১৩ সেপ্টেম্বর, ২৯ ভাদ্র শুক্রবার। শরতের স্নিগ্ধ অপরাহ্নে আমরা জনাচলি্লশেক মুক্তিযোদ্ধা জড়ো হয়েছিলাম মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মুক্তিযোদ্ধা আক্কু চৌধুরীর গুলশানের অফিস আঙিনায়। সঙ্গে কয়েকজন শহীদ পরিবারের সদস্যও ছিলেন। একটি তিনতলা দালানের ছোট ছাদের উন্মুক্ত আঙ্গিনা। ছাদের একাংশের চারদিকে স্বচ্ছ কাচঘেরা সাজানো-গোছানো পরিপাটি ছোট্ট অফিস।
ছাদের অপর প্রান্তে চারপাশ খোলা একটা ছোট চালার নিচে জনাতিরিশেক মানুষের বসার জায়গা আছে। ছাদের মাঝখানটা পুরোপুরি খোলা নীল আকাশের নিচে। শরতের বৈকালিক নাতিশীতোষ্ণতার একান্ত পরশে সবাই ছিলেন উজ্জীবিত ও প্রাণপূর্ণ। ভাদ্র-আশ্বিনের ভ্যাপসা গরমের কথা কারও মনে আসেনি। সব মিলে এক আবেগঘন মনোমুঙ্কর পরিবেশে একাত্তরের কিছু বীর সেনানী একত্রে বসেছেন।
উদ্দেশ্য, মুক্তিযুদ্ধের শত সহস্র অজানা কাহিনীর মধ্যে সদ্য উদঘাটিত একটি হৃদয়স্পর্শী ও রোমাঞ্চকর কাহিনী এই নিরিবিলি পরিবেশে বসে শোনা। কাহিনী শোনাবেন একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা, যিনি স্বাধীনতার ৪২ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বীরত্বের স্বীকৃতি পেলেন আরেক মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল সাজ্জাদ আলী জহির (অব.) বীর প্রতীকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়।
ছোট ঘরোয়া অনুষ্ঠান। কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই, সবাই আমরা এসেছি কর্নেল সাজ্জাদ আলী জহিরের টেলিফোনে। খোলা ছাদের নিচে সবাই বসার পর আনুষ্ঠান শুরু হলো বিকাল ৪টায়।
ঘরোয়া পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কোনো মাইক্রোফোনের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। শুরুতে কর্নেল সাজ্জাদ এই নারী মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় এবং তাকে তিনি কীভাবে খুঁজে পেলেন তার একটি হৃদয়গ্রাহী সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিলেন। অসামান্য মেধাবী এই অফিসার কর্নেল সাজ্জাদ আলী জহির একাত্তরের যুদ্ধক্ষেত্রে কয়েকবার মৃত্যুর মুখে অসীম বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য বীর প্রতীক খেতাব পান। সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যেতে হয় অকালীন অল্প বয়সে, আশির দশকের শুরুতে। অবসরের পর অন্যদের মতো গতানুগতিক পথে না গিয়ে তিনি নিজ উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের ওপর গবেষণা করার জন্য গড়ে তোলেন গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান 'শুধুই মুক্তিযুদ্ধ'।
এ পর্যন্ত তিনি মুক্তিযুদ্ধের ওপর ৩০টি বই লিখেছেন। এখনো বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের অজানা কাহিনী উদ্ধার করে তা তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য। ২০১২ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বাধীনতা পদক।
কর্নেল সাজ্জাদ জানালেন, তিনি বছর দেড়েক আগে বাগেরহাট গিয়েছিলেন ওই এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠান শেষে মঞ্চ থেকে নামার সময় কর্নেল সাজ্জাদ লক্ষ্য করেন পেছন থেকে একজন মহিলা চিৎকার করে কী যেন বলতে চাচ্ছেন।
কাছে এসে মহিলা একটা সেলুট করলেন। কর্নেল সাজ্জাদ মুহূর্তেই যা বোঝার ঠিকই বুঝলেন এবং উদ্ভাসিত দৃষ্টিতে আগন্তুকের দিকে তাকালেন। মহিলা জানালেন তার নাম মেহেরুন নেছা মীরা। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ক্যাম্পে থেকেছেন, রাইফেল চালানো শিখেছেন, ছদ্মবেশ ও পরিচয় ধারণ করে বাগেরহাটের পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে গিয়ে খবরাখবর জোগাড় করে মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়েছেন।
