উত্তপ্ত হয়ে উঠছে গার্মেন্ট শিল্প।
নূন্যতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে ষষ্ঠ দিনের মতো গতকাল গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও আশুলিয়ায় কয়েকটি গার্মেন্টে শ্রমিকরা বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করেছে। শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক আহত হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- নারায়ণগঞ্জ : নূ্যনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে গতকাল ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষে শিল্পপুলিশসহ কমপক্ষে শতাধিক আহত হয়েছে।
এদের মধ্যে কয়েকজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সংঘর্ষের কারণে সকাল পৌনে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে যান চলাচল বন্ধ ছিল। ওই সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ৮-১০টি গার্মেন্ট ও ২০টি যানবাহন ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় ফতুল্লায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় ফতুল্লার নয়ামাটি এলাকার আইএসএফ (সাবেক মাহমুদা) গার্মেন্টের সহস্রাধিক শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসে।
তারা প্রথমে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে অবস্থান করে। পরে তারা রূপসী গ্রুপের বিভিন্ন গার্মেন্টে প্রবেশ করে শ্রমিকদের বের করে আনে। কয়েক হাজার শ্রমিক লামাপাড়া ও শিবু মার্কেট এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে। পরে শ্রমিকরা আবারও লিংক রোডে জড়ো হলে বেলা পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ শ্রমিকদের লাঠিচার্জ করলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে। নারায়ণগঞ্জ শিল্পপুলিশ-৪ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আহমেদ জানান, সংঘর্ষে তাদের ১৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা শতাধিক রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলে পুলিশ মোতায়েন আছে। কয়েকটি গার্মেন্ট বন্ধ আছে।
বিকেএমইএর পরিচালক ও লেবার অ্যাফেয়ার্স স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান জিএম ফারুক জানান, কিছু শ্রমিক নেতা শিল্পাঞ্চলকে উসকে দিয়ে নতুন করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাইছে। গাজীপুর : পোশাকশিল্প কারখানা এলাকায় পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি সকালে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ও পল্লীবিদ্যুৎ এলাকা ব্যতীত অনেক গার্মেন্টে স্বাভাবিক কাজ চলেছে। জেলা প্রশাসক মো. নুরুল ইসলাম জানান, পোশাক খাতের বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। তবে এটা সাময়িক।
শিল্পাঞ্চল পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার একেএম মো. মোশাররফ হোসেন জানান, কিছু কিছু এলাকায় বিক্ষোভ চলায় নিরাপত্তা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সকালে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, সকালে কালিয়াকৈরের চন্দ্রায় নূর গ্রুপের চারটি কারখানা ও পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার স্টারলিংক কারখানায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে না চাইলে গতকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়। মৌচাক এলাকায় লগুজ গার্মেন্টে শ্রমিকরা সকালে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। পরে ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। টঙ্গী : টঙ্গী বিসিক শিল্প এলাকার রেডিসন এপারেলস কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।
মঙ্গলবার কয়েকজন শ্রমিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় আহতদের চিকিৎসা ও সন্ত্রাসীদের শাস্তির দাবি জানায় তারা। সাভার : সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসে বন্ধের নোটিস দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। পরে তারা নবীনগনর কালিয়াকৈর মহাসড়কে কয়েকটি যানবাহনে ভাঙচুর চালায় এবং সড়ক অবরোধ করে রাখে। শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে পুলিশ প্রায় ২৫-৩০ রাউন্ড টিয়ার শেল ও ৮-৩০ রাবার বুলেট ছোড়ে। আশুলিয়ায় দি ডিজাইন কম্পোজ কম্পোজিড ও মাস্কট হা-মীম গ্রুপের শ্রমিকরা দুপুরের পর থেকে কর্মবিরতি দিয়ে বিক্ষোভ করেছে।
শিল্পপুলিশ-১ এর পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মজুরি বাড়ানোর দাবিতে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়ক বন্ধ করে রাস্তার পাশে থাকা গার্মেন্টে ভাঙচুর চালায়। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে টিয়ার শেল, লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে হাজার হাজার শ্রমিক রাস্তায় নেমে ৫টি যানবাহন ভাঙচুর করে। তিনি জানান, পুলিশের কাছ থেকে গ্যাস গান ও রাবার বুলেট ছিনিয়ে নেয় শ্রমিকরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।