাসন নির্দলীয় করব_ এগুলো তাত্তি্বক কথা। মূল সমস্যা হলো রাজনৈতিক নেতৃত্ব সরকারে থাকলে এ দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। এই সন্দেহ তো আওয়ামী লীগও করেছে। বিচারপতি কে এম হাসান বিএনপির দুই টাকারও সদস্য ছিলেন না।
এর পরও বলা হয়েছে তিনি দলীয়।
সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাবে এই বিএনপি নেতা বলেন, রাজনীতিতে শ্রদ্ধাবোধ থাকবে কীভাবে? মন্ত্রীরা কীভাবে কথা বলে শুনেছেন? প্রধানমন্ত্রী যতটা শক্ত না বলেন কিছু মন্ত্রী তার চেয়েও বেশি বলেন। আজকে সন্ধ্যায় টেলিভিশনে শুনলাম এভাবেই নির্বাচন হবে... এভাবেই নির্বাচন হবে... এভাবেই নির্বাচন হবে। এতে কি সংলাপের কোনো পরিবেশ আছে? দুই দিন আগেও এক মন্ত্রী বললেন বিএনপির রাস্তায় দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। বিএনপি রাস্তায় এসে গাড়ি পোড়ালে বলবেন দুষ্কৃতকারী, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করলে বলবেন কোনো ক্ষমতা নেই।
এগুলো তো উসকানিমূলক বক্তব্য। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বলিষ্ঠ একটা রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নিয়েছেন। সেখান থেকে উনি যদি রাজনৈতিক বাস্তবতা না বোঝেন তাহলে জাতির জন্য দুর্ভাগ্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।