যার সূত্র ধরে মুক্তিযোদ্ধারা অনেক সফল অপারেশন করতে সক্ষম হয়েছেন। ওইদিন বাগেরহাটে অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের ভিড়ে মুক্তিযোদ্ধা মেহেরুন নেছা মীরা আবেগতাড়িত হয়ে বললেন সেই মোক্ষম কথাটি_ 'আমি একজন সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা, অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের মতোই যুদ্ধ করলাম, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে ছদ্ম পরিচয়ে ঝিগিরি করলাম, দেশ স্বাধীন হলো, আপনারা বড় হলেন, অনেক সম্মান পেলেন, অথচ ৪২ বছর যাবৎ মিথ্যা অপবাদে আমি খারাপ মেয়ে হয়ে থাকলাম, মুক্তিযোদ্ধার সনদটি পর্যন্ত পেলাম না, এই বিচারটি কি ঠিক হলো। এমন কথা শুনে একজন মুক্তিযোদ্ধার মনে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি লাগারই কথা। কর্নেল সাজ্জাদ স্তব্ধ হয়ে তার সব কথা শুনলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত এলাকার সব মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও অন্য মুক্তিযোদ্ধারা নারী মুক্তিযোদ্ধা মীরার কথার সত্যতা একবাক্যে স্বীকার করলেন।
কিন্তু এতকাল কেন মীরা অবহেলিত ও অসহায়, মুক্তিযোদ্ধার সনদ না পাওয়ার কী কারণ বা কেন সে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছে না, তার কোনো সদুত্তর কেউ দিতে পারেনি। তারপর শুরু হয় কর্নেল সাজ্জাদের সংগ্রাম। দেড় বছরের প্রচেষ্টায় মীরা এখন মুক্তিযোদ্ধা সনদ পেয়েছেন এবং কর্নেল সাজ্জাদ ও আক্কু চৌধুরীর ব্যবস্থাপনায় ঢাকা এসেছেন তার মুক্তিযুদ্ধের কথা শোনাতে। শুনবেন অন্য মুক্তিযোদ্ধারা। বাগেরহাট কলেজের একজন অধ্যাপক ও তার স্ত্রী মীরাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন ঢাকায়।
আগেই বলেছি আমরা প্রায় জনাচলি্লশেক মুক্তিযোদ্ধা বসেছি গুলশানের একটি ছোট ছাদের আঙিনায় মীরার কথা শোনার জন্য। কর্নেল সাজ্জাদের প্রারম্ভিক বক্তব্যের পর মীরা উঠে দাঁড়ালেন। তার শরীর কিছুটা দুর্বল হওয়ার কারণে তাকে বসে বলার জন্য বললেও মীরা দাঁড়িয়ে কথা শুরু করলেন। বলতে লাগলেন তিনি কীভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে গেলেন, কেমন করে দুই সপ্তাহে রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ নিলেন, পাকিস্তানিদের ক্যাম্প থেকে কী কৌশলে খবর সংগ্রহ করে তা মুক্তিযোদ্ধাদের পেঁৗছে দিতেন। রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে গ্রামের ধান ও পাটক্ষেতের মধ্য দিয়ে অাঁকাবাঁকা খাল-নালা পেরিয়ে কীভাবে নির্ভুল পথ দেখিয়ে দক্ষ গাইডের মতো মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যেতেন রাজাকার ও পাকিস্তানিদের ক্যাম্প আক্রমণ করার জন্য।
সর্বশেষ মীরা শোনালেন তার জীবনের করুণ কাহিনী। কীভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে ৪২ বছর বেঁচে আছেন। আমরা ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা, যার মধ্যে বীরউত্তম খেতাবধারীও আছেন, পিনপতন নীরবতায় মন্ত্রমুগ্ধের মতো তন্ময় হয়ে প্রায় ৪০ মিনিট মীরার কথা শুনছি। কোনোরকম নড়াচড়া নেই। মাঝখানে একবার মীরাকে এক গ্লাস পানি দেওয়া হলো।
মাইক্রোফোন না থাকায় একটু জোরে জোরে কথা বলার কারণে এক পর্যায়ে মীরাকে কিছুটা ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা এলাকায় এসে ক্যাম্প করলে মীরা সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে তাকে নিতে চায়নি। কিন্তু বাগেরহাট শহর ও আশপাশ এলাকার পথঘাট সম্পর্কে মীরার সম্যক পরিচিতির কথা শুনে এবং পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে মীরার মা ঝি'র কাজ করে জানতে পেরে প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে সতর্কতার সঙ্গে মীরাকে দলে নিতে সম্মত হয়। উদ্দেশ্য ছিল মীরা যদি বিশ্বস্ত হয়, তাহলে তার দ্বারা গেরিলা যুদ্ধের জন্য অপরিহার্য ও অমূল্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা সহজ হবে।
অল্পদিনের মধ্যেই মীরা বিশ্বস্ততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আত্দরক্ষার জন্য নূ্যনতম কৌশল ও রাইফেল চালানোর জন্য মীরাকে দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শুরু হয় মীরার গেরিলাযুদ্ধ। বাগেরহাটের এসডিও (সাব ডিভিশনাল অফিসার)-এর বাসায় পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প ছিল। মীরা ওর মায়ের সঙ্গে প্রায়শই পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে যেত এবং রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে গিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের চলাফেরা ও অবস্থান সম্পর্কে তথ্য দিত।
এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের ওপর অনেক সফল গুপ্ত ও ঝটিকা আক্রমণ চালাতে সক্ষম হয়। মীরা কিছু কিছু উর্দু বলতে পারত বিধায় পাকিস্তানিরা তাকে বিহারি মনে করার কারণে সহজে সে অনেক তথ্য জোগাড় করতে পারত। ওই সময়ে বাগেরহাটে রজব আলী নামে কুখ্যাত এক রাজাকার ছিল। রজব আলী সাধারণত সব সময় পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে থাকত। কিন্তু এক রাতে হঠাৎ রজব আলী চুপিসারে নিজের বাড়িতে যায়।
মীরা দ্রুত চলে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে এবং খবরটি তাদের জানায়। মুক্তিযোদ্ধারা ওই রাতেই অপারেশন চালিয়ে রাজাকার রজব আলীকে হত্যা করে। কোনোরকম দ্বিধা ও জড়তা ছাড়াই মীরা এরকম একেকটি ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিল নিজের মতো করে।
মীরা বলতে থাকে, 'ডিসেম্বরে বিজয়ের পর ভাবলাম দেশ স্বাধীন হলো, আর হয়তো আমাদের কষ্ট থাকবে না। ' বিয়ে হলো এক দিনমজুরের সঙ্গে।
দুটো ছেলে হলো। কিন্তু একদিন স্বামী তালাক দিয়ে ছেলে দুটোকে ফেলে রেখে চলে গেল, আর কোনো খোঁজ নিল না। ছেলে দুটোকে লেখাপড়া শেখাতে না পারায় মানুষ হয়নি। তারা মায়ের কোনো খোঁজ নেয় না। কালো মেয়েকে কে বিয়ে করবে, এই ভেবে মীরা ফের কখনো বিয়ের চিন্তা করেনি।
মীরা তার কথার মধ্যে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তোলেন। বললেন, 'তখন ভেবেছিলাম আমাদের মতো গরিব মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজখবর আর হয়তো কেউ কোনো দিন নিবে না। ' মীরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, শত অভাব-অনটনের মধ্যে থেকেও তিনি কোনোদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধ শক্তিকে ভোট দেননি, আগামীতেও দেবেন না। মীরার এই কথার মধ্যেই ফুটে ওঠে একজন প্রতিবাদী দৃঢ়চেতা আদর্শবান মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়। শ্রোতার আসনে বসা মুক্তিযোদ্ধারা আরেকবার মাথা উঁচু করে তাকায় মীরার দিকে।
পঁচাত্তরের পর সমাজ ও রাষ্ট্রের উঁচু স্থানে উঠে আসা বড় বড় দুয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা, যারা ক্ষমতা ও ধন-সম্পদের লোভে মুক্তিযুদ্ধের সব আদর্শ-চেতনাকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে রাজাকার জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত করেছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তস্নাত বাংলদেশে। রাষ্ট্রক্ষমতায় বসিয়েছে তাদের এবং এখনো এক মঞ্চে ও এক কাতারে চলাফেরা করছে। ওই সব পদস্খলিত পথহারা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এখানেই গরিব নারী মুক্তিযোদ্ধা মীরার পার্থক্য। মীরারা এখনো বেঁচে আছে বলেই মুক্তিযুদ্ধ বেঁচে আছে।
মেহেরেুন নেছা মীরা, পিতা মৃত মো. তাসেন উদ্দিন শেখ, বাগেরহাট সদর, ওয়ার্ড সরই, এটাই এখন মুক্তিযোদ্ধা মীরার ঠিকানা।
সে এখন নদীর কূলে একটি পলিথিনের ছাপড়ায় রাত কাটায়। বাগেরহাট শহরের ইব্রাহিম মোল্লার ডেকোরেটরের দোকানে বাসন-প্লেট ধোয়ার কাজ করে। এর আগে কিছুদিন সে মাথায় করে সবজি ফেরি করত বাগেরহাট শহরে। কিন্তু ষাটোধর্্ব বয়সে এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু টাকার জোগাড় করে বাগেরহাট শহরে একটা ছোট সবজির দোকানের ব্যবস্থা আপাতত মীরার জন্য করা হচ্ছে বলে জানালেন কর্নেল সাজ্জাদ ও আক্কু চৌধুরী।
মীরার কাহিনী শুনে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিক্রিয়া ছিল আনন্দ ও বেদনায় মিশ্রিত। সবার মুখে প্রশ্ন ছিল_ একজন মুক্তিযোদ্ধার এমন করুণ জীবন কাহিনী শোনার জন্য কি আমরা সেদিন জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলাম? কেন এমন হলো, কারা এর জন্য দায়ী? আজ স্বাধীনতার ৪২ বছর পর বাংলাদেশের চলমান বাস্তবতার নিরিখে এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো একেকজন একেকরকম করে দেবেন। তবে স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় পঁচাত্তরে জাতির পিতার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক আইনের জোরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সামরিক শাসকের হাত ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী হলেন রাজাকার শিরোমণি শাহ আজিজুর রহমান। আবদুল আলিম, মাওলানা মান্নান ও মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মতো রাজাকাররা মন্ত্রী হলেন। শাহ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভা মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও তার আদর্শ চেতনার লালনপালন করেছেন, নাকি তা সমূলে বিনষ্ট করার জন্য কাজ করেছেন সেটি বোধকরি কাউকে বুঝিয়ে বলতে হবে না।
৪২ বছর পর আজো সে সব অপশক্তি তাদের প্রশ্রয়দাতাদের কাঁধে চড়ে জামায়াত-হেফাজত নামে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। তারা আবার তাদের পুনর্জন্মদানকারী ও প্রশ্রয়দাতা রাজনৈতিক দলের ঘাড়ে চড়ে নিকট ভবিষ্যতে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নে চরম আস্ফালন দেখাচ্ছে। এ দেশের মানুষ কি একবার ভেবে দেখবে না, দেশকে স্বাধীন করার জন্য এত ত্যাগ-বিসর্জন সবই কি আমরা ভুলে যাব? তাতে কি আমাদের আকাঙ্ক্ষিত মুক্তি আসবে? বিস্মৃতির বিরুদ্ধে স্মৃতির লড়াইয়ে আমাদের তরুণ প্রজন্ম কি মাঠে নামবে না? উজ্জ্বল স্মৃতিকে পদদলিত করে তাৎক্ষণিক কিছু প্রাপ্তি মিললেও অন্তিমে বিপর্যয় অনিবার্য। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা, মনীষীদের কথা। কয়েক দিন আগে প্রয়াত হলেন বাংলার নবাবখ্যাত কিংবদন্তি অভিনেতা আনোয়ার হোসেন।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা নাটকে তার একটি ঐতিহাসিক সংলাপ এ দেশের তরুণদের মুখে মুখে এখনো শোনা যায়। সিরাজউদ্দৌলা তার নানা নবাব আলীবর্দি খাঁর সমাধির পাশে দাঁড়িয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ধৃষ্টতার কথা ভেবে বলেছিলেন_ "বাংলা বিহার উড়িষ্যার মহান অধিপতি, তোমার শেষ উপদেশ আমি ভুলিনি জনাব। তোমার রাজ্যে আমি তাদের মাথা তুলে দাঁড়াতে দেব না। তুমি বলেছিলে সুযোগ পেলেই তারা এ দেশ কেড়ে নিবে, আমি তাদের প্রশ্রয় দেব না। আমি বেঁচে থাকতে তোমার রাজ্যে তারা দুর্গ তৈরি করতে পারবে না।
" মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এরকম একটি ঐতিহাসিক নাটক যদি আজ কেউ রচনা করতেন তাহলে সেখানে একজন মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠে হয়তো একইরকম আরেকটি সংলাপ থাকত। সে সংলাপে বজ্রকণ্ঠের মতো আওয়াজ উঠত_ "পিতা তোমার শেষ উপদেশ আমরা ভুলিনি জনাব। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াত রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের এ দেশে আমরা আশ্রয় দেব না। তুমি বলেছিলে সুযোগ পেলেই বাংলাদেশকে তারা আবার আরেকটি পাকিস্তান বানাবে। তোমার প্রাণের বাংলাদেশে আমরা তা হতে দেব না।
"
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
ই-মেইল : sikder52@gmail.com
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।